ড. আশরাফ উদ্দিন আহমেদ | বৃহস্পতিবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২০
জর্জিয়া গত এক মাসের ও বেশী সময় ধরে আমেরিয়াকার সব বিখ্যাত, ওজনদার ব্যক্তিবর্গের পদভারে প্রকম্পিত। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, প্রেসিডেন্ট-ইলেক্ট জো বাইডেন, গদীনশীল ভাইস-প্রেসিডেন্ট এবং হবু ভাইস প্রেসিডেন্ট কামালা হারিস সহ এমন হেভি-ওয়েট নেই যিনি আসেননি। জানুয়ারী ২০২১ সালের ৫ তারিখ পর্যন্ত এ আসা যাওয়া চলতেই থাকবে সংগত কারণেই। কোন দল বা কারা এ রাজ্যের দুটো সিনেট আসন ছিনিয়ে নেবে এ প্রতিযোগিতা এখন তুঙ্গে। ৪৮-৫০ খয়ে ৫০-৫০ এ নিতে ডেমোক্র্যাটিক পার্টি যেমন আপ্রাণ লড়ছে রিপাবলিকান দল ও মরিয়া হয়ে যুদ্ধে নেমেছে চলে হোক বলে হোক এ আসনগুলো টাদের দখলে রাখতে। আরও খোলাসা করে বলতে গেলে বলতে হয়, যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস প্রতিনিধি নির্বাচনের ফলশ্রুতিতে ডেমোক্র্যাটিক পার্টি বেশ বেকায়দায়ই আছে। হাউস অফ রিপ্রেজেন্টটিভে খুবই স্বল্প ব্যবধান্যে এগিয়ে আছে সত্যি কিন্তু সিনেটে দু’ভোটে পিছিয়ে আছে। একমাত্র ভরসা জর্জিয়ায় যে আসন দু’টিতে পুনঃনির্বাচন হচ্ছে সেগুলো জিতে নেয়া।
রিপাবলিকান পার্টি একটি আসনে জিতলেই সিনেটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে। কিন্তু ডেমোক্র্যাটিক দলকে ৫০টি আসন পেতে হলে জর্জিয়ায় উভয় আসনেই জিততে হবে। তাহলেই ভাইস প্রেসিডেন্টের ভোটে যে কোন ইস্যুতে ভোটে জিততে পারবে। এ রকম অবস্থানে যেতে পারলে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের লিডারের আসনটি নিয়ম অনুযায়ী ভোগ করতে পারবে। উল্লেখ্য যে পীচ স্টেট খ্যাত জর্জিয়ায় নভেম্বর ৩ তারিখে সিনেট প্রার্থীদের কেউই মোট ভোটের ৫০% লাভ করেনি বিধায় স্টেট আইন অনুযায়ী জানুয়ারী ৫, ২০২১ তারিখে রান অফ ইলেকশনে দু’দলের পার্থীগণ পুনরায় ভোট যুদ্ধে অবতীর্ণ হবেন। দু’দলই দেদারসে পয়সা খরচ করছে কারণ সিনেটে সংখ্যা গরিষ্ঠ দলই ওয়াশিংটনে আগামী দু’বছর সরকার নিয়ন্ত্রণ করবে। জর্জিয়ার নির্বাচনে ইতোমধ্যে ১৬৫ মিলিয়ন ডলার ব্যয় হয়েছে কিন্তু আগামী ৫ তারিখের সিনেট রেসে সব ধরনের খরচ মিলিয়ে বিলিয়ন ডলারের ও বেশী ডলার ব্যয় হওয়ার সম্ভাবনার কথা বলেছে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা। আমেরিকায় এ যাবতকালে কোন রান অফ সিনেট রেসে এত বেশী ব্যয় পূর্বে কখনো হয়নি। ২০২০ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জর্জিয়ার মত ধনী ও সম্মদশালী স্টেটটিতে দ্বিতীয় বারের মতো এত অর্থের সমাগম হলো। এমনিতেই রিপাবলিকান প্রার্থী কেলি লফফ্লার ওয়াশিংটনে সবচেয়ে বিত্তবান সিনেটর । সিনেটর জনি আইজাক্সনের মেয়াদকালের বাকি অংশ পূরণ করার জন্য এ বছরের প্রথম দিকে সিনেটর মনোনীত হন। নিবাচিত হওয়ার এ প্রতিযোগিতায় এ মহিলা লড়ছেন আটলান্টার লুথার কিং জুনিয়র চার্চের পেস্টর রেভারেন্ট রাফায়েল ওয়ারনকের বিরুদ্ধে। অন্য রিপাবলিকান প্রার্থী সিনেটর ডেভিড পারডু ও খুবই বিত্তবান। রিবক অ্যান্ড ডলার জেনারেল এর প্রাক্তন সিওই লড়াই করছেন ডেমোক্র্যাটিক দলের প্রামাণ্য চলচিত্র নির্মাতা জন অসফের বিরুদ্ধে। মিডিয়ার গণ্যমান্য বেশ কিছু ব্যক্তিবর্গ জর্জিয়ার স্থেসি আব্রাহামের সাথে একজোট হয়ে তহবিল সংগ্রহ করছেন। গভর্নর হিসেবে স্তেসির অক্লান্ত পরিশ্রম এবং জনপ্রিয়তা জর্জিয়ার মত রেড স্টেটকে ব্লু ষ্টেটে রূপান্তরিত করেছে। তবে, যুক্তরাষ্ট্রে ২০২০ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট ট্র্যাম্পের পরাজয়ের পেছনে যুব শক্তি অসামান্য অবদান রেখেছে যা অনেকেরই জানা নেই। ২০১৬ নির্বাচনের তুলনায় ২০২০ নির্বাচনে যুবকদের (১৮ থেকে ২৯ বছর যাদের বয়স) ভোটে অংশগ্রহন শতকরা ১০ ভাগ বেড়ে গেছে। এদের বেশীরভাগই জো বাইডেন – কামালা হারিস জুটিকে ভোট দিয়েছে। সারা দেশে যুবক ভোটারদের সংখ্যা মোট ভোটার সংখ্যার ১৭% হলে ও জর্জিয়ায় এ অনুপাত ২০%। বিরাট সংখ্যার এ ভোটাররা ভোট দিলে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির রেভারেন্ড রাফায়েল ওয়ারনক এবং জন ওসফ এর জেতার সম্ভাবনা রিপাবলিকান দলের কেলি লেফার ও ডেভিড পারডু’র চেয়ে বেশী। এ নির্বাচনে ডিসেম্বর মাসের ৭ তারিখ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ একটি দিন।
আলোচিত নির্বাচনে ভোটার হিসেবে রেজিট্রেশনের সর্বশেষ তারিখ দিনটি । লস এঞ্জেলেস কেন্দ্রিক সিভিক্স সেন্টার সংগঠনের মোটে আনুমানিক ২৩,০০০ জর্জিয়াবাসী ঐ দিন ১৮ বছরে পা রাখবে অর্থাৎ ভোটে দেয়ার যোগ্যতা অর্জন করবে। রেজিস্ট্রেশন তারিখ অনুযায়ী সম্পন্ন করলে ২০২১ জানুয়ারি মাসের ৫ তারিখের সিনেট সদস্য নির্বাচন ভোটে তারা অংশ নিতে পারবে । নভেম্বর মাসের ৩ তারিখের নির্বাচনের মত এ সব যুবকরা ও বেশীর ভাগই ডেমোক্র্যাটিক দলের প্রার্থী দু’জনকে ভোট দিবে বলে বিভিন্ন মহলের ধারণা। এদিকে , রিপাবলিকান দল ও সর্বশক্তি নিয়োগ করে প্রচারণায় নেমেছে। প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিও বুশের নির্বাচনের মূল কারিগর কার্ল রোভের নেতৃত্বে ফান্ড সংগ্রহের অভিযাত্রা ছাড়া ও রিপাবলিকান ন্যাশনাল কমিটি ৬০০ স্টাফ বাহিনী জর্জিয়াতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে । প্রেসিডেন্ট ট্র্যাম্প ও যাবেন এমন কথা শোনা গেলে ও তাঁর অস্তায়মান জনপ্রিয়তা, নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে মিথ্যাচার ও একটির পর একটি করে প্রায় সবগুলো মামলায় হেরে যাওয়ার কারণে জনসাধারণের কাছে , বিশেষত জর্জিয়ার অধিকাংশ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা অত্যন্ত নিন্মমুখী হওয়ায় তাঁর না যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশী। তিনি জর্জিয়ায় গিয়েছিলেন তবে তাঁকে অন্যায় ভাবে হারানো হয়েছে এবং তিনিই ক্ষমতায় থাকবেন- এসব নিয়েই বেশী কোথা বলেছেন। প্রেসিডেন্ট ট্র্যাম্পের মত প্রথাবিরুদ্ধ এবং গোঁয়ার মানুষের পক্ষে সবই সম্ভব ।
স্কুল, কলেজর ছাত্ররা , কোভিড -১৯ এর কারণে ঘরে বসে থাকা যুবা বয়সের ছেলে-মেয়েরা অতান্ত উৎসাহের সাথে ভোটার হিসেবে রেজিস্ট্রেশানের জন্য আগামী মাসের ৫ তারিখের মধ্যে যাদের ১৮ বছর বয়স হয়ে গেছে বা যাবে তাদের বিভিন্ন যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহাড় করে তাগাদা দিচ্ছে। ২৩,০০০ ভোটার পোলিং স্টেশনে নিয়ে জেতে পারলে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির দুজনেরই দারুণ লাভ হবে। স্টুডেন্ট আম্বাসেডাররা ‘মাই স্কুল ভোটস’ ব্যবহার করে বাড়ীতে বাড়ীতে বার্তা পৌছে দিচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অহরহ সক্রিয় থেকে এবং ইনবক্স ও ইন্সস্টাগ্রাম এ বার্তা দিয়ে তাঁরা দারুণ সাড়া পাচ্ছে। পকেটে থাকা মিনি কম্পিউটার নিত্য সাথী তাদের আমাদের বয়স্কদের মত ওয়ান-ওয়ে বা এককভাবে খবরের কাগজ পড়ে , টেলিভিশনের সামনে বসে খবর পেতে হয় না। হিপ-হপ সংস্কৃতির শেখরে নাড়া দিয়ে জর্জিয়ার যুবক-যুবতীরা ডেমোক্র্যাটিক পার্টির জন্য অসাধ্য সাধন করবে বলেই মনে হচ্ছে।
এর মধ্যে অনেক কিছু ঘটে গেছে। রিপাবলিকান দলের দুই প্রতিদন্ধী কোর্টে কেস করেছিলেন এ মর্মে যাতে চলমান ভোটদান প্রক্রিয়ার নব্য জর্জিয়ান রেসিডেন্টদের অংশগ্রহণ কোর্টে দেওয়া না হয়। একজন ফেডারাল জজ কেসটি নাকচ করে দিয়েছেন। তারপর ও কেসের পর কেস করা হচ্ছে। ষ্টেটের বিরুদ্ধে অনিয়ম, ডমিনিওন ভোটমেশিন ত্রুটিপূর্ণ , মেইল-ইন এবসেন্টি ভোট ব্যালট গণনায় কারচুপি ও অনিয়ম হয়েছে এসব বিষয় নিয়ে কেস করা হচ্ছে একটির পর একটি। আটলান্টার উকিল লীন উড ভোটদানের মেশিন নিয়ে কেসে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ত্রুটিপূর্ণ ছিল এ মর্মে বিভিন্ন ষ্টেটে কেস করে যাচ্ছেন। অনবরত হারছেন তবু ও কেস করা বন্ধ করছেন না। জর্জিয়ার সেক্রেটারি অব ষ্টেট ব্রেড রাফেন্সপারজার হলেন নির্বাচন পরিচালনা করার ব্যাপারে দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসিয়াল। তাঁর দপ্তর নিয়ম লঙ্ঘন করে অন্য ষ্টেট থেকে এসে ভোট দিচ্ছে কিনা তা তলিয়ে দেখছে আশ্বাস দেয়ার পর ও রাফেঞ্জার , ষ্টেট ইলেকশন বোর্ড , গ্লিন কাউন্টি ইলেকশন বোর্ড এবং কেথাম কাউন্টি ইলেকশন বোর্ডের বিরুদ্ধে কেস করা হয়েছে । জর্জিয়া রিপাবলিকান পার্টি , ন্যাশনাল রিপাবলিকান সিনেটরিয়াল কমিটি , লয়েফ্লার এবং পারডু কেম্পাইন্স ছাড়া ও তিন জন ভোটার কেসগুলো করেছে। সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত মনে করা যায় যে সব কটি কেসই নাকচ হয়ে গেছে। গত শুক্রবার পর্যন্ত পাওয়া খবর অনুযায়ী ১.১২ মিলিয়ন সংখ্যক ভোটার ব্যালট জমা দিয়েছেন। এর মধ্যে ৬৪২,২০০ ব্যাক্তিগত ভাবে এবং ৪৮১,০০০ ডাকে (মেইলে) ভোট দিয়েছেন।
জর্জিয়ায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল যদি দিকনির্দেশক হয় তবে বেশ নিশ্চিত করেই বলা যায় যে ডাকে প্রাপ্ত এবং এবসেন্টি ভোট অধিকাংশই ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থীর পক্ষেই যায়। এবার ও তাই হবে মনে হয়। যুব সম্প্রদায়ের ভোটারদের ও বেশীর ভাগ এ দলই পাবে। সারা আমেরিকার কৃষ্ণাঙ্গ পাদ্রিদের কেন্দ্রীয় সংগঠন ও তাদের এক সতীর্থ সিনেট পদের প্রার্থী রেভেরান্ড রাফায়েল ওয়ারনককে রিপাবলিকান দলের সবচেয়ে বিত্তশালী মহিলা সিনেটর প্রার্থী সমাজতন্ত্রী এবং উস্কানিদাতা বলায় নিন্দার ঢেউ উঠেছে। এ ঘটনা ও রিপাবলিকান প্রার্থীদের বিরুদ্ধে যাবে।
Posted ৯:৪৬ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২০
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh