ড. আশরাফ উদ্দিন আহমেদ | বৃহস্পতিবার, ০১ আগস্ট ২০২৪
স্বৈরতন্ত্র, একনায়কতন্ত্র এবং আধিপত্যবাদ একই সূত্রে গাঁথা। তবে, আধুনিক সময়ে আধিপত্যবাদের সংজ্ঞা এবং বিস্তার লাভের পেছনের সামাজিক, রাজনৈতিক, ঐতিহাসিক কারণসমূহ বদলে আসছে দ্রুত লয়ে। বর্তমান সময়ের একজন খ্যাতিমান সাংবাদিক অ্যান অ্যাপেলবওম (Anne Applebaum) আটলান্টিক ম্যাগাজিনে The Bad Guys Are Winning শিরোনামে একটি কভার স্টোরি লিখেছিলেন, যা আজও যুগান্তকারী রচনা হিসেবে স্বীকৃত। তার ভাষ্যমতে, গণতান্ত্রিক সংগঠনগুলো সারা বিশ্বেই বিলুপ্তির পথে এগুচ্ছে সত্য তবে ভীতিজনক ব্যাপার হলো কর্তৃত্ববাদী সরকার ব্যবস্থা।
এতে গুণ্ডা বাহিনী পুষে বা প্রাইভেট আর্মি ব্যবহার করে আধিপত্যবাদ প্রতিষ্ঠার এবং ঠিকিয়ে রাখার নিরন্তর প্রচেষ্টা চলে। বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ ধরনের শাসন ও শাসকের সংখ্যা উদ্বেগজনকভাবে বেঁড়ে চলেছে। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার যা গণতন্ত্রের ও সুশাসনের ভিত্তি তা এ ব্যবস্থায় পদেপদে ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে। কোল্ড ওয়ার বা স্নায়ু যুদ্ধের সময়ে যে বিরোধ বা রেষারেষির ছিল আদর্শ কেন্দ্রিক আজ তা অপরাধ চক্র এবং ভাড়াটে বাহিনী কেন্দ্রিক নিয়মে যেন পরিণত হয়েছে। এ ধারার প্রচার ও প্রসারে পশ্চিমা দেশগুলোর কর্পোরেশন এবং প্রযুক্তি কাজ করছে অপ্রতিরোধ্য ভাবে। গুটি কতক শক্তি মদমত্ত রাষ্ট্র কলকাঠি নেড়ে মদদ দিচ্ছে প্রতিনিয়ত।
অ্যাপলবাওম এ প্রসঙ্গে বলেন, স্বৈরতন্ত্র, একনায়তন্ত্র এবং আধিপত্যবাদ চলে দুষ্ট লোকের চক্র, মুনাফালোভী ধূর্ত ব্যবসায়ী চক্র, প্রশ্নবিদ্ধ অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানসমূহ, কেন্দ্রীয় ব্যাংক, অপরাধে আকণ্ঠ নিমজ্জিত নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানসমূহ এবং সরকারি মদদপুষ্ট ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট এসবের সম্মিলিত শক্তির যোগসাজসে। আধিপত্যবাদ টিকিয়ে রাখতে নেতৃত্বে সমাসীন গোষ্ঠীর ক্ষমতা ধরে রাখাই মুখ্য তা যেনতেন পন্থায়ই হোক না কেন। দেশের কল্যাণ, জনসাধারণের সেবা এসব এরকম ক্ষমতালিপ্সু শাসকগোষ্ঠীর কাছে গৌণ। ক্ষমতা আঁকড়ে রাখার কৌশলের নিরিখে তারা আমলা, নিরাপত্তা বাহিনী, বৈদেশিক সম্পর্ক নিরূপণ করে ।
নামকাওয়াস্তে নির্বাচনের নামে প্রহসন, সামরিক শাসন, ধর্মের নাম ভাঙিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার এবং পরাশক্তির তাবেদার রাষ্ট্র হিসেবে এরা টিকে থাকার প্রাণপণ চেষ্টা করে। বিশ্বের অনেক রাষ্ট্রই বর্তমান সময়ে এমন সমীকরণে পরিচালিত হচ্ছে। রাশিয়া-বেলারোজ, রাশিয়া-উত্তর কোরিয়া, আমেরিকা-তাইওয়ান, ইরান, সিরিয়া সহ অনেক রাষ্ট্রের উদাহরণ অ্যাপেলবওম দিয়েছেন।
আমরা চীন-রাশিয়া, আমেরিকা-ন্যাটো জোটভুক্ত দেশগুলোর সামরিক-অর্থনৈতিক বলয়ে থাকা দেশগুলোর কথাও এ প্রসঙ্গে ভাবতে পারি। ভারতও এ কাতারে অন্তর্ভুক্ত। ভ্লাদিমির পুতিন নিঃসন্দেহে স্বৈরতন্ত্র, আধ্যিপত্যবাদ এবং একনায়কতন্ত্রের সাথে সম্প্রসারণবাদী রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জনের কৌশল কাজে লাগাচ্ছেন তেমন বাঁধাবিঘ্নের সম্মুখীন না হয়েই। আমেরিকা ও তার মিত্রদের অর্থনৈতিক অবরোধ সহজেই পাশ কাটিয়ে নর্থ কোরিয়া, ইরান, ইয়ামেন, ভারত ইত্তোকার রাষ্ট্রের সাথে মিত্রতা চালিয়ে যাচ্ছে। ভারত যে কায়দায় ধর্মীয় লেবাসের আবরণে জম্মু ও কাশ্মীরকে দেশটির অচ্ছেদ্য রাজ্যে পরিণত করেছে এবং একই পোশাকী তৎপরতায় আসাম রাজ্য থেকে বাংলা ভাষাভাষী মুসলমানদের বাংলাদেশে ঠেলে পাঠিয়েছিল তা ক্লাসিক উদাহরণ হলেও তা স্পাইমাস্টার পুতিনের ক্রিমিয়া দখল এবং ইউক্রেনে আগ্রাসনের ধারে কাছে ও নেই । (চলবে)।
Posted ৩:৫৪ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০১ আগস্ট ২০২৪
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh