ড. আশরাফ উদ্দিন আহমেদ | শুক্রবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২০
শাসক হিসেবে অকৃতকার্য, বাজে উদাহরণ সৃষ্টিতে নাম করে ইতিহাসে নিন্দিত এ রকম রাজা, বাদশা, প্রেসিডেন্ট ও প্রধান মন্ত্রী কাতারের ব্যক্তির সংখ্যা পৃথিবীতে কিন্তু কম নেই। ইম্পিরিয়েল রোমে ক্যালিওলা এমনই একজন সম্রাট ছিলেন। আত্মরম্ভিতার উদাহরণে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের চেয়ে কম ছিলেন না । জাঁকজমকপূর্ণ এবং বিলাসী জীবনযাপন করাই যেন ছিল তাঁর জীবনের একমাত্র ব্রত। আরাম আয়েসের জোগান দিতে গিয়ে রাজকোষ ফাঁকা হয়ে গেলে টাকার জোগান দিতে তিনি সিনেটরদের এস্টেট বাজেয়াপ্ত করতেন প্রায়ই। নিজেকে দেবতার প্রতিনিধি নয়, বরং তিনিই নিজেকে দেবতা ঘোষণা দিয়ে এহেন অন্যায় কাজ নেই যা করতেননা। প্রচন্ড মাত্রায় স্বেচ্ছাচারী শাসক ছিলেন তিনি । তাঁর পছন্দের ঘোড়াকে তিনি সিনেটর হিসেবে ঘোষণা দেন। সিনেটেরদের হেয় প্রতিপন্ন করতেই নাকি এহেন দুষ্কর্ম।
আধুনিক সময়ে ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট হুগো শ্যাভেজ খারাপ শাসকের জলজ্যান্ত এক উদাহরণ। ১৯৯৯ সালে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার নিয়ে তিনি ক্ষমতায় আসেন এবং এক, দুবছর নয় মোট পনের বছর প্রেসিডেন্ট পদটি ধরে রাখেন। পরিবর্তনের সীমাহীন আশ্বাস দিয়ে ও তিনি দেশটিতে, আর সাধারণ জনমানুষের জীবনে কোন পরিবর্তন আনতে পারেননি। সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নামে তিনি মাত্রাতিরিক্ত খরচ এবং কঠোর হস্তে মূল্য নিয়ন্ত্রণ করেন। ফলশ্রুতিতে, দেশটিতে মুদ্রাস্ফীতি , খুন-খারাবি সহ বিভিন্ন ধরণের অপরাধ বেড়ে যায়। অনেকেই দেশ থেকে পালিয়ে যান। ক্ষমতা আয়ত্তে এনে এবং তা ভোগ করতে কিউবার ক্যাস্ট্রো এবং তাঁর ভাইয়ের উদাহরণ অনুকরণ করতে গিয়ে শ্যাভেজ ফেঁসে যান। ১৯৯৮ সালে ক্যু করতে গিয়ে বিফল হয়ে তিনি বড় বড় প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসেন । জনসাধারণকে ক্ষমতা দেয়া এবং দলীয় রাজনীতিবিদদের নানান ধরনের অপকর্ম, বিশেষত চুরি, চোরাকারবারি, কালো টাকার আধিপত্যসহ দুর্নীতি নির্মূল করার প্রতিজ্ঞা করে তিনি ক্ষমতায় আসেন। নানা সম্পদ যেমন খনিজ তেল, স্বর্ণ হীরে এবং আরও রকমারি খনিজ দ্রব্যে ভেনিজুয়েলার মাটির অভ্যন্তর ভরপুর তাও দেশটিতে চেভেজের শাসনামলে পানি, বিদ্যুত রেশনিং করতে হয়েছিল । মৌল অবকাঠামো সংস্কারের অভাবে ধ্বংসের প্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছিল। দেশের কংগ্রেস ব্যবস্থা বদলিয়ে ন্যাশনাল এসেম্বলি পদ্ধতি প্রচলন কর হয় । শাসনতন্ত্র বদলিয়ে প্রেসিডেন্ট পদের মেয়াদ ৬ বছরে উন্নীত করাসহ যতবার ইচ্ছে প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্ধন্দ্বিতা করার বিধানও রাখা হয়। শ্যাভেজ ১৪ বছর ক্ষমতায় থেকে পনের বছরের সময় মারা যান। উল্লেখ করার মত ন্যাক্কারজনক কাজ হল বিচারকগণ দুর্নীতিগ্রস্থ এ বানোয়াট অভিযোগে সবাইকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা এবং তাদের স্থানে নিজের অনুগত লোকদের নিয়োগ দেয়া। বিদেশ রাষ্ট্রের কাছে নিজের ভাবমূর্তি বৃদ্ধির জন্য বেশ কয়েকটি লাতিন আমেরিকান দেশের কাছে কম মূল্যে তেল বিক্রী করার চুক্তি করেন । কিউবান ডাক্তারের বদলে নামমাত্র মূল্যে দেশটির কাছে তেল বিক্রির চুক্তিপত্রে ও স্বাক্ষর করেন।
কোন ঘোষণা ছাড়াই বেসরকারি ব্যবসা, শিল্প প্রতিষ্ঠান রাষ্ট্রীয়করণ করে তিনি নিজেকে সংস্কারবাদী হিসেবে প্রতিপন্ন করতে চেয়েছিলেন। চেভেজের শাসন করার স্টাইলেরর বিশেষত্ব হলো টেলিভিশনে নিজের প্রচার এবং তাঁর সাথে দ্বিমত পোষণকারীদের যেনতেন প্রকারে হেনস্থা করে জনসমক্ষেই চাকরীচ্যুত করা। চেভেজ ১৪ বছর শাসন করে যে খারাপ নেতৃত্বের নজির রেখে দেছেন তা তাঁর উত্তরসূরীদের দীর্ঘদিন সীমাহীন সমস্যায় নিমজ্জিত রাখবে। (চলবে)
Posted ৯:৪৫ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২০
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh