বৃহস্পতিবার, ৯ মে ২০২৪ | ২৬ বৈশাখ ১৪৩১

Weekly Bangladesh নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত
নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত

এই দৌড় যেন থেমে না যায়

চৌধুরী মোহাম্মদ কাজল   |   বৃহস্পতিবার, ২০ জুলাই ২০২৩

এই দৌড় যেন থেমে না যায়

গত ১৭ জুলাই ঢাকাবাসী বিরল এক দৃশ্য প্রত্যক্ষ করেছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের একজন প্রার্থী প্রাণভয়ে রাজপথ দিয়ে ছুটছেন। সাথে রয়েছে মিডিয়া ও সোশাল মিডিয়ার কিছু কর্মী। তারা ছবি তুলছে। তাকে ধাওয়া করছে দুবৃত্তরা। ধরা পড়লে রক্ষা নেই। তাকে বাচাবার কেউ নেই। পুলিশ বলে দিয়েছে রাজপথ পাহারা দেওয়ার দায়িত্ব তাদের না। সম্ভবত এরকম দৃশ্য সারা বিশ্বে বিরল।

হিরো আলম ছুটছেন। তিনি ভোট চোর নন। তার অপরাধ তিনি নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়েছিলেন। অন্যায় কিছু করেননি। সংবিধান তাকে এ অধিকার দিয়েছে। কিন্তু দুবৃত্তরা সংবিধানের পরোয়া করে না। তিনি আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে স্পর্ধা দেখিয়েছেন। শাস্তি তাকে পেতেই হবে। তাই তাকে ছুটতে হচ্ছে। জোরে, আরও জোরে। হিরো আলম যেন আজ পুরো জাতির প্রতীক হয়ে ওঠেছেন। এক যুগের বেশী সময় ধরে আওয়ামী লীগের দুঃশাসনে জাতি আজ বিধ্বস্ত, বীতশ্রদ্ধ। উদ্ধার পেতে হলে দৌড়াতে হবে। থেমে গেলে চলবে না। হিরো আলম শুরু করেছেন। দৌড়াতে হবে সবাইকে। নির্দিষ্ট লক্ষ্যে না পৌছা পর্যন্ত। এ দৌড় যেন না থামে। এখান থেকেই শুরু হোক স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে জনগনের গনআন্দোলন।


হিরো আলম রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্ব নন। অনেকে তাকে বলে গরীবের বন্ধু। আমি তা মনে করি না। গরীবের জন্য তিনি তেমন কিছু করেছেন বলে শুনিনি। কিছুদিন আগে উপহার হিসেবে পাওয়া একটি গাড়ী বিনামূল্যে এম্বুলেন্স হিসেবে ব্যবহার করতে দেওয়ার কথা বলেছিলেন। জানিনা তিনি প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছেন কিনা। হিরো আলম নির্বাচনকে ওপরে ওঠার একটি প্লাটফর্ম হিসেবে নিয়েছেন। এটা বাংলাদেশে নতুন কিছু নয়। জিয়াউর রহমানের সময় ১৯৭৮ সালে রাস্ট্রপতি নির্বাচনে ১৩ জন প্রার্থী ছিলেন। সেখানেও হিরো আলমের মত কিছু লোক ছিলেন। এরপর ১৯৮১ সালে রাস্ট্রপতি নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ৩৯ জন। প্রধান কয়েকজন প্রার্থী ছাড়া অন্যদের নাম কেউ জানেনা। কিন্তু কাউকেই হিরো আলমের মত পরিণতি ভোগ করতে হয়নি। ঢাকা-১৭ আসনের নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের মোহাম্মদ আরাফাত ও হিরো আলম ছাড়া অন্য প্রার্থীদের কেউ চেনে না।

আরাফাত ও হিরো আলমের মধ্যে মিলের চেয়ে অমিলই বেশী। আরাফাত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। হিরো আলম প্রাইমারী শিক্ষাটাও শেষ করতে পারেননি। আরাফাত শারিরিকভাবে শক্তসামর্থ, হিরো আলম ক্ষীনস্বাস্থ্যের অধিকারী। দুজনের মধ্যে মিলের বিষয়টি হচ্ছে তাদের কেউই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নন। আরাফাত টিভিতে টক শো করে পরিচিতি পেয়েছেন, হিরো আলম ওঠে এসেছেন ইউটিউব, টিকটক ও ফেসবুকের মাধ্যমে। চতুর আরাফাত ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন জিতে নিয়েছেন।


হিরো আলম প্রার্থী হয়েছেন স্বতন্ত্রভাবে। ঢাকা-১৭ এর এই নির্বাচন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা পরিবর্তনের নির্বাচন ছিল না। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হেরে গেলেও দলের কিছু হতো না। তবে আরাফাতের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এ নির্বাচনে হেরে গেলে তার রাজনৈতিক সম্ভাবনারও মৃত্যু ঘটতো। তাই তিনি কোন ঝুকি নিতে চাননি। আর বাংলাদেশের রাজনীতিতে যেহেতু সন্ত্রাসীদের কদর বেশী, আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরাও ভাবল জাতীয় নির্বাচনের আগে তাদের শক্তিমত্তা প্রদর্শনের এটাই শেষ সুযোগ।

এটাকে তারা মূল নির্বাচনের ড্রেস রিহার্সেল হিসেবে নিয়েছিল। হিরো আলম ক্ষীনস্বাস্থ্যের মানুষ হওয়ায় ব্যাপারটা তাদের জন্য আরও সহজ হয়ে ওঠেছিল। তারা নির্বিঘ্নে তাদের সব কলাকৌশল প্রয়োগ করার সুযাগ পেয়ে যায়। কেউ হিরো আলমকে ঘাড়ধাক্কা দিয়ে সামনে ঠেলে দেয়, কেউ পেছন থেকে ওড়ে এসে ফ্লাইং কিক মারে। এক পর্যায়ে হিরো আলম দেখলেন তার পাশে কেউ নেই। পেছনে তাড়া করছে সন্ত্রাসীরা। এরা জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে আসছে। এরা অতীতে লগি বৈঠা দিয়ে রাজপথে মানুষ মেরেছে। দু’চারটা হিরো আলমকে ফেলে দেওয়া তাদের জন্য কিছু না। এরাই বিশ্বজিতকে মেরেছে, আবরারকে খুন করেছে। বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরার ফেসবুকে ভারত বিরোধী পোস্ট দিয়েছিল। তাই ওরা আবরারকে মেরে ফেলেছে। কি আশ্চর্য্য! ভারতের সাথে ওদের সম্পর্ক কি। ভারতে ’জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি দিয়ে মানুষ মারা হয়। এরাও ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে মানুষ খুন করে। তাই ছুটতে হচ্ছে হিরো আলমকে। সাথে সাথে ছুটছে কয়েকজন ক্যামেরাম্যান। ওরা ছবি তুলছে। কিন্তু এইসব সন্ত্রাসীরা ক্যামেরাকে ভয় পায়না। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার ঠিক দুই দিন পর ওরা পল্টন ময়দানে প্রকাশ্যে বেয়নেট দিয়ে খুচিয়ে মানুষ মেরেছিল। তখনও দেশী বিদেশী ফটোগ্রাফাররা ছবি তুলেছিল। জাতির পিতা (?) তাদের ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। এখনও যদি কিছু হয়ে যায় চুপপু সাহেব চুপচাপ বসে থাকবেন না। জয় বাংলার সৈনিক হলে কোন ভয় নেই। আর আমাদের ভয়টা ওখানেই।
আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে যে তারা গত ১৪ বছরে পুলিশ বাহিনীর নিয়োগ ও পদোন্নতিতে ব্যাপক দলীয়করন করেছে। পুলিশরা তার প্রমানও দিয়েছে। হিরো আলমকে যখন মারা হচ্ছিল তখন একজন ইন্সপেক্টর তাকে ধরে কেন্দ্রের বাইরে নিয়ে সন্ত্রাসীদের হাতে তুলে দিয়েছে। পরবর্তীতে যখন একজন ক্যামেরাম্যান এসে তাকে জানাল যে হিরো আলমকে মারা হচ্ছে তখন তিনি বললেন তার দায়িত্ব হচ্ছে ইনার কর্ডন দেখা। বাইরে কি হচ্ছে না হচ্ছে এটা তার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না। ভাল কথা! তাহলে হিরো আলমকে আপনার বেষ্টনীর মধ্যে বসিয়ে রাখলেন না কেন। কেন আউটার কর্ডন নিশ্চিত না করে তাকে শত্রুর হাতে তুলে দিলেন। এই কান্ডজ্ঞানহীন পুলিশ কর্মকর্তার শাস্তি না হলে সেদিনের সেই ঘটনার বিচার সম্পূর্ণ হবে না।


হিরো আলমের বিরুদ্ধে শুরু থেকেই ষড়যন্ত্র চলে আসছিল। প্রথমে মামুনুর রশীদসহ খ্যাত অখ্যাত অনেকেই মিডিয়ায় বলে আসছিলেন তিনি রুচিহীন অযোগ্য একজন ব্যাক্তি। তার প্রতি পুলিশ ও সাংবাদিকদের আচরনও যথেস্ট সম্মানজনক ছিল না। রবীন্দ্র সঙ্গীত গাওয়ার জন্যও পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল। এমন অদ্ভুত ও উদ্ভট ঘটনা কেবল বাংলাদেশেই সম্ভব। সাংবাদিকরাও তাকে এমন সব প্রশ্ন করেছে যা অন্যকোন প্রার্থী হলে তারা করতো না। হিরো আলমকে সব কিছুই সহ্য করতে হয়েছে। চরম বিপর্যস্ত অবস্থায় পুলিশের সাহায্য পাননি হিরো আলম। উপরন্ত, পুলিশ কর্মকর্তারা হিরো আলমের ওপরই দোষ চাপাতে চেয়েছেন। তারা প্রশ্ন তুলেছেন হিরো আলম কেন বিদ্যানিকেতন কেন্দ্রে বার বার গিয়েছেন।

এটা কোন দায়িত্বশীল আচরন হতে পারেনা। অনেকে আবার ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এই জন্য যে হিরো আলম কেন ঢাকা-১৭ আসনে নির্বাচন করতে গেলেন। বনানী, গুলশান অঞ্চলটি নাকি অভিজাত এলাকা। তাই তার সেখানে নির্বাচন করা উচিত হয়নি। তারা এই কথা বলে হিরো আলমকে শাসিয়েছেন ভোট কেন্দ্রের ভেতরেই পুলিশের সামনে। সংবিধান কি ঢাকা-১৭ এলাকাটিকে বিশেষ অঞ্চল হিসেবে ঘোষনা করেছে। এখানে নির্বাচন করতে হলে কি বিশেষ যোগ্যতা থাকা দরকার। এই এলাকাটি যদি অভিজাত লোকদের এলাকা হয় তাহলে তারা হিরো আলমকে ভোট না দিলেই পারে। অভিজাত লোকগুলি কি এতোই নির্বোধ যে তারা হিরো আলমের কথায় প্রভাবিত হয়ে যাবে। যারা এমন কথা বলেছে তাদেরকেও গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনা উচিত ছিল।

বাংলাদেশ স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দী পার করেছে। এখনও যদি দেশে একটি সুষ্ঠু গনতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরী না হয় তাহলে জাতির যোগ্যতা নিয়েই প্রশ্নই ওঠে। এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের করণীয় অনেক। স্বাধীন বাংলাদেশে তারাই সবচেয়ে বেশী সময় ক্ষমতায় থেকেছে। এত দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থেকেও যদি ক্ষমতার লোভ একপাশে রেখে দেশের জন্য কিছু করতে না পারে তাহলে তাদের উদ্দেশ্যই নিয়েই প্রশ্ন ওঠবে। তারা কিজন্য স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিল। ক্ষমতা লাভের জন্য। গনতন্ত্রের কথা বলে তারা স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিল। গনতন্ত্র আজ কোথাও নেই। না আছে দেশে, না আছে দলে। প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে শেখ হাসিনা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় রয়েছেন দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে।

আওয়ামী লীগ গঠিত হয়েছে ৭২ বছর আগে। এর মধ্যে শেখ হাসিনা দলের সভাপতি হিসেবে আছেন ৪২ বছর। জিয়াউর রহমানের শাসনামলে সেই ১৯৮১ সালে যে দেশে ফিরে দলীয় প্রধানের পদে অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন এখনও সেই পদটিতে রয়ে গেছেন। দলীয় ফোরামে কেউ তার নেতৃত্ব চ্যালেঞ্জ করতে পারেনা। তেমনি দেশেও কেউ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কথা বলতে পারেনা। সরকারের রোষানলে পড়ে অনেক রাজনীতিবিদ, লেখক, সাংবাদিক আজ দেশছাড়া। এখন হিরো আলমও প্রাণ বাচাতে আমেরিকা আসার কথা ভাবছেন। দেশে আজ শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা। হিরো আলমের রাজনৈতিক দল নেই। তিনি স্বতন্ত্রপ্রার্থী ছিলেন। তারই এই অবস্থা। অন্যদের কথা বলাই বাহুল্য। হিরো আলম দৌড় শুরু করেছেন। আমাদেরও দৌড়াতে হবে। দৌড়াতে হবে চূড়ান্ত মুক্তি না আসা পর্যন্ত।

Posted ৩:২২ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২০ জুলাই ২০২৩

Weekly Bangladesh |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

গল্প : দুই বোন
গল্প : দুই বোন

(6364 বার পঠিত)

মানব পাচার কেন
মানব পাচার কেন

(1155 বার পঠিত)

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১
১২১৩১৪১৫১৬১৭১৮
১৯২০২১২২২৩২৪২৫
২৬২৭২৮২৯৩০৩১  
Dr. Mohammed Wazed A Khan, President & Editor
Anwar Hossain Manju, Advisor, Editorial Board
Corporate Office

85-59 168 Street, Jamaica, NY 11432

Tel: 718-523-6299 Fax: 718-206-2579

E-mail: [email protected]

Web: weeklybangladeshusa.com

Facebook: fb/weeklybangladeshusa.com

Mohammed Dinaj Khan,
Vice President
Florida Office

1610 NW 3rd Street
Deerfield Beach, FL 33442

Jackson Heights Office

37-55, 72 Street, Jackson Heights, NY 11372, Tel: 718-255-1158

Published by News Bangladesh Inc.