মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫ | ৩১ আষাঢ় ১৪৩২

Weekly Bangladesh নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত
নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত

উইঘুরদের নিয়ে কথা

ড. আশরাফ উদ্দিন আহমেদ   |   বৃহস্পতিবার, ২৫ নভেম্বর ২০২১

উইঘুরদের নিয়ে কথা

(শেষাংশ) : ১২.৮ মিলিয়ন উইঘুরদের বসবাস চীনের জিংজিয়াং প্রদেশে । ১৯৪৯ সালে চীনে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হলে তূলা ও খনিজ সম্পদে (বিশেষত তেল ও গ্যাস) সমৃদ্ধ এ অঞ্চলটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে। এমনিতে অতি প্রাচীন একটি লড়াকু জাত হলে ও এ জনগোষ্ঠী ইতিহাসের কোন সময়েই নিজেদের জন্য কোন পৃথক ও স্বাধীন জনপদ গড়ে তুলতে পারেনি। বর্তমানে যেখানে জিঞ্জিয়াং প্রদেশ সেখানে কম্যুনিস্ট পার্টির ক্ষমতা দখলের পূর্বে কিছু সময়ের জন্য স্বাধীন রাষ্ট্রের পত্তন করলে ও তা টিকে থাকেনি। মূল চীন ভূখণ্ডের অংশ হিসেবে অঞ্চলটিকে কম্যুনিস্ট শাসনের আওতাধীনে নিয়ে আসা হয়। নানা কারণে পশ্চিমা বিশ্ব এবং তাদের দোসররা উইঘুরদের যে ভাবে চীন শাসন করছে তার সমালোচনায় মুখর। প্রবন্ধটির প্রথম অংশে সংক্ষেপে এ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। চীনের বাস্তবতার দিকটি তুলে না ধরলে আলোচনা একপেশে হবে এ যুক্তি থেকে আজকের উপস্থাপন।

চীন সমাজতন্ত্রের মৌল কাঠামো, আদর্শ ও নীতিমালার কোন ভিন্ন মত ও আদর্শের সাথে একাত্মতায় বিশ্বাস করেনা। বিভিন্ন নৃ-তাত্ত্বিক জন গোষ্ঠীর অস্তিত্ব মেনে নিয়ে ও আদর্শিক ভাবে সমাজতন্ত্র সমুন্নত রাখার ব্যাপারে চীন দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ; এখানে কোন আপোষ নেই , যেমন নেই সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে। ধর্মের বিষয়টি চীনে কোন গুরুত্বই বহন করেনা; সমাজ ও রাষ্ট্রের আদর্শিক বিচারে নেহাতই গৌণ। উইঘুরদের নিয়ে চীন যা করছে তা রাষ্ট্রের আদর্শ ও নীতিমালার সাথে সঙ্গতি রেখেই করা হচ্ছে বলে চীন মনে করে। বিরাট এ দেশটি অর্থনৈতিক দিক থেকে বিশ্বে দ্বিতীয় সম্পদশালী দেশ। সামরিক শক্তির দিকে ও তাই। সমালোচনার তোয়াক্কা না করেই, কোন শক্তির হুঙ্কার ধর্তব্যের মধ্যে না এনে চীন হংকং , তিব্বত, সাংহাই নিজেদের মত করে শাসন করছে । মূল ভূখণ্ডের মধ্যস্হিত জিনজিয়াং ও এর ব্যতিক্রম হবে না এটাই স্বাভাবিক।

উইঘুরদের নিয়ে চীনের সমস্যার মূল কারণ এদের ধর্ম বিশ্বাস এবং এর আলোকে আশেপাশের, বিশেষত তুরস্ক , কাজাকাস্থান, আফগানিস্থান এবং সেন্ট্রাল এশিয়ার মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর সাথে ঘনিষ্ট সম্পর্ক। চীন উইঘরদের যে কঠিন নজরদারিতে রাখছে তার একটি প্রধান কারণ বিছিন্নতাবাদের সম্ভাবনাকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখা । দ্বিতীয়ত, আভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদে যাতে উইঘুর জনগোষ্ঠী জড়িয়ে না পড়তে পারে তা রোধ করার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চীনের রাষ্ট্রীয় কর্তব্যের মধ্যে পড়ে । চীন যে কোন পন্থায় এ জাতীয় প্রবণতা অঙ্কুরেই বিনষ্ট করে দিতে বদ্ধ পরিকর।

একটি নৃ-গোষ্ঠী যাদের নিজস্ব ভাষা রয়েছে, ধর্ম রয়েছে এবং জাতীয়তাবাদ চেতনায় উজ্জীবনের ইতিহাস আছে তাদের চীনের বৃহত্তর সমাজ ও রাজনৈতিক, আদর্শিক জগতে নিয়ে আসার লক্ষ্যেই চীন উইঘুরদের সম্পৃক্তিকরনের কৌশল পরিচালনা করছে। চীনের মূলধারার সংস্কৃতি ও আদর্শ যা সমাজতান্ত্রিক দর্শন ও ভাবধারায় পরিস্ফুট তার সাথে তাল মিলিয়ে, একাত্ম হয়ে যাতে উইঘুর জনগোষ্ঠী চলতে পারে তার লক্ষ্যেই বিভিন্ন সব প্রচেষ্টা। সমাজতন্ত্রের জীবনধারা পদ্ধতি, আদর্শ রপ্ত করানোর জন্য, দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করার জন্য সামাজিকীকরণের কৌশলের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক হান সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকদের জিনজিয়াং এ স্থানান্তর করা হয়েছে বলে প্রকাশ । তাছাড়া, ক্যাম্প বানিয়ে উইঘুরদের নিবিড় প্রশিক্ষণ দেয়ার হচ্ছে বলে ও জানা যায়। এসব কৌশলকে পশ্চিমা বিশ্ব অমানবিক এবং জবরদস্তি মূলক বলছে। তবে, যে দৃষ্টিভঙ্গি থেকে চীন উইঘরদের সাথে এমন আচরণ করছে তা দৃষ্টিগ্রাহ্যের মধ্যে আনা ও প্রয়োজন। আভ্যন্তরীণ সমাজতান্ত্রিক শৃঙ্খলা যে কোন পন্থায় বজায় রাখা, রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতা /সার্বভৌমত্ব রক্ষা চীনের জন্য সবচেয়ে জরুরী ব্যাপার -এতে দ্বিমত পোষণের কোন অবকাশ নেই। এসব প্রশ্নে সমজোতা করেছে এমন ইতিহাস ১৯৪৯ পরবর্তী চীনের ইতিহাসে নেই। উইঘুরদের ব্যাাপারটি থাকবে না এটাই যুক্তিসম্মত বাস্তব।

উইঘুর সম্প্রদায় শান্তিপ্রিয় ছিল এমন পরিচয় ইতিহাস ঘেঁটে পাওয়া দুস্কর হবে বলেই আমার বিশ্বাস। এরা অন্য শক্তির পদানত থেকেছে অস্তিত্বের বেশীর ভাগ সময়ই। বিদ্রোহ ও সহিংসতা উইঘুরদের মজ্জাগত। চীন তাদের কঠোর নিয়ন্ত্রণে রাখবে এ সত্য মেনে নিয়ে রাষ্ট্রীয় মূল আদর্শিক স্রোতে মিশে গেলেই তাদের জন্য মঙ্গলজনক। আভ্যন্তরীন বিচ্ছিন্নতাবাদ এবং আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের আশংকা দূরীভূত করার লক্ষ্যে চীন উইঘরদের কঠোর নিয়ন্ত্রণে রাখবে এমনটি মেনে নেয়াই যুক্তিগ্রাহ্য। তবে, অমানবিক আচরণের আশ্রয় নিলে নিন্দাবাদ, গণতান্ত্রিক ফোরাম, জাতিসংঘ, বিভিন্ন মুসলিম দেশ, রাজনৈতিক ও সামাজিক গোষ্ঠী থেকে প্রতিবাদ অব্যাহত থাকবে এ বাস্তবতা ও চীনকে মেনে নিয়েই বিশ্ব অঙ্গনে চলতে হবে । উইঘুরদের ধর্মপালনের স্বাধীনতা দিলে চীন উইঘুর সমস্যার সিংহ ভাগেরই সমাধান করে ফেলতে পারবে হবে বলে আমার বিশ্বাস। আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে ও চীন লাভবান হবে, বিশেষত মুসলিম দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে ।

Posted ৯:৫০ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৫ নভেম্বর ২০২১

Weekly Bangladesh |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

গল্প : দুই বোন
গল্প : দুই বোন

(8204 বার পঠিত)

স্মরণে যাতনা
স্মরণে যাতনা

(1531 বার পঠিত)

মানব পাচার কেন
মানব পাচার কেন

(1317 বার পঠিত)

আত্মঅহমিকা
আত্মঅহমিকা

(995 বার পঠিত)

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১
১৩১৫১৬
১৯২০২১২২২৩২৪২৫
২৬২৭৩০৩১  
Dr. Mohammed Wazed A Khan, President & Editor
Anwar Hossain Manju, Advisor, Editorial Board
Corporate Office

86-47 164th Street, Suite#BH
Jamaica, New York 11432

Tel: 917-304-3912, 718-523-6299 Fax: 718-206-2579

E-mail: [email protected]

Web: weeklybangladeshusa.com

Facebook: fb/weeklybangladeshusa.com

Mohammed Dinaj Khan,
Vice President
Florida Office

1610 NW 3rd Street
Deerfield Beach, FL 33442

Jackson Heights Office

37-55, 72 Street, Jackson Heights, NY 11372, Tel: 718-255-1158

Published by News Bangladesh Inc.