ড. আশরাফ উদ্দিন আহমেদ | বৃহস্পতিবার, ৩০ জুলাই ২০২০
কোভিড -১৯ পেন্ডেমিকের চরম ভয়ভীতির মধ্যে এবার সারা মুসলিম বিশ্বে ঈদের প্রস্তুতি চলছে। সৌদি আরবে ঈদের দিন কার্ফু বলবৎ থাকবে বলে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশে খোলা মাঠে ঈদ জামাতের আয়োজন করা যাবে না- এ মর্মে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। সরকার ঢাকা, চট্রগ্রাম সিটি কর্পোরেশন সহ সারা দেশের সব জেলা উপজেলায় কোরবানির পশু কেনাবেচারর হাটের সংখ্যা কমিয়ে দিয়েছে। তবে গণ যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ থাকলে ও মানুষ নানা ভাবে ঢাকা সহ বিভিন্ন শিল্প এলাকা, শহর বন্দর থেকে বাড়িমুখো; কেউ কেউ পৌঁছে ও গেছেন। অঘোষিত লকডাউনের মধ্যে ও প্রাইভেট কার বা ভাড়া করা গাড়ীতে করে মানুষ দেদারসে গ্রামের বা মফস্বলের শহরের বাড়ীতে ছুটছেন। ফেরি বন্ধের ঘোষণা দিয়ে ও আবার চালু করা হয়েছে। পত্রিকান্তরে প্রকাশ, লোকজন করোনা স্বাস্থ্যবিধি তেমন করে পালন করছে না। গত ১৪৫ দিনে তিন হাজারের ও বেশী মানুষ ম্যারা গেছেন। এ যেন চার মাসের ও কিছু বেশী সময়ের অবরোধ শেষে মুক্তির স্বাদ, হাঁফ ছেড়ে বাঁচার আনন্দ।
অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি নজরদারি আদালত তেমন কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না। তবে, নতুন মহাপরিচালক আসার কারণে বোধ করি, ঈদের সময়ে রাস্তাঘাটে কেউ অসুস্থ হয়ে পরলে তাদের জন্য আলাদা স্বাস্থ্য টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সরকার ঘোষণা দিয়েছে যে মাস্ক পরা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ইত্যাদি বিষয়গুলো কড়াকড়ি ভাবে পালন করতে হবে। ভ্রাম্যমান আদালত এসবের বরখেলাপে জরিমানা করবে। হাটবাজার ও মসজিদে হাতধোয়ার ব্যবস্থা থাকতে হবে। ঈদের নামাজের সময় মুখে মাস্ক অবশ্যই থাকতে হবে। নামাজের কাতারে মুসল্লিগণ পরস্পরের সাথে দূরত্ব বজায় রাখবেন। কোরবানি হয়ে গেলে মাংস বণ্টনের সময় ও সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে হবে। রক্ত, চামড়া, পশুর ভুঁড়ি ইত্যাদি স্বাস্থ্যসম্মত ভাবে বিহিত করতে হবে। পবিত্র কোরআন এর সুরা আল-হাজ্ব এ সবিস্তারে কোরবানি নিয়ে আলোচনা আছে। কি জাতীয় পশু কোরবানি দেয়া যায়, কিভাবে কোরবানি দিতে হয়, মাংসের ভাগ কারা পাবে ইত্যাদি তো আছেই সাথে সাথে এও বলা হয়েছে যে কোরবানি শুধুমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্যে নিবেদিত হবে; কোরবানি দেয়া পশুর মাংস বা রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছে না, শুধুমাত্র আলোকিত মনের স্পৃহা বা ‘স্পিরিট’ অন্তর্যামী অবলোকন করেন। ইমাম ও মৌলবি সাহেবরা এসব বিষয় কুরান হাদিসের উদ্বৃতি দিয়ে জনসাধারণকে ঈদের আগ থেকেই নসিহত করলে মানুষ কিছুটা হলে ও হৃদয়ঙ্গম করবে; খুৎবায় বললে তো খুবই ভাল হয়। ইসলাম পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে অত্যন্ত সজাগ; পবিত্র কোরান ও হাদিসে ব্যাপারটি বারবার বিধৃত হয়েছে।
এদিকে, দেশে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ মারাত্মক ভাবে বাড়ছে। গত শনিবারে একদিনে সর্বোচ্চ ১,৮৭৩ রোগী শনাক্ত হয়েছে, মারা গেছেন ২০ জন। সরকারী হিসেব মতে বাংলাদেশে মোট শনাক্তকৃত কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা ৩২,০৭৮, মৃতের সংখ্যা ৪৫২। বিশেষজ্ঞরা আশংকা প্রকাশ করে বলছেন, ঢাকা, চট্রগ্রাম ও নারায়নগঞ্জের মোট শহরগুলো যেখানে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেশী তারা গ্রামে যাওয়া মানে সেখানে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়বে অতি দ্রুতগতিতে। ঈদের আনন্দ উৎসব বিষাদে পরিণত হওয়া শুধুমাত্র সামান্য সময়ের ব্যাপার। মাস্ক পরা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং কিছুক্ষণ পর পর কমপক্ষে ২০ সেক্ন্ডে সময় ণীয়ে হাত ধোঁয়া- এ কয়টি ব্যাপারে গাফিলতি মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনবে। মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশে প্রতিটি পরিবারে, হাটিতে, পাড়া, মহল্লায়, হাটেবাজারে মানুষের সমাগম ঈদের সময়ে অনেক গুণ বেড়ে গেছে। সামাজিকতা ও ঈদ উপলক্ষে বাড়তেই থাকবে ঈদের দিন ছাড়া ও ঈদ পরবর্তী কয়েকদিন। সাথে সাথে বাড়বে করোনা সংক্রমণের সম্ভাবনা। এমনিতেই প্রতি বছর বন্যা দেশের ভাঁটি আর নিন্মাঞ্চলে প্লাবনের সহগামী হয়ে পেটের পীড়া সহ নানাবিদ অসুখবিসুখ ছড়িয়ে পরে। এবারের বন্যা প্রায় ১৯৮৮ পর্যায়ের। করোনা কালে এ বন্যা ঈদ এবং ঈদ পরবর্তী সময়ে জনসাধারণের স্বাস্থ্য বিপর্যয় অনেকগুণ বাড়াবে -এ কথা বলা যায়। দীর্ঘস্থায়ী এ বন্যায় কোটির বেশী মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে বলে বিভিন্ন মহল আশংকা প্রকাশ করছে। ইতিমধ্যেই ঢাকার বেশ কিছু নিচু এলাকা বন্যার পানিতে সয়লাব হয়ে গেছে। যে ৩১টি জেলা বন্যার করালগ্রাসের কবলে সেখানে করোনা ভাইরাস ও বন্যায় পানিস্পিতি একসাথে মোকাবেলা করা সুকঠিন। প্রশাসন দারুণ ঝামেলায় পরেছে। চর এলাকা ও ভাঁটি অঞ্চলের অনেক মানুষ নৌকায় বাঁশ করছে। সাপ-কোপের উৎপাত অসম্ভব বেড়ে গেছে। বীজ ধানের ক্ষেত বা আমনের বীজতলা পুরোই নষ্ট হয়ে কৃষকগণ চোখে সর্ষেফুল দেখছেন। নদী ভাঙনে বেঁড়ে যাওয়ায় পাড় ভেঙ্গে ঘরবাড়ী পানির নিচে তলিয়ে যাচ্ছে দ্রুত। করোনার কারণে লকডাউন, সাথে বন্যা -সব মিলিয়ে মানুষের নাস্তা- নাবুদ চরমে। এমন দুঃসময়েই এবারের ঈদ আসছে। গরিব-দুঃখী মানুষ যৎসামান্য সরকারী সাহায্য পেয়ে তৃপ্ত হতে পারছেনা কিছুতেই। এ সময়ে সরকারী খয়রাতের সাথে বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা, বিত্তবান আত্মীয়স্বজন এগিয়ে না আসলে গ্রামে গঞ্জের জনমানুষের ভোগান্তির সীমা পরিসীমা থাকবে না। উল্লেখ্য যে, নগর-শহর, গ্রামে-গঞ্জে অগণিত মানুষের আগমন-নির্গমন জনস্বাস্থ্যকে মারাত্মক ভাবে প্রভাবিত করবছে এবং ১৯৯৮ সালের বন্যা থেকে ও সম্ভাব্য দীর্ঘস্থায়ীত্বের এ বন্যা মানুষের অসহায়ত্ব আনেকগুন বাড়াবে। পানিবাহিত অসুখ-বিসুখের সঙ্গী হয়ে করোনা ভাইরাস কি যে বিভীষিকা সৃষ্টি করবে বাংলদেশে তা একমাত্র আল্লাহ-তায়লাই জানেন।
Posted ১০:৩৪ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ৩০ জুলাই ২০২০
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh