শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ | ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

Weekly Bangladesh নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত
নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত

বিশ্ব যখন লকডাউনে

এনামুল হক   |   রবিবার, ২১ জুন ২০২০

বিশ্ব যখন লকডাউনে

এই গ্রহের বুকে মানুষের সমস্ত কর্মকান্ড স্তব্ধ হয়ে গেছে। একটা ভাইরাসের হিংস্র ছোবল থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য একের পর এক দেশ রুদ্ধদুয়ারের আড়ালে চলে গেছে। কল-কারখানার চাকা বন্ধ। উৎপাদন বন্ধ। আমদানি রফতানি বন্ধ। অর্থনীতি হুমড়ি খেয়ে পড়েছে। শিল্প-ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ভোক্তাদের এই সঙ্কট থেকে উদ্ধার করতে সরকারগুলো ট্রিলিয়নকে ট্রিলিয়ন ডলারের সাহায্য ও ঋণ কর্মসূচী নিয়েছে। তবে এসব উদ্ধার কর্মসূচী কিভাবে কাজ করবে কিংবা আদৌ কাজ করবে কিনা কেউ নিশ্চিত হতে পারছে না।

আরও ভয়াবহ চিত্র আছে। গবেষণামূলক নতুন তথ্যে দেখা যায় এই মহামারীর রুদ্ররোষ থামানোর জন্য বার বার শাটডাউন করার দরকার হবে। তাই যদি হয় তাহলে বিশ্ব অর্থনীতির কবর রচিত হবে। এক অকল্পনীয়, অসহনীয় ক্ষতি সাধিত হবে। সুতরাং কোন্ পথ বেছে নেয়া হবে সে ব্যাপারে কঠিন সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় এসেছে।


মধ্য চীনের উহানে এক রহস্যময় রোগে লোক অসুস্থ হচ্ছে, মারা যাচ্ছে- এই খবর প্রথম প্রকাশিত হওয়ার ১২ সপ্তাহ পর বিশ্ববাসী এই মহামারী মানুষ ও অর্থনীতির সত্যিকারের কত ক্ষতি সাধন করছে তা উপলব্ধি করতে শুরু করেছে। ১৮ মার্চ পর্যন্ত কোভিড-১৯ এর ভাইরাস সার্স-কভ-২ এ চীনের বাইরে ২১৪টি দেশ ও ভূখ-ের ১ লাখ ৩৪ হাজার লোক আক্রান্ত হয়। মাত্র ৭ দিনে সংক্রমিত ব্যক্তির সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ৯০ হাজার এবং দেশ ও ভূখ-ের সংখ্যা বেড়েছে ৪৩। সর্বশেষ ২০ জুনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী বিশ্বব্যাপী আক্রান্তের সংখ্যা ৮৭ লাখ ৯৫ হাজার ৩২ জন ও প্রাণহানির সংখ্যা ৪ লাখ ৬৩ হাজার ২৬০ ছাড়িয়েছে। এ হলো সরকারী হিসাব। প্রকৃত সংখ্যা বছর বছর ঢের ঢের বেশি হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

আতঙ্কিত সরকারগুলো একের পর এক নিয়ন্ত্রণ আরোপের জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়েছে, যা কয়েক সপ্তাহ আগেও কল্পনাও করা যায়নি। অসংখ্য দেশ বাইরের লোক আগমন বন্ধ করে দেয়ার জন্য জল, স্থল, আকাশপথ সিল করে দিয়েছে। লন্ডন নগরী অন্ধকারে। টাইম স্কোয়ার ফাঁকা। আমেরিকা, ফ্রান্স, ইতালি, স্পেনসহ অধিকাংশ দেশে কাফে, রেস্তরাঁ, পানশালা বন্ধ। স্টেডিয়ামগুলোয় শূন্যতার প্রতিধ্বনি। এখন বোঝা যাচ্ছে যে, পর্যবেক্ষকদের প্রত্যাশার চেয়েও অনেক বিপর্যস্ত অবস্থা ধারণ করতে যাচ্ছে অর্থনীতি। জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারির পরিসংখ্যানে দেখা যায় যে চীনে শিল্পোৎপাদন সাড়ে ১৩ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। অথচ পূর্বাভাষ ছিল যে, আগের বছরের তুলনায় তা ৩ শতাংশ হ্রাস পাবে। একইভাবে খুচরা বিক্রি ৪ শতাংশ কমেনি- কমেছে ২০.৫ শতাংশ। যন্ত্রপাতি ও অবকাঠামোর মতো স্থায়ী পরিসম্পদে বিনিয়োগ ২৪ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে- যা পূর্বাভাস ছিল তার প্রায় ৬ গুণ। স্মরণকালের ভয়াবহতম মন্দার মুখোমুখি হয়ে সরকারগুলো নানা ধরনের উদ্ধার কর্মসূচী নিচ্ছে।


কিন্তু মহামারী সামলানো যাবে কিভাবে? গবেষকরা নানা ধরনের মডেল তৈরি করে দেখেছেন যে, সামনেও নিরানন্দ, অন্ধকার চিত্র ছাড়া আর কিছু নেই। একটি কৌশল হলো লাঘব করা বা কার্ভটাকে সমতল করে ফেলা। যেমন, সংক্রমিত পরিবারগুলোকে কোয়ারেন্টাইনে আবদ্ধ করে বা বিচ্ছিন্ন করে রেখে মহামারীর তীব্রতা কমিয়ে আনা। অন্য কৌশল হলো যারা বাসায় থেকে কাজ করতে পারে না, তারা বাদে প্রত্যেককে ঘরে আবদ্ধ রাখা এবং স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেয়াসহ বৃহত্তর পরিসরে ব্যবস্থা নিয়ে রোগকে দমন করে রাখা। মডেলে দেখা গেছে, ভাইরাসকে বিস্তার ঘটতে দিলে চলতি গ্রীষ্মের শেষ নাগাদ আমেরিকায় প্রায় ২২ লাখ ও ব্রিটেনে ৫ লাখ লোক মৃত্যুবরণ করবে। হিসাব করে দেখা গেছে, উন্নত দেশগুলোতে সংক্রমিত পরিবারগুলোকে দু’সপ্তাহের কোয়ারেন্টাইনসহ তিন মাসের কার্ভ-ফ্ল্যাটেলিং করা হলে বড়জোর এর প্রায় অর্ধেক মৃত্যু রোধ করা যাবে। তদুপরি ইনটেনসিভ কেয়ারের তুঙ্গ চাহিদাটা হবে ব্রিটেনের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের ধারণক্ষমতার ৮ গুণ, যার ফলে আরও অনেকেই মৃত্যুবরণ করবে।

অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, সরকারগুলো মহামারী দমনের প্রয়োজনে আরও কঠোর নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে। দমনমূলক ব্যবস্থার একটা সুবিধা হলো এটা চীনে কাজ নিয়েছে। ১৮ মার্চ ইতালিতে যেখানে নতুন করে ৪ হাজার ২০৭ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছে, সেখানে এদিন উহানে একজনও আক্রান্ত হয়নি। ১৪০ কোটি লোকের দেশ চীনে ৩১ মার্চ পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৮২ হাজার ২৭৮ এবং মৃতের সংখ্যা ৩ হাজার ৩০৯। এক হিসাবে দেখা যায় যে, ভাইরাসটিকে তার মর্জির ওপর ছেড়ে দেয়া হলে ব্রিটেন ও আমেরিকায় ৮০ শতাংশেরও বেশি লোক এ রোগে আক্রান্ত হবে।


কিন্তু রোগ দমনের যে ব্যবস্থা তার অসুবিধাও আছে। এই ব্যবস্থায় সংক্রমণের হার অপেক্ষাকৃত কম রাখা হয়ত যাবে, কিন্তু এতে অনেক লোকেরই ভাইরাস সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা থেকে যাবে। কোভিড-১৯ এখন এত ব্যাপক পরিসরে ছড়িয়েছে যে, বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার কয়েক সপ্তাহের মধ্যে আবার ফিরে আসবে। এই পরিস্থিতিতে কোন কোন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ হলো, প্রতিবার রোগ পুনরায় মাথাচাড়া দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে আবার দমনমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। অন্তত অর্ধেক সময়টা লকডাউনে কাটাতে হবে। লকডাউন দেয়া ও লকডাউন তুলে নেয়ার এই চক্রটি বারংবার চালাতে হবে যতক্ষণ পর্যন্ত না রোগটি জনগোষ্ঠী থেকে দূরীভূত হয় কিংবা এর ভ্যাকসিন বের হয়। সে জন্য চীনের ওপর নজর রাখাটাকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। দেখতে হবে সেখানে রোগের পুনরায় প্রাদুর্ভাব ঘটা ছাড়াই জীবন স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে কিনা। আশার কথা এই যে, সেখানে মহামারী তত্ত্ব¡বিদদের দলগুলো আগাম অবস্থায় নতুন রোগী ধরা, তারা কার কার সংস্পর্শে এসেছেন নির্ণয় করা এবং তাদের কোয়ারেন্টাইনে রাখার জন্য ব্যাপক পরিসরে পরীক্ষা চালাতে পারে। এ জন্য সমাজকে তোলপাড় করার দরকার পড়বে না। চীন জাপানের একটি নতুন এন্টিভাইরাল ওষুধ প্রয়োগ করে কিছু সুফল পেয়েছে এবং করোনা দমনে সম্ভাবনাময় বলে উল্লেখ করেছে। ওষুধটির নাম এভিগান বা কাভিপিরাভিন।

তবে এসবই আশার কথা। আশা কোন কৌশল নয়, হতে পারে না। নির্মম সত্যটা হলো রোগ লাঘব বা প্রশমনের কৌশলে অনেক মানুষেরই জীবন যাবে। আবার রোগ দমন কৌশল অর্থনৈতিক দিক দিয়ে টেকসইও নয়। এতে এক পর্যায়ে ব্যবসা বাণিজ্য সবকিছুই থেমে যাবে। এতে যে অসহনীয় অবস্থা হবে সাধারণ মানুষ তা হয়ত সহ্য করতে পারবে না। এ ব্যাপারে দক্ষিণ কোরিয়া, চীন ও ইতালির কৌশল অনুসরণ করা যেতে পারে। সেই কৌশল শুরু হয়েছে ব্যাপক পরিসরে রোগ পরীক্ষার মধ্য দিয়ে। কার এই রোগ হয়েছে যত পরিষ্কারভাবে চিহ্নিত করা যাবে ততই নির্বিচার বিধিনিষেধের ওপর নির্ভরশীলতা কমবে।

করোনা ভাইরাস থেকে বাঁচার জন্য ইউরোপসহ বিশ্বের অধিকাংশ দেশ লকডাউনে ছিল ও আছে। বার, কাফে, রেস্তরাঁ, স্ট্রিট মার্কেট, সিনেমা, নাইটক্লাব, মিউজিয়াম, ক্রীড়াকেন্দ্র সব কিছু প্রায় বন্ধ। শুধু কিছু খাবারের দোকান, ফার্মেসি, ব্যাংক, পেট্রোলপাম্প ইত্যাদি চালু আছে। অফিস আদালতের কাজ মানুষ যতটা সম্ভব ঘর থেকেই করছে। স্পেন তো গোটা দেশে ১৫ দিনের জরুরী অবস্থা ঘোষণা করেছিল। কিন্তু তার পরও করোনার হিংস্র ছোবল অব্যাহত আছে। ১২ মার্চ ফরাসী প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রন দেশবাসীকে ঘরে থাকার নির্দেশ দেয়া ও অন্যান্য কড়াকড়ি ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা দেন। ওই দিন ফ্রান্সে এ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২ হাজার ২৮১ ও মৃতের সংখ্যা ৪৮। ৬ দিন পর দুটো সংখ্যাই বেড়ে তিনগুণেরও বেশি হয়। এ চিত্র সবখানেই। ইতালি ও স্পেনে আরও বেশি।

এক মডেলে দেখা গেছে যে, তিন থেকে চার মাসে ব্রিটিশ জনগোষ্ঠীর ৮০ শতাংশ করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা আছে। সংক্রমিত ব্যক্তিদের মধ্যে যদি ৪.৪ শতাংশ এমন অসুস্থ হয় যে তাদের হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হয় এবং এদের ৩০ শতাংশেরও অবস্থার অবনতি হয়ে এমন পর্যায়ে পৌঁছে যে, তাদের আইসিইউর দরকার হয় তাহলে মধ্য এপ্রিলে আইসিইউ বেডের চাহিদা স্বাস্থ্য সার্ভিসের সর্বোচ্চ ক্ষমতাকেও ছাড়িয়ে যাবে। মে মাসে সঙ্কটজনক রোগীর সংখ্যা দাঁড়াবে প্রাপ্তি সাধ্য আইসিইউ বেডের সংখ্যার ৩০ গুণেরও বেশি। চীনে করোনা সংক্রমিত ব্যক্তিদের ০.৫ শতাংশ থেকে ১.৫ শতাংশ মারা গিয়েছিল। ব্রিটেনে সংক্রমিত ব্যক্তিদের রক্ষণশীল হিসাবে যদি ০.৯ শতাংশের মৃত্যু হবে বলে ধরে নেয়া হয়, তাহলে এই মডেল অনুযায়ী গ্রীষ্মের শেষ নাগাদ মৃতের সংখ্যা ৫ লক্ষ ছাড়িয়ে যাবে।

সৌদি আরব ও সিঙ্গাপুরের মতো গরমের দেশগুলোতেও এ রোগের বিস্তার ঘটায় কিছু কিছু বিশেষজ্ঞ এই ধারণা নাকচ করে দিয়েছেন যে, রোগটি সবচেয়ে ভয়াবহ রূপ ধারণ করে শীতকালে বা ঠা-ার মৌসুমে। তার পরও এমন আশাকে উড়িয়ে দেয়া যায় না যে, মৌসুমের পরিবর্তন এ রোগের বিস্তার মন্থর করে দিতে পারে। মার্চ মাসের গোড়ার দিকে চীনের বিজ্ঞানীরা একটি পুস্তিকা প্রচার করে। তাতে দেখানো হয় কিভাবে বাতাসের তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা চীনের এক শ’ নগরীতে এ রোগের সংক্রমণকে প্রভাবিত করেছে। তারা উপসংহার টানেন যে, আবহাওয়া অধিকতর উষ্ণ ও আর্দ্র থাকলে এ রোগের সংক্রমণ কিছুটা কম হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। গ্রীষ্ম ও বর্ষা মৌসুম খুব একটা কাজে হয়ত দেবে না, তবে এটা কিছুটা কাজে আসতে পারে।

স্কুল, কলেজ, অফিস-আদালত, স্ট্রিট মার্কেট, বার, রেস্তরাঁ, কফিশপ, উপাসনালয়, যে কোন ধরনের সমাবেশ, এক দেশ থেকে অন্য দেশে যাতায়াত অধিকাংশ দেশেই বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ব্যাপক পরিসরে আন্তর্জাতিক ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপের কিংবা সীমান্ত বন্ধ করার সুপারিশ করেনি। তথাপি ইউরোপীয় ইউনিয়ন গত ১৭ মার্চ ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে অপরিহার্য নয় এমন লোকদের বাইরে থেকে আগমন ৩০ দিনের জন্য নিষিদ্ধ করেছে। একই সময় ভারত থেকে আমেরিকা পর্যন্ত দেশগুলো ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে তাদের নিজেদের দেশের নাগরিক বাদে অন্য নাগরিকদের আগমন নিষিদ্ধ করেছে। তবে স্কুল বন্ধ করে দেয়া সবচেয়ে কার্যকর পদক্ষেপ বলে প্রমাণিত হয়েছে, যদিও এর উপকারিতা এক এক দেশে হয়েছে এক এক রকম। এক হিসাবে দেখা গেছে স্কুল ও নার্সারি এক মাস বন্ধ থাকলে আমেরিকার জিডিপি ০.১ থেকে ০.৩ শতাংশ হ্রাস পাবে। আর স্কুল ও নার্সারির বাচ্চাদের অভিভাবকরা যদি স্বাস্থ্য খাতে কাজ করে, তা হলে লোকসানটা আর্থিক ক্ষতির চাইতেও বেশি হবে। ব্রুকলিন ইনস্টিটিউটের হিসাবে বাচ্চাদের স্কুল বন্ধ থাকলে ওই সময়টা স্বাস্থ্য খাতের ৬ থেকে ১৯ শতাংশ কর্মীকে বাসায় থাকতে হবে। ইংল্যান্ডে অবশ্য স্বাস্থ্যকর্মীদের সন্তানদের স্কুলে যাওয়ার সুযোগ দেয়া হয়েছে।

লকডাউনের মতো বিভিন্ন হস্তক্ষেপমূলক ব্যবস্থায় আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি দমিয়ে রেখে বেশ কিছু মানুষের জীবন রক্ষা করা যায়। কিন্তু তাতে যে জনগোষ্ঠী রোগের হাত থেকে মুক্ত থাকতে পারছে তা নয়। ওই ব্যবস্থাগুলো শিথিল করলেই রোগ সংক্রমণের হার বেড়ে যাবে। ভাইরাসের টার্গেট হবে প্রথম দফায় যাদের সংক্রমিত করতে পারেনি, সেই বিপুল সংখ্যক লোককে সংক্রমিত করা। ভাইরাসের এই দ্বিতীয় ঝাপ্টাটি হবে আরও বেশি খারাপ। এই দ্বিতীয় ঝাপ্টা সম্পর্কে উদ্বিগ্ন থাকার কারণে সরকারগুলো নাগরিকদের আশ্বস্ত করতে পারছে না যে, স্বাভাবিক জীবন ব্যাঘাত রাখার এই ব্যবস্থা কতদিন চলবে। তারা এ ব্যাপারে ‘আপাতত’ কিংবা ‘আগামী সপ্তাহগুলো বা মাসগুলো’র কথা বলছে। জার্মান সরকারের স্বাস্থ্য সংস্থার মত গুটিকয়েক সংস্থাই কেবল বলছে যে, ভ্যাকসিন না আসা পর্যন্ত এই কঠোর বিধিনিষেধ অব্যাহত রাখতে হবে এবং তার জন্য দেড় থেকে দু’বছর সময় লেগে যেতে পারে।

ইউরোপ শুরু করার বেশ আগে থেকে দক্ষিণ কোরিয়া সামাজিক দূরত্ব রক্ষা গুরুত্বের সঙ্গে চালু করেছিল। সংক্রমণের রাশ টেনে ধরতে দেশটার বাহ্যত সাফল্য লাভের পেছনে এটাই যে একমাত্র কারণ তা নয়। এর পাশাপাশি বিপুল সংখ্যক লোকের রক্ত পরীক্ষা করা হয় এবং সংক্রমিত ব্যক্তি কার কার সংস্পর্শে এসেছে তা ব্যাপক পরিসরে নির্ণয় করা হয়। এতে বেশ কাজ দিয়েছে।

কোন দেশের পক্ষেই মাসের পর মাস লকডাউন দেয়া সম্ভব নয়। আর যদি দেয়ও তবে এর অর্থনৈতিক প্রতিক্রিয়া হবে অসহনীয়। চীন কঠোরভাবে লকডাউন বলবত করায় নতুন করে সংক্রমিত হওয়ার ঘটনা বিরল হয়ে ওঠার পর কিছু বিধিনিষেধ যেখানে সম্ভব শিথিল করতে শুরু করেছে। ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব যে দু-একটি প্রদেশে তেমন গুরুতর নয়, স্কুল খুলতে শুরু করেছে। অফিস ভবনগুলো খুলেছে তবে স্টাফদের পরস্পর থেকে দূরুত্ব রেখে বসতে হচ্ছে। কোথাও কোথাও অর্ধেক বা এক-তৃতীয়াংশ স্টাফ দিয়ে কাজ চালানো হচ্ছে। নাগরিকদের অবশ্যই মাস্ক ধারণ করতে হচ্ছে বাইরে যাওয়ার ক্ষেত্রে।

সংক্রমণ দমনের এই কৌশলগুলো কিছু দিন কাজ করবে। তবে তা দীর্ঘদিন চালানো সম্ভব নয়। এই কৌশল থেকে বেরিয়ে আসার একটা উপায় হলো কড়া নজরদারি, চিকিৎসার উন্নতি, টিকাদান ইত্যাদি। যত দিন তা না হচ্ছে এই ভাইরাস সমাজ ও অর্থনীতির কল্পনাতীত ক্ষতি সাধন করে চলবে এবং ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা রাষ্ট্র ও সমাজগুলোর পক্ষে হয়ত সম্ভব হবে না।

সূত্র : দি ইকোনমিস্ট

advertisement

Posted ৬:৩২ অপরাহ্ণ | রবিবার, ২১ জুন ২০২০

Weekly Bangladesh |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

গল্প : দুই বোন
গল্প : দুই বোন

(6285 বার পঠিত)

স্মরণে যাতনা
স্মরণে যাতনা

(1306 বার পঠিত)

মানব পাচার কেন
মানব পাচার কেন

(1151 বার পঠিত)

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০  
Dr. Mohammed Wazed A Khan, President & Editor
Anwar Hossain Manju, Advisor, Editorial Board
Corporate Office

85-59 168 Street, Jamaica, NY 11432

Tel: 718-523-6299 Fax: 718-206-2579

E-mail: [email protected]

Web: weeklybangladeshusa.com

Facebook: fb/weeklybangladeshusa.com

Mohammed Dinaj Khan,
Vice President
Florida Office

1610 NW 3rd Street
Deerfield Beach, FL 33442

Jackson Heights Office

37-55, 72 Street, Jackson Heights, NY 11372, Tel: 718-255-1158

Published by News Bangladesh Inc.