চৌধুরী মোহাম্মদ কাজল : | বৃহস্পতিবার, ২৯ আগস্ট ২০২৪
বাংলাদেশে কিছু কথা আছে সবাই বলে কিন্তু কেউ পালন করে না। এরকম একটি কথা হচ্ছে ‘আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না’। এটা কথার কথা। সুযোগ পেলে সবাই নিজের হাতে আইন তুলে নিয়ে ঝাল মেটায়। নিজেকে সংযত করার শক্তি বা ইচ্ছা আমাদের খুব কম। এই যেমন কয়েকদিন আগে যে ছাত্ররা অসহায় আন্দোলনকারী ছিল তারা আজ ক্ষমতাশালী। যখন তখন যাকে ইচ্ছা তাকে ধরছে, মারছে, কান ধরে উঠবস করাচ্ছে। এগুলি কি নিজের হাতে আইন তুলে নেওয়া নয়। ছাত্ররা এটা করছে। সে ছবি ফেসবুকে পোস্ট করছে। মনে হয় সবাই মজা পাচ্ছে। কেউ প্রতিবাদ করছে না।
স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে এমনটা হয়েছিল। কারো সাথে ব্যাক্তিগত সমস্যা থাকলেও রাজাকার বলে ধোলাই দেওয়া হতো। স্বাধীনতার পর দেশটা কিছুদিন ছিল মু্ক্িতযোদ্ধাদের স্বর্গরাজ্য। বাকী সবাই ছিল গনিমতের মাল। রাজাকার বলে যাদেরকে হত্যা করা হয়েছিল তাদের সবাই কি রাজাকার ছিল? স্বাধীনতা অর্জনের দু’দিন পর কাদের সিদ্দিকী ও তার দল চারজন লোককে ধরে এনেছিল। পল্টন ময়দানে তাদের নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল। মজার ব্যাপার এই হত্যাকান্ডের আগে কাদের সিদ্দিকী বলেছিলেন কেউ নিজের হাতে আইন তুলে নেবেন না। কিন্তু কিছুক্ষন পরই নিজের হাতে মানুষ মারার লোভ সামলাতে পারেননি। এক শিষ্যের কাছ থেকে বেয়নেট নিয়ে খুচিয়ে খুচিয়ে মানুষ হত্যা করেছেন।
এবারের আগস্ট আন্দোলনের পরও যেভাবে হত্যাকান্ড হয়েছে অথবা মানুষকে অপদস্ত করা হচ্ছে এরা সত্যিই কি অপরাধী। নাকি এ সুযোগে ব্যাক্তিগত আক্রোশটাও চরিতার্থ করা হচ্ছে। যদি অপরাধী হয়েও থাকে এভাবে কি শাস্তি দেওয়া যায়। বুঝতে পারছি না দেশে হচ্ছটা কি। সবাই কি উন্মাদ হয়ে গেছে। আইনের শিক্ষক আসিফ নজরুল, পরিবেশবাদী আইনজীবি রেজওয়ানা হাসান অথবা আদিলুর রহমানরা কি বোধশক্তি হারিয়ে ফেলেছেন। এতদিন মানবাধিকারের কথা বলেছেন। এখন নিশ্চুপ কেন। দুর্নীতিবাজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতনে আমরাও আনন্দিত হয়েছিলাম। কিন্তু বেশীক্ষন সুখী থাকতে পারিনি। পুলিশের বিরুদ্ধে সাধারন মানুষের নির্মমতা দেখে মর্মাহত হয়েছি।
পুলিশ বাহিনীর অনুপস্থিতে ছাত্ররা ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্বপালন করেছে। যাকে তাকে যেমন ইচ্ছা শাস্তি দিয়েছে। এক ছেলে বিয়ে করতে যাচ্ছিল। তার গাড়ীর কাগজ প্রত্র ঠিক ছিল না। বরের পোষাক পরিহিত সে ছেলেটিকে দিয়ে কিছুক্ষন ট্রাফিক পুলিশের কাজ করিয়েছে। গাড়ী নিশ্চয় সে চালায়নি। ট্রাফিক আইন ভঙ্গের শাস্তি জরিমানা। কিন্তু তাকে যেভাবে অপদস্থ করা হয়েছে এটা কি ঠিক।
আওয়ামী লীগের পনের বছরের দুঃশাসনে যারা দুর্নীতি করেছে তাদের শাস্তি অবশ্যই প্রাপ্য। কিন্তু প্রতিটি পদক্ষেপ হতে হবে আইনানুগভাবে। আওয়ামী লীগ করলেই যে তাকে মারধর করতে হবে এটা সম্পূর্ণ অনুচিত। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে যে আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা পনের আগষ্ট ধানমন্ডী বত্রিশ নম্বরে শেখ মুজিবের প্রতি শ্রদ্ধাপ্রদর্শন করতে এসেছিলেন তাদেরকে এভাবে নিগৃহিত করা হলো কেন। এই সব উচ্ছৃঙ্খল ছেলেদের কি গ্রেফতার করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ বাংলাদেশে নিষিদ্ধ নয়। তাদের নেতাকে আমাদের পছন্দ না হতে পারে কিন্তু তাদের নেতার প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করার পূর্ণ অধিকার তাদের আছে।
ছাত্রলীগের যে সব সন্ত্রাসীরা একদিন সচিবের প্যান্ট খুলে নিয়েছিল তাদের সাথে আজকের মেধাবী ছাত্রদের পার্থক্য কোথায়। তাদের এ আচরনে কি বেনজীর বা মতিউরদের ছায়া দেখা যাচ্ছে না। এ অবস্থার পরিবর্তন হওয়া দরকার। আমরা বার বার নতুন বোতলে পুরনো শরবত চাই না। কিন্তু যারা তাদের দিক নির্দেশনা দিত তারা রহস্যজনকভাবে নিঃশ্চুপ।
এবার আসা যাক সেনাবাহিনী প্রসঙ্গে। সেনাবাহিনী তান্ডব সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। যাকে তাকে মারছে। যেভাবে ইচ্ছা মারছে। একজন ব্যাক্তিকে তিনজন সৈন্য তিনটি লাঠি দিয়ে একই সাথে শরীরের তিন জায়গায় মারছে। ফেসবুক খুললেই দেখি সেনাবাহিনীর মানুষ পেটানোর দ্রশ্য। নারী, শিশু কেউই বাদ পড়ছে না। বেধড়ক মারধরের পর অনেককে গান গাইতে, এমনকি নাচতে বাধ্য করছে। এটা কি তামাশা। এ ধরনের বিকৃত আচরন থেকে সেনাবাহিনীকে বিরত রাখতে হবে। যদিও মোহাম্মদ ইউনুসের সরকার অনির্বাচিত, তারপরও সবকিছুতে তার নিয়ন্ত্রন থাকা উচিত। সর্বত্র নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠা না করতে পারলে তার ক্ষমতায় থাকার দরকার নেই। সেনাবাহিনী নামানো হয়েছে আইন শৃঙ্খলা রক্ষা করার জন্য। মানুষ পেটানো তাদের দায়িত্ব না। বর্তমান সরকারে এমন অনেক উপদেষ্টা রয়েছেন যারা মানবাধিকার ও আইনের শাসন নিয়ে অতীতে অনেক কথা বলেছেন। অনেকে নির্যাতিতও হয়েছেন। কিন্তু এখন কথা বলছেন না। যদি এসব কাজ তাদের অমতে হয়ে থাকে তাহলে তাদেরকে বলতে হবে। না হলে এর দায়দায়িত্ব তাদেরকেও নিতে হবে। যেদিন দাবার ছক উলটে যাবে সেদিন তাদেরকেও হিসাব দিতে হবে।
Posted ১২:০৮ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৯ আগস্ট ২০২৪
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh