বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১

Weekly Bangladesh নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত
নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত

হুদা ভাইও চলে গেলেন

আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু   |   বৃহস্পতিবার, ২৫ মার্চ ২০২১

হুদা ভাইও চলে গেলেন

আমি হুদা ভাইয়ের সহকর্মী হওয়ার আগে দীর্ঘদিন তাঁর প্রতিবেশি ছিলাম। কিন্তু হৃদ্যতা চার দশকের। সব সম্পর্কের অবসান ঘটল গত ২১ মার্চ রোববার। তিনি ইন্তেকাল করেছেন। আচরিত অভ্যাসবশত কারও মত্যু সংবাদ পেলে “ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইিহি রাজিউন” উচ্চারণ করি। এর বাংলা অর্থও বুঝি — ‘আমরা তো আল্লাহরই এবং নিশ্চয়ই তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তনকারী’। নিজেকে আশ্বস্ত করি “কুল্লু নাফসিন জায়েকাতুল মওত” — ‘পৃথিবীর সকল জীবকে মৃত্যুর স্বাদ নিতে হবে’। তা সত্ত্বেও কারও কারও মৃত্যুতে বুকের ভেতরটা চিন চিন করে। অনেকের মৃত্যুতে নীরবে অশ্রু বিসর্জন করি। আমার মায়ের মৃত্যুতে ডুকরে কেঁদেছি। নূরুল হুদা ভাইয়ের মৃত্যু আমাকে কষ্ট দিয়েছে। তাঁর সাথে জড়িত স্মৃতিগুলো মনে পড়েছে।


আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালে যখন টুকটাক রিপোর্টিং করতাম, তখন তিনি বাংলাদেশ অবজারভারের স্টাফ রিপোর্টার। মাঝে মাঝে বিভিন্ন এসাইনমেন্ট কভার করতে গিয়ে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ হতো। বিভিন্ন দৈনিকের রিপোর্টারদের মধ্যে বয়সে আমার চেয়ে সামান্য সিনিয়র হলেই সমীহ করতাম। বিশেষ করে ছাত্রত্ব শেষ না হওয়ার কারণে নিজেকে এমনিতেই জুনিয়র জুনিয়র লাগত। পুরনো রিপোর্টাররা বলতে গেলে ফিরেও তাকাতেন না। গায়ে পড়ে কথা বলার অভ্যাস নেই আমার, অতএব চুপচাপ বসে এসাইনমেন্ট কভার করে সিঙ্গারা-চা খেয়ে আগেভাগে অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করতাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমরা যারা এক সঙ্গে বিভিন্ন সংবাদপত্রে রিপোর্টিং শুরু করেছিলাম — আলমগীর হোসেন, হাসান হাফিজ, মনজুরুল আলম (মরহুম), শাহানা বেগম (কানাডা প্রবাসী), লিয়াকত আলী (খাদ্য বিভাগ থেকে অবসরপ্রাপ্ত), হায়দার ভাই (অষ্ট্রেলিয়া প্রবাসী) – তাদের কাউকে অনুষ্ঠানে পেলে স্বচ্ছন্দ বোধ করতাম। অন্য রিপোর্টারদের চেয়ে নূরুল হুদা ভাই এর ব্যতিক্রম ছিলেন। তিনি রিপোর্টার সারিতে নতুন কাউকে দেখলে এগিয়ে এসে হাত বাড়িয়ে দিতেন। পরিচয় জানতে চাইতেন। হেসে কথা বলতেন, চার দশক আগের প্রথম দেখা তাঁর অমলিন হাসি কখনো মুছে যেতে দেখিনি।

সত্তরের দশকের শেষ দিকেও ঢাকায় হাতে গণা মাত্র কয়েকটি দৈনিক। যারা অনুষ্ঠান আয়োজন করেন তারা বলতে গেলে সব রিপোর্টারকে নামে জানেন, যথেষ্ট মর্যাদা দেন। ধীরে ঢাকার প্রায় সব দৈনিকের রিপোর্টারের সঙ্গে চেনাজানা হয়ে হয়ে যায়। কিন্তু যারা আন্তরিক হন তাদের মধ্যে হুদা ভাই অন্যতম। কোনো কিছু বুঝতে না পারলে বুঝিয়ে দেন। আমিও নৈকট্য অনুভব করি, যা বরাবর বজায় ছিল। দিনে দিনে আমার বয়স বেড়েছে। দু’তিনটি দৈনিকে বার্তা সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে ফেলেছি। মাঠে ময়দানে রিপোর্টিং এর কাজ আর ছিল না। হুদা ভাই মাঝেমধ্যে ফোনে খোঁজ নিতে ভুলতেন না। মীরপুরে সাংবাদিক আবাসিক এলাকায় এক খন্ড জমি বরাদ্দ পেয়েছিলাম। পঁচানব্বই সালের কোনো এক সময় হুদা ভাই বলেন যে উনি মীরপুরে বাড়ি নির্মাণ কাজে হাত দিয়েছেন। একদিন দেখতে যাই। সাংবাদিক হাউজিংয়ে ১৭৯টি প্লটের মধ্যে শুধু তাঁর বাড়িই পরিকল্পিতভাবে নির্মিত হচ্ছিল। এর বাইরে দু’জন চালা ঘর তৈরি করে বসবাস শুরু করেছিলেন। আমি উৎসাহ বোধ করি।
কোথায় কার কাছে নকশা তৈরি করাতে হবে, কিভাবে রাজউক থেকে প্ল্যান পাস করাতে হবে, হুদা ভাইয়ের পরামর্শ নিয়ে কাজ শুরু করি। তাঁর তিনতলা ভবনের কাজ যখন শেষ হওয়ার পথে তখন আমার বাড়ির নির্মাণ কাজ শুরু হয়। তিনি যখন সপরিবারে নতুন বাড়িতে বসবাস শুরু করেন তখন তখন আমার বাড়ি মাথা উঁচু করেছে। অনেক সময় তিনি এসে মিস্ত্রিদের পরামর্শ দেন। তাঁর ঠিক করে দেওয়া ইলেকট্রিক ঠিকাদার লাঙ্গলকোটের রুহুল আমিন জঁযঁষ অসরহ বিদ্যুতের কাজ করে। বিদ্যুৎ সংযোগের অনুমতি পাওয়ার আগে তাঁর বাড়ি থেকেই আমার বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ দিতেও তিনি কার্পণ্য দেখাননি। আমি কৃতজ্ঞতা অনুভব করি।


উনিশ’শ পচানব্বই এর শেষদিকে আমি নির্মাণকাজ শেষ না হওয়া বাড়িতে বসবাস শুরু করি। ইতোমধ্যে হুদা ভাই বাংলাদেশ অবজারভার ছেড়ে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থায় (বাসস) যোগ দিয়েছিলেন। হুদা ভাইয়ের প্রতিবেশি হওয়ার কারণে অনেক সময় একসাথে রিকশায় মেইন রোড পর্যন্ত এসে বাসে উঠি। আমি ফার্মগেটে নেমে যাই তেজগাঁও শিল্প এলাকায় বাংলাবাজার পত্রিকা অফিসে যাই, হুদা ভাই পল্টনে বাসস তাঁর অফিসে যান।। ১৯৯৯ সালের মাঝামাঝি সময়ে বাংলাবাজার পত্রিকা ছেড়ে দৈনিক বাংলার বাণীর বার্তা সম্পাদক হিসেবে যোগ দেই। ওই বছরের অক্টোবর মাসের প্রথম দিকে দিল্লিতে এক সফরে যেতে হয়। আমি ছাড়াও ছিলেন বাসস থেকে হুদা ভাই, ইত্তেফাকের গিয়াসউদ্দিন আহমেদ এবধংঁফফরহ অযসবফও ডেইলি স্টারের আবদুল জলিল ভূঁইয়া । ওই সময় দিল্লিতে বাসস এর প্রতিনিধি ছিলেন ইহসানুল করিম হেলাল ভাই (বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব) এবং বাংলাদেশ হাইকমিশনে প্রেস মিনিষ্টার হিসেবে ছিলেন বাংলাদেশ অবজারভারের বিশেষ সংবাদদাতা আতিকুল ইসলাম ভাই। তাদেরকে জানিয়ে দেয়া হয়েছিল আমরা আসছি। হেলাল ভাই জলিল ভূঁইয়াকে ফরমায়েশ দিযেছিলেন আমরা যাতে দিল্লির সাংবাদিকদের আপ্যায়ন করার জন্য ঢাকা এয়ারপোর্টের ডিউটি ফ্রি শপ থেকে ব্ল্যাক লেভেল হুইস্কি নিয়ে যাই। কারণ দিল্লিতে বিদেশি পানীয়ের ওপর ৬০০ শতাংশ শুল্ক। সাধারণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। আমরা আমাদের পাসপোর্টের বিপরীতে এক বোতল করে ব্ল্যাক লেবেল হুইস্কি কিনে নেই। সম্ভবত তখন এক বোতল ব্ল্যাক লেবেলের দাম ২৫ ডলার ছিল। আমি কখনো মদ্য পান করি না। এ ব্যাপারে আমি মহাকট্টর। আমার পানাসক্ত অনেক বন্ধুবান্ধব আছেন। তাদের শত পীড়াপীড়িতেও কখনো চেখে দেখিনি। আমি ধুমপানও করি না। কিন্তু যারা পান করে তাদের অভ্যাসে বাদও সাধিনি। কেউ যদি এ ধরনের উপহার পেয়ে আনন্দ লাভ করে আমি তাকে সে আনন্দ দান থেকে বঞ্চিত করারও পক্ষপাতী নই।

দিল্লি ইন্দিরা গান্ধী ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে হাইকমিশনের গাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছিলেন আতিকুল ইসলাম ভাই। তিনি দিল্লির বাঙালি প্রধান এলাকা সি আর পার্ক এলাকায় আমাদের জন্য রেষ্টহাউজও ঠিক করে রেখেছিলেন। বেশ রাত হয়ে গিয়েছিল। ড্রাইভার সকালে এসে আমাদের হাইকমিশনে নিয়ে যাবেন। জলিল ভূঁইয়া ও আমি এক রুমে, হুদা ভাই ও গিয়াস ভাই অন্য রুমে। দিল্লি আমার পরিচিত নগরী। ১৯৯২-৯৩ সালে ভারতীয় পার্লামেন্টের ইন্সটিটিউট অফ কন্সটিটিউশনাল এন্ড পার্লামেন্টারি স্টাডিজে (আইসিপিএস) এক ফেলোশিপ প্রোগ্রামে কাটিয়েছি। নূরুল হুদা ভাইয়েরও পরিচিত নগরী। তিনি ১৯৯৪-৯৬ পর্যন্ত বাসস এর প্রতিনিধি হিসেবে দিল্লিতে ছিলেন। সকালে ড্রাইভার এসে আমাদের হাইকমিশনে নিয়ে যায়। আতিক ভাইয়ের সঙ্গে অনেকদিন পর দেখা হলো। তিনি হাইকমিশনার মোস্তফা ফারুক মোহাম্মদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। মিলিটারি অ্যাটাচিসহ অন্যান্য কর্মকর্তাদের সঙ্গেও পরিচয় হয়।


ভারতে তখন ত্রয়োদশ লোকসভা নির্বাচন চলছিল। লোকসভা নির্বাচন প্রতি পাঁচ বছর পর অনুষ্ঠিত হলেও এটি ছিল তিন বছরের মধ্যে তৃতীয় লোকসভা নির্বাচন। ১৯৯৬ সালে একাদশ লোকসভা নির্বাচনের পর গঠিত সরকার সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়ে ফেললে সরকারের পতন ঘটে। ১৯৯৮ সালে দ্বাদশ লোকসভা নির্বাচনে অটল বিহারি বাজপেয়ীর নেতৃত্বে গঠিত সরকারের পতন ঘটে তামিল নাড়ুর জয়াললিতা দল সরকারের ওপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করলে। অতএব ১৯৯৯ সালে ত্রয়োদশ লোকসভা নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রয়োজন পড়ে। সমগ্র ভারতে লোকসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এক মাস জুড়ে এক সপ্তাহ পর পর পাঁচ দিনে।
বিজেপির নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক এলায়েন্স- এনডিএ লোকসভার ৫৪৫ আসনের মধ্যে ২৯৯ আসনে জয়ী হয়। রাজধানী হিসেবে দিল্লি ইউনিয়ন টেরিটরির মর্যাদা ভোগ করে। দিল্লির সাতটি নির্বাচনী এলাকার প্রতিটিতে বিজেপির প্রার্থীরা জয় লাভ করে। কাছাকাছি সময়ে দিল্লি মিউনিসিপাল কর্পোরেশনের নির্বাচনও অনুষ্ঠিত হয়েছিল এবং বিজেপির মেয়র এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ সংখ্যক কমিশনার নির্বাচিত হয়েছিলেন। এখন দিল্লি নগরী উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্ব মিউনিসিপাল কর্পোরেশন নামে তিনটি পৃথক কর্পোরেশন হলেও দিল্লি একটি কাঠামোর অংশ ছিল। আমাদের ভ্রমন কর্মসূচিতে মিউনিসিপাল কর্পোরেশন পরিদর্শন ছিল। আমরা সেখানে গিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশ দেখতে পাই। নগরীর বিজেপি নেতারা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তারা আমাদের অভ্যর্থনা জানান। কনফারেন্স রুমে নিয়ে আমাদের মিষ্টিমুখ করান। আমরা তাদের বিজয়ে অভিনন্দন জানাই। আমাদের পক্ষ থেকে হুদা ভাই বক্তব্য দেন।

দুপুরে হেলাল ভাই দিল্লি প্রেসক্লাবে আমাদের ছাড়াও বেশ ক’জন ভারতীয় সিনিয়র সাংবাদিককে মধ্যাহ্নভোজে আমন্ত্রণ করেছিলেন। প্রেসক্লাবের সামনে বিশাল এক বোর্ডে নির্বাচনের রাজ্য ও দলওয়ারী ফলাফল দেখতে শোভা পাচ্ছিল এবং মানুষের ভিড়ে রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ। প্রেসক্লাবের ভেতরেও সাংবাদিকদের প্রচুর ভিড়। আশপাশের দেশগুলো ছাড়াও ইউরোপীয় দেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের অনেক সাংবাদিক নির্বাচন কভার করতে এসেছেন। আমাদের সঙ্গে যোগ দিলেন ভোরের কাগজের শ্যামল দত্ত ও প্রথম আলোর সানাউল্লাহ লাবলু। শ্যামল দত্ত সম্ভবত তিনি কানাডা থেকে দিল্লিতে এসেছেন।

মধ্যাহ্ন ভোজ শেষে হেলাল ভাই আমাদের ইন্ডিয়া গেট, কুতুব মিনার ও দিল্লি হাটে ঘুরিয়ে রেষ্ট হাউজে পৌঁছে দিলেন। রাতে আতিক ভাইয়ের বাসায় দাওয়াত। তিনিও কয়েকজন বিশিষ্ট ভারতীয় সাংবাদিককে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। হুদা ভাই ও গিয়াস ভাই পরিকল্পনা করেছেন আজমীর যাবেন খাজা মঈনুদ্দীন চিশতির মাজারে যাবেন। ভোরে ওঠেই তারা চলে গেলেন। আমি ও জলিল ভূঁইয়া আজমীর না গিয়ে দিল্লিতেই রয়ে গেলাম এবং এখানে ওখানে ঘুরে কাটালাম। রাতেই ফিরে এসেছেন তারা। আমাদের জন্য আজমীর শরীফ থেকে পবিত্র সূতা ও তবারক এনেছেন। হুদা ভাইয়ের বেশ কিছু পরিচিত লোক ছিল দিল্লিতে।
সকালে এক আবুল ফজল এনক্লেভে এক মুসলিম শিল্পপতির বাসায় নাশতার দাওয়াত। আবুল ফজল এনক্লেভ যমুনা তীবরর্তী একটি সুন্দর আবাসিক এলাকা। শিল্পপতির নাম মনে নেই। টেক্সটাইল মিলের মালিক। ভদ্রলোক ও তাঁর স্ত্রী হুদা ভাইকে পেয়ে আবেগাপ্লুত। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে হুদা ভাইয়ের স্ত্রী ও তাঁর তিন মেয়ের কথা জানতে চাইলেন। হুদা ভাই সপরিবারে দিল্লিতে ছিলেন এবং পরিবারটির সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ট হয়ে ওঠেছিলেন। রাজকীয় নাশতার আয়োজন করেছেন ভদ্রলোক। বিদায় নেওয়ার সময় আমাদের চার জনের জন্য চারটি থান কাপড়ের রোল আনলেন। প্রতিটিতে চল্লিশ গজ করে কাপড়। শেষ পর্যন্ত আমরা একটি রোল নিতে রাজি হলাম। সি আর পার্কে এসে দর্জির দোকানে নিয়ে কেটে ভাগ করে নিলাম। রাতে হেলাল ভাইয়ের বাসায় দাওয়াত ছিল। পরদিন সেন্ট্রাল মার্কেটে কিছু কেনাকাটা করে বিকেলের ফ্লাইটে ঢাকায় চলে আসি।

কিন্তু ২০০১ সালের এপ্রিলে বাংলার বাণী বন্ধ হয়ে যায়। হুদা ভাই বাসায় ্এসে সহানুভূতি জানান। আমি আমার মাসিক ম্যাগাজিন ঢাকা ডাইজেষ্টে সময় ব্যয় করি। বেকারত্ব যত সাময়িক হোক না কেন, আর্থিক কষ্ট যদি নাও হয়, আইডেনটিটি ক্রাইসিস বড় হয়ে ওঠে। সেজন্য মানসিক যাতনা অবশ্যই হচ্ছিল। হুদা ভাই প্রায়ই আসতেন সাহচর্য দিতে। অনেক কথা হতো তাঁর সঙ্গে। ইতোমধ্যে তাঁর বড় মেয়ের বিয়ে হয়েছিল লাঙ্গলকোটের এক ইঞ্জিনিয়ার ছেলের সঙ্গে। অমায়িক ছেলে। তাঁর শ্বশুরের বন্ধু বলে মাথা তুলে কথা বলে না। বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম ঘধবস ঘরুধস তখন এটিএন বাংলার চিফ নিউজ এডিটর। আমরা বাংলাবাজার পত্রিকায় কিছুদিন সহকমী ছিলাম। বাংলার বাণীর খবর জানার পর তিনি আমাকে এটিএন বাংলায় যোগ দিতে বলেন। চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান ও উপদেষ্টা সাইফুল বারীর সঙ্গে আলোচনা চূড়ান্ত করে ফেলেন। আমি যোগ দিতে সময় নিচ্ছিলাম। কারণ এ সময়ে বাসস এ আমার নিয়োগ নিয়ে কথা হচ্ছিল। সাইফুলু বারী সাহেব ফোন করে জানতে চান আমি কবে থেকে এটিএন বাংলায় যোগ দিচ্ছি। আমি তাকে জানাই যে আমি এসে কথা বলছি। তাঁর সাথে দেখা করে বাসস এ নিয়োগের সম্ভাবনার কথা বলি। তিনি বলেন যে বাসস এ নিয়োগ হলে এটিএন বাংলায় আসার প্রয়োজন নেই। না হলে যাতে অবশ্যই তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করি।

একটু বিলম্ব হলেও বাসস এ নিয়োগ লাভ করি। আমি যেহেতু আগে ইংরেজি সাংবাদিকতা করিনি, সেজন্য ধরেই নিয়েছিলাম আমাকে বাংলা সেকশনে দেয়া হবে। নিয়োগপত্রে ইংরেজি সেকশনে যোগ দেয়ার কথা থাকায় দ্বিধার মধ্যে পড়ে যাই। উদ্ধার করতে আসেন হুদা ভাই ও সৈয়দ আবুল মাকসুদের মতো সজ্জনরা। আমাকে সাহস দেন। আমি উৎসাহিত হই। হুদা ভাইয়ের সহকর্মী হতে পারার আনন্দও ছিল। বাসস এ আমরা এক সঙ্গে প্রায় পাঁচ বছর কাজ করি। হুদা ভাইয়ের বয়স ষাট পূর্ণ হলে তাঁকে অবসরে যেতে হয়। আমি মীরপুর থেকে বনানী চলে এসেছিলাম। কিন্তু মীরপুর নিয়মিতই যেতে হতো বাড়ির দেখাশোনা জন্য। হুদা ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করতাম তার বাসায় অথবা হাউজিং সোসাইটির অফিসে। অত্যন্ত সক্রিয় ছিলেন তিনি।

সোসাইটির সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত বছর তাঁর সঙ্গে সর্বশেষ কথা হয়েছে টেলিফোনে। অসুস্থতার কথা একবারও বলেননি। স্বভাবসুলভ হেসে কথা বলেছেন। আমার কথা জানতে চেয়েছেন। দীর্ঘদিন দেখা হয়নি বলে আফসোস করেছেন। আমিও তাঁর সাহচর্য থেকে বঞ্চিত হওয়ার কথা বলেছি। এত শিগগির চলে যাবেন ভাবতেও পারিনি। মৃত্যু পরিকল্পনা করে আসে না। যাকে যেতে হবে তিনিও জানেন না। কাছের লোকজনও জানে না। প্রতি মুহূর্তে মৃত্যুর আশঙ্কার সাথে জীবনের আশাও থাকে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মৃত্যুই অনিবার্য। হুদা ভাইয়ের পরকালীন শান্তি কামনা করি।

advertisement

Posted ১২:৩০ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৫ মার্চ ২০২১

Weekly Bangladesh |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

আমরা মরি কেন?
আমরা মরি কেন?

(642 বার পঠিত)

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০  
Dr. Mohammed Wazed A Khan, President & Editor
Anwar Hossain Manju, Advisor, Editorial Board
Corporate Office

85-59 168 Street, Jamaica, NY 11432

Tel: 718-523-6299 Fax: 718-206-2579

E-mail: [email protected]

Web: weeklybangladeshusa.com

Facebook: fb/weeklybangladeshusa.com

Mohammed Dinaj Khan,
Vice President
Florida Office

1610 NW 3rd Street
Deerfield Beach, FL 33442

Jackson Heights Office

37-55, 72 Street, Jackson Heights, NY 11372, Tel: 718-255-1158

Published by News Bangladesh Inc.