আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু | বৃহস্পতিবার, ০৬ মে ২০২১
আমরা যুদ্ধ ও মহামারীতে অগণন মানুষের মৃত্যুর কথা জানি। গত একটি বছর ধরে আমরা প্রত্যক্ষ করছি যে কত স্বল্প সময়ে মৃত্যু সর্বব্যাপী হয়ে উঠতে পারে। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বিশ্বজুড়ে মৃতের সংখ্যা ৩২ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। একক দেশ হিসেবে বিশ্বের সর্বশক্তিমান দেশ যুক্তরাষ্ট্রে সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষের মৃত্যু ঘটেছে এই ভাইরাস সংক্রমণে। গতকাল ৪ মে পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে মারা গেছে ৫ লাখ ৮৩ হাজারের অধিক লোক। বিপুল সংখ্যক মৃত্যুর ঘটনা আমাদেরকে আরও সহজভাবে স্মরণ করিয়ে দিয়েছে যে আমরা মারা যাই। মৃত্যুর অনিবার্যতা নিয়ে কারও সংশয় না থাকলেও জীবিত প্রতিটি মানুষকে করোনা মহামারী মৃত্যুর এই উপলব্ধিকে মনে গেঁথে দিয়েছে। একটি হচ্ছে অন্যদের মৃত্যুকে স্বীকার করা, আরেকটি হচ্ছে, আমাদের নিজেদের মৃত্যুকে মেনে নেওয়া। এটি শুধু আবেগের কথা নয়, ধারণা করাটাও অনেকের জন্য কঠিন। এজন্য মৃত্যুর কল্পনা করা, সম্ভাব্য মৃত্যুর দিনক্ষণ হিসাব করা এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার মৃত্যুকে নিজের করে নেওয়া, “আমার জীবন, আমার মৃত্যু!” আমাদের সামনে বেছে নেওয়ার জন্য আছে দুটি বিষয়: মৃত্যুর সঙ্গে জীবনকে ভাগ করে নেওয়া অথবা মৃত্যুর কাছে ধরা দেওয়া।
বার্ধক্যজনিত ব্যাধিসমূহের আমেরিকান চিকিৎসক ডা: বিজে মিলার তাঁর “অ্যা বিগিনার্স গাইড টু দি এন্ড: প্রাকটিক্যাল এডভাইস ফল লিভিং লাইফ এন্ড ফেসিং ডেথ” গ্রন্থে লিখেছেন: “লড়ো, লড়ো অথবা জমাটবদ্ধ হয়ে যাও। জীবজগতে আমাদের অস্তিত্ব হুমকির মধ্যে পড়লে আমরা এভাবেই সাড়া দেই। বিশ্বাস করতে হবে যে মৃত্যুকে নৈতিক বা সামাজিকভাবে প্রতিহত করা যায় না। আধুনিক চিকিৎসা অন্তত কিছু সময়ের জন্য নানাভাবে প্রকৃতির গতিতে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। এর বেশি কিছু নয়।” কিন্তু মৃত্যু কী? অনেকের মতো আমিও জানি, মৃত্যু একটি ঘটনা। জীবনের অবসান। তরুণ অথবা বৃদ্ধ, ধনী অথবা দরিদ্র সবার কাছে মৃত্যু আসবেই-ভাইরাসের সংক্রমণ থাকুক অথবা না থাকুক।
মৃত্যু সম্পর্কে বিজ্ঞান ও ধর্মের বক্তব্য ভিন্ন ভিন্ন। জীবন, মৃত্যু এবং জীবন-মৃত্যুর উদ্দেশ সম্পর্কে বিজ্ঞানের বিরুদ্ধে ধর্মের আলোচনা বেশ আকর্ষণীয়। ধর্ম ও বিজ্ঞান সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের বিষয় এবং উভয় বিষয়ের মধ্যেই যে কেউ আধ্যাত্মিক সত্যের সন্ধান পাবে। আমরা কেন মারা যাই -এ সম্পর্কে ধর্ম ও বিজ্ঞানের উত্তর রয়েছে। বিজ্ঞানের উত্তর জীবনের যান্ত্রিকতার সঙ্গে জড়িত, যার ভিত্তি নিহিত রয়েছে আমাদের জীবনের জাগতিক অভিজ্ঞতার মধ্যে। অন্যদিকে ধর্মের ব্যাখার ভিত্তি নিহিত সম্পূর্ণ অন্তরালে, যা আমরা জানি না ও জানতে পারি না এবং সে কারণে আমাদেরকে নির্ভর করতে হয় বিশ্বাসের ওপর।
ইতিহাস জুড়েই এমন অনেক কিছু আছে, যা আমরা জানি না এবং জানতে পারব না। ধর্ম বিভিন্ন অবয়বে বা অবয়ব ছাড়া ইশ্বরকে দিয়েছে, যিনি বা যারা সবকিছু করেন। মুসলমান ও খ্রিস্টানদের বিশ্বাস হলো, আল্লাহ বা ইশ্বর যদি মানুষকে কিছু জানতে দিতে চান, তা হলে তা জানার মাধ্যম হলো কোরআন বা বাইবেল। মানুষের জানার কোনো বিষয় যদি কোরআন বা বাইবেলে না থাকে, তাহলে বিশ্বাস করতে হবে যে আল্লাহ বা ইশ্বর মনে করেছেন যে এ সম্পর্কে মানুষের জানার প্রয়োজন নেই। কিন্তু মানুষ সন্দ্বিগ্ধ ও অনুসন্ধিৎসু। শেষ পর্যন্ত তারা নিজেরাই উত্তর খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা শুরু করে এবং মৃত্যুকে আল্লাহ বা ইশ্বরের হাত থেকে বের করে আনে। “চলো আমরা নিজেরাই বিষয়টি বের করি” আন্দোলনের পুরোধাদের একজন ছিলেন গ্যালিলিও। তিনি এবং অন্যান্যেরা অনুসন্ধানের ক্ষমতাকে এক শিল্পকলার রূপ দেন। ধর্মীয় বিবরণীতে যা লিপিবদ্ধ রয়েছে, তার যথার্থতা সম্পর্কে যেহেতু তা সবসময় নিশ্চিত নয় বলে অনেকে মনে করেন, সেজন্য একটি শ্রেনি মৃত্যু সম্পর্কে ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সরে আসেন। তারা বলেন, মৃত্যু আল্লাহ বা ইশ্বরের ইচ্ছার ওপর নির্ভর করে না, বরং অংশত এটি এমন কিছু যা আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। আমরা পেনিসিলিন, সি-সেকশন, ইম্যুনাইজেশন আবিস্কার করেছি, যা এমন ধরনের মৃত্যুকে প্রতিহত করে, যেসব কারণে মৃত্যুকে এক ধরনের ঐশ্বরিক অভিশাপে পরিণতি মনে করা হতো।
সার কথা হলো, আমরা উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়েছি যে, অনেক ক্ষেত্রে মানুষের মৃত্যু প্রতিরোধযোগ্য। কিন্তু মৃত্যুকে প্রতিরোধ করতে হলে আমাদেরকে মানুষ কেন মরে সেই বাস্তবতা সম্পর্কে জানতে হবে। আমাদের বুঝতে হবে যে রোগব্যাধি, যন্ত্রণা, বার্ধক্য এবং সংশ্লিষ্ট উপসর্গগুলো উপলব্ধি করতে হবে। কমবেশি সবাই বলতে পারেন যে প্রার্থনা বা দোয়া-মোনাজাতে মৃত্যুকে প্রতিহত করা সম্ভব নয়। কবি আবদুল হামিদ আজাদ বলেছেন: “গর আছর হ্যায় দোয়া মে মসজিদ হিলা কে দিখা/গর নেহি তো দো ঘুঁট পি, আউর মসজিদ কো হিলতা দেখ।” (দোয়ায় যদি কোনো প্রভাব থাকে তাহলে মসজিদ কাঁপিয়ে দেখাও/আর যদি কোনো প্রভাব না থাকে তাহলে দুই চুমুক মদ্য পান করো এবং মসজিদকে কাঁপতে দেখো)। সকল দোয়া দরুদ, প্রার্থনা, যজ্ঞকে অসার প্রমান করে প্রত্যেকে মারা যায়। অতএব, জানা প্রয়োজন যে আমারদের সবাইকে মরতে হবে কেন?
এ সম্পর্কে ধর্মের উত্তর রয়েছে। বাইবেল অনুসারে, “ইশ্বরের বিরুদ্ধে পাপের শাস্তি হিসেবে আদম ও ইভের ওপর মৃত্যু নেমে এসেছিল,” (জেনেসিস ৩:১৭)। আদম ও ইভের বংশধর হিসেবে আমরাও একই ভাগ্য বরণ করি। খ্রিষ্টধর্মের এক সমালোচকের মতে, ভালো কথা। তাহলে আমাদের পোষা প্রাণীসহ সকল প্রাণীকে মরতে হবে কেন? তাদের পূর্বপুরুষরাও কি তাদের ধরনের জ্ঞানবৃক্ষ থেকে কিছু ভক্ষণ করেছিল? তাছাড়া গাছও তো মরে যায়। এসব নিয়ে ভাবলে আসলেই নানা দ্বিধার সৃষ্টি হয়।
ইসলামের অনুসারীরা বিশ্বাস করেন যে জীবন একটি পরীক্ষা, যার অবসান ঘটে মৃত্যুর মধ্য দিয়ে। কোরআনে বলা হয়েছে, “প্রত্যেক প্রাণীকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে এবং আমি তোমাদের মন্দ ও ভালো দ্বারা পরীক্ষা করি, তোমরা আমার কাছেই ফিরে আসবে,” (২১:৩৫)। খ্রিস্টানরা একই ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে। ইসলাম ও খ্রিস্টধর্ম মৃত্যুর ব্যাখ্যা হিসেবে “আরেক পৃথিবীর” ব্যাখ্যা দেয়। ইহুদিরা সহ আরও কিছু ধর্মে মৃত্যুর পর পরলোকে গমণে বিশ্বাস করা হয়। প্রাচীন গ্রীক মিথলজিতেও আছে যে, পৃথিবীতে আমাদের অবস্থান একটি সাময়িক ব্যাপার। আমরা আগে যেখানেই থাকি না কেন সেখান থেকে চির বিশ্রামের স্থানে যাওয়ার আগে পৃথিবীতে এসেছি।
বৌদ্ধ ও হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের একাধিক অংশের মধ্যে মৃত্যুর পর মানুষের আরেক জগতে যাওয়ার ধারণা নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে। তারা বলেন, মৃত্যু মানুষের জীবনের এক পরীক্ষার অবসান, এরপর তাদের পুনর্জন্ম হবে। পৃথিবীতে জীবদ্দশায় তারা যেসব কাজকর্ম করেছে সে হিসেবে তারা পরবর্তী জীবনে কী হবে তা নির্ধারণ করা হবে। কেউ যদি এই পরীক্ষার উর্ধে ওঠে যায়, তাহলে তার মুক্তি ঘটবে, সে নির্বাণ লাভ বা আলোকিত হবে। এই আলোকপ্রাপ্ত হওয়া এই পৃথিবী থেকে পৃথক নয়, বরং পৃথিবীর যন্ত্রণা থেকে মুক্তি। এই চিন্তাভাবনার একটি চমৎকার দৃষ্টান্ত লিপিবদ্ধ রয়েছে উপনিষদে, যেখানে বলা হয়েছে, “ইশ্বর এই পৃথিবীর উর্ধে নন, বরং এই পৃথিবী এবং পৃথিবীর সবকিছুর মধ্যে তিনি বিরাজমান। মুক্তি বলতে উপলব্ধি করতে হবে একই সূত্রে গাঁথা একজন মানুষের সত্তা ও অন্য সবকিছুকে। জীবন বলতে আমরা প্রায়ই মনে করি “আমি ও তুমি’র মধ্যে বিভাজন অথবা এক বিশ্বাস থেকে আরেক বিশ্বাসের পার্থক্য মাত্র, যা আমাদের ক্ষেত্রে কৌশল হিসেবে প্রয়োগ করা হয়। এ কারণে অনেকে মনে করেন মানুষের আচরিত ধর্মগুলোতে জীবন ও মৃত্যুকে বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করার প্রয়োজনের কথা ভাবা হয়নি। ফলে ইশ্বরের যথার্থ প্রকৃতি ও বাস্তবতা বোঝার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায়। আমরা মনে করি যে, আমরা মারা যাই ইশ্বরের নিজের সঙ্গে লুকোচুরির কারণে। কিন্তু আসলে কখনোই আমাদের মৃত্যু ঘটে না; আমরা শুধু ইশ্বরের ঘূর্ণির মাঝে আবর্তিত হই। অ্যালান ওয়াটস তার “অন দ্য ট্যাবু এগেইনস্ট নোয়িং হু ইউ রিয়েলি আর” গ্রন্থে মানুষের চিন্তা-ভাবনার এই অবস্থাকে উপভোগ্য বলে বর্ণনা করেছেন। ধর্মের কাছে কোনো ব্যাখ্যা নেই যে, সূর্যাস্ত এতো আকর্ষণীয় কেন? ধর্মকে ব্যাখ্যা করতে হয় না যে লাল আলোর চেয়ে নীল আলো এতো পরিবর্তিত হয় কেন, যা সূর্যান্ত লাল করে তোলে। অনেকে ইশ্বরের কর্মকুশলতার চেয়ে বাস্তব নিয়মকে গ্রহণ করতে পারে। আমাদের বাস্তব অভিজ্ঞতা আমাদের নিজস্ব নিয়ম মানতে বাধ্য করে এবং সে নিয়মগুলো সেখানেই অবস্থান করে, যেখানে ধর্মের কোনো ব্যাখ্যা নেই। মানুষের অভিজ্ঞতা ও ধর্মের মধ্যে যেখানে বিরোধিতা, সেখানেই দ্বন্দ্বের কারণ অনুসন্ধান অনিবার্য হয়ে ওঠে।
এমনকি একটি ধর্মের মধ্যেই পবিত্র সত্য সম্পর্কিত ব্যাখ্যা বিভিন্ন ধরনের। কিন্তু বিজ্ঞান এতোটা ভিন্ন নয়: আমরা যা বুঝি না সে সম্পর্কে একক ব্যাখ্যা কমই আছে। ধর্ম এর সমাধান দিতে চেষ্টা করে পবিত্র কর্তৃত্বের দিকে দেখিয়ে অথবা বিদ্যমান ধর্মের ভিন্ন নতুন শাখা সৃষ্টি করে। বৈজ্ঞানিকেরা এ সমস্যার সমাধান করতে চেষ্টা করেন পার্থিব জগতের সঙ্গে আমাদের যে অভিজ্ঞতা তা থেকে প্রমাণ সংগ্রহ করার মাধ্যমে, যা আমাদের উপলব্ধিকে সমৃদ্ধ করে এবং অনেক সময় আমাদের জীবনকেও দীর্ঘ করে। ধর্ম ও বিজ্ঞান আমাদের জীবনকে উপযুক্তভাবে কাটানোর উদ্যোগে আমাদের সম্মিলিত প্রজ্ঞাকে তালিকাভূক্ত করে পৃথিবীতে তাদের উদ্দেশ্য সাধন করে। মানুষ বেঁচে থাকতে যে সমস্যাগুলোর মধ্যে পড়ে সে সম্পর্কে ধর্ম ও বিজ্ঞানের দৃষ্টিভঙ্গি সম্পূর্ণ ভিন্ন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তারা দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয় এবং যে অংশটি অধিক অনুমানপ্রসূত তা যথার্থতা হারায়। খুব কমসংখ্যক মানুষ, যারা সত্যের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন বলে দাবী করেন, আসলে তা সত্য হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম। এটাই সাধারণ জ্ঞানের কথা। আমরা যে কাহিনিগুলো একজন আরেকজনকে বলি সেগুলোর চেয়ে বৈজ্ঞানিক বা অন্য ধরনের বাস্তবতা অনেক চমকপ্রদ ও সুন্দর। আমরা কেন মরি সে সম্পর্কে ধর্ম ও বিজ্ঞানের ব্যাখ্যা যে ভিন্ন ধরনের তার কারণ আমাদের অস্তিত্ব সম্পর্কে চিন্তাভাবনার পদ্ধতির কারণে।
আমরা কেন মারা যাই এবং আমরা কেন বেঁচে থাকি – এই প্রশ্ন বুঝতে ও এই প্রশ্নের উত্তর পেতে হলে আমাদেরকে অবশ্যই কিছু মাত্রায় আমাদের অভিজ্ঞতার ওপর নির্ভর করতে হবে। গ্যালিলিও এর “চলো আমরা নিজেরাই বিষয়টি বের করি” চিন্তাভাবনাগত উদ্ভাবন এবং আলেকজান্ডার ফ্লেমিং এর পেনিসিলিন আবিস্কারের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা এসব বিষয়ে অনেক কিছু বলতে পারি। বিজ্ঞানকে আমরা এক ধরনের বাস্তব আধ্যাত্মিকতা হিসেবে গ্রহণ করতে পারি, কারণ মৃত্যু সম্পর্কে কোনো কোনো ধর্মের যে ব্যাখ্যা সংক্ষিপ্তভাবে ওপরে যে ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে, তা বিজ্ঞানের অনেক বিষয়ের সঙ্গে অভিন্ন। তবে বিজ্ঞান শুধু বাস্তব জগতের মধ্যে সীমাবদ্ধ, কারণ বিজ্ঞানের যা কিছু তা এই পৃথিবীর সঙ্গে যুক্ত।
তাছাড়া এতে এক ধরনের ব্যবহারিক জ্ঞানের সমাবেশ রয়েছে, যা মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে। বহু মানুষ তাদের জীবন ও কর্মে এই বাস্তব আধ্যাত্মিকতাকে শুধু তাদের অভিজ্ঞতা বলে বিবেচনা করে না, বরং সত্য বলে বিশ্বাসও করে। তবে বিজ্ঞান এই অভিজ্ঞতার প্রধান একটি দিক হলেও বিজ্ঞানকে নানা কারণে পুরোপুরি নির্ভুল বলা চলে না। বিজ্ঞানের ভিত্তি হচ্ছে অসংখ্য মানুষের যৌথ অভিজ্ঞতার ফলাফল, যারা তাদের অভিজ্ঞতাকে পার্থিব জগতের নিয়মরীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য বিধান করে সংগঠিত করতে চেষ্টা করেছেন। তাদের সংগঠিত প্রচেষ্টায় আবিস্কৃত হয়েছে পেনিসিলিন, ইম্যুনাইজেশন, ডিএনএ’র কাঠামো, কীভাবে অণুকে বিভাজন করা যায় ইত্যাদি। এবং এই ভাবনাগুলো জীবন ও মৃত্যুর রহস্য ভেদ করতে গভীর উপলব্ধি দেয়। তাহলে পার্থিব জগতের যৌথ জ্ঞান মৃত্যু সম্পর্কে আমাদের কী বলে? প্রথমত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বোধ সৃষ্টি করে যে, আমরা মরি না। আমাদের সেল বা দেহকোষগুলো আমাদেরকে বছরের পর বছর ধরে জীবিত রাখে, কোষগুলো বার বার ধরন পরিবর্তন করে আসছে এবং বহু সহস্র বছর আগে জীবনের সূচনাকাল থেকেই কোষের এ পুনর্জন্ম বা পরিবর্তনের ধারা অব্যাহত রয়েছে। কেউ জীবিত আছে এবং সর্বত্র কোষগুলো আছে। আজকাল যে কেউ ইউটিউবে বহু ভিডিওতে নিজেরাই এ দৃশ্য দেখতে পারেন। কোষগুলোর বিভাজন প্রক্রিয়ার সৃষ্টি হিসেবে আমরা বেঁচে থাকি এবং কখনো মরি না।
অনেক দার্শনিকের মতে মৃত্যু জীবনের সবচেয়ে বড় ক্ষতি নয়। যখন আমরা জীবিত থাকি তখন আমাদের ভেতর সম্পর্কের মৃত্যু ঘটাই সবচেয়ে বড় ক্ষতি। এক কবি বলেছেন: “কিসি নে সাচ কাহা হ্যায়, মউত সে কিস কি ইয়ারি হ্যায়/আজ মেরি বারি তো কাল তেরি বারি হ্যায়/কুচ ভি না বদলেগা ইয়াহা মেরে বিন, বাস দো চার দিন লোগ রোয়েঙ্গে, দো চার দিন।” (কেউ যথার্থই বলেছেন, মৃত্যুর সঙ্গে কিসের বন্ধুত্ব/আজ পালা এলে কাল তোমার পালা আসবে/আমাকে ছাড়া এখানে কোনো কিছুর পরিবর্তন হবে না/বাস. দু’চার জন মানুষ কাঁদবে, মাত্র দু’চার দিন।)
Posted ৫:০৫ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৬ মে ২০২১
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh