বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১

Weekly Bangladesh নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত
নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত

সামাজিক সংস্কৃতিতে পরিবর্তন : বাংলাদেশ প্রেক্ষাপট

আশরাফ উদ্দিন আহমেদ :   |   বৃহস্পতিবার, ২৩ মার্চ ২০২৩

সামাজিক সংস্কৃতিতে পরিবর্তন : বাংলাদেশ প্রেক্ষাপট

সমাজবিজ্ঞানের ইতিহাসের (History of Sociology) পলাশী যুদ্ধের পরবর্তী সময়টি খুব বেশী নয়। তথাপি বাঙালী জাতির সংস্কৃতি, কৃষ্টি তথা মূল্যবোধ বিবর্তন বা পরিবর্তনের ফ্রেমওয়ার্কটি এ সময়ের পরিধিতে ধারণ ও বিশ্লেষণ সুকঠিন কাজ। সীমিত আকারের এ নিবন্ধটিতে বাংলাদেশের সামাজিক সংস্কৃতি বিবর্তনের পেছনকার কতিপয় ঘটনাবলী ও কার্যকরণ নিয়ে আলোচনার প্রয়াস নেয়া হলো ।

পলাশী যুদ্ধের পরবর্তীতে ব্রিটিশ প্রবর্তিত শাসন ব্যবস্থা, বিশেষত স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা বঙ্গদেশে একটি ভিন্ন মাত্রিক সামাজিক স্তরবিন্যাসের সূচনা করে। এ ব্যবস্থা বিভিন্ন সময়ে পরিবর্তন, সংস্কার ও পরিবর্ধনের মাধ্যমে রাজনৈতিক ও সামাজিক নেতৃত্বের কাঠামোতে বড় ধরণের প্রবাহ ও পরিবর্তনের কারণ হয়ে দাঁড়ায় । হিন্দু সমাজে কৌলিন্য প্রথা সহ সনাতন জাতি ভিত্তিক স্তরবিন্যাসে আশু পরিবর্তন না আসলেও কালের প্রবাহে ব্রাহ্ম সমাজের প্রতিষ্ঠা, সতীদাহ প্রথার বিলোপ সহ বেশ কিছু ধর্মীয় ও সামাজিক প্রথা ও আনুষ্ঠানিক কলা-কানুনে আমূল পরিবর্তনের সূচনা ঘটে ।


ব্রিটিশ ঔপনিবেশ শাসন ব্যবস্থার প্রসার ও একে ব্যবস্হিত করায় সহায়তা প্রদানের জন্য ইংরেজি ভাষাকে মাধ্যম হিসেবে নিয়ে যে শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করা হয় তার ফলশ্রুতিতে এদেশে একটি নতুন সামাজিক শ্রেণীর সৃষ্টি হয়। ব্রিটিশ শাসক অনুগত এ শ্রেণীটি স্বাভাবিক ভাবেই একটি সুবিধাজনক সামাজিক অবস্হান অর্জন করতে সমর্থ হয়।

পদলেহি এ শ্রেণী থেকেই পরবর্তী সময়ে ‘রায় বাহাদুর‘, ‘খান বাহাদুর‘ ইত্যোকার তথাকথিত অভিজাত শ্রেণী সমাজে অধিষ্ঠিত হয়। এ শ্রেণীর লোকজন সনাতন ও প্রচলিত সামাজিক অনুশাসন ও মূল্যবোধের বাইরে একটি ভিন্ন মাত্রিক সংস্কৃতির জন্ম দেয়। যদিও এ নব্যসমাজ ও সংস্কৃতি ভিন্ন ভিন্ন ধারায় প্রবাহিত হয়েছে তবে এর সকল ধারায়ই সনাতন জীবনবোধ ও দর্শনের বিরুদ্ধে যুদ্ধংদেহী ভাব লক্ষ্য করার মত। ইতিহাসের পরিক্রমায় সমাজে এদের আধিপত্য, কুপ্রভাব এবং অত্যাচার-অনাচারের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষ এবং সমাজহিতৈষীগণ বারবার প্রতিবাদে ফুঁসে ওঠেছেন। আবার ব্রিটিশ প্রবর্তিত শিক্ষা ব্যবস্হায় লিবারেল শিক্ষা দর্শনের প্রবল কারণে উপরে উল্লেখিত সামাজিক শ্রেণী থেকে কেরাণী সম্প্রদায় বৃত্তি ও মন-মানসিকতায় পরিতুষ্ট শ্রেণী থেকে এবং এদের পরিচ্ছায়ায় জন্ম নেয় অন্য একটি গোষ্ঠি যারা সময়ের ক্রান্তিকালে ব্রিটিশ বিরোধী স্বদেশী আন্দোলনে যোগ দেয়। বিপ্লবী নেতা-কর্মী, কবি-সাহিত্যিক ও শিল্পী, সমাজ সংস্কারক এ প্রজন্ম থেকেই বেশী করে আসে। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিদ্রাহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম, বিপ্লবী সুভাষ বসু, রাজা রামমোহন রায়, ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর প্রমূখ অনেকের নাম এ প্রসঙ্গে স্মরণ করা যেতে পারে। এদের কারো কারো চিন্তা ও দর্শনের প্রভাব বহির্বিশ্বে ও ছড়িয়ে পড়েছিল।


বাঙালি মুসলমানদের সামাজিক সংস্কৃতি ব্রিটিশ আমলে কেমন ছিল এবং বিগত তিনশ’ বছরে এ সংস্কৃতিৎ কি ধরণের পরিবর্তন এসেছে এ প্রশ্নের অবতারণা করলে স্বাভাবিকভাবেই ধারণায় আসে যে ব্রিটিশদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণের সঙ্গত কারণ এ জনগোষ্ঠির মধ্যে এতই প্রবল ছিল যে এরা রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে নিজেদের গুটিয়ে রেখেছিল। ইংরেজি এদেশে কয়েক শতাব্দীর মুসলিম শাসন ও রাজত্বের পতন ঘটিয়েছে; ফারসির বদলে ইংরেজিকে রাজভাষার স্থান দিয়েছে ; মুসলিম সংস্কৃতি ও কৃষ্টির যে ঐতিহ্য ও অহংকার ছিল তা পদদলিত করেছে – এসব কারণে ব্রিটিশ প্রবর্তিত শিক্ষা ব্যবস্থাকেও এরা বর্জন করেছিল দীর্ঘকাল। বিদ্বেষ ও ঘৃণাবোধ থেকে একধরণের সামাজিক ও রাজনৈতিক স্থবিরতা এ সম্প্রদায়কে আচ্ছন্ন করে রেখেছিল আনুমানিক সোয়াশ’ বছরেরও বেশী সময় ধরে। প্রতিবেশী হিন্দু সম্প্রদায় যেমন এদের আমলে আনেনি তেমনি বৃটিশ শাসক শ্রেণীও এ সম্প্রদায়ের লোকজনদের অবিশ্বাসের চোখে দেখত। এ ধরণের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অবস্থার সুযোগ নিতে কসুর করেনি ধর্মান্ধ মোল্লা সম্প্রদায় ও বংশপরম্পায় লিপ্ত ধর্মব্যবসায়ীগণ। দীর্ঘদিনের অভিমান ও ধর্মীয় কুসংস্কারজাত আচার-অনুষ্ঠানের বেড়াজাল থেকে সামান্যভাবে হলেও বাডিয়ে আসার প্রথম সফল প্রবাসের শুভ সূচনা লক্ষ্য করা যায় স্যার সৈয়দ আহমেদের আলিগড় আন্দোলনের শুরু থেকে । এ আন্দোলনের প্রভাব সারা ভারতে ছড়িয়ে পড়লে বাংলা অঞ্চলের মুসলমানরা এর সুফল নিতে শুরু করে অনেক দেরীতে। মূলত এ কারণেই রাজনৈতিক সংস্কৃতির অঙ্গনে বাঙ্গালী মুসলমানদের পদচারণা উনিশ শ’ তিরিশ দশকের পূর্বে তেমন চোখে পড়ে না ।

রাজনৈতিক সংস্কৃতির যে অঙ্গন বাঙালি মুসলমান কলিকাতা ও পরবর্তীতে ঢাকাতে কেন্দ্র করে গড়ে তুলেছিল তা নিতান্তই ঢাকার নবাব পরিবার ও স্বল্প সংখ্যক অভিজাত পরিবার কেন্দ্রিক ছিল। মুসলিম জনপদগুলোতে রাজনৈতিক সচেতনতা তথা ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহনের আগ্রহ বা তৎপরতা তেমনভাবে লক্ষণীয় ছিল না। অবশ্য সিপাহি বিদ্রোহ ও প্রথম বিশ্বযুদ্ধ এ দুটো ঘটনা ভারতে মুসলমানদের মধ্যে নানান কারণে একধরণের রাজনৈতিক সচেতনতা সৃষ্টি করেছিল। ১৯৪৭ সালের ১৪ আগষ্টে পাকিস্তান সৃষ্টির আন্দোলনে বিপুল সংখ্যায় মুসলমানদের অংশগ্রহণের কারণ খুঁজলে বিভিন্নভাবে উপরোক্ত দুটো ঘটনার সাথে সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া যাবে।


১৯৪৭ সালে ধর্মের উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত পাকিস্তান রাষ্ট্রের পূর্ব পাকিস্তান অংশের অর্থনৈতিক ভিত দূর্বল ছিল সত্যি কিন্তু একটি সনাতন কৃষি নির্ভর সমাজের জন্য এখানে সামান্য পরিমান নগরায়ন ও শিল্পায়নের প্রভাব নেহাৎ কম ছিল না। বাঙ্গালী মুসলমানদের রাজনৈতিক ও সংস্কৃতিক জগতের বিস্তৃতি সত্যিকারভাবে এ সময়েই ঘটে । ১৯৫২’র ভাষা আন্দোলন এবং তৎপরবর্তীতে ১৯৬৯ এর জাতীয়তাবাদ আন্দোলন এ প্রবাহেরই ফসল । ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে যে সচেতনতা, ত্যাগ ও সুনেতৃত্ব তাও একই সূত্রে গাঁথা।

advertisement

Posted ১:৫৯ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৩ মার্চ ২০২৩

Weekly Bangladesh |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

গল্প : দুই বোন
গল্প : দুই বোন

(6272 বার পঠিত)

স্মরণে যাতনা
স্মরণে যাতনা

(1305 বার পঠিত)

মানব পাচার কেন
মানব পাচার কেন

(1151 বার পঠিত)

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০  
Dr. Mohammed Wazed A Khan, President & Editor
Anwar Hossain Manju, Advisor, Editorial Board
Corporate Office

85-59 168 Street, Jamaica, NY 11432

Tel: 718-523-6299 Fax: 718-206-2579

E-mail: [email protected]

Web: weeklybangladeshusa.com

Facebook: fb/weeklybangladeshusa.com

Mohammed Dinaj Khan,
Vice President
Florida Office

1610 NW 3rd Street
Deerfield Beach, FL 33442

Jackson Heights Office

37-55, 72 Street, Jackson Heights, NY 11372, Tel: 718-255-1158

Published by News Bangladesh Inc.