ড. আশরাফ উদ্দিন আহমেদ : | বৃহস্পতিবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫
শান্তিময় বিশ্ব কদাচিৎ দেখা যায়। রাষ্ট্রে রাষ্ট্রে সদ্ভাব, সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান, সহমর্মিতা এমনসব আচরণ বা মূল্যবোধের প্রসার এবং প্রচার কেমন করে যেন উবে গেছে। সম্প্রীতির সুবাতাস তথা বন্ধন কালেভদ্রে আমরা দেখি। হিংসা, দ্বেষ, পরশ্রীকাতরতা এসব আমাদের সমাজ, রাষ্ট্র, আন্তর্জাতিক বিশ্ব ব্যবস্থাকে গ্রাস করে ফেলেছে।
সম্পদ কুক্ষিগত করা, লোভ-লালসা, অশুভ প্রতিযোগিতা এবং জবরদস্তি করে বাজার দখল নিয়মে পরিনত হয়ে যাচ্ছে। নিয়ম, আচরণবিধি লঙ্ঘন এখন সাধারণ ব্যাপার। আইনি প্রক্রিয়া, আইনের শাসন অমান্যতা যেন বাহাদুরি ব্যাপার। ধর্মীয় এবং রাজনৈতিক আদর্শের প্রতি অন্ধ আনুগত্য মানুষকে বিভ্রান্ত করছে অনবরত। মানুষের সেবা, মানবিকতা ক্ষমতার মোহের মোহনায় ঘুরপাক খেতে খেতেই নিমজ্জিত হয়েছে অতল সাগরে। কিছুটা এলোমেলো, অগোছালো লেখাটি আসন্ন তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ সামনে নিয়ে। আমরা দারুণ এক ক্রান্তিকালে সমাসীন। বর্তমান জেনারেশনের ভবিষ্যৎ ভাবিত করে নিত্য। এদের অনেকেই যুদ্ধের জন্য মনোনীত হবে, কন্সক্রিপ্ট হবে। আমরা যারা আশির দোরগোড়ায় তাদের ছেলেমেয়ে হয়তোবা পার পেয়ে যেতে পারে কিন্তু প্রিয় নাতিন, নাতি যুদ্ধের বিভীষিকাময় দিনগুলো পার করবে নিত্য বিপদের সম্মুখীন হয়ে।
দু দুটো বিশ্বযুদ্ধের ঐতিহাসিক সত্যতা এবং বিরাজমান বাস্তবতা ধারণ করে সন্দেহাতীতভাবে বলা যায় এ শতাব্দীতেও বিশ্বযুদ্ধের লেলিহান শিখা মানবজাতিকে গ্রাস করবে ইউরোপ থেকেই। ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধ বিস্তৃত হবে বিস্ফোরণ আকারে।
ইউরোপের প্রায় প্রতিটি দেশই আক্রান্ত হবে পুতিনের কূটচালে কিংবা সহযোগি পার্টি হয়ে। বাস্তব হলো তিন বছর ব্যাপী চলমান যুদ্ধটি যুদ্ধবাজ পুতিন যে কোন চাপে, চুক্তিতে বন্ধ করবে এমন কোন লক্ষণ দেখা যায়না। ক্রিমিয়া দখল করে যে ইতিবাচক ফল পেয়েছে তা ইউক্রেনের অন্যান্য অঞ্চলে, বিশেষত শিল্প, খনিজসম্পদ সমৃদ্ধ প্রদেশ/এলাকায় সম্প্রসারণের উদগ্র বাসনা রুখতে পারবেনা। ইউক্রেন ও এমন দেশ নয় যে পারমাণবিক শক্তি এবং অত্যাধুনিক প্রযুক্তি, অস্ত্র শস্ত্রের কারণে রাশিয়া দেশটিকে পদানত করতে সহসাই সমর্থ হবে। কৃষিপণ্য উৎপাদন, বিশ্বের প্রায় এক চতুর্থাংশ খাদ্য শষ্যরে যোগান দিতে সক্ষম দেশটির খনিজসম্পদ ও রাশিয়ার ঈর্ষার এবং দখল করে নেয়ার মনোবৃত্তির অন্যতম কারণ। সামরিক শক্তি, যুদ্ধক্ষেত্রে পারঙ্গমতা ও প্রশংসার দাবি রাখে। পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহৎ শক্তিধর রাষ্ট্রের মুখোমুখি হতে হয়েও ইউক্রেন সগৌরবে টিকে আছে।
সক্রিয় সাহায্য- সহায়তা সহযোগিতা পেলে যুদ্ধের মাঠে দীর্ঘ দিন টিকে থাকার মতো শক্তি ইউক্রেন। রাশিয়া উত্তর কোরিয়া থেকে সৈন্য ধার করেছে, ইরান থেকে আকাশ যুদ্ধের জন্য রকেট, ক্ষেপণাস্ত্র এবং নিক্ষেপণ যান নিতে হয়েছে। এসব সত্য প্রমাণ করে দেশটির সামরিক সামর্থ্য অসীম নয়। আমেরিকা এবং মিত্র দেশগুলোর সামরিক সরঞ্জাম ও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করার সাহায্য সহায়তা ইউক্রেনকে রাশিয়াকে মোকাবিলা করার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সামর্থ্য এনে দেবে নিশ্চিতভাবে। চীন, উত্তর কোরিয়া, ইরান জোট মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় সহযোগিতা এবং অংশগ্রহণে পুতিনের পতন নিশ্চিত করবে।
ভুলে গেলে চলবে না যে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে ইউক্রেন মরণপণ যুদ্ধে লিপ্ত। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পুতিনের সাথে সদ্ভাব রেখে নানান ধরনের ছাড় দিয়ে ও যুদ্ধে যতি বা সন্ধি আনতে পারছেননা । ইউরোপ ও এ ব্যাপারে দ্বিধাবিভক্ত। সম্প্রতি ইউরোপের বেশিরভাগ দেশ একমত হয়েছে যে ইউরো-অতলান্তিক এলাকায় শান্তি বিঘ্নিত করার ক্ষেত্রে দায়ী একমাত্র রাশিয়া। ইউরোপের আটটি দেশ, ফিনল্যান্ড, সুইডেন, এস্তোনিয়া, লাটভিয়া, পোলান্ড, বুলগেরিয়া, রোমানিয়া এবং লিথুয়ানিয়া বিগত ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫ তারিখে হেলসিংকিতে অনুষ্ঠিত পূর্ব সীমান্ত বা ইস্টার্ন ফ্রন্টে সামিটের যৌথ বিবৃতিতে এমন ঐকমত্য পোষণ করেছে ।
বিশ্বের অনেকগুলো স্পর্শকাতর স্পট যুদ্ধের প্রস্তুতিতে টানটান উত্তেজনায়। নিত্যনতুন ঘটনাপ্রবাহ দেশে দেশে, জোটসমূহে পরস্পরের মধ্যে। সামান্য স্ফুর্লিঙ্গ থেকেও আগুন ছড়িয়ে যেতে পারে। তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের ক্ষেত্র মোটামুটি প্রস্তুত বলা চলে। গাজা প্যালেস্টাইন -ইসরাইল সংঘাতে ইয়েমেনের হুথি, দক্ষিণ লেবাননের ইরান সমর্থিত হিজবুল্লাহ বাহিনী, ইসলামি স্টেট সক্রিয়ভাবে জড়িত।
এগুলো মধ্যপ্রাচ্যে চলমান সংঘাত। হিজবুল্লাহ বাহিনীর এবং গাজায় নেতৃত্ব দানকারী অধিনায়কদের একটি বড় অংশ ইসরাইল হত্যা করলেও এদের প্রতিরোধ অব্যাহত আছে।
চীন তাইওয়ান সম্পর্ক স্মরণ কালের মধ্যে এতো স্পর্শকাতর হয়নি। চীন প্রতিনিয়তই যুদ্ধ বিমান এবং নৌ-মহড়া চালিয়ে যাচ্ছে। শক্তি প্রদর্শন কারণ মুখ্য হলেও এক্সিডেন্ট হয়ে বড়ো আকারের সংঘাত এমনকি যুদ্ধ ও লেগে যেতে। সম্প্রতি চীনের সাথে রাশিয়া ও যৌথ মহড়ায় অংশ নিচ্ছে। তাইওয়ান সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়ে প্রতিরক্ষায় সচেষ্ট বলে জানা গেছে । জাপান চীন সম্পর্কে অবনতির কারণে তাইওয়ান জাপান সম্পর্ক গভীর থেকে গভীরতর হয়েছে। সাউথ কোরিয়াও এ জোটের শরিক হয়ে যৌথ মহড়ায় যোগদান করেছে। অ্যান্টি মিসাইল ট্রেনিং এবং লাইভ ফায়ার ন্যাভাল এক্সারসাইজ দু পক্ষই চালিয়ে যাচ্ছে।
সব মিলিয়ে বিশ্ব প্রেক্ষাপট মনে হচ্ছে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের জন্য প্রস্তুত। অর্থনৈতিক ভাবে পিছিয়ে পড়া দেশগুলো সামনে প্রলোভনের ডালি চীন-রাশিয়া অক্ষ যেমন তৈরী করে রেখেছে আমেরিকা ও তার মিত্ররা ও তেমনি আচরণ প্রকাশ্যইে করছে। পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর প্রধান ফিল্ড মার্শাল অসীম মুনিরকে ওয়াশিংটনে আন্তরিক আমন্ত্রণ এবং কোন সিভিল অফিসারদের সহায়তা ছাড়া একান্ত বৈঠক গাজা সম্পর্কিত বলে ধারণা করা হচ্ছে। আণবিক শক্তিসম্পন্ন একমাত্র মুসলিম দেশটিকে গাজা সুরক্ষায় অন্যান্য মুসলিম দেশের সাথে যুক্ত করে নিয়োজিত করার পরিকল্পনা কার্যকর করার ফল বিভিন্ন কারণে দারুণ অর্থবহ। গাজায় হামাস এবং ফিলিস্তিনি জনগোষ্ঠী খুব সন্তুষ্টির সাথে ট্রাম্পের এ পরিকল্পনা মেনে নিলে অন্তত মৃত্যুর মিছিলে সাময়িক ভাটা পড়বে তবে বিশ্বে বিরাজমান যুদ্ধাবস্থার আহামরি পরিবর্তন আসবে বলে মনে হয়না।
লং আইল্যান্ড
১২/১৭/২০২৫
Posted ১১:২৬ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh