রবিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৫ | ৬ পৌষ ১৪৩২

Weekly Bangladesh নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত
নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত

কেমন হবে ভবিষ্যতের তত্বাবধায়ক সরকার

কাজী জহিরুল ইসলাম :   |   বৃহস্পতিবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫

কেমন হবে ভবিষ্যতের তত্বাবধায়ক সরকার

অনেকে এই অভিযোগ করেন, বিএনপির জন্য জুলাই ব্যর্থ হয়ে গেল। জাতির সামনে একটা সুযোগ এসেছিল খোল-নলচে পাল্টে দিয়ে একটি আধুনিক ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনির্মাণের। সেই লক্ষ্যে সব পদক্ষেপই নিয়েছিল জুলাই-আগস্ট বিপ্লবোত্তর ড. ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। কিন্তু বিএনপির জন্য কাজটা করা গেল না। এই অভিযোগ এবং জুলাই অভ্যুত্থানের প্রাপ্তি নিয়ে কিছু কথা বলবো আজ।

একথা ঠিক যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করতে গিয়েই ফেঁসে যায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে। একটা ডায়ালগ দরকার ছিল, সেটা অন্য অনেক ফর্মেও করা যেত। বিএনপি যেহেতু ক্ষমতাকেন্দ্রিক এবং পরিবারকেন্দ্রিক রাজনৈতিক দল, গণমানুষের রাষ্ট্র নির্মাণে তাদের অনীহা থাকাটা খুবই স্বাভাবিক। এর বড়ো কারণ হচ্ছে তাদের দলের মধ্যে গণতন্ত্রহীনতা। আওয়ামী লীগের মতো তাদেরও সকল সিদ্ধান্ত আসে একটি পরিবার থেকে। জিয়া পরিবার সিদ্ধান্ত নেয়, অন্যরা গ্রীক পরী ইকোর মত শুধু জি হুজুর করে। যদি তারা গণতান্ত্রিকভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারত তাহলে পারিবারিক ক্ষমতার স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে জাতীয় স্বার্থে দেশবাসীর সঙ্গে একমত হতে পারত।

তবে শেষ পর্যন্ত জুলাই সনদে অসংখ্য নোট অব ডিসেন্ট সত্বেও গণমানুষের চাপে, ভোটের ভয়ে, বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তারা ঐকমত্য প্রদর্শন করেছেন। এক ব্যক্তি সর্বোচ্চ দশ বছরের বেশি প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন না, এই বিষয়ে অনেক বিতর্কের পর কোনো রকম নোট অব ডিসেন্ট ছাড়াই বিএনপি সমর্থন দিয়েছে। আলোচনায় থাকা ৩৩টি দল/জোটের মধ্যে শুধু মাত্র দুটি রাজনৈতিক দল/জোট, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য এবং বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগ, এই সিদ্ধান্তের পক্ষে তাদের ঐকমত্য প্রকাশ করেননি। তবে তারা এই বিষয়ে কোনো নোট অব ডিসেন্টও দেননি। এটি জুলাই অভ্যুত্থানের একটি বড়ো অর্জন। আমাদের প্রত্যাশা থাকবে, ভবিষ্যতে যারা রাষ্ট্রক্ষমতায় যাবেন এবং থাকবেন তারা এই সনদ পাল্টে দিয়ে গণমানুষের সঙ্গে, ১৪০০ শহীদের রক্তের সঙ্গে, বেঈমানী করবেন না।

আইনী লড়াইয়ের মধ্য দিয়েই তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরে এসেছে, মানে হাসিনার বাতিল করা সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী, যার মাধ্যমে তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। কিন্তু কেমন হবে ভবিষ্যতের তত্বাবধায়ক সরকার তা বিস্তারিতভাবে বর্ণিত আছে জুলাই সনদে। এই বিষয়টি একটু সহজ করে বলা দরকার।
মুক্তিযুদ্ধের যে আকাঙ্খা ছিল, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা, তা মূলত শুরু হয়েছিল এরশাদ-সরকারের পতনের পর, স্বাধীনতার বিশ বছর পরে, ১৯৯১ সালে। এর আগের সকল নির্বাচনে ক্ষমতাসীন ব্যক্তি বা দল জয়লাভ করেছে এবং তা অবশ্যই কারচুপির মাধ্যমে। কাজেই বিশ বছর ধরে আমাদের অপেক্ষা করতে হয়েছে, সংগ্রাম করতে হয়েছে, মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার জন্য। এর পরে তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সংগঠিত তিনটি নির্বাচনে প্রমাণ হয়েছে এটিই বাংলাদেশের জন্য একমাত্র টেকসই এবং সঠিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা। সেই ব্যবস্থাকে অসুস্থ করেছিল বিএনপি, হত্যা করেছিল আওয়ামী লীগ। মৃত তত্বাবধায়ক সরকার আবার আইনী লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে, এটি জাতির জন্য বড়ো এক সুখবর। যদি মানুষ নিরবচ্ছিন্নভাবে ভোট দিয়ে তাদের পছন্দের সরকার নির্বাচন করতে পারে তাহলে আস্তে আস্তে অনেক সমস্যারই সমাধান হয়ে যাবে। রাষ্ট্রক্ষমতা কিছু পরিবারের হাতে কেন্দ্রিভুত থাকলেও অন্তত পরিবারগুলো ভোটের ভয়ে চূড়ান্ত পর্যায়ের স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠবে না। আসুন দেখি জুলাই সনদ কী বলছে তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নিয়ে।

নির্বাচিত সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার ১৫ দিন আগেই নতুন তত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের বিষয়টি ফয়সালা করে ফেলতে হবে। কে হবেন তত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা? আগের মত সর্বশেষ অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি? না, উপদেষ্টা হবার যোগ্যতা আছে এমন যে কেউ হতে পারবেন তত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা। তবে তাকে নির্বাচন করার একটি সুস্পষ্ট প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে। সংসদের মেয়াদ শেষ হবার ত্রিশ দিন আগে প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলীয় নেতা, স্পিকার, বিরোধী দল থেকে মনোনীত ডেপুটি স্পিকার, দ্বিতীয় বৃহত্তম দলের একজন প্রতিনিধি, মোট এই পাঁচজনকে নিয়ে একটি কমিটি গঠিত হবে।

এই কমিটির কাজ হবে তত্বাবধায়ক সরকারের একজন প্রধান উপদেষ্টা খুঁজে বের করা। তারা কি চাইলেই রাস্তা থেকে একজনকে ধরে এনে প্রধান উপদেষ্টা বানাতে পারবেন? না, তা পারবেন না। কীভাবে তা করবেন তার একটি সুস্পষ্ট গাইডলাইন আছে জুলাই সনদে। জাতীয় সংসদ সচিবালয় এই কমিটির সচিবীয় কাজকর্ম সম্পাদন করবে। পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠিত হওয়ার ২৪ ঘন্টার মধ্যে দেশের নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলসমূহ, সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী দলসমূহ, এবং জাতীয় সংসদের স্বতন্ত্র সদস্য সমূহ একজন করে যোগ্য ব্যক্তির নাম প্রস্তাব করবেন। এক্ষেত্রে কে কত বড়ো দল তা বিবেচনা করা হবে না, সব দল এমন কী একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী, সকলেই, শুধুমাত্র একজন ব্যক্তির নাম প্রস্তাব করতে পারবেন। নাম আহ্বান করার ২৪ ঘন্টার মধ্যে সকল দল ও স্বতন্ত্র সদস্য জাতীয় সংসদের সচিবালয়ে প্রস্তাবাকারে নাম জমা দেবেন। কমিটি নিজ উদ্যোগেও যোগ্য ব্যক্তির বা ব্যক্তিদের নাম অন্তর্ভুক্ত করতে পারবেন। পরবর্তী ৭২ ঘন্টার মধ্যে পাঁচ সদস্যের কমিটি নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনা করে এইসব নাম থেকে উপযুক্ত একজনকে তত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে মনোনীত করবেন। এই কমিটির সকল সভায় সভাপতিত্ব করবেন স্পিকার।

এমন তো হতেই পারে কমিটি আলাপ-আলোচনা করে কারো বিষয়েই ঐকমত্যে পৌছাতে পারলো না, তখন কী হবে? এক্ষেত্রে কমিটি গঠিত হওয়ার ১২০ ঘন্টা বা পাঁচদিনের মধ্যে যদি তারা কাউকে চূড়ান্তভাবে নির্বাচন করতে না পারেন তখন পরবর্তী ৪৮ ঘন্টা বা দুইদিনের মধ্যে সরকারী দল বা জোট ৫ জনের নাম প্রস্তাব করবে, বিরোধী দল বা জোট ৫ জনের নাম প্রস্তাব করবে এবং সংসদের দ্বিতীয় বৃহত্তম দল ২ জনের নাম প্রস্তাব করবে। পরের ৪৮ ঘন্টার মধ্যে সরকারী দল বিরোধীদলের ৫ জন থেকে একজনকে বেছে নেবে, বিরোধী দল সরকারী দলের ৫ জন থেকে একজনকে বেছে নেবে। সংসদে দ্বিতীয় বৃহত্তম বিরোধী দলের প্রস্তাবকৃত দুইজনের মধ্য থেকে সরকারী দল একজনকে এবং বিরোধী দল একজনকে বেছে নেবে। এই ৪ জনের (বা তিনজন, যদি দুই দলই দ্বিতীয় বৃহত্তম দলের দুজনের মধ্য থেকে একজনকে বেছে নেয়) মধ্য থেকে বাছাই কমিটি একজনকে নির্বাচিত করবেন। ৫ সদস্যের ৪ সদস্য যাকে ভোট দেবেন তিনিই হবেন প্রধান উপদেষ্টা।

এতেও যদি সমস্যার সমাধান না হয় তাহলে ৫ সদস্যের কমিটিতে আরো দুজন সদস্য যুক্ত করা হবে। তারা হবেন বিচার বিভাগের প্রতিনিধি। এই দুজন সদস্যের একজন হবেন আপিল বিভাগের কোনো বিচারপতি, অন্যজন হবেন হাইকোর্ট বিভাগের কোনো একজন বিচারপতি। এই দুজন সদস্যকে মনোনীত করার জন্য ৩ সদস্যের একটি কমিটি করা হবে। তারা হলেন সর্বশেষ অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি, কর্মরত প্রধান বিচারপতি এবং আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠতম বিচারপতি। এবার ৭ সদস্যের কমিটির সদস্যরা গোপন ব্যলটে ৩জন বা ৪জনের যে চূড়ান্ত তালিকা করা হয়েছে তাদেরকে র‍্যাংক চয়েস অনুযায়ী ক্রমানুসারে ভোট দেবেন। অর্থাৎ প্রত্যেকেই ৩জন বা ৪জনের নামের সিরিয়াল তৈরি করবেন, প্রথম পছন্দ, দ্বিতীয় পছন্দ এইভাবে। যদিও জুলাই সনদে স্পষ্ট করে বলা নেই, অনুমান করি, যদি নির্বাচনের জন্য তিনজন প্রার্থীর নাম থাকে তাহলে প্রথম পছন্দের জন্য ৩ পয়েন্ট, দ্বিতীয় পছন্দের জন্য ২ পয়েন্ট এবং তৃতীয় পছন্দের জন্য ১ পয়েন্ট থাকবে। যদি প্রার্থী ৪ জন হয় তাহলে প্রথম পছন্দের জন্য ৪ পয়েন্ট, দ্বিতীয় পছন্দের জন্য ৩ পয়েন্ট এভাবে নেমে আসবে। এই পদ্ধতিতে যিনি সর্বোচ্চ পয়েন্ট পাবেন তিনিই পরবর্তী তত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হবেন।

এই পদ্ধতি ব্যর্থ হবার আমি কোনো কারণ দেখি না। যদি এই পদ্ধতিতেও ফয়সালা না হয় তাহলে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী অনুসরণ করতে হবে, তবে শর্ত আছে, কোনোভাবেই রাষ্ট্রপতি তত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হতে পারবেন না। তত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ লাভের পর তিনি বাছাই কমিটির সঙ্গে পরমর্শ করে অনুর্ধ ১৫ সদস্যের একটি উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করবেন। আমি মনে করি জুলাই সনদে বর্ণিত এই পদ্ধতি একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া এবং বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত। দুজন বিচারপতিকে যুক্ত করার বিষয়ে এবং ত্রয়োদশ সংশোধনী অনুসরণ করার বিষয়ে বিএনপি নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে। অবশ্য মোটের ওপর তারা এই পদ্ধতির সঙ্গে ঐকমত্যে পৌঁছেছে।

১৬ ডিসেম্বর ২০২৫। হলিসউড, নিউইয়র্ক।

Posted ১২:১৩ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫

Weekly Bangladesh |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

গল্প : দুই বোন
গল্প : দুই বোন

(8867 বার পঠিত)

মানব পাচার কেন
মানব পাচার কেন

(1458 বার পঠিত)

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১
১৩১৫১৬১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭৩০৩১  
Dr. Mohammed Wazed A Khan, President & Editor
Anwar Hossain Manju, Advisor, Editorial Board
Corporate Office

86-47 164th Street, Suite#BH
Jamaica, New York 11432

Tel: 917-304-3912, 718-523-6299 Fax: 718-206-2579

E-mail: [email protected]

Web: weeklybangladeshusa.com

Facebook: fb/weeklybangladeshusa.com

Mohammed Dinaj Khan,
Vice President
Florida Office

1610 NW 3rd Street
Deerfield Beach, FL 33442

Jackson Heights Office

37-55, 72 Street, Jackson Heights, NY 11372, Tel: 718-255-1158

Published by News Bangladesh Inc.