আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু | বৃহস্পতিবার, ১৭ জুন ২০২১
আমাদের সহকর্মী সাংবাদিক দিমা নেফারতিতি তার ফেসবুক ওয়ালে ম্যানহাটানে নিউইয়র্ক টাইমস অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে একটি ছবি দেওয়ার পর খেয়াল হলো, এই ভবনটির ভেতরে যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল একবার, ১৪ বছর আগে ২০০৭ সালের জুন মাসে। ওই সময় টাইমসে কাজ করতেন ১৯৮৮-৮৯ সালে স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে আমার সঙ্গে একটি ফেলোশিপ প্রোগ্রামে অংশগ্রহকারী বারবারা আয়ারল্যান্ড। তখন তিনি ছিলেন ছোট আঞ্চলিক সংবাদপত্র ‘বাফেলো নিউজ’ এর সিনিয়র রিপোর্টার। স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির ফেলোশিপের তকমা তার জন্য নিউইয়র্ক টাইমসের দরজা খুলে দিয়েছিল। ২০০৭ এ আমি ও আমার স্ত্রী বেড়াতে এসে ওকে ফোন করলে তিনি তার অফিসে লাঞ্চে ডাকেন। টাইমস স্কোয়ারের অফিসটি বিক্রি করে দিয়ে নিউইয়র্ক টাইমস তখন বর্তমান ভবনে কেবল ওঠতে শুরু করেছে। এটি মিডটাউন ম্যানহাটানের এইটথ এভিনিউয়ে ৪০ ৪১ ষ্ট্রিটের মধ্যবর্তী স্থানে। ৫২ তলাবিশিষ্ট ১০৪৬ ফুট উঁচু এই ভবন নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৮৫০ মিলিয়ন ডলার এবং উচ্চতার দিক থেকে নিউইয়র্কে টাইমস ভবনের স্থান এগারতম। মোট ফ্লোর এরিয়া এক লাখ ৪৩ হাজার বর্গমিটার। অবশ্য পুরো ভবনেই সংবাদপত্রের কাজ হয় না। বিভিন্ন কোম্পানির কাছে ভাড়া দেয়া হয়েছে অনেকগুলো ফ্লোর। আমাদের জন্য গেটেই অপেক্ষা করছিল বারবারা। নিয়ে গেল সোজা ক্যাফেটরিয়ায়। এক ফ্লোর জুড়ে শুধুই ক্যাফেটরিয়া। ফাইভ স্টার হোটেলগুলোর রেস্টুরেন্টের চেয়েও ভালো ব্যবস্থা। শত শত আইটেম। বাফেট। ওখানেই প্রথমবার দেখেছি, খাবার নেয়ার পর ওজন হিসেবে দাম দিতে হয়। খাওয়ার পর বারবারা বিভিন্ন তলায় বিভাগগুলো ঘুরিয়ে দেখায়। আগের টাইমস বিল্ডিংয়ে প্রেস ছিল না। এই বিল্ডিংয়ের দুটি বেসমেন্ট জুড়ে প্রেস। যদিও ম্যানহাটানের বাইরে সিটির উপকন্ঠে নিউইয়র্ক টাইমসের সবচেয়ে বড় প্রেস রয়েছে।
বারবারা নিউইয়র্ক টাইমসে নেই বহু বছর। প্রথম স্বামীর সঙ্গে তার বিচ্ছেদ হয়েছিল আমরা স্ট্যানফোর্ডে যাওয়ার আগেই। আগের স্বামীর ঘরে তখনই ওর মেয়ের বয়স একুশ বছর। আমার মেয়ের বয়স মাত্র সাড়ে ৬ বছর। বারবারা থাকতো স্টিভ নামে তার এক বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে। স্টিভ ভালো লোক ছিল। পাক্কা ভেজিটারিয়ান। আমাদের হিন্দু ভেজিটারিয়ানদের অনেকে দুধ, মাখন, ঘি, পনির খায়। কিন্তু স্টিভ কোনো এনিম্যাল প্রোডাক্টও খেতো না। ছিমছাম, সুগঠিত শরীর। ২০০৭ এর জুনে যখন দেখা হলো তখন স্টিভ আর বারবারার বয়ফ্রেন্ড ছিল না। সে এক আমেরিকান ভেটেরানকে বিয়ে করেছিল। লং আইল্যান্ডে থাকতো। আমার স্ত্রী কামরুন নাহার মনি কথা বলার সময় বর্ষাকালে মুখর বৃষ্টিপাতের পর পাহাড়ি ঢলের মত। কারও সাধ্য নেই, ওর কথা থামানোর। বারবারা নতুন স্বামীর কথা শুনে বলে, ‘তোমার বয়ফ্রেন্ড তো বেশ ভালো ছিল। তুমি আবার বিয়ে করতে গেলে কেন?” আমেরিকানরা এ ধরনের ব্যক্তিগত প্রশ্ন বা মন্তব্য পছন্দ করে না। আমি টেবিলের নিচে আমার পা দিয়ে ওর পায়ে চাপ দেই। সে আমার দিকে তাকায়। ভাবটা হলো, আমি এমন করছি কেন। শেষ পর্যন্ত আমাকে বলতেই হয়, “এসব জানতে চেয়ো না, একেবারেই ব্যক্তিগত ব্যাপার। ওর ভালো লেগেছে, বিয়ে করেছে।” বারবারা অত্যন্ত ভদ্র। সবসময় হেসে হেসে কথা বলে।
নতুন স্বামী সম্পর্কে সে বিস্তারিত বলে। কিভাবে পরিচয় হলো। কেন ভালো লাগলো এবং বিয়ের সিদ্ধান্ত নিলো, ইত্যাদি। ওর স্বামী লেখালেখি করতেন। আমাকে বলেছিলেন ওর স্বামী ভিয়েতনাম যুদ্ধে অংশ নিয়েছিল। যুদ্ধের ওপর বই লিখছেন। আমার সঙ্গে কথা বলতে তার স্বামী ভালো বোধ করবে বলে তিনি জানিয়েছিলেন এবং তার বাড়িতে আমন্ত্রণ করেছিলেন। যেহেতু পরদিনই আমরা ওয়াশিংটন ডিসিতে যাবো আমাদের আরেক বন্ধু এসোসিয়েটেড প্রেস এর জন হেনরি ও তার স্ত্রী প্যাটের আমন্ত্রণ রক্ষা করতে; অতএব বারবারার তাৎক্ষণিক আমন্ত্রণ গ্রহণ করতে পারিনি। নিউইয়র্কে ফিরে বারবারার বাড়ি যাব বলে স্থির করেছিলাম। কিন্তু ওয়াশিংটন থেকে ফেরার আগেই বারবারা ফোন করেছিল জানিয়েছিল সে তার পরিবারের কারও অসুস্থতা বা দুর্ঘটনার কারণে বাফেলো যাচ্ছে। অতএব তখন আর ওর স্বামীর সঙ্গে দেখা করা হয়নি।
এর দুই বছর পর আমার এক সাংবাদিক বন্ধু নিউইয়র্ক ভ্রমণে আসেন। তিনি নিউইয়র্ক টাইমস অফিস দেখার আগ্রহ ব্যক্ত করলে আমি বারবারাকে মেইল করে জানাই। আমার সেই বন্ধুকেও বারবারা তার অফিস ঘুরিয়ে দেখিয়ে আপ্যায়ন করেছিলেন। স্থায়ীভাবে নিউইয়র্কে আসার পর বারবারার খবর নেই। তখন তিনি আর নিউইয়র্ক টাইমসে ছিলেন না। কাজেই নিউইয়র্ক টাইমস অফিসে আর যাওয়া হয়নি।
Posted ২:০৮ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৭ জুন ২০২১
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh