বৃহস্পতিবার, ৯ মে ২০২৪ | ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

Weekly Bangladesh নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত
নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত

আমাদের কি করা উচিত?

চৌধুরী মোহাম্মদ কাজল :   |   বৃহস্পতিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৩

আমাদের কি করা উচিত?

অস্ট্রেলিয়ার কাছে ভারত হেরেছে, দোষ হয়েছে বাংলাদেশের। মনে হচ্ছে বাংলাদেশের সমর্থনের জন্য ভারত হেরে গেছে। এরপর ভারতীয়রা বাংলাদেশ সম্পর্কে অবমাননাকর কথাবার্তা বলা শুরু করে দিয়েছে। বাংলাদেশ সম্পর্কে বিষোদগার করছে। সর্বস্তরের লোকজন বলছে। রাজনীতিবিদরা বলছে। ইউটিউবার, ব্লগাররা বলছে।

বিশেষ করে ভারতের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নেতারা বাংলাদেশ সম্পর্কে ক্রমাগত কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেই যাচ্ছে। তারা বলছে বাংলাদেশ তাদের সৃস্টি। তারা বাংলাদেশকে খাইয়ে পড়িয়ে বাচিয়ে রেখেছে। খাদ্যদ্রব্য দিয়ে, চিকিৎসা দিয়ে। ভারতে চিকিৎসার সুযোগ না পেলে বাংলাদেশের মানুষ চিকিৎসার অভাবে মারা যাবে । চাল, ডাল, পিয়াজ সবই ভারত থেকে আসছে। ফেসবুকে কিছু প্রতিবাদ ছাড়া বাংলাদেশীদের এ সম্পর্কে তেমন সাড়াশব্দ নেই।


ভারত একাত্তরে আমাদের সহযোগিতা করেছে। কিন্তু সেই সহযোগিতা কি এক তরফা ছিল। একাত্তরের আগে ভারত কি কখনও পাকিস্তানকে হারাতে পেরেছিল। এরপরও কি পেরেছে। এই সেদিনও পাকিস্তানে বিমান হামলা চালাতে গিয়ে ধরা খেয়েছে। ভারতীয় বৈমানিক অভিনন্দন পাকিস্তানীদের হাতে ধরা পড়ে চা খেয়ে এসেছে। ভারত শুধু ১৯৭১ এ পাকিস্তানকে হারাতে পেরেছিল বাঙালীরা সাথে ছিল বলে। ভারতীয় সৈন্যদের সাথে বাংলাদেশীরাও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল। তিন লক্ষ লোক স্বাধীনতার জন্য জীবন দিয়েছে। সাড়ে সাত কোটি বাঙালী নয় মাস সীমাহীন দুর্ভোগ সহ্য করছে। আমরা পাকিস্তানকে বাংলাদেশ থেকে বিতাড়িত না করলে ভারতের দুপাশে দুটি পাকিস্তান থাকতো। তাহলে ভারতের অবস্থা কি হতো। ভারত কি শান্তিতে থাকতে পারতো। আমরা মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদান স্বীকার করলেও ভারত সে কৃতজ্ঞতা দেখায়নি।

স্বাধীনতার পর পরই ভারত বাংলাদেশে লুটপাট শুরু করে। এখন তো পাকিস্তান নেই এখন বাংলাদেশের সাথে যা ইচ্ছা তাই করা যাবে এই মনোভাব নিয়ে বাংলাদেশের ওপর কতৃত্ব শুরু করে। নানা সময় কটুক্তি করে। বিজেপি যেহেতু একটি সন্ত্রাসী দল তাই এর মাত্রাটা এখন আরও বেশী। অমিত শাহ বাংলাদেশীদের ‘উইপোকা’ বলেছেন। অস্ট্রেলিয়ার কাছে বিশ্বকাপ ক্রিকেটে হেরে যাওয়ার পর শুভেন্দু নামে বিজেপি’র এক বাঙালী নেতা বলেছেন তারা নাকি বাংলাদেশ সৃস্টি করেছেন। দিলীপ ঘোষ নামে আরেকজন বলেছেন তারা নাকি বাংলাদেশকে খাইয়ে পরিয়ে চিকিৎসা দিয়ে বাচিয়ে রেখেছেন। তার ভাষাটা ছিল অবমাননাকর। আওয়ামী লীগের নেতারাতো প্রতিবাদ করবেই না, অধিকাংশ বাংলাদেশী এটা গায়ে মাখছে বলে মনে হয় না। মনোভাবটা এরকম বলছে বলুক না, ওরাতো আমাদের মুক্তিযুদ্ধে সহযোগিতা করেছে। একটা স্বাধীন দেশের জনগনের এরকম মনোভাব হওয়া উচিত নয়। এটা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থী।


ভারতীয়রা যা বলেছে কথাগুলি অন্যায়, কিন্তু পুরোপুরি অসত্য নয়। এ ক্ষেত্রে আমরা কি করতে পারি।

