মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪ | ৫ চৈত্র ১৪৩০

Weekly Bangladesh নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত
নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত

নদী নিয়ে কিছু কথা

ড. আশরাফ উদ্দিন আহমেদ   |   বৃহস্পতিবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২১

নদী নিয়ে কিছু কথা

সম্প্রতি (সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২১) বিশ্ব নদী দিবস পালিত হল। বিগত সাত বছর যাবতই দিবসটি পালন করা হচ্ছে । ২০০৫ সালে জাতিসঙ্ঘে Water For Life Decades স্লোগানটি গৃহীত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ব নদী দিবস পালনের উদ্যোগ নেয় নদী প্রেমিক যুব সম্প্রদায় এবং সবুজ পৃথিবী দেখতে আগ্রহী মানুষ ও সক্রিয় কর্মীরা যাদের Green Activists নামে অভিহিত করা হয়। যুক্তরাষ্ট্র সহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এরা খুবই সক্রিয় । গ্রীন নিউ ডিল ধারনাটি প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্টের অর্থনৈতিক মহামন্দা অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য যে বিখ্যাত নিউ ডিল কর্মসূচী প্রবর্তন করা হয়েছিল সেটি থেকে ধার করা। উল্লেখ করা যেতে পারে যে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পাবলিক ওয়ার্কার্স প্রোগ্রাম সংস্কার করে সমাজে বিরাজমান বৈষম্য সহনীয় পর্যায়ে আনার অভিপ্রায়ে এ কর্মসূচি প্রবর্তন করা হয়েছিল। গ্রীন নিউ ডিল এ রুজভেল্টের অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির সাথে রিনিউয়েবল এনার্জি ও সম্পদের দক্ষ ব্যবহার এ দু’টো প্রত্যয় যোগ করা হয়।

কি ভাবে ধারনাটি পরিবেশ সংক্রান্ত, বিশেষত জলবায়ু পরিবর্তন আন্দোলনে আসল তার ইতিহাস খুঁজলে সাংবাদিক থমাস ফ্রেডম্যানের নাম আসবেই। তিনিই প্রথম জলবায়ু পরিবর্তনের পটভূমিতে প্রত্যয় বা ধারনাটিকে প্রথম ব্যবহার করেন। তার মতে বায়ু কল বা উইন্ড মিল এবং সোলার প্যানেল ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা কয়লা ও জ্বালানি তেলের উপর নির্ভরশীলতা অনেকাংশে কমাতে পারি। বড় বড় শিল্প কারকানায়ও এ বিকল্প জ্বালানি যোগান ব্যবস্থা প্রবর্তন সম্ভব । বিষয়টি নিয়ে ২০০৮ সালে গ্রিন নিউ ডিল নামে একটি গ্রুপ বেনামিতে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে।


পরবর্তীতে জাতিসঙ্গের পরিবেশ কর্মসূচী (UNEP) ধারণাটি জনপ্রিয় করে তোলে। ২০০৮ সালে লেখক জেফ বিগারস আপ্যালাসিয়া যুক্তরাষ্ট্রের হারতলান্দের কয়লা খনি ও উত্তোলন এলাকাগুলোতে অর্থনৈতিক দুরবস্থা ও শ্রমিকদের স্বাস্থ্যগত সমস্যা অবলোকন করে আগামী চার বছরের জন্য নিউ গ্রিন ডিল কর্মসূচী গ্রহণের পক্ষে জোরালো মতামত দেন । ২০০৮ সালেরর অক্টোবর মাসের ২২ তারিখে জাতিসঙ্গ পরিবেশ করমসুচিত নির্বাহী পরিচালক এচিন স্টেইনার গ্রিন নিউ ডিল উদ্যোগের স্বপক্ষে ইতিবাচক মতামত দেয়ার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ব অর্থনীতি ওঁ জলবায়ু পরিবর্তন একে অপ্ররের পরিপূরক ও অনেকটা সমার্থক হিসেবে বিশ্ব মঞ্চে আবির্ভূত হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের হিসেবে গ্রিন পার্টি ২০১২ সাল থেকে গ্রিন নিউ ডিল’কে অফিসিয়ালি স্বীকৃতি দেয়। ২০২০ সালের প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনে ও গ্রিন নিউ ডিলের সমর্থনে ডেমোক্র্যাটিক দল বেশ কিছু যুগান্তকারী কর্মসূচী জনসমক্ষে নিয়ে আসে বিস্তারিত তথ্যের জন্য লেখকের সদ্য প্রকাশিত “পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন-বাংলাদেশ ও সমসাময়িক বিশ্ব”, ভূর্জপত্র প্রকাশনী, ঢাকা, বাংলদেশ মার্চ ২০২১ দেখতে পারেন। ইউরোপের যেমন আইসল্যান্ড, ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ড, সুইডেন, নরওয়ে ইত্যাদি দেশগুলো কোস্টারিকা, ইথিওপিয়া, এমনকি ব্রাজিল ও গ্রিন নিউ ডিল মতবাদের পক্ষে জোরালো ভাবে সমর্থন দিচ্ছে।


বাংলাদেশে ও এ বছর সোৎসাহে বিশ্ব নদী দিবসটি পলিত হলো। গ্রিন উৎসুক যুব সম্রদায়, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন, বাংলাদেশ পরিবেশ নেটওয়ার্ক, রিভার কীপারস (River Keepers) এবং অন্যান্য বেশ কিছু সংগঠন waterways in our communities এ স্লোগান সামনে নিয়ে দেশে ৫১টি স্থানে র‌্যালি, মার্চ, মানব বন্ধন ও সমাবেশ করেছে। জনসাধারণের মধ্যে নদী বিষয়ক সচেতনতা সৃষ্টি, নদী বাঁচানোর আকুল আহ্বান, নদীকে আবর্জনা মুক্ত রাখা ও প্রয়োজনীয় পরিচর্যা করা, রাজনৈতিক নেতা ও প্রতিপত্তিশীলদের হাত থেকে নদী বাঁচানোর দৃপ্ত আশা এ সব আয়োজনে ব্যক্ত করেন বক্তারা। সুন্দারবন রক্ষার জন্য সুন্দারবনের নদীগুলোকে বাঁচান এ স্লোগান নিয়ে বাংলাদ্রস পরিবেশ আন্দোলনের কর্মীরা বগেরহাতের মংলায় মেরিন ড্রাইভ রোডে মানব বন্ধন ব্যূহ তৈরি করেন । রিভার্স কীপাররা ও এতে জদ্গান করেন। সুন্দারবনের নদীগুলোতে জেলেরা বিষ প্রয়োগ করে মাছ ধরছে তারপর ও প্রশাসনের নির্লিপ্ততায় বক্তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

চট্টগ্রামে ও নদীর অবস্থা করুন পর্যায়ে। কর্ণফুলীর পাড়ে বসতি স্থাপন, নদীতে বর্জ্য নিক্ষেপণ, নগরীর খাল, ময়লা নিষ্কাশন ব্যবস্থার শোচনীয় অবস্থা, ভূগর্ভস্থ পানির স্তরে বিষাক্ত পানির নির্গমন, তদুপরি জলাবদ্ধতা এক কালের নৈসর্গিক সৌন্দর্যের শহর চট্টগ্রামকে স্বাস্থ্যসম্মত ভাবে বসবাসের জন্য দ্রুত অযোগ্য করে তুলছে। চট্টগ্রাম নগরীর বাসিন্দারা যে পানি পান করছেন, যে পানি দিয়ে রান্নাবান্না করছেন তাতে দূষণের মাত্রা অত্যদিক । এদিকে, বর্জ্য নিক্ষেপের ফলে নদীর তলদেশ ভরাট হচ্ছে বিরামহীন ভাবে, নদীটি দিন দিনই তাঁর নাব্যতা হারাচ্ছে। দেশের অনেক নদী, যেমন কপোতাক্ষ, ইছামতী, তুরাগ, বুড়িগঙ্গা, বালু, করতোয়া, তিস্তা, রূপসা, বাঙ্গালী , ইত্যাদি নদী ইতোমধ্যেই প্রায় মরণাপন্ন অবস্থায় ধুঁকছে । পদ্মা, যমুনা, তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, সুরমা, মেঘনা , কর্ণফুলী নদনদীগুলোর ২৩০তির মত শাখা নদী আছে । প্রায় ২৪১৪০ কিলোমিটার এসব নদীর দৈর্ঘ্য ।


নদীবিধৌত এলাকা প্রায় ৮২৩৬ স্কয়ার কিলোমিটার । নদীগুলোকে বাঁচাতে না পারলে বাংলাদেশ নামক ভূখণ্ডটির অবস্থা কি হ হবে ভাবতে ও গা শিউরে ওটে। দেশটির মানুষের, পশুপাখি, জীবজন্তু, বৃক্ষরাজি, এমনকি কৃষ্টি সংস্কৃতি সবকিছুই নির্ভর করে বহুলাংশেই নদীর উপর। বাংলাদেশে যে ৫৯ টি অভিন্ন নদী আছে তার ৫৪টিই ভারতের সাথে, অর্থাৎ এগুলো উজানের দেশ ভারতে উৎপন্ন হয়ে বাংলাদেশে প্রবাহিত হয়েছে। বৃহৎ শক্তিশালী দেশ ভারত আন্তর্জাতিক নিয়ম নীতির প্রতি তেমন তোয়াক্ষা না করে এ সব আন্তর্জাতিক নদীতে বাঁধ সহ বিভিন্ন স্থাপনা সৃষ্টি করেই চলেছে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও অগুনতি ছোট বড় সেচ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য। এক ফারাক্কা ছাড়া বাকিগুলোর ব্যাপারে আলাপ-আলচনায় স্থবির অবস্থা বিরাজমান। তিস্তার মতো গুরুত্বপূর্ণ নদীর পানি শেয়ারিং আলোচনা বারবার ব্যাহত হচ্ছে অগ্রগতি ছাড়াই। উত্তরবঙ্গের সেচ ব্যবস্থায় এ পরিস্থিতির বিরূপ প্রভাব বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমনি ফেনি সহ আরও অনেক অভিন্ন নদীর ক্ষেত্রেই সত্য। নদী মাতৃক এ দেশটিতে নদী বাঁচলে তবেই বাংলাদেশ।

advertisement

Posted ৭:৫৯ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২১

Weekly Bangladesh |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

গল্প : দুই বোন
গল্প : দুই বোন

(6091 বার পঠিত)

স্মরণে যাতনা
স্মরণে যাতনা

(1286 বার পঠিত)

মানব পাচার কেন
মানব পাচার কেন

(1142 বার পঠিত)

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১১২১৩১৪১৫১৬
১৭১৮১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭২৮২৯৩০
৩১  
Dr. Mohammed Wazed A Khan, President & Editor
Anwar Hossain Manju, Advisor, Editorial Board
Corporate Office

85-59 168 Street, Jamaica, NY 11432

Tel: 718-523-6299 Fax: 718-206-2579

E-mail: [email protected]

Web: weeklybangladeshusa.com

Facebook: fb/weeklybangladeshusa.com

Mohammed Dinaj Khan,
Vice President
Florida Office

1610 NW 3rd Street
Deerfield Beach, FL 33442

Jackson Heights Office

37-55, 72 Street, Jackson Heights, NY 11372, Tel: 718-255-1158

Published by News Bangladesh Inc.