মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪ | ১০ বৈশাখ ১৪৩১

Weekly Bangladesh নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত
নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত

করোনার ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে আসার বিপদ

আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু   |   বৃহস্পতিবার, ২৭ আগস্ট ২০২০

করোনার ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে আসার বিপদ

স্যান ফ্রান্সিসকো’র অদূরে ট্রেসি সিটিতে ছেচল্লিশ দিন কাটিয়ে প্লেনে সারারাত না ঘুমিয়ে গত ৪ আগষ্ট, ২০২০ তারিখ ভোরে নিউইয়র্কে পৌঁছেছি। করোনার বিপদকাল বলেই বোধহয় মেয়ে ও জামাইয়ের কাছ থেকে বিদায় নেয়া অধিক কষ্টকর ছিল। কে জানে কখন কার ডাক আসে। বাড়ি থেকেই বিদায়ের আনুষ্ঠানিকতা সারতে হয়েছিল এয়ারপোর্টে পৌঁছে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে বলে। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণে দূরের ভ্রমণ যখন প্রায় বন্ধ তখন মেয়ের পীড়াপীড়িতে আমি ও আমার স্ত্রী গত ১৯ জুন আটলান্টিক উপকূল থেকে প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূলে গেছি। আমরা যখন যাই তখন অন্য ষ্টেট থেকে প্লেন, ট্রেন বা বাসে নিউইয়র্ক প্রবেশে বিধিনিষেধের তালিকায় ছিল করোনার ঝুঁকিপূর্ণ সাতটি ষ্টেট।

আমাদের ক্যালিফোর্নিয়া অবস্থানকালে বিধিনিষেধের তালিকাভূক্ত হয় ৩১টি ষ্টেট এবং এর মধ্যে ক্যালিফোর্নিয়া “হাই রিস্ক এরিয়া।” ক্যালিফোর্নিয়া উত্তর দক্ষিণে ১২৪০ মাইল দীর্ঘ এবং আমেরিকার সবচেয়ে জনবহুল ষ্টেট। আমরা যে অংশে ছিলাম সেটি ষ্টেটের উত্তরাঞ্চল। লস এঞ্জেলেস ও স্যান ডিয়েগো’র মতো অধিক জনবহুল এলাকা ক্যালিফোর্নিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে। সেদিকে হঠাৎ করেই করোনা সংক্রমণ বেড়ে গেছে। সে তুলনায় আমরা যেখানে ছিলাম সেখানে কোনো সংক্রমণ নেই। তবুও যেহেতু একই ষ্টেট, অতএব আমরা বিধিনিষেধের আওতায় পড়েছি। এখান থেকে যে কেউ নিউইয়র্কে গেলে ঠিকানা, ফোন, ইমেইলসহ স্বাস্থ্যগত অবস্থার ডিক্লারেশন দিতে হবে। বাড়ি এসে ১৪ দিন পর্যন্ত সেলফ-কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে এবং শুধু মেডিকেল ইমার্জেন্সিতেই বাইরে যাওয়া যাবে এবং নিউইয়ের্কে পৌঁছার পাঁচ দিনের মধ্যে কোভিড ১৯ টেষ্ট করাতে হবে। এর ব্যতিক্রম ঘটলে দুই হাজার ডলার জরিমানা গুনতে হবে।
এখন সেলফ-কোয়ারেন্টাইনে কাটাচ্ছি। আমাদের ফিরে আসার খবর পেয়ে বন্ধুদের অনেকে বাজার করে দিয়ে গেছেন। নিজেদের বাগানের সব্জি দিয়ে গেছেন। এমনকি আমাদের জন্য রেখে দেয়া কোরবানির গোশতও দিয়ে গেছেন। আমরা তাদের কাছে কৃতজ্ঞ। নিউইয়র্কে পৌঁছার দু’দিন পর থেকেই ডিপার্টমেন্ট অফ হেলথ এন্ড হসপিটালস এর জনস্বাস্থ্য বিষয়ক সংগঠন “নিউইয়র্ক সিটি টেস্ট এন্ড ট্রেস কোর” ফোনে ও মেইলে একটি পর একটি টেক্সট পাঠিয়ে যাচ্ছে, আমরা ঘরে আছি কিনা, করোনা টেস্ট করিয়েছি কিনা, তারা কোনো সহযোগিতা করতে পারে কিনা ইত্যাদি। সিটি প্রশাসন এজন্য হাজার হাজার লোক নিয়োগ করেছে। আমরা তাদের পাঠানো টেক্সটের উত্তর দিয়ে তাদেরকে সন্তুষ্ট করতে চেষ্টা করছি। ফোন কয়েকটি ফোন নম্বরও দিয়েছে জরুরী প্রয়োজনে ফোন করতে। শুধু টেক্সট নয়, ফোন করেও খোঁজ নিচ্ছে। কখন টেক্সট পাঠায় বা ফোন করে সেজন্য ফোন কাছ ছাড়া করি না এবং তটস্থ থাকি। করোনাজনিত বেকারত্বের সময়ে সামান্য ভুল করে দুই হাজার ডলার জরিমানা পরিশোধ করার সাধ্য আমার নেই।


গিন্নি আগে করোনা টেস্টের জন্য ন্যাসাল সোয়াব দিয়ে এসেছে। তাঁর অভিজ্ঞতা ভালো। সে বলে, আমি টেরই পাইনি। আমি দু’দিন পর মেডিকেল অফিসে গিয়ে সেখানকার কর্মী ইয়াসমিনকে বলি, ‘আপা, আপনি টেস্ট করিয়েছেন?” তিনি ইতিবাচক উত্তর দেন। আবারও জানতে চাই, “অতো লম্বা একটা কাঠি নাকে ঢুকালে ব্যথা লাগে না?” তিনি জানান যে তার নাকের সোয়াব নেয়নি। এন্টিবডি টেস্ট করিয়েছেন, অর্থ্যাৎ তার ব্লাড স্যাম্পল স্ক্রিনিং করে করোনা নিগেটিভ পাওয়া গেছে। আমার এন্টিবডি এবং ন্যাসাল সোয়াব দু’রকম টেস্টই করাতে হবে। এক কমবয়সী মেয়ে মেডিকেল অ্যাসিষ্ট্যান্ট আমার ভাইটাল নেন। সারাক্ষণ নাকে মাস্ক থাকায় বুঝতে পারিনি তিনি সুন্দরী কিনা। তবুও বলি, আপনাকে এখানে নতুন দেখছি। তিনি জানান, এক মাস আগে তিনি সেখানে জয়েন করেছেন। বাংলাদেশী মেডিকেল অফিসগুলোতে মেডিকেল অ্যাসিষ্ট্যান্ট হিসেবে যারা কাজ করেন, তাদের অনেকেই বাংলাদেশে এমবিবিএস করে আসেন; হয়তো এখানে রেসিডেন্সি করার পাশাপাশি কাজ করছেন; আবার অনেকে এখানেই প্যারা-মেডিকেল কোর্স করে মেডিক্যাল অ্যাসিষ্ট্যান্ট হন। মেয়েটি আমার ব্লাড প্রেসার মাপে, তাপমাত্রা নেয়, ওজন মাপে এবং কিছু মেডিকেল প্রশ্ন করে। ব্লাড স্যাম্পল ও নাকের সোয়াব নেয়ার পালা ছেলে মেডিক্যাল অ্যাসিষ্ট্যান্ট শাওনের। তিনি তিন টিউব রক্ত নেন। আমি নাক-মুখের ওপর থেকে মাস্ক খুললে লম্বা একটি কাঠি দুই নাসারন্ধ্রে ঢুকিয়ে দেন। একটু ব্যথা লাগে, অস্বস্থি লাগে বেশি। তবে ক্ষণিকের ব্যাপার। আমি ন্যাপকিনে নাক ও চোখের পানি মুছতে। মুছতে বাড়ি ফিরে আসি।

একদিন পর শাওন ফোন করে বলে, যে ল্যাবে স্যাম্পল পাঠিয়েছে তারা টেস্ট রেজাল্ট দিতে এক সপ্তাহ পার করে দেবে। আমার যেহেতু জরুরী প্রয়োজন সেজন্য আবার ন্যাসাল সোয়াব নিতে হবে। এবার অন্য ল্যাবে পাঠাবে। দু’দিনেই রেজাল্ট দেবে। আমি আবারও মেডিক্যোল অফিসে যাই। আগের মেয়েটি আবারও প্রেসার মাপে, ওজন নেয়, তাপমাত্রা মাপে। এবার তিনি ফ্লু ইঞ্জেকশন দেন। শাওন জানায় আমার এন্টিবডি টেস্টিংয়ে করোনা নেগেটিভ এসেছে। তবে ব্লাড টেস্টে ট্রাইগ্লিসারাইড লেবেল নরমাল লেবেলের দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে, যা হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের কারণ বৃদ্ধি করে। যাহোক, করোনা ভাইরাস আছে কিনা আরও নিশ্চিত হতে ন্যাসাল সোয়াব নিতে হবে। আবারও নাকে কাঠি ঢুকায়। আগের বারের চেয়ে বেশি ব্যথা পাই। ডা: মুজিবের সাথে অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছিল। সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের ছাত্র। ঢাকা থেকেই তার সাথে ভালো পরিচয়। তিনি কোলেস্টরেলের ওষুধের মাত্রা দ্বিগুণ করে দেন। হেপাটাইটিস বি ইঞ্জেকশন দেয়ার জন্য শাওনকে ডেকে বলেন। শাওন এবার হেপাটাইটিশ বি ইঞ্জেকশন দেয় এবং বলে এই ইঞ্জেকশনে ব্যথা হবে, জ্বরও আসতে পারে। এটির তিনটি ডোজ। দ্বিতীয়টি এক মাস পর, তৃতীয়টি তিন মাস পর। আমি যাতে ভুলে না যাই তিনি তা স্মরণ করিয়ে দেন। করোনা টেস্ট রেজাল্ট সোমবারের মধ্যে আমাকে মেইলে পাঠিয়ে দেবেন। হাতে ব্যথা নিয়ে আবারও নাক ও চোখের পানি মুছতে মুছতে চলে আসি।


করোনা ভাইরাস সংক্রমণের লক্ষণ হঠাৎ করে বোঝা যায় না। লক্ষণগুলো প্রকাশ পেতে দুই থেকে চৌদ্দ দিন সময় লাগে। সেজন্যই করোনা ঝুঁকিপূর্ণ স্টেট থেকে আসার পর চৌদ্দ দিনের সেল-কোয়ারেন্টাইন ম্যাণ্ডেটরি করা হয়েছে। কাশি, নি:শ্বাস নিতে সমস্যা, জ্বর, ঠাণ্ডা অনুভূত হওয়া, পেশিতে ব্যথা অনুভব করা, গলায় খোঁচা লাগা, স্বাদ বা গন্ধ বুঝতে না পারার মতো অবস্থা ঘটতে পারে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে। করোনা পজিটিভ বা নেগেটিভ তা নিশ্চিত হতে যুক্তরাষ্ট্রের ফুড এ- ড্রাগ এডমিনিষ্ট্রেশন নাকের গভীরে গলার একেবারে পেছনের অংশ থেকে সোয়াব সংগ্রহ করার ওপর জোর দিয়েছে, কারণ ওইসব স্থানেই ভাইরাসের উপস্থিতি বেশি থাকে। নিউইয়র্ক সিটি বা ষ্টেট গভর্নমেন্ট শুরুর দিকে করোনা ভাইরাসের বিস্তার রোধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়নি। ২৫ মার্চ পর্যন্ত কর্তৃপক্ষ এমনকি করোনার সংক্রমণ যেসব দেশে বেশি ছিল সেখান থেকে ফ্লাইটের আগমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেনি। হয়তো সে কারণে নিউইয়র্কে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি ছিল। দেরিতে হলেও তারা কঠোর হয়েছে এবং সংক্রমণ কমেছে এবং করোনাজনিত মৃতের সংখ্যাও কমেছে।
সমগ্র বিশ্বে করোনা ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা যেখানে সাড়ে ৭ লাখের বেশি, সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের মতো সকল ক্ষেত্রে মহাপরাক্রমশালী একটি দেশে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা ১ লাখ ৭০ হাজার ছাড়িয়ে যাওয়া অকল্পনীয় ব্যাপার। ২০০৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রে সোয়াইন ফ্লুতে মৃতের সংখ্যার চেয়ে ১৩ গুণ বেশি। ঐশ্বরিক পরাক্রমের কাছে সবাই যে কতো অসহায় এবারের মহামারী তা আবারও প্রমাণ করেছে।

 


 

 

 

 

 

advertisement

Posted ৯:৫৯ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৭ আগস্ট ২০২০

Weekly Bangladesh |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

আমরা মরি কেন?
আমরা মরি কেন?

(642 বার পঠিত)

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০  
Dr. Mohammed Wazed A Khan, President & Editor
Anwar Hossain Manju, Advisor, Editorial Board
Corporate Office

85-59 168 Street, Jamaica, NY 11432

Tel: 718-523-6299 Fax: 718-206-2579

E-mail: [email protected]

Web: weeklybangladeshusa.com

Facebook: fb/weeklybangladeshusa.com

Mohammed Dinaj Khan,
Vice President
Florida Office

1610 NW 3rd Street
Deerfield Beach, FL 33442

Jackson Heights Office

37-55, 72 Street, Jackson Heights, NY 11372, Tel: 718-255-1158

Published by News Bangladesh Inc.