ড. আশরাফ উদ্দিন আহমেদ | বৃহস্পতিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২০
বেশির ভাগ দেশে নির্বাচন নিয়ে বিশ্বে মাতামাতি, আলোচনা, উদ্বেগ ও উৎসাহ তেমন পরিলক্ষিত হয় না যেমনটি হয় আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে। প্রধান একটি কারণ হলো, প্রচন্ড শক্তিধর, ধারণাতীতভাবে সম্পদশালী, আধুনিক বিশ্বে ধনতন্ত্রের ধারক ও বাহক এ দেশটিকে গণতান্ত্রিক জীবনধারা ও মুল্যাবোধের অভিভাবক হিসাবে গণ্য করা হয়। অবশ্য, ইদানিং অনেক মহলেই এ বিশ্বাসে চিড় ধরেছে। বিশেষত ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই। সেবারের নির্বাচনে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের ট্রাম্পের সপক্ষে কলকাঠি নাড়া ওপেন সিক্রেট হলে ও কেজেবির একসময়ের দুর্ধর্ষ ও তীক্ষ্ম স্পাই মাস্টারের ভূমিকা কেউ নস্যাৎ করতে পারেনি। এ নিয়ে কংগ্রেশনাল এনকোয়ারি, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে ইমপিচ করার সমস্ত প্রচেষ্টাও ভেস্তে গেছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প বহালতবিয়তে আরো বেপরয়াভাবে ২০২০ ইলেকশনে জেতার সব রকম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। দৃঢ়প্রতিজ্ঞ তিনি, এবারও নির্বাচিত হবেন সদলবলে তা ছলে, বলে, কৌশলে- যে ভাবেই হোক না কেন। তার প্রতিপক্ষ দলটিকে জানতে হবে প্রেসিডেন্ট ও তার দল রিপাবলিকান পার্টি কোন কোন বিষয়ে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন ঘোষণা, কার্যকলাপ, ও পলিসি অনুসরনণে তাদের দূর্বল দিকগুলো জনসমক্ষে উন্মোচন করেছে। ডেমোক্রেটিক পার্টি ও প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী প্রাক্তন ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নিন্মে উল্লেখিত ইস্যুগুলো নিয়ে উদ্দীপনা ও কুশলতার সাথে কাজ করলে যথেষ্ট সুফল পাবেন বলে মনে করার সঙ্গত কারণ আছে।
এ সময়ে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনা হচ্ছে সদ্য প্রয়াত সুপ্রীম কোর্ট জাস্টিজ রুথ বেডের গিন্সবার্গের শূন্যস্থান পূরণে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের তড়িগড়ি উদ্যোগ। তিনি আগামী শনিবার ২৬ সেপ্টেম্বর তারিখে হোয়াইট হাউজে ঘোষণা দেবেন কে হবেন তার নমিনি। তারিখটি পছন্দ করেছেন ঠিক যেদিন জাস্টিজ গিন্সবার্গের মরদেহ ওয়াশিংটন কপিটল এ সমাহিত করা হবে ঠিক তার পরের দিন।
উল্লেখ্য যে সিনেটে তার দল ৫৩-৪৭ সংখ্যাগরিষ্ঠ। ডেমোক্রেটরা ৪ জন সিনেটরকে তাদের সাথে ভিড়াতে পারলে মনোনয়ন ঠেকানো সম্ভব হতে পারে। দু’ জন রিপাবিকান সিনেটর – আলাস্কা থেকে নির্বাচিত লিসা মারকওস্কি এবং মেইন (Maine) এর সুসান কলিন্স বলেছেন যে তারা নভেম্বরে ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হওয়ার পূর্বে সুপ্রিম কোর্টে জাস্টিজ রুথ গিন্সবারগের স্থলাভিষিক্ত কে হবেন সে ব্যাপারে ভোট দিবেন না।
সিনেটর মিট রমনী ডেমোক্রেটদের ধারণা নস্যাৎ করে দিয়ে ঘোষণা করেছেন যে সিনেট ফ্লোরে ভোটের জন্য বিষয়টি পৌছলে তিনি ট্রাম্পের পছন্দের প্রার্থীকেই ভোট দেবেন। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় সিনেটে উপস্থাপিত হলে রিপাব্লিকান দল বিজয় ছিনিয়ে নেবে। ডেমোক্রেটদের যুক্তি হলো অত্যাসন্ন নির্বাচনে যেই প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন তাঁকেই এ দায়িত্ব দেয়া হোক। এমন উদাহরণ আব্রাহাম লিঙ্কন করে গেছেন বিদায়ী প্রেসিডেন্ট নন, নতুন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মনোনয়ন দেয়াড় সুযোগ পান। রিপাব্লিকানরা সিনেটে সংখ্যাধিক্যের বলে এমনতরো ঐতিহ্য মানতে রাজি নন। এদিকে, জনমত জরিপে জানা যায় (CNBC/Change Research poll) নির্বাচনে জেতা প্রেসিডেন্টকে সুপ্রিম কোর্টের জাষ্টিজ বাছাই ও মনোনয়নের দায়িত্ব দেয়াই সব বিবেচনায় সঙ্গত। মাত্র ৩৭% ভোটার মনে করে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প হারলে ও তাঁকেই সুপ্রিম কোর্টের সদ্য শূন্য হওয়া জাস্টিজ পদটি পূরণ করার দায়িত্ব দেয়া উচিত।
ডেমোক্রেটদের জন্য ইস্যুটি একটি বড়ো ধরনের সুযোগ এনে দিয়েছে। দলটি এ বিষয়কে উপাজীব্য করে ঠিকমত জনমত সৃষ্টি করতে পারলে নির্বাচনে লাভবান হবে ধারনা করা যায়। এমনিতেই স্বাস্থ্য সেবা ও ইন্স্যুরেন্স, বিশেষত ওবামাকেয়ার নিয়ে জনগণ এ করোনা প্যানডেমিক সময়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের উপর অখুশি। রিপাবিকান দল প্রচলিত স্বাস্থ্য বীমা ব্যবস্থা বাতিল করলে ২২ মিলিয়ন লোক দারুণ বিপাকে পরবে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ২০১৬ তে নির্বাচিত হয়েই ওবামাকেয়ার বাদ দিয়ে বিকল্প স্বাস্থ্য বীমা প্রবর্তনের চেষ্টা করলে ও এ ক্ষেত্রে তেমন কোন অগ্রগতিই সাধিত হয়নি। জনমত এ বিষয়ে ট্রাম্প এবং তার দলের অনুসৃত নীতি ও তালবাহানায় ভীষণ বিরক্ত। তাছাড়া প্রয়াত সিনেটর জন মেকইনকে ওবামাকেয়ার বাতিলের ট্রাম্পের উদ্যোগের বিরোধিতা করায় ট্রাম্পের নিত্য গালমন্দ অনেক রিপাবলিকানরাই ভীষণ অপছন্দ করেন। সাধারণ জনগণ হরহামেশাই এ নিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সমালোচনা করেন।
২০২০ সালের নির্বাচন নিশ্চিতভাবে ‘গ্লোবাল এফেয়ার ; কোন সাধারণ নির্বাচন নয়। ২০১৬ সালে ট্রাম্প ক্ষমতায় আসলে প্রায় সাথেসাথেই মুদ্রা, ট্রেড, ট্যাক্স ও ট্যারিফ ইত্যাদির নিয়ম কানুনে বড়ো ধরনের পরিবর্তন আসে। অনেক দেশের সাথে বৈদেশিক সম্পর্কের অবনতি ঘটে। চীন, নর্থ কোরিয়া, ইরান, সিরিয়া ছাড়া ও মুসলিম বিশ্বের অনেক দেশের সাথে ইমিগ্রেশন ও যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধজ্ঞা নিয়ে জটিলতার সৃষ্টি হয়। আভ্যন্তরীন অর্থনীতিতে প্রথম বছরে কিছুটা চাঙ্গা ভাব দেখা দিলেও তা নিন্মমুখী হতে বেশী সময় লাগেনি। বেকারত্বের হার বাড়তে থাকে। শেয়ার বাজার ও অস্থিতিশীল হতে থাকে। জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে কোভিড-১৯ এর পদধ্বনি শুনা গেলে বিশেষজ্ঞরা ও সকল স্তরের জনসাধারণ আতঙ্কগ্রস্ত হলে ও প্রেসিডেন্ট অনেকটাই নির্বিকার থাকেন। মৃত্যুর মিছিল শুরু হলে তিনি প্রহসনের মত দেখায় এমন ব্রিফিং সেসন্স করে জনসাধারণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেন এবং অচিরেই তা বন্ধ করে দেন। করোনা মোকাবেলায় কোন কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে না পারায় তাঁর বিলীয়মান জনপ্রিয়তায় আর ও ধ্বস নামে। (চলবে)
ম্যানহেসেট হিলস, লং আইল্যান্ড।
Posted ২:০১ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২০
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh