চৌধুরী মোহাম্মদ কাজল : | বৃহস্পতিবার, ১৮ জানুয়ারি ২০২৪
আমরা প্রায়ই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের কথা শুনি। এই স্বপ্ন সম্পর্কে আমরা বেশী কিছু জানিনা। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও জানেন কিনা বলতে পারিনা। তারা শুধু বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলার কথা বলেন। এই স্বপ্নের রূপরেখা কেমন ছিল আমরা জানিনা। বঙ্গবন্ধু কখন স্বপ্ন দেখেছিলেন তাও জানিনা। স্বাধীনতার আগে না পরে। নাকি পাকিস্তানের কারাগারে। সেই স্বপ্নে পরবর্তীতে কতগুলি সংশোধনী আনা হয়েছে আমরা জানি না। সেই স্বপ্নে কি বহুদলীয় গনতন্ত্র ছিল, না কি একদলীয় বাকশাল ব্যবস্থা আমরা জানিনা। তার স্বপ্নে সম্ভবত তত্ত্ববধায়ক সরকারের বিষয়টি ছিল না। কারন এই কনসেপ্টটি তখন ছিল না।
আমি দেশে থাকা অবস্থায় এ ব্যাপারে কিছুটা অনুসন্ধান করেছিলাম। কিন্তু দেখলাম আমার ছাত্রলীগের বন্ধুরাও এ ব্যাপারে বিশেষ কিছু অবগত নয়। বঙ্গবন্ধুর পরিবারের প্রতি তাদের আনুগত্য প্রশ্নাতীত। তাই এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানার প্রয়োজনও বোধ করেনি। সবকিছুই তারা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু কন্যা (জাজববক) শেখ হাসিনার ওপর ছেড়ে দিয়েছে। যেহেতু স্বাধীনতার পর শেখ হাসিনাই সবচেয়ে বেশী সময় বাংলাদেশ শাসন করেছেন তাই ধরে নিচ্ছি তিনি যা করছেন সবকিছু বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের আলোকেই করেছেন।
তিনি দুই স্পেলে ২০ বছর দেশ শাসন করেছেন। টানা ১৫ বছর ক্ষমতায় থেকে গত ৭ জানুয়ারী যেহেতু তিনি পঞ্চম বারের মত নির্বাচন কমিশনের মেন্ডেট পেয়ে গেছেন, ধারনা করা যায় সবকিছু ঠিক থাকলে তিনি তার ক্ষমতায় থাকার রেকর্ডটি আরও দীর্ঘায়িত করতে সক্ষম হবেন। তাই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন সম্পর্কে ধারনা পেতে হলে জাজববকের গত ২০ বছরের কর্মকান্ডের ওপর আলোকপাত করা যেতে পারে।
বঙ্গবন্ধু স্বপ্ন দেখেছিলেন যমুনা নদীর ওপর একটি ব্রিজ হবে। এতে উত্তর বঙ্গের মানুষ উপকৃত হবে আর সে সেতুটি হবে তার নিজের নামে। তিনি স্বপ্ন দেখেছিলেন পদ্মা ব্রীজ সহ সারাদেশে যোগযোগ ব্যবস্থার প্রভূত উন্নয়ন সাধিত হব। তার সুযোগ্য কন্যা সেটা বাস্তবায়ন করছেন। তিনি স্বপ্ন দেখেছিলেন একটি গনতান্ত্রিক রাস্ট্রের। এতে সুষ্ঠু নির্বাচন ব্যবস্থা না থাকলেও চলবে। এই রাস্ট্রটি নিয়ন্ত্রন করবে আওয়ামী লীগ। আর আওয়ামী লীগ নিয়ন্ত্রন করবে শেখ পরিবার। তাইতো শেখ হাসিনা ৪৩ বছর ধরে আওয়ামী লীগের সভাপতি। পাকিস্তানে ছিল ২২ পরিবার।
বাংলাদেশে তৈরী করতে হবে কয়েকশ পরিবার। এরা সবাই আওয়ামী লীগের রাজনীতি করবে। যেহেতু শেখ পরিবারের পক্ষে সারাদেশের সবকিছু দেখা সম্ভব না, তাই এদেরকে দেশের বিভিন্ন এলাকা ইজারা দেওয়া হবে। এরাই দেশের বিভিন্ন অঞ্চল শাসন করবে। রাষ্ট্রীয় বড় বড় পদগুলিতে এইসব অভিজাত পরিবারের সদস্যরাই থাকবে। দলের ত্যাগী নেতা ও রাজপথের সৈনিকদের প্রয়োজন শেষ হলে ছুড়ে ফেলে দেওয়া হবে। যদি কেউ উচ্চবাচ্য করে তাহলে ওদেরকে বিভিন্ন ছোট ছোট লাভজনক পদগুলিতে বসিয়ে ঠান্ডা করা হবে।
বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলায় কোন বিরোধী দল থাকার দরকার নেই। এজন্যই তিনি একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন করেছিলেন। কিন্তু ১৯৭৫ এর দুঃখজনক ঘটনা ও আকষ্মিক রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের জন্য পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে পারেননি। এখন তার সুযোগ্য কন্যা সে চেষ্টা করে যাচ্ছেন। দেশে বক্তৃতা দেওয়ার অধিকার থাকবে শুধু নেতাদের। জনগনের কথা বলার দরকার নেই। তাই বাক স্বাধীনতারও প্রয়োজন নেই। এজন্য দেশে সরকার বিরোধী কোন পত্রিকা থাকতে পারবেনা। যদি কেউ বেশী বাড়াবাড়ি করে তাহলে বিশেষ ক্ষমতা আইন ১৯৭৪ বা প্রিন্টিং প্রেস এন্ড পাবলিকেশন্স অ্যাক্ট ১৯৭৩ এর মত আরও কিছু আইন করা যেতে পারে।
আওয়ামী রাজনীতির বিরোধিতা যারা করবে তাদেরকে কঠোর হস্তে দমন করতে হবে। প্রয়োজনে তাদেরকে ভারতের হাতে তুলে দেওয়া হবে। ভারতে যেহেতু লিখাপড়া, ভ্রমন ও চিকিৎসার সুব্যবস্থা রয়েছে তাই বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলায় ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা হাসপাতাল তৈরী করে অর্থ অপচয়ের দরকার নেই। দেশে যেহেতু প্রচুর রাস্তাঘাট ও ব্রীজ নির্মাণ করে যোগাযোগ ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনা হয়ছে, তাই যে কেউ ইচ্ছা করলেই লিখাপড়া বা চিকিৎসার জন্য ভারত যেতে পারবে। আর শীর্ষ স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের জন্য পাশ্চাত্যের পথতো খোলাই আছে। তারা শুধু বিদেশে যাবেই না। সেখানে থাকতে পারবে, বাড়ী কিনতে পারবে। তারা যাতে অনায়াসে বিদেশে টাকা নিয়ে যেতে পারে এজন্য মানি লন্ডারিং আইনের প্রয়োগও শিখিল করা হবে।
বঙ্গবন্ধুকে বলা হয় জাতির পিতা। যেহেতু তিনি বাঙালী জাতির পিতা ছিলেন, তাই তার ছেলেমেয়েরা বাংলা চর্চা করেছে। কিন্তু তার নাতি নাতনীদের বাংলা চর্চা করার আবশ্যকতা নেই। তিনি তো জাতির দাদা বা নানা ছিলেন না। তাই তার নাতি নাতনীরা বিদেশে থাকছে। বিদেশী নাগরিকত্ব নিয়েছে। বিদেশীদের সাথে বৈবাহিক সম্পর্কে আবদ্ধ হয়ে হাইব্রীজ প্রজন্মের জন্ম দিচ্ছে। দুর্ভাগ্য বঙ্গবন্ধু দেখে যেতে পারেননি।
তার বংশধররা আজ আমেরিকা, ইংল্যান্ডের নাগরিক। আর দশটা বাঙালীর মত তাদের গায়ের রং কালো নয়। তারা ইংরেজীতে কথা বলে। এখানেই তো অভিজাতদের সাথে সাধারন বাঙালীদের পার্থক্য। বঙ্গবন্ধুর বংশধররা বিদেশে থাকলেও নির্বাচনের সময় দেশে ঠিকই ‘বান্দা হাজির’।
দেশ শাসনতো তাদেরকেই করতে হবে। বৃটেনের রাজার প্রতিনিধিরা যদি ইংল্যান্ড থেকে এসে ২০০ বছর ভারত শাসন করতে পারে তাহলে বঙ্গবন্ধুর বংশধররা বিদেশ থেকে এসে কয়েকশ বছর বাংলাদেশ শাসন করতে পারবে না কেন। লাইন অব সাকশেসনতো ঠিক করাই আছে। অস্টম এডওয়ার্ডের মত কিছু না ঘটালে সজীব ওয়াজেদই হচ্ছেন দেশের পরবর্তী কর্ণধার। তা নাহলে পুতুল, ববি, টিউলিপরাতো পাইপলাইনে আছেই। কি চমৎকার ব্যবস্থা। সবকিছুই হয়েছে শেখ হাসিনার কল্যানে। সত্যিই তিনি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সার্থক রূপকার।
Posted ৫:৪৯ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৮ জানুয়ারি ২০২৪
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh