শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ | ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

Weekly Bangladesh নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত
নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত

সাংবাদিক মূসা ভাইয়ের ইন্তেকাল

আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু   |   বৃহস্পতিবার, ২২ এপ্রিল ২০২১

সাংবাদিক মূসা ভাইয়ের ইন্তেকাল

মূসা ভাই আমাদের ছেড়ে গেলেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। আহমেদ মূসা। সিনিয়র সাংবাদিক, লেখক ও নাট্যকার। গত প্রায় এক দশক যাবত তিনি যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ছিলেন। শারীরিকভাবে বেশ অসুস্থতায় কাটাচ্ছিলেন তিনি। নিউইয়র্কে শীত মওসুমে বাতাসে অক্সিজেনের ঘাটতিতে নি:শ্বাস নিতে কষ্ট হতো তাঁর। শেষবার যখন কথা হয় তখন তিনি নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়ার স্টেট ফ্লোরিডায় চলে যাওয়ার কথা ভাবছেন বলে জানিয়েছিলেন। ফ্লোরিডার টেম্পায় চলেও গেছিলেন নিউইয়র্ক ছেড়ে। তাঁর ফুসফুসে দীর্ঘদিন ধরেই সমস্যা ছিল এবং বছরখানেক আগে ক্যান্সার ধরা পড়েছিল। কেমোথেরাপি চলছিল। ক্যান্সার এখনও দুরারোগ্য ব্যাধি। উন্নত চিকিৎসায় কিছু উপশম ও আয়ু কিছুটা প্রলম্বিত করা গেলেও শেষ পর্যন্ত আল্লাহর ইচ্ছাই চূড়ান্ত। আজ শনিবার তিনি মারা গেছেন। আমি তার রুহের মাগফিরাত কামনা করি।

আহমেদ মূসা ভাইয়ের সঙ্গে ঢাকায় যতো না দেখা হয়েছে, তার চেয়ে বেশি দেখা হতো নিউইয়র্কে। তার সঙ্গে শেষ সাক্ষাৎ ছিল দীর্ঘ। ২০১৮ সালে সামারের এক সন্ধ্যায় জ্যাকসন হাইটসে মঈনুদ্দীন নাসেরের অফিসে আমরা তিনজন- মূসা ভাই, মঈনুদ্দীন নাসের ও আমি আড্ডা দিতে বসে রাতটাই প্রায় কাবার করে দিয়েছিলাম। সমমনা না হলে আমি কানো আসরেই দীর্ঘ সময় কাটাই না। আমার কথা ফুরিয়ে যায়। চুপচাপ অন্যের কথা শুনতে চাই না বলে ওঠে আসি। কিন্তু মঈনুদ্দীন নাসেরের অফিসে যদি অন্য কোনো লোক না থাকে তাহলে আমরা নানা বিষয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলি। আমাদের কথায় পরনিন্দা বা পরচর্চা থাকে না। সেদিন মূসা ভাই যোগ দেয়ায় আলোচনার প্রসঙ্গ ও পরিসর আরও বেড়েছিল। আমরা রাজনীতি, সাংবাদিকতা, লেখালেখি, প্রবাস জীবন নিয়ে আলোচনা করি। আমাদের আলোচনা শেষ হয় না। আহমেদ মূসা ভাই বয়সে আমার বছর দুয়েকের ছোটো, মঈনুদ্দীন নাসের আমাদের দু’জনেরই ছোটো। কিন্তু আমরা তিনজনই একে অন্যকে ‘ভাই’ সম্বোধন করি।


মূসা ভাই ২০১১ সালে নিউইয়র্কে আসেন। ভাবি, অর্থ্যাৎ মূসা ভাইয়ের স্ত্রী ডাইভারসিটি ভিসা (ডিভি) লটারিতে যুক্তরাষ্ট্রে ইমিগ্রান্ট হওয়ার সুযোগ পান, মূসা ভাই তার সঙ্গে এসে প্রবাস জীবন শুরু করেন। এরপর যুক্তরাষ্ট্রে আসে তার ছেলে ও মেয়ে। এখানে আসার পর থেকেই তার সঙ্গে আমার ঘন ঘন যোগাযোগ হতে থাকে। তিনি তার নানা ধরনের শারীরিক বৈকল্যের কথা বলেন। ইমিগ্রেশনের কাগজপত্র নিয়মিতকরণের বিলম্বের কারণে তখনও হেলথ ইন্স্যুরেন্স হয়নি। সাপ্তাহিক বাংলাদেশ সম্পাদক ডা: ওয়াজেদ এ খান যুক্তরাষ্ট্রে পেশা হিসেবে চিকিৎসার পরিবর্তে সাংবাদিকতা বেছে নিয়েছেন। তবুও পরিচিত অনেকে তার পরামর্শ গ্রহণ করে। মূসা ভাইও তার কিছু শারীরিক সমস্যার আশু চিকিৎসার প্রয়োজনের কথা বললে তিনি তাকে সাপ্তাহিক বাংলাদেশ অফিসে আসতে বলেন এবং ডাক্তার মুশতাককেও অফিসে আমন্ত্রণ জানান। ডা: মুশতাক তাকে চিকিৎসা সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেন। পরে ইন্স্যুরেন্স হয়ে যাওয়ার পর তিনি যথাবিহিত চিকিৎসা গ্রহণ করছিলেন। কিন্তু শীতকাল তার জন্য অসহনীয় ছিল এবং প্রথম দিকে বেশ ক’বছর প্রতি শীত মওসুমে দেশে চলে যেতেন। আমার অফিসে তিনি শেষবার এসেছিলেন ২০১৬ সালে। সাথে নিয়ে আসেন সামরিক বিষয়ে না লেখার প্রচলিত ধারাকে ভেঙে এগিয়ে আসা সাংবাদিক, সম্পর্কে আমার ভাতিজি জামাই আবু রুশদকে নিয়ে। আবু রুশদ তার কানেকটিকাটের এক বিশ্ববিদ্যালয়ে তার ছেলের ভর্তি সংক্রান্ত কাজে ছেলেকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন।

তিনি বিএনপি’র রাজনৈতিক আদর্শে উদ্বুদ্ধ ছিলেন এবং দীর্ঘদিন বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম দফতর সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে তাকে একবার জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক এবং দ্বিতীয় বার সোনারগাঁও লোকশিল্প যাদুঘরের পরিচালক পদে নিয়োগ দিয়েছিল। তিনি যোগ্যতার সঙ্গে তার দায়িত্ব পালন করেন। বিএনপির সাবেক মহাসচিব আবদুল মান্নান ভূঁইয়া এবং ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার অত্যন্ত ঘনিষ্ট ছিলেন তিনি। জাতিসংঘের উর্ধতন কর্মকতা কবি কাজী জহিরুল ইসলাম অত্যন্ত উদ্যোগী মানুষ। ২০১১ সালে নিউইয়র্কে আসার পর থেকে তিনি প্রবাসী কবি, লেখকদের নিয়ে “ঊনবাঙাল” নামে পদ ও পদবীবিহীন একটি সংগঠন গড়ে তোলেন এবং তার সুপরিসর বাড়িকে “ঊনবাঙাল” এর সাহিত্য আড্ডার জন্য উন্মুক্ত করে দেন। সেই আড্ডায় সকল রাজনৈতিক চিন্তাচেতনার কবি লেখকরা অংশগ্রহণ করছে। আমি দেশে আমার সাংবাদিকতা পেশার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সংগঠনের বাইরে অন্য কোনো ধরনের সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম না, কোনো সাহিত্য আসরেও অংশগ্রহণ করিনি। কিন্তু “উনবাঙাল” এর সঙ্গে শুরু থেকেই যুক্ত আছি। মূসা ভাই ঊনবাঙাল এর বেশ ক’টি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছেন। তিনি তার নতুন লেখা পাঠ করেছেন। লেখা নিয়ে আলোচনা করেছেন। তার লেখার পরিকল্পনা সম্পর্কে বলেছেন। আমরা এক সঙ্গে স্থানীয় টেলিভিশনেও সাহিত্য বিষয়ে আলোচনায় অংশ নিয়েছি।


মঈনুদ্দীন নাসেরের অফিসে ২০১৮ সালের সামারের সেই সন্ধ্যার আলোচনা ফুরোবার ছিল না। রাত বারোটা পেরিয়ে গেছে। বিলম্ব দেখে আমার স্ত্রী ফোন করেছে। মূসা ভাইকে ভাবি ফোন করেছেন। আমরা ‘এই তো রওয়ানা দেব’ বললেও চেয়ার থেকে ওঠা হয় না। হঠাৎ মূসা ভাই বলে ওঠেন, অনেকদিন খোকা ভাইয়ের সঙ্গে দেখাসাক্ষাৎ হয়নি। মঈনুদ্দীন নাসের বলেন, চলুন যাই, খোকা ভাইকে দেখে আসি। আমি বলি, এতো রাতে। নাসের জানান যে খোকা ভাই সারা রাত জেগে বাংলাদেশের খবর দেখেন, খেলা দেখেন। রাতই তার দিন। রাত একটা পেরিয়ে গেছে। আমরা মঈনুদ্দীন নাসেরের গাড়িতে ওঠে বসি। খোকা ভাইয়ের সঙ্গে সাক্ষাতের পর নাসে আমাকে জ্যামাইকায়, মূসা ভাইকে ওজোন পার্কে নামিয়ে দিয়ে সিটির আরেক প্রান্তে ব্রঙ্কসে নিজের বাসায় যাবেন। খোকা ভাই কুইন্সের করোনা পার্ক এলাকার এক বাড়িতে থাকতেন। ক্যান্সারের চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। ঢাকায় তার যে ব্যস্ততা থাকতো, এখানে তা ছিল না। প্রায়ই তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ হতো, কখনো তাঁর বাসায়, কখনো আমাদের অফিসে, কখনও বা কোনো সভায়। বিনা নোটিশে রাতের বেলায় অফিসে চলে আসতেন। আমরা এক সঙ্গে রেষ্টুরেন্টে গিয়ে খাওয়া-দাওয়া করতাম। খোকা ভাই পরিচিত মুখ। রেষ্টুরেন্টে লোকজন ভিড় করতো। হাত মেলাতে চাইতো। ছবি তোলার ইচ্ছা প্রকাশ করতো। খোকা ভাই সজ্জন মানুষ ছিলেন। কাউকে হতাশ করতেন না। সবাইকে বলতেন তাঁর জন্য দোয়া করতে।

রাত একটার পর খোকা ভাইয়ের বাসায় গেলাম। তিনি ইউরোপিয়ান লীগের ফুটবল খেলা দেখছিলেন। আমাদের দেখে খুশি হলেন। মূসা ভাই অনেকদিন ধরে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন না বলে অনুযোগ করলেন। মূসা ভাই তাঁর ব্যাখ্যা দিলেন এবং নিজের শারীরিক অবস্থার কথাও জানালেন। পরবর্তী প্রায় দুই ঘন্টা যাবত আমরা বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে কথা বললাম। তিনি বিএনপির পরিকল্পনাহীন রাজনীতি, নেতৃত্বের দেউলিয়াত্ব নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করলেন। তাঁর নিজের ওপর ও অন্যান্য নেতার ওপর দায়েরকৃত মামলাগুলোর সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে বললেন। আমরা যখন ওঠলাম তখন রাত তিনটা বাজে। মঈনুদ্দীন নাসের আমাকে বাসায় পৌছে দিয়ে মূসা ভাইকে পৌঁছে দিতে চলে গেলেন। এরপর তার সঙ্গে আর দেখা হয়নি। কয়েকবার টেলিফোনে তার শারীরিক অবস্থা ও তার পরিকল্পিত আত্মজীবনী লেখার এগোচ্ছে কিনা খোঁজ নিয়েছি। শেষ পর্যন্ত মূসা ভাই চলে গেলেন। তিনি তার আত্মজীবনী শেষ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। আল্লাহ তাঁকে বেহেশত নসীব করুন।


advertisement

Posted ১১:৪৭ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২২ এপ্রিল ২০২১

Weekly Bangladesh |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

আমরা মরি কেন?
আমরা মরি কেন?

(643 বার পঠিত)

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০  
Dr. Mohammed Wazed A Khan, President & Editor
Anwar Hossain Manju, Advisor, Editorial Board
Corporate Office

85-59 168 Street, Jamaica, NY 11432

Tel: 718-523-6299 Fax: 718-206-2579

E-mail: [email protected]

Web: weeklybangladeshusa.com

Facebook: fb/weeklybangladeshusa.com

Mohammed Dinaj Khan,
Vice President
Florida Office

1610 NW 3rd Street
Deerfield Beach, FL 33442

Jackson Heights Office

37-55, 72 Street, Jackson Heights, NY 11372, Tel: 718-255-1158

Published by News Bangladesh Inc.