ড. আশরাফ আহমেদ | বৃহস্পতিবার, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২১
কবি কাজী জহিরুল ইসলাম, বাপ-মা, ঘনিষ্ঠ স্বজনদের প্রিয় বাদল একজন চমৎকার মনের মানুষ। নির্ভেজাল, খাঁটি, আলোকিত মন ও মননের অধিকারী দয়ালু চিত্তের মানুষটি তাঁর ৫৩ তম জন্মবার্ষিকী উৎসর্গ করেছিলেন সে সময়ে ভীষণ অসুস্থ ফটো সাংবাদিক স্বপন হাইয়ের জন্য। স্বপন হাই আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন) কিন্তু মানবিকতার সুন্দর উদাহরণ দেখে নিশ্চয়ই আনন্দিত হয়ে গেছেন। কবি জহিরের অনুরোধে জন্মদিনে উপহারের বদলে স্বপন হাইয়ের চিকিৎসা তহবিলে দানের যে অনন্য মানবিক উদাহরণ কবি জহির রেখেছেন তা আমরা অনেক দিন মনে রাখব। স্নেহভাজন কবির সুন্দর মনের এটি একটি ছোট্ট উদাহরন। এমনতরো অসংখ্য ঘটনা আছে যেখানে কবি ও তাঁর সুস্মিতা , বিদুষী পত্নী মুক্তি জহির তাদের আতিথ্য , স্নেহধারা এবং কাছে টেনে নেয়ার বলয় মানুষের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়ে উত্তর আমেরিকা তথা সারা বিশ্বের স্বংকৃতিমনা মানুষজনদের কাছে টেনে নিয়েছেন।
যদ্দুর কোন এক জায়গায় বক্তৃতায় বলেছিলাম, কবি জহিরের মধ্যে কিছু মাজিক্যাল পাওয়ার আছে। আমার মত ঘরকুনো একজন বয়স্ক মানুষকে তিনি কবিতার জগতে দীর্ঘ ৫০ বছরের ও বেশী বিরতি দেয়ার পর ফিরিয়ে আনতে সমর্থ হয়েছেন। তাঁর সাথে বছর দু’য়ের পরিচয় ও অনিয়মিত সান্নিধ্যে শ’’খানেক কবিতা লিখতে পেরেছি, গুণগত মান যেমনই হোক !
কবি জহিরুল ইসলাম বয়সে তেমন প্রবীণ নন । মাত্র চুয়ান্ন বছর বয়সে ৬৫ টির অধিক গ্রন্থের প্রণেতা হওয়া চাট্টিখানি কথা নয় । জাতিসঙ্ঘের মতো প্রতিস্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি (তিনি অডিট বিভাগের প্রধান নির্বাহী) নিরলসভাবে নিয়মিত লেখালেখির কাজ , সাহিত্য, সংস্কৃতি কাজে অগ্রণী ভূমিকা রাখা এসব একজন কাজী জহিরুল ইসলামই পারেন। তাঁর নেতৃত্বে ও প্রণোদনায় এই নিউইয়র্কে ডজন খানেক গোষ্ঠীসাহিত্য, শিল্প ও সংস্কৃতি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে । করোনা মহামারী সময়ে ও তিনি সাহিত্য, কবিতা পাঠ ও বিতর্ক, বিনোদনমূলক গান বাজনা ইত্যাদি বিষয়ক অনুষ্ঠানের নিয়মিত আয়োজন করে উত্তর আমেরিকা, বাংলাদেশ, ভারত, কানাডা, ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যে সহ সুদূর আফ্রিকার বাংলা ভাষা- ভাষী কবি সাহিত্যিক ও অনুরাগীদের সংস্কৃতি চর্চার ফোরাম সৃষ্টি করে মাতোয়ারা করে রাখছেন । তাছাড়া, এ রকম ভীতিজনক সময়ে ও কবি হৈ- হল্লুড় , পছন্দের খাওয়াদাওয়া , মেয়েদের নিয়ে নানান দেশের জনপ্রিয় খাবার রান্না, বন্ধু বান্ধব, পরিবার পরিজন নিয়ে বিনোদন মূলক পরিভ্রমণ ইত্যাদি বাদ দেননি। প্রকৃতির টানে সপরিবারে স্বল্প সংখ্যক আগ্রহী বন্ধুদের নিয়ে বন জঙ্গল, নদী , জলপ্রপাত, ইত্যাদি চষে বেরিয়েছেন। মাহবুব আলম খান , আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু (প্রায়ই মিসেস সহ ) এবং কবি জহির আমার জানামতে এসব আনন্দভ্রমনের অভিজ্ঞতা নিয়ে সুখপাঠ্য প্রচুর রম্য রচনা, গল্প কাহিনী লিখেছেন। কবি জহিরের একজন সংবেদনশীল মনের মানুষ । বড়ো আরও একটি গুণ হলো তাঁর নিত্য অনুসন্ধান করার প্রচণ্ড ইচ্ছেশক্তি। তাঁর ভ্রমণ কাহিনীগুলোতে এগুণের পরিচয় ক্ষণেক্ষনণই মেলে। ভ্রমণ কাহিনী, আহরিত অভিজ্ঞতা, এমনকি বিভিন্ন দেশের খাবারদাবার রান্না করাকে শিল্প ও শিক্ষণীয় বিষয় বানিয়ে তিনি আমার মতো পাঠকের মনকে আচ্ছন্ন করে ফেলেন সহজেই।
এতোসব অর্জনে ও কাজী জহিরুল ইসলাম কি একজন পরিতৃপ্ত মানুষ ? মনে হয় না। স্থবিরতা যেখানে অনুপস্থিত, ক্লান্তিহীন ভাবে নিত্য সৃজনই মানুষটির জীবনের ব্রত বলে ধারনা করা অমূলক হবে না। তাঁর মধ্যে অতৃপ্তি , আরও অর্জনের নেশা লক্ষ্য করি । জয়ের বাসনা, সৃষ্টির উদগ্র ইচ্ছে তাঁকে তাড়িত করে , আগুয়ান হতে প্রেরণা দেয় নিত্যই। ফেসবুকে প্রতিদিনই তাঁর কবিতা, কোন দিন একের অধিক দেখে এমন কথাই মনে হয়। তিনি কি যোদ্দা ? এ রকম মণে করার সঙ্গত কারণ খুঁজতে তেমন বেগ পেতে হয়না। তাঁর এ যুদ্ধ মূলত নিজের সাথে। থেমে থাকা, বিরতি মনে হয় তাঁর অভিধানে নেই। আগুয়ান হতে হবে – এমন প্রতিঙ্গাবদ্ধ তিনি নিজের সাথে। তাঁর সৃষ্ট কাজের বিষয়বস্তু অল্পবিস্তর ঘেঁটে আমার মণে হয়েছে তিনি হাতড়ে বেড়ান না, বিষয়বস্তু তাঁর অভিজ্ঞ চোখে, মননে আপনিতেই ধরা দেয় ; নিপুণ শিল্পী, কারিগরের হাতে ধরাশায়ী হয়ে ধন্য হোয় । কবিতা, সাহিত্য রচনা, গল্প, ভ্রমণ কাহিনী, রম্য রচনা, ইতিহাস, ঘটমান বর্তমান, প্রকৃতি, মানুষ, প্রেম, দ্রোহ – রকমারি বিষয় বেছে নিতে, প্রেক্ষিত নিরূপন করতে সিদ্ধহস্ত কবি কাজী জহিরুল ইসলাম।
কবিতা, সাহিত্য, শিল্প – এসবের ব্যাকরন, নব নবতর সব ধারনা নিয়ে এক্সপেরিমেন্টশন তাঁর মত কম বাঙ্গালি কবি, সাহিত্যিককেই করতে দেখা যায় । অনুবাদ সাহিত্য, বিশেষত বরেণ্য কবিদের কবিতার ভাষান্তর কবি জহির অনায়াসে পারঙ্গমতার সাথে করে থাকেন। ‘ একালে কাকতলাতে বেল ‘ বইটিতে যুক্তরাষ্ট্রের ভিন্নধর্মী কবি আমিরি বারাকা’র ‘কেউ একজন উড়িয়ে দিয়েছে আমেরিকা ‘কবিতাটির অনবদ্য ভাষান্তর অনেক পাঠককেই মুগ্ধ করবে, যেমনটি করেছে আমাকে। সুফিবাদের গভীর কথা, বাণী তাঁর ‘দেহতত্ত্ব’ বইটিতে আমার মত পাঠকদের অন্য রকম বোধের জগতে নিয়ে যায় । কবি জহিরুল ইসলাম সাধারণের বাইরের মানুষ, ব্যতিক্রমধর্মী একজন মামুষ যাকে বিশেষণে আখ্যায়িত করার মতো শব্দসম্ভার আমার অভিধানে অন্তত নেই। নানান বিষয়ে নিরীক্ষাধর্মী সৃষ্টিতে নিরন্তর আগ্রহী, অনুসন্ধিৎসু মন ও মেজাজের এ কবিকে যতোই দেখি, তাঁর কবিতা ও সাহিত্যকর্ম যতোই পড়ি আমি ততোই অবাক হই, বিস্মিত হই তাঁর অনুভবের গভীরতায়, বিষয়বস্তুর বৈচিত্রে ।
অজস্র শুভকামনা কবি কাজী জহিরুল ইসলাম আপনার ৫৪ তম জন্মবার্ষিকীতে। সুস্থ থাকুন , দীর্ঘজীবি হয়ে আমাদের সাহিত্য, শিল্প ও সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধতর করতে অবদান রাখুন-এ কামনা আজকের দিনটিতে।
Posted ৯:১৭ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২১
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh