শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ | ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

Weekly Bangladesh নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত
নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত

আন্তর্জাতিক নারী দিবস

আহবাব চৌধুরী খোকন   |   বৃহস্পতিবার, ১১ মার্চ ২০২১

আন্তর্জাতিক নারী দিবস

আমি বিশেষ কোন দিবসে বিশ্বাসী নয়। মা দিবস ,বাবা দিবস, বিশ্ব ভালো বাসা দিবস এগুলো মনে হয় আমার নিকট আধেক্ষামী। মা, বাবা কিংবা প্রিয়জনের প্রতি ভালোবাসা নিরন্তর এবং শ্বাসত। এগুলোকে আমি বিশেষ কোন দিবসে সীমাবদ্ধ বা উদযাপনে বিশ্বাসী নই।আর নারী দিবস নিয়েতো কখনো ভাবাতে ও পারি না। কারণ আমি নারীকে নারী নয় মানুষ হিসাবে ভাবতে বিশ্বাসী।নারী ও পুরুষের মধ্যে কোন দেয়াল কিংবা ব্যাবধানে বিশ্বাসী নয়। ছোট বেলা থেকে কেন জানি না আমার পরিবারে যখন কোন বাচ্চা জন্মেছে আমি ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের দেখে বেশী খুশী হয়েছি ।আমার তিন সন্তানের মধ্যে দুটি মেয়ে । এই জন্য আমি নিজেকে খুব সৌভাগ্য বান মনে করি ।

কবি বলেছেন বিশ্বে যা কিছু কল্যাণকর অর্ধেক তার করেছে নারী অর্ধেক তার নর। নারী ছাড়া এই বিশ্বব্রম্মান্ড একেবারেই অচল। এই করোনা কালীন সময়ের কথাই ধরুন।ঘরে ঘরে নারীরা হাল না ধরলে অর্ধেক পৃথিবীই এত দিনে ধ্বংস হয়ে যেত।আমি এই করোনা কালে মৃত্যুর মিছিল এবং পৃথিবীর রং দেখে এতোটা ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছিলাম যে আমার স্ত্রী পাশে না থাকলে এতো দিনে আমার কবরে অনেক গাছ বৃক্ষ ডাল পালা মেলে ফেলতো । এই সময় নারীরা যেমন ঘর সামলেছে তেমনি অবদান রেখেছে বাহিরেও। এই করোনা কালে আমি যখন অসুস্থ তখন আমার এক ছোট ভাই করোনা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়। অবস্থা তখন এমন যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে যে গেছে সেই লাশ হয়ে ফিরেছে ।


আত্নীয় স্বজন,ছেলে,মেয়ে, মা বাবা কেহ লাশ দাফনেরও সুযোগ পাযনি । আমি মানসিক ভাবে খুবই ভেঙ্গে পড়েছিলাম । না কোন খোঁজ খবর মিলছে , না পারা যাচ্ছে হাসপাতালে যেতে। এমন সময় হঠাৎ মনে হল আমরা এলাকার এক ছোট বোনের কথা ।নাম তার শুভা ।সে ব্রঙ্কসের নিউইয়র্ক মন্ট্রিফউরি হাসপাতালে কাজ করে । আমি ফোন করে তার সহযোগিতা চাইলাম। সে আমাকে আশ্বস্থ করলো হাসপাতালে গিয়ে তার খোঁজ নিয়ে আমাকে জানাবে । সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ব্যাপার ছিল হাসপাতালে কাজ করতে যেয়ে ওর দুই বোন এই সময় করোনা আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হয়।ওর বৃদ্ধা মা ও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন । কিন্তু এত বিপর্যয়ের মাঝে ও সে ভেঙ্গে পড়েনি । নিজের পরিবারকে রক্ষা করে কমিউনিটি বিশেষ করে বাংলাদেশী মানুষের পাশে দাড়িয়েছে।প্রতি দিন নিজের কাজ শেষে হাসপাতালে অসুস্থ পরিচিত জনদের রুমে যেয়ে খাবার পৌছে দিয়েছে,খোঁজ খবর নিয়েছে এবং সাহস দিয়েছে । আমার এখনও মনে হয় সে সময় শুভার সাহিয্য না পেলে হয়তো আমার এই ছোট ভাইটিকে বাঁচানো যেতো না। করোনা কালীন এই বিপর্যয়ে পূরুষের তুলনায় নারীরা বেশী ভুমিকা রেখেছে।হাসপাতাল ,স্কুল, কলেজ, এনওয়াইপিডি, এমটিএ, ইলেকট্রনিক কিংবা প্রিন্ট মিডিয়া, পৌষ্ট অফিস কিংবা সুপারমার্কেট সর্বত্রই দেখা য়ায় নারীরাই কাজে কর্মে তৎপর। পূরুষরাতো করোনার শুরু থেকে কর্মবিহীন ।

সৃষ্টির পর থেকে এই পৃথিবীকে গড়ে তোলতে নারীরা যুগে যুগে ত্যাগ স্বীকার করেছে।শুরুর দিকে নারীরা কর্মক্ষেত্রে যেমনি নিস্পেষিত হয়েছে তেমনি ছিল না তাদের শ্রমের মূল্য ।১৮৫৭ সালের ৮ই মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সিটিতে নারী শ্রমিকরা সর্বপ্রথম তাদের ন্যায় সঙ্গত দাবী দাওয়া আদায়ের লক্ষ্যে সোচ্চার হয় ।সে সময় তাদের দাবীর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল কর্মক্ষেত্রে বারো ঘন্টার পরিবর্তে দৈনিক আট ঘণ্টা শ্রম সময় নির্ধারণ করা, উপযুক্ত পারিশ্রমিক নির্ধারণ এবং কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্যকর , সুস্থ ও নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করা।এই সময় দাবী না মেনে বরং আন্দোলন করার অপরাধে অসংখ্য নারীকে গ্রেফতার ও কারা গারে পাঠিয়ে নির্যাতন করা হয় ।


১৮৬০ সালে কিছু সংখ্যক সংগ্রামী নারী গঠন করেন ‘নারী শ্রমিক ইউনিয়ন’।তারই ধারাবাহিকতায় ১৯০৮ সালে পোশাক ও বস্ত্র কারখানায় কর্মরত নারী শ্রমিকরা একই দাবিতে শুরু করেন আন্দোলন ।আন্দোলনের ধারাবাহিক তায় শেষ পর্যন্ত নারী আন্দোলনের বিজয় হয় ।কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয় তাদের দাবী মেনে নিতে।১৯১০ সালে ডেনমাকের্র কোপেন হেগেনে অনুষ্ঠিত নারী সম্মেলনে জার্মানির নেত্রী ক্লারা জেটকিন ৮ ই মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে ঘোষণা করলে বিশ্বের দেশে দেশে দিনটি উদযাপনের রেওয়াজ শুরু হয়।অতঃপর ১৯৭৫ সালে জাতিসংঘের স্বীকৃতি প্রদানের মধ্য দিয়ে দিবসটির আন্তর্জাতিক গুরুত্ব বৃদ্ধি পায়।অধিকার প্রতিষ্টায় যুগে যুগে নারীদের আত্নত্যাগের স্বীকৃতি স্বরূপ দিনটি পালিত হয়ে থাকে।

কিন্তু এত আন্দোলনের পর এই সময়ে নারীরা যেমন মাথা উচু করে দাড়িয়েছে তেমনি বিভিন্ন জায়গায় দেখা যায় এখনও নারীরা নির্যাতিত হচ্ছে ।তাদের মানুষ হিসাবে মর্যাদা না দিয়ে নারী হিসাবে অবমূল্যায়ন করা হয় ।নারীরা যৌতুকের কারণে নির্যাতিত হয় ।অনেক দেশে শুনা যায় এখনও মেয়েদের জন্মের পর গলা টিপে হত্যা করা হয় ।গরীব মা বাবা টাকার অভাবে মেয়েদের বিয়ে দিতে পারে না।নারীরা কর্মক্ষেত্রে ও বিভিন্ন ভাবে নির্যাতিত হচ্ছে ।নারী ও পুরুষের মাঝে সমতা প্রতিষ্টা করতে না পারলে ও শুধু দিবস পালনের মধ্য দিয়ে নারীর অধিকার প্রতিষ্টা করা যাবে না ।আসুন আমরা প্রত্যেকে প্রত্যেকের অবস্থান থেকে নারী অধিকার প্রতিষ্টায সচেতন হই ।পৃথিবীর সকল নারীরা ঘরে বাহিরে সমমর্যাদায় এগিয়ে যাক।আন্তর্জাতিক নারী দিবস সফল ও সার্থক হোক ।


লেখক- কলাম লেখক ও কমিউনিটি নেতা, নিউইয়র্ক ।

advertisement

Posted ১০:২৭ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১১ মার্চ ২০২১

Weekly Bangladesh |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

গল্প : দুই বোন
গল্প : দুই বোন

(6285 বার পঠিত)

স্মরণে যাতনা
স্মরণে যাতনা

(1306 বার পঠিত)

মানব পাচার কেন
মানব পাচার কেন

(1151 বার পঠিত)

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০  
Dr. Mohammed Wazed A Khan, President & Editor
Anwar Hossain Manju, Advisor, Editorial Board
Corporate Office

85-59 168 Street, Jamaica, NY 11432

Tel: 718-523-6299 Fax: 718-206-2579

E-mail: [email protected]

Web: weeklybangladeshusa.com

Facebook: fb/weeklybangladeshusa.com

Mohammed Dinaj Khan,
Vice President
Florida Office

1610 NW 3rd Street
Deerfield Beach, FL 33442

Jackson Heights Office

37-55, 72 Street, Jackson Heights, NY 11372, Tel: 718-255-1158

Published by News Bangladesh Inc.