আমরা আমাদের অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে পারি। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ সত্যিই একটি ভারত নির্ভর জাতিতে পরিনত হয়েছে। এজন্য কিছু অত্যবশ্যকীয় কাজ আমাদের এখনই শুরু করা উচিত। দেশের মান মর্যাদা ও ব্যাক্তিগত আত্মসম্মান বোধের জন্য করা উচিত। প্রথমে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতার প্রসঙ্গে আসি। দেশে কৃষিজমি দিনদিন সঙ্কুচিত হয়ে আসছে। সেগুলি সংরক্ষন করতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে কৃষিজমিতে কেউ যাতে শিল্প, কলকারখানা স্থাপন করতে না পারে। ভর্তূকি দিয়ে হলেও কৃষককে পণ্যের ন্যায্য মূল্য দিতে হবে। তাহলে কৃষিউৎপাদন বাড়বে। ভারতীয় পণ্যের ব্যবহার কমাতে হবে। এ ব্যাপারে জনগনকে সচেতন হতে হবে। শুভেন্দু, দিলিপরা যে বলছে বিয়েসাদী উপলক্ষেও বাংলাদেশীরা কলকাতায় কেনাকাটা করতে যায় এটা কেন হবে। এটা উচিত নয়। মোহনদাস গান্ধী স্বদেশী আন্দোলন করে ব্রিটিশদের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে পেরেছিলেন। তাহলে আমরা কেন পারবো না। ভারতীয় কাপড় না পড়লে কি হবে। পুরোটাই মানসিকতার ব্যাপার। এই মানসিকতা বদলাতে হবে। বাংলাদেশে হিন্দী ছবি ও গানের প্রচুর ভক্ত রয়েছে। এটা বন্ধ করা কঠিন। ভারতের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রী এশীয়ার সেরা। বুঝতে পারছি অমিতাভ বচ্চন, শাহরুখ বা মাধুরী দিক্ষিতের মায়াজাল থেকে বের হয়ে আসা যাচ্ছে না। কিন্তু তাই বলে সন্ধ্যা হলেই ঘরে ঘরে স্টার জলসার নাটক দেখতে হবে কেন।


সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে চিকিৎসা সেবা। এটা দ্রুত পরিবর্তন করা সম্ভব হবে বলে মনে হয় না। এখন থেকে পরিকল্পনা করলে আগামী বিশ বছরে চিকিৎসা খাতে ভারত নির্ভরতা কমবে। এই পরিবর্তনের শুরুটা এখনই করতে হবে। সরকারীভাবে ও ব্যাক্তিগত উদ্যোগে। এজন্য একটি মাস্টার প্ল্যান থাকতে হবে। দেশে আধুনিক যন্ত্রপাতিতে সুসজ্জিত হাসপাতালের সংখ্যা অনেক বাড়াতে হবে। আঠার কোটি মানুষের জন্য দেশে আরও ডাক্তার ও টেকনিশিয়ান তৈরী করতে হবে। দুঃখজনক সত্য হলো অতীতের সরকারগুলি এ ব্যাপারে কোন উদ্যোগ নেয়নি। নেতানেত্রীরা বিদেশে চিকিৎসা নিয়েছেন। দেশের সরকারী হাসপাতালগুলি ঘোড়ার আস্তাবল বানিয়ে রেখেছেন। আর প্রাইভেট হাসপাতালগুলিকে গলাকাটার সুযোগ করে দিয়েছেন। একটি দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা কতটুকু নিম্ন মানের হলে রাস্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীরা সর্দিকাশি, কানের চিকিৎসার জন্য বিদেশে চলে যান আর বিরোধীদল নেত্রীকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে আন্দোলন করে।
এবার আসা যাক ব্যাক্তিগত প্রসঙ্গে। পৃথিবীর কোন দেশেই ডাক্তারদের আয় কম নয়। কিন্তু বাংলাদেশের ডাক্তারদের একটি বিরাট অংশ অতিমাত্রায় কমার্শিয়াল। তারা অবশ্যই মেধাবী।

কিন্তু সার্টিফিকেটগুলি পেয়ে যাওয়ার পর আর পড়াশোনা করেন বলে মনে হয় না। চিকিৎসা শাস্ত্রের সর্বশেষ উদ্ভাবনগুলি সম্পর্কে তারা সবসময় অবগত থাকেন না। সমস্যা রয়েছে তাদের মানসিকতায়। তারা রোগীদের পর্যাপ্ত সময় দেন না। সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ব্যাপার হচ্ছে প্রচুর অর্থবিত্ত উপার্জন করার পরও তারা ডায়াগনোস্টিক সেন্টার থেকে কমিশন ও ঔষধ কোম্পানীর রিপ্রেজেন্টেটিভদের কাছ থেকে ঘুষ নেন। ডাক্তাররা সমাজের উচ্চ শিক্ষিত অংশের প্রতিনিধিত্ব করেন। তারা যদি সেবার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসেন এবং অন্তত এই লোভটুকু সম্বরন করেন তাহলে রোগীদের দুর্ভোগ অনেক কমে যায়। আশা করছি অন্তত দেশের স্বার্থে তারা এটুকু করবেন। আর যদি না করেন তাহলে ভারত নির্ভর জাতি হিসেবেই থেকে যেতে হবে আর শুভেন্দু, দিলিপ, অমিত শাহ্দের গালাগাল শুনতেই হবে।

Posted ৯:০০ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৩

Weekly Bangladesh |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

গল্প : দুই বোন
গল্প : দুই বোন

(6364 বার পঠিত)

মানব পাচার কেন
মানব পাচার কেন

(1155 বার পঠিত)

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১
১২১৩১৪১৫১৬১৭১৮
১৯২০২১২২২৩২৪২৫
২৬২৭২৮২৯৩০৩১  
Dr. Mohammed Wazed A Khan, President & Editor
Anwar Hossain Manju, Advisor, Editorial Board
Corporate Office

85-59 168 Street, Jamaica, NY 11432

Tel: 718-523-6299 Fax: 718-206-2579

E-mail: [email protected]

Web: weeklybangladeshusa.com

Facebook: fb/weeklybangladeshusa.com

Mohammed Dinaj Khan,
Vice President
Florida Office

1610 NW 3rd Street
Deerfield Beach, FL 33442

Jackson Heights Office

37-55, 72 Street, Jackson Heights, NY 11372, Tel: 718-255-1158

Published by News Bangladesh Inc.