ড. আশরাফ উদ্দিন আহমেদ | বৃহস্পতিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩
গণতন্ত্রের রক্ষাকবচ হিসেবে জবাহদিহিতা নিশ্চিত করার সর্বাত্মক প্রচেষ্টার কার্যকর একটি অস্ত্র হিসেবে রাষ্ট্রের শাখা-প্রশাখায় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত নির্বাচিত প্রতিনিধি, আমলা এক কথায় রাজনীতিবিদ ও শাসকদের অপরাধ, খারাপ আচরণ, অন্যায় (crime and misdemeanor) এসবের নিয়ন্ত্রণ, প্রতিহিত করার উদ্দেশ্যে ইম্পিচমেন্ট ব্যবস্হা দেশটির শাসনতন্ত্র বা কন্সটিটিউশনের ফাউন্ডিং ফাদাররা রেখে গেছেন। এই প্রক্রিয়া প্রয়োগ করে আইনসভা আইনী ও রাজনৈতিক বিধিমালা আরোপ করে আইনভঙ্গের কারণে অভিযোগ গঠন করে আদালতে প্রমাণিত হলে ইম্পিচমেন্ট প্রক্রিয়া প্রথমে হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভ এবং পরবর্তীতে সিনেটে পাঠানো হয় ।
প্রেসিডেন্টদের ক্ষেত্রে ইম্পিচমেন্ট প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিচার কালেভদ্রে হয়। অ্যান্ড্রু জনসন এবং রিচার্ড নিক্সনের ইম্পিচমেন্টের মধ্যে ব্যবধান ছিল প্রায় দুই শতাব্দী। শেষোক্তজন এবং বিল ক্লিনটনের মধ্যে ব্যবধান কমে তা দাঁডায় পঁচিশ বছরে। প্রায় একই ব্যবধানে সংঘটিত হচ্ছে ক্লিনটন ও প্রাক্তণ প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষেত্রেও।
যুক্তরাষ্ট্রের ১৭তম প্রেসিডেন্ট ছিলেন অ্যান্ড্রু জনসন। ১৮৬৮ সালে দেশটির ইতিহাসে প্রথমবারের মত সংঘটিত ১১টি গুরুতর অপরাধ (Crime) এবং অসদাচরণ (Misdemeanor) জনিত কারণে তাঁর বিরুদ্ধে ১১টি অভিযোগ আনা হয়। কারণ হিসেবে অফিস অ্যাক্ট বহির্ভূতভাবে কংগ্রেস অধিবেশনে না থাকা অবস্থায় যুদ্ধ সচিব এডউইন স্টেনটনকে পদচ্যুত করার চেষ্টা করেছিলেন প্রেসিডেন্ট। কংগ্রেস তাকে ইম্পিচ করলে সিনেটে দুই-তৃতীয়াশ ভোট থেকে একটি ভোট কম ছিল এ কারণে ইম্পিচমেন্ট অকার্যকর বা নাকচ হয়ে যায়।
প্রেসিডেন্ট নিক্সনের বেলায় ইম্পিচমেন্টের কারণ ছিল ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারী। কংগ্রেস বা হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভে ইম্পিচমেন্টের স্বপক্ষে পর্য্যাপ্ত ভোটে অনুমোদিত হলেও সিনেটে নিক্সন অব্যাহতি পেয়ে যান। প্রেসিডেন্ট ক্লিনটন অভিযুক্ত হয়েছিলেন তাঁর সাথে সহায়তাকারী হিসেবে কর্মরত যুবতী মনিকা লিউনেস্কির সাথে অপরাধযোগ্য যৌন আচরণের জন্য। তাঁর বেলায় ও রিপাবলিকান মেজরিটি কংগ্রেস ইম্পিচমেন্টের সব আনুষ্ঠানিকভাবে সফলভাবে সম্পন্ন করলে ও সিনেটে মার্জনা পেয়ে যান।
প্রাক্তণ প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো মামলা আকারে আদালতে চলমান। অপরাজনীতির দ্রুত বিস্তারে নাকি অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধির জন্য এমনটি হচ্ছে তা নিয়ে ভাবন-চিন্তা অত্যন্ত জরুরী। প্রতিটি ইমপিচমেন্ট, বিশেষত প্রেসিডেন্টের ক্ষেত্রে প্রচুর সময় নেয়, অত্যন্ত ব্যয়বহুল , দলীয় কোন্দল মারাত্মক পর্যায়ে চলে যায়, ব্যক্তিগত শত্রুতা ও বেড়ে যায়। সর্বোপরি মূল্যবোধ, শিষ্টাচার ইত্যাদির অবক্ষয় হয় অপূরণীয় ভাবে। তবে, গনতন্ত্র সুরক্ষার জন্য প্রমাণিত ক্রাইম ও অন্যায়ের জন্য ইম্পিচমেন্ট প্রক্রিয়া অনুসরণ করা অবশ্যই প্রয়োজন। আন্তদলীয় কোন্দল, অপরাজনীতি প্রসূত হলে তা সর্বক্ষেত্রেই পরিতাজ্য হওয়া উচিত।
Posted ১১:৪৩ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh