সোমবার, ১৮ মার্চ ২০২৪ | ৫ চৈত্র ১৪৩০

Weekly Bangladesh নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত
নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত

জীবন তো তোমাকে ছেড়েই যাবে

আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু   |   বৃহস্পতিবার, ২০ মে ২০২১

জীবন তো তোমাকে ছেড়েই যাবে

মানুষকে পরামর্শ দিয়েছেন: “মৃত্যুর জন্য নিজেকে প্রস্তুত করো, ভ্রাতৃবৃন্দ/কারণ, মৃত্যু যে আসবে তা অনিবার্য/কিন্তু তুমি তোমার আশা ছেড়ো না/হৃদয় যদি তোমার সাথে রূঢ় আচরণও করে/তোমার মাঝে মৃত্যুর প্রতিফলন রেখো/তা হলে তুমি সচেতন থাকবে,/এবং তোমাকে ভালো কাজের দিকে ফেরাবে/কারণ জীবন তো তোমাকে ছেড়েই যাবে।” মৃত্যুকে দেহের মৃত্যু হিসেবে দেখা যেতে পারে; কিন্তু সুফিরা যখন বলেন যে, তারা আল্লাহ সম্পর্কে উদাসীন, তখন তারা এটিকে মৃত্যু হিসেবেই দেখেন। অনন্ত প্রেম এভাবে জীবনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। ইমাম আল-গাজ্জালী বলেছেন যে, মৃত্যু সম্পর্কে স্মরণ করার তিনটি দিক রয়েছে: ১) জগতের সাথে যুক্ত ব্যক্তি স্মরণ করার ব্যাপারে উদাসীন থাকে।

সে মৃত্যুকে অপছন্দ ও ঘৃণা করে, পৃথিবীর আনন্দ থেকে বঞ্চিত হওয়ার ভীতি তাকে আবিষ্ট রাখে; ২) অনুশোচনাকারীর স্মরণ: এই স্মরণে ভীতি তার ওপর আরও জাঁকিয়ে বসে এবং তার অনুশোচনায় সে ভেঙে পড়ে অতীতের ভুলত্রুটিকে সংশোধন করতে তার চেতনা তীব্র হয়ে ওঠে, যার আধ্যাত্মিক পুরস্কার ব্যাপক; এবং ৩) সর্বজ্ঞের স্মরণ: যিনি মৃত্যুর পর তার প্রেমাস্পদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তাঁকে দেখতে পাবেন এবং তাঁর বন্ধুর সাথে সাক্ষাতের সম্ভানা বিস্মৃত হন না। তৃতীয় পর্যায়ের পর আরেকটি পর্যায় রয়েছে; তার চেয়েও এটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়, যখন তুমি মৃত্যুকে আর অপছন্দ করবে না; এটি আকাঙ্খা করো না, অথবা মৃত্যু ত্বরান্বিত হওয়া অথবা বিলম্বিত হওয়ার আকাঙ্খা করো না। এর চেয়ে বরং তোমার প্রিয়জন যে আদেশ দিয়েছেন সেটিকেই প্রাধান্য দাও। শুধু তখনই তুমি পরিপূর্ণতা ও আত্মসমর্পণের জায়গায় উপনীত হবে।


চতুর্দশ শতাব্দীর ভারতের এক সুফি সাধক শরফ আল-দীন মানেরি মানেরি মানুষকে তিন শ্রেনিতে বিভক্ত করেছেন: ১) ইর্ষাপরায়ণ ও লোভী; ২) যারা সৃষ্টিকর্তার মুখাপেক্ষী; এবং ৩) যারা আধ্যাত্মিক জ্ঞানের উচ্চস্তরে উন্নীত হয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘প্রমোদ প্রিয় মানুষ মৃত্যুর কথা ভাবে না এবং ভাবলেও জাগতিক লাভের জন্য ভাবে। সৃষ্টিকর্তার স্মরণ এ ধরনের মানুষের কোনো কাজে আসে না, বরং এতে তারা সৃষ্টিকর্তার নিকট থেকে আরও দূরে সরে যায়। দ্বিতীয় ধরনের মানুষ সৃষ্টিকর্তার মুখাপেক্ষী হন, মৃত্যুকে স্মরণ করেন, হৃদয়ে মৃত্যুভীতি পোষণ করেন এবং সৃষ্টিকর্তার নিকটবর্তী হন। তারা সৃষ্টিকর্তার দিকে ফেরার আগেই হয়তো তাদের মৃত্যু চলে আসে। তৃতীয় পর্যায়ের মানুষ, যারা আধ্যাত্মিকতার উচ্চস্তরে পৌঁছেন তারা মৃত্যুকে সবসময় স্মরণ করেন; কারণ তিনি যার সঙ্গে নিবিড় হতে চান মৃত্যু সেই কাংখিতের নিকটবর্তী হওয়ার একটি সুযোগ। এ ধরনের মানুষ মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে চান, যাতে তারা পাপীদের এই আবাস থেকে নিজেদের মুক্ত করতে পারেন। মানেরি বলতে চেয়েছেন যে, সাধারণ মানুষ মৃত্যুকে এড়িয়ে চলতে চায়, অপরদিকে সুফিরা মৃত্যুকে ভালোবাসেন ও মৃত্যু কামনা করেন। আয়িশা রা: নবী মুহাম্মদ সা: এর কাছে জানতে চান, “শেষ বিচারের দিনে কারা শহীদি মর্যাদা লাভ করবেন?” রাসুল সা: উত্তর দেন: “যে ব্যক্তি প্রতিদিন ও রাতে বিশবার মৃত্যুর কথা স্মরণ করবে।” অন্য এক হাদিসে আছে: “বিশ্বাসীর জন্য মৃত্যু এক উপহার, কারণ পৃথিবী তাদের কাছে কারাগার তূল্য এবং পৃথিবীতে তারা সবসময় যাতনক্লিষ্ট থাকে। মৃত্যু সেসব যাতনা ও কারাগার থেকে মুক্তি এবং নি:সন্দেহে অমূল্য উপহার।”

সুফিরা প্রায়ই নবী মুহাম্মদের একটি হাদিসের উল্লেখ করেন, যাতে বলা হয়েছে: “আন-নাসু নিয়াম-ওয়া ইদা মাতু’নাতাবাহু,” অর্থ্যাৎ “মানুষ ঘুমিয়ে থাকে এবং যখন মৃত্যুবরণ করে তখন তারা জাগ্রত হয়।” মহানবীর এই বক্তব্যের মধ্যে জালালুদ্দীন রুমি দেখতে পেয়েছেন যে তিনি অনন্তের ভোরের আলোর দিকে নির্দেশ করেছেন, যার মধ্যে আমরা আমাদের বর্তমান জীবনে স্বাপ্নিকের মতো যে সকল কাজ সম্পন্ন করেছি সেসব কাজকে যথাযথভাবে ব্যাখ্যা করা হবে। তখন আমরা স্বপ্নের অবয়বগুলোকে অস্পষ্ট দেখবো না, বরং উন্মোচিত বাস্তবতা হিসেবে দেখতে পাবো। মহানবী আমাদের উপদেশ দিয়েছেন “মৃত্যুর আগেই মৃত্যুবরণ করতে,” যাতে আমরা যখন মারা যাবো তখন যাতে আসলে মারা না যাই। এক্ষেত্রে অবশ্য একটি অসঙ্গতি রয়েছে; সুফিরা জীবনের প্রতি আকর্ষণের জন্য মৃত্যুবরণ করতে চেষ্টা করেন, একইভাবে তারা জীবনের আকর্ষণের প্রতি নিজেদেরকে উন্মোচিত করেন।


আল্লাহ হচ্ছেন ‘আল-হাঈ’, জীবন্ত। তিনি অবিনশ্বর, নির্বাণের মৃত্যু। আমরা আমাদের নিজেদের পরিবেশের মধ্যে তাঁর অস্তিত্ব দেখতে পাই। ‘আল-হাঈ’ শব্দের ব্যাখ্যা করতে চিশতি পীর খাজা মঈনুদ্দীন আমাদের পরামর্শ দিয়েছেন আত্মসমর্পণ করতে। তিনি বলেছেন, “তোমার এমন হওয়া উচিত, যেমন যারা জানাজা ও দাফনের জন্য প্রস্তুত করতে মৃতকে গোসল করায় তুমি তাদের হাতে একটি মৃতদেহ।” মৃত্যুর পর আমরা মধ্যবর্তী জগতে প্রবেশ করি আমাদের অন্তর্নিহিত ও বাহ্যিক দিকগুলোর সম্পূূর্ণ বিপরীত ধারা নিয়ে। আমাদের চিন্তাভাবনা তখন এই জগতের মধ্যে লুকিয়ে থাকে; কিন্তু মধ্যবর্তী জগতে সেগুলো বাইরের দিকে প্রকাশিত হয়। হযরত আলী আমাদের পরামর্শ দিয়েছেন মৃত্যুকে মনের মধ্যে এমনভাবে রাখতে হবে যেন আজকের দিনটিই আমাদের জীবনের শেষ দিন। আবার একই সময়ে আমাদের এমনভাবে বাঁচা উচিত যেন আমাদের বেঁচে থাকার জন্য আরও হাজার বছর পড়ে আছে।

সুফিবাদে আমিত্বের রূপান্তর আমাদের মন্দের দিকে প্ররোচিত করে, যাকে মৃত্যু হিসেবে দেখা যেতে পারে। শায়খ আবদ আল-রাজ্জাক আল কাশানি, যিনি আল-আরাবি নামে বেশি পরিচিত, তিনি সবুজ, সাদা, লাল ও কালো মৃত্যুকে সুফি পথের অভিজ্ঞতা হিসেবে বর্ণনা করেছেন। সুফিরা তারা নিজেদের মাঝেই মৃত্যুবরণ করেছেন সেজন্য অনেক সময় কালো বস্ত্র ধারণ করেন। অবশ্য এর আগে তারা অন্য রঙয়ের জামাকাপড় পরিধান করতে পারেন, কারণ তারা সেই পর্যায়ে উন্নীত হননি। সবুজ মৃত্যু নির্দেশ করে রঙচটা, জোড়াতালি দেওয়া পোশাক পরিধানের। কেউ যদি এজন্য সুন্দর জামাকাপড় ত্যাগ করার মধ্যে সন্তুষ্ট থাকে এবং ইবাদতের জন্য সাধারণ বস্ত্র ধারণের মধ্যে নিজেকে সীমিত রাখে তাহলে তিনি সবুজ মৃত্যুর সান্নিধ্য লাভ করবেন। কালো মৃত্যু নির্দেশ করে যে, কেউ অন্যান্য মানুষের দ্বারা যন্ত্রণায় ক্লিষ্ট হয়ে মৃত্যুবরণ করেছে। তারা যে যন্ত্রণা দিয়েছে তাতে তার কোনো ক্ষতি হয়নি; বরং এর মধ্যেই তিনি পরিতৃপ্তি খুঁজে পেয়েছেন; কারণ তিনি এটিকে দেখেছেন তার কাংখিতের নিকট থেকে আগত আশির্বাদ হিসেবে। যিনি কালো মৃত্যুবরণ করেন তিনি আল্লাহর মাঝে নির্বাণ লাভ করেন এবং সত্যের অস্তিত্বের মাঝে জীবিত থাকেন। শ্বেত মৃত্যু হচ্ছে ক্ষুধা। এই মৃত্যুর এ ধরনের নামকরণের কারণ হচ্ছে, এটি ভেতরকে আলোকিত করে এবং হৃদয়ের মুখকে উজ্জ্বল করে। কেউ যদি তার ক্ষুধা হ্রাস করতে না পারে তাহলে তিনি শ্বেত মৃত্যুবরণ করেন। এর ফলে তার বৃদ্ধিমত্তার পুনর্জাগরণ ঘটে। কারণ অধিক আহার্য গ্রহণ বুদ্ধিবৃত্তিক গুণাবলীকে হত্যা করে। যখন কারও লোভের মৃত্যু ঘটে তখন তার কৃচ্ছতা পুন:জাগ্রত হয়।


সূফি বিশ্বাস অনুযায়ী মৃত্যু হচ্ছে স্বার্থপর আকাংখাকে দমন করা। এটি সুস্পষ্টভাবে স্বার্থপর প্রেমের দিক নির্দেশ করে যা সবধরনের লালসা ও সহজাত দৈহিক চাহিদার সঙ্গে যুক্ত। কারও স্বার্থপরতা যদি নিচের স্তরের দিকে ঝুঁকে, তাহলে হৃদয়কেও নিচের দিকে টেনে নিতে চায়। কেউ যদি নিজের লালসার কাছে মৃত্যুবরণ করে সেক্ষেত্রে হৃদয় প্রকৃত প্রেমের সহজাত পথে এগিয়ে যায়। কেউ যদি তার অহঙ্কার দমনে সফল হন, তাহলে তিনি যে মৃত্যুর অভিজ্ঞতা লাভ করেন সূফিরা সেটিকে বলেছেন লাল মৃত্যু। মৃত্যু সম্পর্কে সুফিদের দৃষ্টিভঙ্গি হচ্ছে, তারা মৃত্যুবরণ করলে আল্লাহর সঙ্গে মিলিত হবেন এবং জীবিত থাকলে আল্লাহ তাদের সঙ্গে থাকবেন। অতএব জীবিত বা মৃতাবস্থায়ও তারা তাদের বন্ধুর সঙ্গেই থাকেন। বিখ্যাত সুফি শায়খ গাউসুল আজম আবদুল কাদির জিলানি বলেছেন: “অহঙ্কারের সকল ব্যাধির সর্বোত্তম নিরাময় হচ্ছে মৃত্যুকে স্মরণ করা।”

কেউ যখন মৃত্যু সম্পর্কে সচেতন থাকে তখন তিনি ভালোভাবে জীবনযাপন করতে পারেন। মৃত্যুর কথা ভাবার অর্থ হচ্ছে পরলোকের জীবনের জন্য উত্তম প্রস্তুতি গ্রহণ। খাঁটি ও পবিত্র জীবনের সুবিধা হচ্ছে, এমন জীবন কোনো ব্যক্তিকে মৃত্যু ভীতি থেকে মুক্ত রাখে। সুফিরা বলেন, মৃত্যু সম্পর্কে ধ্যান করে আমরা নিজেকে প্রশ্ন করতে পারি যে আমরা কে? আমরা কি আমাদের দেহ? কিন্তু দেহের তো মৃত্যু ঘটে। আমাদের প্রভুর কাছে কী ফিরে যায়? যে প্রশান্ত আত্মার কথা বলা হয়েছে সেটি কী? কীভাবে এ ধরনের প্রশান্ত আত্মা অর্জন করা সম্ভব? সৃষ্টার কাছে জীবন সমর্পণ করা আগে আবদুল কাদির জিলানি উচ্চারণ করেন, “আমি আল্লাহর আশ্রয় কামনা করি, যার সমতূল্য আর কেউ নেই, যিনি জীবন্ত এবং যার মৃত্যু ঘটে না এবং যার কোনো ভয়ভীতি নেই।”

সুফিদের কাছে মৃত্যু ভীতিকর অন্ধকারে চলে যাওয়া নয়, তাদেরকে বন্ধুর কাছে নিয়ে যাওয়ার অন্তিম যাত্রা। কিন্তু কেউ জানে না যে কখন মৃত্যু আসবে। গাছের সবুজ পাতা একসময় ঝরে পড়ে, ফুল শুকিয়ে যায় এবং তারকাগুলো হারিয়ে যায়, কিন্তু মৃত্যুর কোনো মওসুম নেই। মৃত্যুর নিজস্ব মওসুম রয়েছে। সুফিদের কাছে মৃত্যু স্বাভাবিক, সার্বজনীন ও আবশ্যিক। তারা মৃত্যুবরণ করেন, যাতে তাদেরকে আর মরতে না হয়। জীবন তাদের কাছে মৃত্যু এবং মৃত্যু তাদের কাছে জীবন! ইবনে আল-আরাবি বলেছেন;

সুফি কবি জালালুদ্দীন রুমির মতে “মৃত্যুর পূর্বে মারা যাওয়ার ধারণা এক ধরনের পুনরাবৃত্তি, যা বার বার ঘটে।” সুফিবাদে মৃত্যুকে আধ্যাত্মিক জীবনের উচ্চতর স্তরে পৌঁছার উপায় হিসেবে দেখা হয়। রুমি বলেছেন, “আমাদের মৃত্যু অনন্তের সঙ্গে আমাদের বিয়ের মতো। প্রেমিকের জীবনের সঙ্গেই তো মৃত্যু জড়িত। যদি তুমি তোমার প্রেমাস্পদের জীবন জয় করতে না পারো তা হলে নিজেকেই হারাবে।” মত্যু সম্পর্কে ধর্মীয় চিন্তাভাবনা ও এর প্রকাশ অনেক সময় বেহেশতে আকর্ষণীয় পুরস্কার প্রাপ্তির ধারণার মধ্যে হারিয়ে যায়। তিনি আরও বলেছেন, মৃত্যুকে সবাই ভয় করে, কিন্তু প্রকৃত সুফিরা হাসে। কোনোকিছুই তাদের হৃদয়কে সন্ত্রস্ত করে না। ঝিনুকের খোলসের ওপর যত আঘাত আসুক তাতে মুক্তা ভাঙে না।” মৃত্যুতে তিনি কাঁদতে নিষেধ করেছেন, “আমার কবরের পাশে দাঁড়িয়ে কেঁদো না, কারণ আমি সেখানে নেই, আমি মরিনি।” রুমির মৃত্যু ভাবনা তাঁর অনেক কবিতায় এভাবে ওঠে এসেছে: “মৃত্যুর সঙ্গে চলে যাওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই/সূর্য অস্তমিত হয়, চাঁদ ডুবে যায়/কিন্তু তারা চলে যায় না।”

মৃত্যু নিয়ে সাধারণত খুব বেশি কথাবার্তা না হলেও এবং ধর্মীয় গোড়ামির জালে আবৃত থাকলেও মৃত্যু ধর্মীয় আলোচনায় মৃত্যু গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান হিসেবে বিদ্যমান থাকে। সুফিবাদে মানুষের সংক্ষিপ্ত পার্থিব জীবনের প্রতি আমাদের মনোযোগ আকর্ষণ করা হয় এবং জীবনের আধ্যাত্মিক বিকাশের ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়, যা মৃত্যুকে এড়ানোর পথ হিসেবে নয়, বরং মৃত্যুর বাস্তবতার শক্তিকে উচ্চতর, খাঁটি ও অধিক গুণসম্পন্ন জীবনের নিয়ে যাওয়া হয় এবং বোঝানো হয় যে পার্থিব জীবনের যে সীমাবদ্ধতাে তাকে ভয় করার কোনো কারণ নেই। মৃত্যুই মানুষকে অসীমে নিয়ে যাওয়ার পথ। সেজন্য সুফিরা মৃত্যুকে বার বার স্মরণ করার কথা বলেন। মৃত্যুকে স্মরণ করাও ইবাদতের অংশ। সুফিরা কোরআনের এই আয়াতগুলো স্মরণ করিয়ে দেন, “তোমরা কি মনে করেছো যে আমি তোমাদের আমোদ-প্রমোদ করার জন্য সৃষ্টি করেছি এবং আমার কাছে তোমাদের ফিরে আসতে হবে না?” (আল-মুমিনুন: ১১৫)। “বলো যে মৃত্যু থেকে তোমরা পালিয়ে বেড়াচ্ছো তা অবশ্যই তোমাদের ধরে ফেলবে। এরপর অদৃশ্য ও দৃশ্যমান সকল জ্ঞানের অধিকারীর কাছে তোমাদের ফিরে আসতে হবে এবং তোমরা যা করেছো তা তোমাদের জানানো হবে,” (আল-জু’মা: ৮)।

ইসলামের প্রাথমিক সময় থেকে যারা মৃত্যু সম্পর্কে সুক্ষ্ম ও গভীরভাবে আলোচনা করেছেন তাদের অন্যতম ইমাম গাঁজ্জালি বলেছেন, “প্রতিটি যাত্রা শুরুর জন্য রসদ সংগ্রহ জরুরী। অতএব এই পৃথিবী থেকে পরবর্তী জীবনে যাত্রার জন্য সেই রসদ হিসেবে আল্লাহর ভীতিকে গ্রহণ করো। কারণ মানুষ জানে না যে রাতের অবসানে যে পুনরায় জাগ্রত হবে কিনা। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বেঁচে থাকার মধ্যে কোনো উচ্চ আশা করার কারণ থাকতে পারে না।ৃ” ওমর ইবনে আজিজকে ইসলামী সাম্রাজ্যের অত্যন্ত শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তিত্ব হিসেবে বিবেচনা করা হয়। রাজনৈতিক নেতা হওয়া সত্বেও তিনি সবসময় মৃত্যুকে এমনভাবে স্মরণ করতেন যে তাঁর এক বিচারক মৃত্যু সম্পর্কে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গিতে অস্বস্থি বোধ করতেন। ওমর ইবনে আজিজ তঁকে বলেন, “আমাকে কবরস্থ করার তিন দিন পর আপনি দেখতে পাবেন আমার চোখের মণি গলে আমার গাল বেয়ে পড়ছে, আমার ঠোঁট শুকিয়ে আমার দাতের সঙ্গে লেগে আছে, আমার মুখ হা হয়ে আছে এবং পুঁজ গড়িয়ে পড়ছে, আমার পেট ফুলে আমার বুকের ওপরে ওঠে গেছে, পেছনের অংশে আমার মেরুদণ্ড বের হয়ে আছে এবং কেঁচো-পোকামাকড় ও পুঁজ আমার নাক দিয়ে বের হচ্ছে, এখন আমাকে যেভাবে দেখছেন তখন আপনি অনেক অকল্পনীয় কিছু দেখতে পাবেন।” তাঁর কথা থেকে উপলব্ধি করা যায় যে, এটি শুধু একজনের মৃত্যুর কল্পনা নয়, মৃত্যুর প্রক্রিয়ার ওপর গভীর ভাবনা।

ইমাম গাজ্জালির আধ্যাত্মিক জীবনের অভিযাত্রা এবং নিজেকে পরিশুদ্ধ করার জন্য মৃত্যু সম্পর্কে ধ্যান ছিল তাঁর গুরুত্বপূর্ণ জিকর বা অনুশীলন। তিনি বিশ্বাস করতেন নিদ্রা মৃত্যুর অতি নিকটে। তাঁর কাছে প্রতিটি দিন ছিল তাঁর জীবনের শেষ দিন। সেজন্য তিনি তাঁর মুরিদদের উপদেশ দিতেন ঘুম থেকে ওঠেই প্রথমেই মুখে যে কথা উচ্চারণ করা উচিত তা হলো আল্লাহর প্রশংসা। রাসুল মুহাম্মদও এর ওপর জোর দিয়েছেন। এই অনুশীলনের মাধ্যমে মানুষকে সবসময় আল্লাহর ওপর নিরঙ্কুশ নির্ভরশীল হওয়ার কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া সংক্ষিপ্ত পার্থিব জীবনের ওপর আলোকপাত করতে গাজ্জালি মানুষকে তাদের জীবনে খুব বেশি আশা পোষণ না করতে উৎসাহিত করেছেন, কারণ মৃত্যুর আগমণ আকস্মিক, মৃত্যু আসার সুনির্দিষ্ট সময়, নিয়ম ও বয়স নেই। মানুষের প্রাত্যহিক জীবনের মৃত্যুর ভাবনা ধৈর্যের অনুশীলনের পাশাপাশি জীবনের অবশিষ্ট সময়ের জন্য সৃষ্টিকর্তার প্রতি নিবেদিত থাকার বোধ জাগিয়ে রাখে।

advertisement

Posted ১১:০৪ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২০ মে ২০২১

Weekly Bangladesh |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

আমরা মরি কেন?
আমরা মরি কেন?

(631 বার পঠিত)

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১১২১৩১৪১৫১৬
১৭১৮১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭২৮২৯৩০
৩১  
Dr. Mohammed Wazed A Khan, President & Editor
Anwar Hossain Manju, Advisor, Editorial Board
Corporate Office

85-59 168 Street, Jamaica, NY 11432

Tel: 718-523-6299 Fax: 718-206-2579

E-mail: [email protected]

Web: weeklybangladeshusa.com

Facebook: fb/weeklybangladeshusa.com

Mohammed Dinaj Khan,
Vice President
Florida Office

1610 NW 3rd Street
Deerfield Beach, FL 33442

Jackson Heights Office

37-55, 72 Street, Jackson Heights, NY 11372, Tel: 718-255-1158

Published by News Bangladesh Inc.