শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Weekly Bangladesh নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত
নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত

ক্ষমতা দিয়ে চরিত্র পরীক্ষা করো

আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু   |   বৃহস্পতিবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২১

ক্ষমতা দিয়ে চরিত্র পরীক্ষা করো

যুক্তরাষ্ট্রের ১৬তম প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিঙ্কন বলেছেন: “প্রায় অধিকাংশ মানুষ প্রতিকূলতা সহ্য করতে পারে, কিন্তু তুমি যদি কোনো ব্যক্তির চরিত্র পরীক্ষা করতে চাও, তাহলে তাকে ক্ষমতা দাও।” বাংলাদেশে তা সদ্য পরীক্ষিত হয়েছে, একজন প্রতিমন্ত্রীকে একটি মন্ত্রণালয়ের সীমিত ক্ষমতা দেওয়ার পর। অতীতে আমরা এ দৃষ্টান্ত আরও অনেক প্রত্যক্ষ করেছি। ক্ষমতা অসৎ মানুষকে অধিকতর দুর্নীতগ্রস্থ করে, কারণ ক্ষমতার অবস্থানে থাকা লোকজন প্রায় ক্ষেত্রেই তারাই তাদের কর্মের জন্য দায়ী এবং সেজন্য তারা তাদের আচরণের জন্য স্বাধীন। যখন কোনো ব্যক্তিকে অপর ব্যক্তি বা ব্যক্তিসমষ্টির ওপর ক্ষমতা প্রদান করা হয়, তখন তিনি ক্ষমতার যে আসনেই থাকুন না কেন, এক শ্রেনির অভিলাষীরা ক্ষমতার দাপটে দুর্নীতিগ্রস্থ হয়ে ওঠে। সেই অর্থের বিনিময়ে হোক, নির্বাচনের মাধ্যমে অথবা বলপূর্বক হোক, ক্ষমতা পেয়ে তাকে ক্ষমতা পর্যন্ত পৌছে দেয়ার জন্য যারা ভূমিকা পালন করেছেন, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোর পরিবর্তে উদ্ধত আচরণ করতে শুরু করেন। এর ফলাফল পেতে খুব বিলম্ব ঘটে না। আমেরিকান আইনজীবী ও রাজনীতিবিদ এলিয়ট স্পিটজার এর বক্তব্য অনুযায়ী “অহঙ্কারের ফল হচ্ছে পরিসমাপ্তি।” এনবিসি’র ‘দ্য টুনাইট শো’ প্রোগ্রামে তিনি সম্প্রতি আরও বলেন যে, ক্ষমতার এই অহঙ্কার নিহিত থাকে ক্ষমতায় ওঠার প্রক্রিয়ার ম্যধ্যে, যে কারণে ক্ষমতায় আসা মাত্রই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ অপ্রতিরোধ্য, অশিষ্ট ও দুর্বিনীত হয়ে ওঠেন।

বিস্ময়ের কিছু নেই। আমাদের অধিকাংশই যখন যা করতে চাই তা করি, যদিও তা সামাজিক রীতি, রাজনীতির বিধিবিধানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ অথবা গ্রহণযোগ্য কিনা। আরও উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, ক্ষমতা হাসিলের যে পথ ও পদ্ধতির প্রয়োজন সেটিই ক্ষমতা লাভে আগ্রহীদের প্রবৃত্তিকে দারুনভাবে প্রভাবিত করে। প্রায় সকল ধর্মের আধ্যাত্মিক দিকগুলোকে বিশ্লেষণ করে মনস্তত্ত্ববিদ ও গবেষকরা মানুষকে দু’ভাগে বিভক্ত করেছেন: ভৌত দিক (অথবা পশু আত্মা) ও অভৌত দিক, যেটিকে বিবেচনা করা হয় পবিত্র আত্মা। পশু আত্মা, যা কারও ভৌত দেহ অথবা দৈহিক অস্তিত্ব প্রায়ই অপার্থিব বা পরার্থপর আত্মার সঙ্গে দ্বন্দ্বে থাকে, এক কাঁধে থাকে শয়তান, আরেক কাঁধে ফেরেশতা। মানুষের প্রকৃতি নিরূপণে এ ধরনের তুলনা নি:সন্দেহে দুর্ভাগ্যজনক মনে হলেও আসলে পশু প্রবৃত্তি যে অনিবার্যভাবে অপ্রয়োজনীয় তা নয়। কিন্তু টিকে থাকার দিকেটিকে যদি প্রাধান্য দেওয়া হয়, সঠিক বা ভুল, যার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হতে পারে কিনা, সে সম্পর্কে আমরা অবচেতনভাবেই তাগিদ অনুভব করি। প্রাণীজগতে দেখা যায়, একটি সিংহ অথবা অন্য যেকোনো মাংসাশী প্রাণী যদি খাদ্যের প্রয়োজনে আরেকটি প্রাণীকে হত্যা করে তখন প্রাণীকূলে শক্তিশালী পুরুষ প্রাণী, যে শিকারের জন্য তেমন পরিশ্রম করেনি, শুধু তার পৌরুষের অহঙ্কারে বা তার দৈহিক শক্তির সুযোগ নিয়ে অন্য প্রাণী শিকার কেড়ে ভূড়িভোজ করে, এবং সে আর খেতে পারে না, তখন অন্য প্রাণী উচ্ছিষ্ট ভোজনেই পরিতৃপ্ত হয়।


মানুষের সমাজে এ ধরনের কাজকে আমরা দুর্নীতি বা অপকর্ম বলি, এমন আচরণকে নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখি, কারণ এটি জবরদস্তিমূলকভাবে অন্যের অধিকার হরণ করা। কিন্তু বাস্তবে মানুষের টিকে থাকার প্রতিযোগিতা প্রাণীকূলের টিকে থাকার সংগ্রামের চেয়ে অনেক বেশি জটিল এবং মানুষকে যদি টিকে থাকার প্রতিযোগিতা, তা তার নিজের, পরিবারের বা ভবিষ্যতের জন্যও করতে হয়ে, এবং তিনি যদি ক্ষমতার সিঁড়ির কোনো একটি ধাপে হন, তাহলে তার কাক্সিক্ষত অর্জনের জন্য বাড়াবাড়ি করার পরিকল্পনা করতে হয়। প্রাণীর রজত্বে যে চেতনায় প্রাণী তাড়িত হয়, মানুষের পশু আত্মাও একই ধরনের তাড়না দ্বারা চালিত হয়, যা একটি অন্ধকার দিক। পবিত্র বা অজান্তব আত্মার খাদ্য, অর্থ, এমনকি অন্য কোনো প্রাপ্তির প্রয়োজন পড়ে না। কোনোকিছু জড়ো করার প্রয়োজন নেই এ আত্মার। অতএব ঐশ্বরিক আকাক্সক্ষা পবিত্র বলে বিবেচিত। ক্ষমতার পথে মানুষের অন্তনিহিত পশু আত্মা ও পবিত্র আত্মার মধ্যে সংগ্রাম সুপ্ত অবস্থায় থাকে। প্রকাশ পায় যখন কোনো ব্যক্তি তার সফলতার বাতিক চরিতার্থ করার জন্য দম্ভের আশ্রয গ্রহণ করেন, যাকে সোজা বাংলায় বলা যায় ‘ধরাকে সরা জ্ঞান’ করেন, যা সকলের কাছে আপত্তিকর।

ক্ষমতার সিঁড়ি বেয়ে ওপরে ওঠার চেষ্টা আসলে একটি যুদ্ধ, এবং সে যুদ্ধ প্রতিকূলতায় পূর্ণ। যারা ছলে বলে কৌশলে সাফল্য খুঁজে পান সেটিকে গবেষকরা বলেছেন, “তারা তা অর্জন করেন তাদের পশু আত্মার বৈশিষ্টকে কাজে লাগিয়ে। তারা অন্যের কাঁধে বন্দুক রেখে শিকার করেন, কিন্তু সবসময় নিজের কৃতিত্ব দাবী করেন। তারা বন্ধুত্বের ভান করেন, কিন্তু কাজ করেন শত্রুর। তারা তাদের পশু আত্মার বৈশিষ্টকে প্রকাশ হতে দেন, যাতে মানুষের মনে তাদের সম্পর্কে ভীতি সঞ্চারিত হয় এবং তিনি যে প্রবল প্রতাপময় ক্ষমতার অধিকারী তা মানুষ জানে, এবং জেনে তাকে সমীহ করে, তা ভয়ের কারণে হলেও। এভাবে এক পর্যায়ে তিনি তার পশু আত্মাকে সম্পূর্ণ অপ্রতিদ্বন্দ্বী পবিত্র আত্মায় পরিণত করতে সচেষ্ট হন। ক্ষমতায় এ ধরনের অবস্থান যখন কারও দ্বারা হুমকি বা প্রতিরোধের মুখে পড়ার আশঙ্কা না থাকে, তখন তারা কোনো পরিণতি চিন্তা না করে যেকোনো স্থানে যেকোনো কাজ করতে দ্বিধা করেন না। অনিবার্যভাবে পশু আত্মা জয়ী হয় পবিত্র আত্মার ওপর এবং এ প্রক্রিয়ায় ক্ষমতা দুর্নীতিগ্রস্থ হয়ে ওঠে। কিছু ব্যক্তি ক্ষমতার একটি আসনে বসলেই তাদের পশু আত্মা দেহের গুরুত্বপূর্ণ অংশকে কব্জা করে নেয়, তাদের বুদ্ধি-বিবেচনা লোপ পায়। তারা কী বলেন, কী করেন তা চিন্তা করার মত অবস্থা থাকে না তাদের। তারা ভাবেনই না যে কেউ তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম। তাদের অধিকাংশই ভাবেন ক্ষমতার আসন অর্জনের কৃতিত্ব তো এককভাবে তাদের নিজেদের, এতে অন্য কারও ভূমিকা নেই। প্রকৃত অবস্থা হচ্ছে, ক্ষমতা দেওয়া হয়, একইভাবে নিয়েও নেওয়া হয়। ক্ষমতাকে যদি ধরেই রাখতে হয়, তাহলে সেই অবস্থানে রাখার জন্য ক্ষমতার নিচে যারা থাকে তাদের সদিচ্ছা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ


উনবিংশ শতাব্দীর ব্রিটিশ ইতিহাসবিদ লর্ড অ্যাকটন বলেছেন, “ক্ষমতার মাঝেই থাকে দুর্নীতি প্রবণতা,” আর “নিরঙ্কুশ ক্ষমতা নিরঙ্কুশভাবে দুর্নীতিগ্রস্থ করে।” ক্ষমতার রাজনীতির ক্ষেত্রে এটি প্রবাদ বাক্যে পরিণত হয়েছে।


advertisement

Posted ৯:২৪ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২১

Weekly Bangladesh |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

আমরা মরি কেন?
আমরা মরি কেন?

(641 বার পঠিত)

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০  
Dr. Mohammed Wazed A Khan, President & Editor
Anwar Hossain Manju, Advisor, Editorial Board
Corporate Office

85-59 168 Street, Jamaica, NY 11432

Tel: 718-523-6299 Fax: 718-206-2579

E-mail: [email protected]

Web: weeklybangladeshusa.com

Facebook: fb/weeklybangladeshusa.com

Mohammed Dinaj Khan,
Vice President
Florida Office

1610 NW 3rd Street
Deerfield Beach, FL 33442

Jackson Heights Office

37-55, 72 Street, Jackson Heights, NY 11372, Tel: 718-255-1158

Published by News Bangladesh Inc.