শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫ | ২৯ আষাঢ় ১৪৩২

Weekly Bangladesh নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত
নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত

মেয়র পদে তারুণ্যের বিজয় আমাদের জন্য শিক্ষা

কাজী জহিরুল ইসলাম :   |   বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫

মেয়র পদে তারুণ্যের বিজয় আমাদের জন্য শিক্ষা

নিউইয়র্ক সিটির মেয়র পদে ডেমোক্রেটদের প্রাইমারি হয়ে গেল গত ২৪ জুন ২০২৫ তারিখে। প্রাইমারিতে বিপুল ভোটে অভিজ্ঞ রাজনীতিক, সাবেক নিউইয়র্ক স্টেইট গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমোকে কুপোকাত করে ৩৩ বছরের তরুণ রাজনীতিক জোহরান মামদানি বিজয়ী হয়েছেন। জোহরান ভারতীয় চলচ্চিত্র নির্মাতা মিরা নায়ের ও লেখক মোহাম্মদ মামদানির সন্তান। মোহাম্মদ মামদানি ভারতের মুম্বাইয়ে জন্মগ্রহণ করেন এবং পরবর্তীতে উগান্ডায় অভিবাস গ্রহণ করেন। সেখানেই জোহরানের জন্ম হয়।

জোহরানের পিতা মোহাম্মদ মামদানি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়, পিটসবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়সহ আমেরিকার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করেন এবং শিক্ষকতার পেশা বেছে নেন। হিন্দু-মুসলমান দুই ধর্মের রক্তই জোহরানের ধমনীতে প্রবাহিত, সেই সঙ্গে আছে ভারতীয় এবং আফ্রিকান সংস্কৃতির উত্তরাধিকার, আর আছে আমেরিকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে গ্রহণ করা পৃথিবীর সেরা শিক্ষা। সব মিলিয়ে জোহরান যে কোনো উচ্চতায় পৌঁছে যাবার জন্য প্রস্তুত। যদি তার জন্ম আমেরিকার মাটিতে হত, আমি হয়ত আজই আগাম ভবিষ্যতবাণী করে ফেলতাম একদিন এই ছেলে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হবেন। দারুণ কথা বলেন জোহরান, প্রেসিডেন্ট না হলেও, নিউইয়র্ক স্টেইটের গভর্নর তিনি হবেনই।

অনেকেই প্রশ্ন করেন প্রাইমারি কী জিনিস? সেটা একটু বলি। যখন একটি রাজনৈতিক দলের একাধিক প্রার্থী থাকে, আমেরিকার রাজনৈতিক দলগুলো তাদের মধ্য থেকে একজনকে দলীয় নমিনেশন দেবার দায়িত্বটা জনগণের ওপরই ছেড়ে দেয়। মূল নির্বাচনের আগে তাই দলের প্রাইমারি হয়। একই দলের অনেক প্রার্থী নির্বাচনে দাঁড়ায়, ভোটাররা ভোট দেয়, যিনি সর্বোচ্চ ভোট পান তিনিই দলের নমিনেশন পান বা দলের প্রার্থী হন চূড়ান্ত নির্বাচনের জন্য। আগামী নভেম্বরে নিউইয়র্ক সিটির মেয়র নির্বাচন হবে।

সেখানে জোহরান মামদানির প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে রিপাবলিকান দলের কেউ থাকবেন, স্বতন্ত্রও কেউ থাকতে পারেন কিন্তু নিউইয়র্ক সিটিতে ডেমোক্রেটদের যেহেতু জয় জয়কার কাজেই জোহরানই মেয়র হবেন এটা নিশ্চিত। নভেম্বরের নির্বাচন কেবল একটা আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। এ-কারণেই ডেমোক্রেটদের এই প্রাইমারি ভোট এতো গুরুত্বপূর্ণ এবং উৎসবমুখর ছিল।

জোহরান যখন তার প্রার্থীতা ঘোষণা করে, প্রথম দিন থেকেই আমার বন্ধু কাজী ফৌজিয়া তার পক্ষে প্রচারণায় নামে। ফৌজিয়া প্রতিদিন আমাদের আপডেট দিত এবং প্রচণ্ড আশাবাদ ব্যক্ত করত। আমরা জানি মামদানি ফৌজিয়ার সন্তানতুল্য, মামদানি নিজেও ফৌজিয়াকে মা বলেই সম্মান করেন এবং অন্যদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। সে-কারণে অভিজ্ঞ কুমোর বিরুদ্ধে মামদানির বিজয় নিয়ে ফৌজিয়ার আশাবাদকে আমরা একজন মায়ের আবেগ ছাড়া আর কিছুই মনে করিনি।

কুমো শুধু অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদই নন, একজন ধনকুবেরও। তার পিতা মারিও কুমোও নিউইয়র্ক স্টেইটের নির্বাচিত গভর্নর ছিলেন এবং তিনি তিন বার গভর্নর নির্বাচিত হয়েছিলেন। বলা যায় নিউইয়র্কের ডেমোক্রেটিক পার্টির সবচেয়ে ক্ষমতাবান পরিবার হচ্ছে কুমোর পরিবার। কুমোকে হারিয়ে জোহরান মামদানির বিজয় আবারও প্রমাণ করলো অর্থবিত্ত, পারিবারিক ঐতিহ্য, বয়স, অভিজ্ঞতা ইত্যাদির চেয়ে জনতার ভালোবাসা অনেক বেশি শক্তিশালী, এটিই মূল ক্ষমতা।

বাংলাদেশের তরুণরা যখন স্লোগান দেয় ‘ক্ষমতা না জনতা, জনতা জনতা’ তখন এই কথাটিই বারবার মনে পড়ে। যদি একটি সমাজে গণতন্ত্রের চর্চা অব্যাহত থাকে তাহলে জনতার শক্তিই বিজয়ী হবে, চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী, পেশিশক্তি, পারিবারিক ঐতিহ্য ধীরে ধীরে মিইয়ে যাবে।

আমি এই গদ্যটি লিখছি জোহরান মামদানির প্রশংসা করার জন্য নয়, এই লেখার মূল উদ্দেশ্য হলো বাংলাদেশের মানুষকে এই কথাটি বলা, গত জুলাই-আগস্ট মাসে তারুণ্যের শক্তি প্রত্যক্ষ করার পরেও নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপিকে যারা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করছেন তাদের স্মৃতিতে প্রথাগত কারচুপির নির্বাচনই হয়ত এখনও দোলা দেয়। বিএনপি এখন দেশের সবচেয়ে বড়ো রাজনৈতিক দল, কিন্তু এই দলের কর্মীসংখ্যা কত? আমার হিসেবে ১৮ থেকে ২০ লক্ষ, কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না, বাংলাদেশের মানুষের সংখ্যা ১৮ কোটি। মোট ভোটারের সংখ্যা প্রায় ১২ কোটি। যাদের একটি বড়ো অংশ তরুণ ভোটার।

আবার মামদানি প্রসঙ্গে একটু ফিরে আসি। জোহরান মামদানি তার বিজয় ভাষণে কোনো ধর্ম, জাতি-গোষ্ঠীর কথা উল্লেখ করেননি, শুধুমাত্র বাংলাদেশি আন্টিদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন, বলেছেন, বাংলাদেশি আন্টিরা আমার জন্য এই সিটির প্রতিটি দরোজার কড়া নেড়েছেন। কেউ বুঝুক বা না বুঝুক আমি নিশ্চিত বুঝেছি ঠিক সেই মুহূর্তে ওর চোখের সামনে কাজী ফৌজিয়ার মুখটিই ভেসে উঠেছিল। মামদানির বিজয়ের পেছনে ফৌজিয়ার অক্লান্ত পরিশ্রম এবং কৌশলগত ক্যাম্পেইন খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

বাংলাদেশের তরুণ রাজনৈতিক দল এনসিপি যদি এইরকম কিছু কাজী ফৌজিয়াকে তাদের নির্বাচনী প্রচারণা ও কৌশল নির্ধারণে কাজে লাগাতে পারে তাহলে ভালো ফলাফল পেতে পারে বলে আমার বিশ্বাস। পৃথিবীতে একেক সময় একেকটা ট্রেন্ড আসে। এখন রাষ্ট্র-ব্যবস্থাপনায় তরুণ নেতৃত্বের ট্রেন্ড চলছে, সারা পৃথিবীতেই তারুণ্যের জয় জয়কার। আজকের পৃথিবী জেনজিদের পৃথিবী। আমাদের কাজ ওদের পাশে দাঁড়ানো, এই সত্য যারা উপলব্ধি করতে পারছেন না তারা অনেক পিছিয়ে আছেন।

তারুণ্যের এই বিজয় পৃথিবীর চাকা সত্য ও মানবতার দিকে ঘুরিয়ে দিক এটিই আমার প্রত্যাশা এবং তা ঘটবেই। পৃথিবী থেকে হিংসা ও অনৈতিকতা দূর করার জন্য আমাদের দরকার তরুণ এবং তারুণ্যে ভরপুর নেতৃত্ব।

Posted ১২:৪০ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫

Weekly Bangladesh |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

গল্প : দুই বোন
গল্প : দুই বোন

(8189 বার পঠিত)

মানব পাচার কেন
মানব পাচার কেন

(1312 বার পঠিত)

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১
১৩১৫১৬
১৯২০২১২২২৩২৪২৫
২৬২৭৩০৩১  
Dr. Mohammed Wazed A Khan, President & Editor
Anwar Hossain Manju, Advisor, Editorial Board
Corporate Office

86-47 164th Street, Suite#BH
Jamaica, New York 11432

Tel: 917-304-3912, 718-523-6299 Fax: 718-206-2579

E-mail: [email protected]

Web: weeklybangladeshusa.com

Facebook: fb/weeklybangladeshusa.com

Mohammed Dinaj Khan,
Vice President
Florida Office

1610 NW 3rd Street
Deerfield Beach, FL 33442

Jackson Heights Office

37-55, 72 Street, Jackson Heights, NY 11372, Tel: 718-255-1158

Published by News Bangladesh Inc.