ড.মাহবুব হাসান | বৃহস্পতিবার, ২৩ জুলাই ২০২০
মনটা ভীষণ রকম বিক্ষিপ্ত। এতোরকম ঘটনা ঘটে চলেছে প্রতিদিন যে হৃদয় নামের যে চেতনাটি আছে, সে নিতে পারছে না সব কিছু। বলতে পারি সে এখন ক্ষতাক্ত। রক্ত ঝরছে। সেই ক্ষরণ বন্ধ করার কোনা উপায় জানা নেই আমার। শুধু আমার না, গোটা বিশ্বেরই সেই ক্ষমতা নেই বলেই মনে হচ্ছে। আর আশ্চরয হচ্ছি এই ভেবে যে, হাতে এতো পরমাণু বোমা থাকতেও যদি সামান্য একটা ভাইরাস কোভিড-১৯-কে সামাল দিতে পারে না যারা, তাদের নিয়ে আর কি গর্ব করবো আমরা?
অগণন মৃত্যুর মিছিলে যোগ হচ্ছে মানুষ। আর আমরা যারা বেঁচে আছি তারা কেবল ভাবছি কবে নাগাদ ভ্যাকসিন আসবে? সেই ভ্যাকসিন নামক ‘গডো’ জন্য আমরা অপেক্ষার কাল গুনছি। উই ওয়েটিং ফর গডো’, কিন্তু সত্য হচ্ছে সেই ‘গড’ কখনোই আসে না, বা আসবে না।
এর মানে কি? মানে কি এটাই যে কারো জন্য, মানে কোনো সুপার পাওয়ারের (গড) জন্য অপেক্ষা না করে জীবন-যাপনকে নতুন করে সাজিয়ে নেয়াটাই একজন ক্রিয়েটিভ, নেচারাল মানব সন্তানের জন্য কি জরুরি না? লাখ লাখ বছর আগে তো কোনা গড ছিলো না। তখন মানুষ সারভাইভ করেছে কেমন করে? সে তো এই প্রকৃতিরই সন্তান। প্রাকৃতিক সুনামিকে সে মোকাবিলা করেই বেঁচে এসেছে। আমাদের সেই চিন্তাই করতে হবে। কোনো ভ্যাকসিনের জন্য অপেক্ষা করা আমাদের জন্য ঠিক হবে না।
এখন জ্ঞানী ও বিজ্ঞানীদের উচিত খুঁজে বের করা, কি ভাবে এই ভাইরাস সুনামির হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করা যায়। আর কিভাবে এই রাক্ষুসি অনুবীজ ধ্বংস করা যায়।
১.
ফাহিম সালেহ’র হত্যা আমাকে বিমর্ষ করে ফেলেছে। সে আমার বড় ছেলের বয়সী। ফলে আমার ভেতরে একটা চিন্তা কাজ করছিলো সে তো আমারও ছেলে হতে পারতো। আমার ছেলে যদি এ-রকম হত্যার শিকার হতো, তাহলে আমার কেমন লাগতো? সেই প্রেক্ষিত থেকে আমি অনেকটাই মর্মাহত। ফাহিম সালেহ একজন প্রযুক্তিবিদ।মেধাবি এই তরুণ উদ্যোক্তাই কেবল ছিলেন না, তিনি ‘পাঠাও’ নামের একটি অ্যাপ-এর সহউদ্ভাবক। তার নিজের উদ্ভাবিত প্র্যাঙ্ক ডায়াল অ্যাপের মাধ্যমে তিনি ৫ বছরে ১০ মিলিয়ন ডলার আয় করেছেন বলে জানা যায়। ‘পাঠাও’ বাংলাদেশে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। সেই আদলে তিনি নাইজেরিয়ায় পঠাও-এর নব সংস্করণ ডোকাটা নামের একটি ব্যবসা চালু করেছিলো। সব মিলিয়ে ফাহিম ছিলো এক প্রখর ধী-সম্পন্ন এক উদ্ভাবক। সেই সম্ভাবনাকে রক্তাক্ত করে দেয়া হয়েছে। তার হত্যার শোক প্রতিটি আমেরিকান বাংলাদেশিকে ব্যথিত করেছে এবং তার হত্যা রহস্য উদ্ঘাটন করে দোষী খুনি ও খুনিদের বিচার করা হোক— এই দাবি বাংলাদেশি কম্যুনিটির, সবারই।
২.
গুজব সব সময় বেশি ওড়ে।
সুপ্রিম কোর্ট প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প-এর করা ডেকা বিরোধী কেসটি ডিসমিস করে দিয়ে বলেছে যে ডেকা (উঅকঅ) ইমপ্লিমেন্ট করতে হবে। খুব ছেলেবেলায় যে সব শিশু বাবা-মা’র সাথে এ-দেশে এসেছিলো, তাদেরকে বৈধ করে নেবার উদ্যোগ নিয়েছিলো ওবামা প্রশাসন। সেই উদ্যোগেরই নাম ডেকা। সেটা চ্যালেঞ্জ করে বাতিল করেছিলো ট্রাম্প। আবার সুপ্রিম কোর্ট নাকি বলেছে যদি ইমিগ্র্যান্টদের জন্য আরো কিছু করতে চাও, তাহলে সেটা করতে পারো তুমি(ট্রাম্প)। এটা ট্রাম্পের দাবি। আসলে সেই রায়ে কি আছে আমরা জানি না। মেক্সিকান একটি টিভি চ্যানেলের সাথে ইন্টারভিউ দিতে গিয়ে ট্রাম্প এ-রকমই বলেছেন। এখন সবাই বলছে, মানে যারা বৈধভাবে কাজ করছে ও যারা অবৈধ,েউভয়কেই বৈধ করে নেবে ট্রাম্প। কারণ হিসেবে তারা বলছেন ২০২০-এর ইলেকশনে (নভেম্বরে) জেতার জন্য সর্বশেষ চেষ্টা হিসেবে ট্রাম্প লাখ লাখ লোককে তার নির্বাহী আদেশে গ্রিনকার্ড দেবার হুকুম দেবেন। তাতে করে ভবিষ্যতে এই নতুনরা রিপাবলিকানদের ভোটার হবে। আর ডেকার অন্তর্ভুক্ত যুবকেরা হবে ডেমোক্র্যাট ভোটার, ফলে তাদের ওপর ট্রাম্পের কোনো প্রভাব থাকবে না।
আসলে এর কোনোটাই সত্য নয়, গুজব বা মুখরোচক আলোচনা মাত্র। ট্রাম্প যদি এ-রকম আদেশ দেনও, তাহলেও তা সিনেটে উঠবে আলোচনা হবে। সেখানে যদি সেই আদেশ টেকে বা গ্রহণযোগ্য বলে মনে করেন তারা তাহলেই কেবল সেটা আইন হতে পারে। নাহলে বাদ। কিন্তু তারপরও যদি ট্রাম্প নির্বাহী আদেশ দেন, তাহলেও সেটা পাশ হবে এমনটা মনে হয় না। কারণ ডেকাকে বাতিল করতেই রিপাবলিকানরা ওই নির্বাহী আদেশ আইনে পরিণত হতে দেবে না। আবার এই সুবাদে ট্রাম্প যাতে লাখ লাখ ইমিগ্র্যান্টকে বৈধতা দিতে না পারে, সে জন্য ডেমোক্র্যাটরা নিজেদের নাক কেটে হলেও যাত্রা ভঙ্গ করতে কসুর করবে না।
আসলে বিষয়টা রিপাবলিকানও ডেমোক্র্যাটদের রাজনৈতিক লাভের করাতে ফানা ফানা হচ্ছে লাখ লাখ অভিবাসন প্রত্যাশী মানুষ। এরা এ-দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখছে, ট্যাক্স দিচ্ছে, নিজেদের অনিশিচত জীবনকে উৎসর্গ করেও রাজনীতিকদের মন জয় করতে পারছে না। বৈধ ও অবৈধ মিলিয়ে প্রায় দেড় কোটি মানুষ, বা তার চেয়েও বেশি, যারা রাতদিন অক্লান্ত পরিশ্রম করছে, তাদের নিয়ে এই দুই পার্টির রাজনৈতিক খেলা অমানবিক ও অদূরদর্শী রাজনীতিরই কুফল। মানুষকে এ-ভাবে নিগৃহীত করার কোনো যুক্তি নেই।
বৈষম্য , যাকে এ-দেশের মানুষ ডিসক্রিমিনেশন বলে চিহিৃত করে, দুই পার্টির রাজনৈতিক খেলা তারই এক নজীর। মানবিক স্টেট বলে দাবি করা হলেও মূলত প্রতি স্তরেই এই ডিসক্রিমিনেশন আছে নগ্ন-নিষ্ঠুর চেহারা নিয়ে। বর্ণবাদ তার একটি। এই বর্ণবাদিতার জন্যই চলছে এই হোলি খেলা। কারণ বৈধ ও অবৈধ সব অভিবাসীই মূলত তৃতীয়বিশ্বের গরিব দেশ থেকে আসা। এবং তারা শাদা চামড়ার মানুষ নয়। তারা তামাটে বা বাদামি, পীত ও কালো। আবার এদের একটি অংশ মুসলিম ধর্মাবলম্বী। হোয়াইটরা মুসলমানদের সন্ত্রাসী বলে চিহিৃত করেছে । আমেরিকান পিপলস ও প্রশাসনের লোকেদের চোখে এরা সবাই কালো এবং হেট-যোগ্য।
এই শাদা আমেরিকানরাও যে এ-দেশে ইমিগ্রান্ট সেটা তারা ভুলে গেছে। ১৪৯২ সালের আগে ওই শাদারা চিনতো কেবল সম্পদশালী ইন্ডিয়াকে। সেই ইন্ডিয়াতে যেতেই জাহাজ ছেড়েছিলো কলম্বাস। এসে ভিড়েছিলো ওয়েস্ট ইন্ডিজের একটি দ্বীপে। এ-কারণেই ওই দ্বীপগুলোর নাম হয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
শাদা চামড়ার মানুষদের এটা মনে করিয়ে দিতে হবে যে তারাও এ-দেশে অভিবাসীমাত্র। এবং তারা নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায় আছে বলে তারা আদি অধিবাসী নয়।
কালো হলেই তারা ‘হীন’তর আর শাদা বলে তারা উচ্চতর মানুষ, এই অজ্ঞানতা আমেরিকান চৈতন্যে এমনভাবে পোক্ত যে, এ-থেকে রাজনীতিকেও মুক্ত করা হয়নি। যেমন করা হয়নি কোনো নারী প্রার্থী প্রেসিডেন্সিতে যেতে পারবে না। এমন কি স্বাধীনতার সময় আমেরিকান শাদা-কালো ,পীত বা বাদামি নারীর অবদানকেও স্বীকার করা হয়নি। এমন কি ১৯২১ সালের আগে কোনো নারীর ভোটারাধিকার ছিলো না। কৌশলগুলো এমনভাবে সাজানো হয়েছে যে যাতে ভিন্ন রঙের কেউ নির্বাচনের ভেতর দিয়ে ক্ষমতার শীর্ষ বসতে না পারে। বারাক হোসেইন ওবামা মুসলমানের ঘরের সন্তান হলেও, তার মা ছিলেন শাদা খ্রিষ্টান এবং তার বাবার সাথে মায়ের মধ্যে ছাড়াছাড়ি হয়ে যাওয়ায় এবং তিনি দেশে ফিরে যাওয়ায়, ওবামা একজন খ্রিষ্টান হিসেবেই বেড়ে উঠেন।
নানা ইকোয়েশনের যোগফল হিসেবে ওবামা উঠে আসেন ক্ষমতার শীর্ষে।
তবে, আমরা চাই ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশ জারি হোক এবং সেটা সিনেটে পাশ হয়ে আইনে পরিণত হোক। তাতে করে আমেরিকান হিস্টরিতে নতুন একটি স্তম্ভ প্রোথিত হবে। এটা আমাদের মনে রাখতে হবে যে অবৈধ ইমিগ্র্যান্টরা যদি কাগজ পায় তাহলে তারা মিনিমাম ৪০/৫০ বিলিয়ন ডলার প্রতি বছর ট্যাক্স দেবে। এটা আমেরিকান অর্থনীতির জন্য তেমন কোনো টাকা নয় বটে, কিন্তু কিছু তো বটেই।
গুজব সত্য হোক।
# ০৭/১৯/২০২০#
নিউ ইয়র্ক
Posted ৮:৫৫ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৩ জুলাই ২০২০
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh