শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ | ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

Weekly Bangladesh নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত
নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত

বৃহৎ গণতন্ত্রের দেশে ‘গদি মিডিয়া’

আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু :   |   বৃহস্পতিবার, ০১ জুন ২০২৩

বৃহৎ গণতন্ত্রের দেশে ‘গদি মিডিয়া’

বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতন্ত্রের দেশ ভারতের গণমাধ্যমকে গত এক দশক ধরে বলা হচ্ছে “গদি মিডিয়া’। গণতন্ত্র বড় হলেই সব হাসিল হয়ে যায়নি। উইকিপিডিয়ার মতে, যারা ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের হাল ধরে আছেন, তারা গণমাধ্যমকে তাদের “পোষা কুকুর” বা “পালতু কুত্তার” মতো” রেখেছেন এবং সেজন্য গণমাধ্যমের অধিকাংশই বিজেপি সরকারের সুরে কথা বলে। বাংলাদেশের মিডিয়াও সরকারের লেজুড়বৃত্তিতে ভারতের চেয়ে কোনো অংশে পিছিয়ে নেই, বরং ভারতের মিডিয়ার চেয়ে এককাঠি সরেস চামচামির দিক থেকে।

২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে ভারতে ভোটার সংখ্যা ছিল ৯০ কোটি। ভোটার সংখ্যায় বৃহৎ, কিন্তু অধিক ভোটার মানেই অধিক গণতন্ত্র নয়। একথা সত্য যে, দেশটিতে গণতন্ত্রের চর্চা হয়ে আসছে দেশটির স্বাধীনতার সূচনাকাল থেকেই। গণমাধ্যমও তখন থেকে ভারতে গণতন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে। এর ব্যত্যয় ঘটেছিল ১৯৭৫ সালে সালে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সময়ে জারিকৃত জরুরী অবস্থা চলাকালে। ওই সময়ে সেন্সরশিপ তো ছিলই, একুশ মাসের জরুরী অবস্থার মেয়াদে দুই শতাধিক সাংবাদিককে গ্রেফতার করা হয়েছিল। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণের প্রতিবাদে শীর্ষস্থানীয় সাংবাদিক ও সংবাদপত্র মালিকরা রাজপথে নেমেছিলেন। জরুরী অবস্থা কংগ্রেসের জন্য অভিশাপ হয়ে এসেছিল এবং ১৯৭১ সালের ‘ভারত রত্ন’ ইন্দিরা গান্ধীকে ১৯৭৭ সালে ক্ষমতার গগন থেকে ছিটকে পড়তে হয়েছিল।


এখন পরিস্থিতি আরো শোচনীয়। ভোটার সংখ্যা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করে না, এমনকি সংবিধানও না। যারা ক্ষমতায় থাকে সকল স্বাধীনতা তাদের। গত এক দশকে বিজেপি শাসিত রাজ্য এবং যেসব রাজ্যে বিজেপির কোয়ালিশন সরকার রয়েছে, সেই রাজ্যগুলোতে ১৮৪ জন সাংবাদিককে গ্রেফতার করা হয়েছে। রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার এর ২০২২ সালে ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম সূচক অনুযায়ী ১৮০টি দেশের মধ্যে ভারতে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার অবস্থান ১৩৬তম। এর কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে আরএসএস পরিবার, যার অংশ বিজেপি, তাদের নেতৃত্বে ‘ধর্মীয় জাতীয়তাবাদের” উত্থানকে, যারা তাদের বিশ্বাস ও মতবাদ ছাড়া অন্য কিছু সহ্য করতে প্রস্তুত নয়। কিছদিন আগে বিবিসি’র দিল্লি ও মুম্বাই অফিসে হামলা, তছনছ ও বিভিন্ন দলিলপত্র ও কম্পিউটার হার্ডডিস্ক নিয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে এ অসহনশীলতার মাত্রা বোঝা গেছে।

অতএব ভারতে মিডিয়াকে কাজ করতে হলে “গদি মিডিয়া” হিসেবেই কাজ করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী মোদির নামের সাথে মিলিয়ে বিজেপি বা সরকারের অনুগত মিডিয়া, যারা জাতীয় দায়িত্ব পালনের পরিবর্তে ক্ষমতাসীন দলের মুখপত্রে পরিণত হয়েছে, সেগুলো এখন “গদি মিডিয়া” নামেই বহুল পরিচিত। সরকার সমর্থক সংবাদপত্র ও টেলিভিশনকে এ নামে জনপ্রিয় করেছেন এনডিটিভি’র সাবেক সাংবাদিক রবীশ কুমার।


তবে “গদি মিডিয়া” নামটির উদ্ভাবক টাইম ম্যাগাজিনের সাংবাদিক দেবাশীষ রায় চৌধুরী বলে মনে করা হয়। ২০১৪ সালে নরেদ্র মোদি ক্ষমতা আসার পর থেকে ভারতের মিডিয়াকে নপুংসক করার যে নেতৃত্ব দিতে শুরু করেন, এর পরিণতি হিসেবে ভারতের সংখ্যাগরিষ্ঠ গণমাধ্যমে উদার দৃষ্টিভঙ্গির পরিবতে স্থান করে নেয় কট্টর পন্থা। মিডিয়ার কোনো উপায় ছিল না বা এখনো নেই। সরকারি বিজ্ঞাপনের ওপর মিডিয়ার নির্ভরতা একটি কারণ, যা মিডিয়া নিয়ন্ত্রণের বড়ো হাতিয়ার। ২০১৯-২০ সালে কেন্দ্রীয় সরকারের বিজ্ঞাপন খাতে দৈনিক ব্যয় ছিল প্রায় ১ কোটি ৯৫ লাখ রুপি। এছাড়া ক্ষমতা ও ব্যবসায়িক আনুকূল্য লাভের মতো বিষয়গুলো তো আছেই। নানা কারণেই সংবাদপত্র মালিক ও শীর্ষ স্থানীয় সাংবাদিকের সরকারের দারস্থ হতে হয়। ক্ষমতাসীন দলের নেতারাও সাংবাদিকদের কাছে শুনতে চান যে তাদের “উদ্যানে বসন্ত এসেছে”। যত আনুগত্য, চামচামি তত লাভ। ব্যতিক্রম নেই তা নয়, তবে “গদি মিডিয়া’র মোকাবিলায় অন্যদের কণ্ঠ সোচ্চার হতে পারে না।

“গদি মিডিয়া’র বিরুদ্ধে প্রধান অভিযোগ হচ্ছে যে, তারা সৎ সাংবাদিকতার চর্চা করার পরিবর্তে ভূঁয়া সংবাদ প্রচার ও প্রকাশ করছে, উস্কানি দিচ্ছে ও উত্তেজনা ছড়াচ্ছে, যেসব সংবাদ প্রায় ক্ষেত্রে অসত্য, এবং তারা নিজেদের সুবিধা হাতিয়ে নেয়ার উদ্দেশ্যে বিজেপি সরকার, করপোরেট ও অভিজাত মহলের স্বার্থে কাজ করছে। টাইম ম্যাগাজিনের এক নিবন্ধ অনুসারে এ ধরনের মিডিয়া বিজেপি সরকারের সাফল্যকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে প্রচার করে এবং ব্যর্থতাগুলোকে হয় চেপে রাখে অথবা এজন্য অন্যদের দোষারূপ করার উপায় বের করে।


ভারতের খ্যাতিমান সাংবাদিক, সংবাদ উপস্থাপক ও লেখক রাজদীপ সরদেসাই এর মতে, ভারতের মিডিয়ার বৃহৎ অংশ ‘ওয়াচডগ’ এর পরিবর্তে ‘ল্যাপ ডগ’ (কোলে রাখা কুকুর) এ পরিণত হয়েছে ।

advertisement

Posted ৬:২৪ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০১ জুন ২০২৩

Weekly Bangladesh |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

আমরা মরি কেন?
আমরা মরি কেন?

(644 বার পঠিত)

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০  
Dr. Mohammed Wazed A Khan, President & Editor
Anwar Hossain Manju, Advisor, Editorial Board
Corporate Office

85-59 168 Street, Jamaica, NY 11432

Tel: 718-523-6299 Fax: 718-206-2579

E-mail: [email protected]

Web: weeklybangladeshusa.com

Facebook: fb/weeklybangladeshusa.com

Mohammed Dinaj Khan,
Vice President
Florida Office

1610 NW 3rd Street
Deerfield Beach, FL 33442

Jackson Heights Office

37-55, 72 Street, Jackson Heights, NY 11372, Tel: 718-255-1158

Published by News Bangladesh Inc.