আহবাব চৌধুরী খোকন | বৃহস্পতিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১
শহীদ জিয়াউর রহমান ছিলেন বাংলাদেশের একজন জাতীয়তাবাদী নেতা, একজন সাহসী মুক্তিযুদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধের ঘোষক,একজন সেক্টর কমান্ডার ,একজন স্বপ্নদ্রষ্টা। ১৯৭১ সালে অনেক রাজনীতিবিদ দেশের জন্য যেটা করতে পারেননি সেটা তিনি করে দেখিয়েছেন। তিনি পাকিস্থান সেনাবাহিনীর একজন পদস্থ কর্মকর্তা হয়েও দেশপ্রেমে উদ্বোদ্ধ হয়ে স্বাধীণতা যুদ্ধের ঘোষণা দিয়েছিলেন।তিনি মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস সম্মুখ সমরে যুদ্ধ করেছেন।স্বাধীণতা যুদ্ধে কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য সরকার তাঁকে বীর উত্তম পদকে ভূষিত করেছিল। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য যে ৬৮ জন ব্যক্তিকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদক বীর উত্তম খেতাবে ভূষিত করা হয়েছিল জিয়াউর রহমানের নাম এই তালিকায় ছিল তৃতীয়। কিন্তু বর্তমান সরকার কেবল মাত্র প্রতিহিংসার বর্শিভূত হয়ে জিয়াউর রহমানকে বিতর্কিত করতে চায় ।বর্তমান সরকার আজ ষড়যন্ত্র মূলক ভাবে বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের সাথে শহীদ জিয়াউর রহমানের নাম জড়াতে চায় ।কারণ একটাই বিএনপি আজ রাজনৈতিক ভাবে আওয়ামীলীগ এর প্রতিপক্ষ ।শহীদ জিয়াউর রহমানের অপরাধ একটাই আর সেটা হচ্ছে তাঁর জনপ্রিয়তা। বঙ্গবন্ধু যাঁর জীবদ্দশায় যেটা করতে পারেননি জিয়াউর রহমান সেটা করতে পেরেছিলেন ।জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের মানুষের জন্য এমন একটি রাজনৈনিক দর্শন উপহার দিয়েছিলেন যেটা মানুষ মনে প্রাণে গ্রহণ করেছে।
বর্তমান সরকার নতুন করে এখন বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডে জিয়াউর রহমানের নাম জড়াতে চায়। অথচ আওয়ামীলীগ সরকারের শাসনামলে একটি দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শেখ মুজিব হত্যা কান্ডের বিচার হয়েছে।এই মামলায় তখন কোন আসামী এই হত্যাকান্ডে জিয়াউর রহমানের সংশ্লিষ্টতার কথা বলেননি। ১৯৭৫ সালে শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকান্ডের সময় শহীদ জিয়া ছিলেন সেনা বাহিনীর একজন উপ প্রধান ।সেনা বাহিনী, বিমান বাহিনী ও নৌবাহিনী প্রধান ছাড়া ও পুলিশের আই জি ,রক্ষী বাহিনী প্রধান সহ আরো অনেকেই সে সময় বিভিন্ন দায়িত্বশীল পদে নিয়োজিত ছিলেন ।আজ তাদেরকে না জড়িয়ে এই হত্যাকান্ডের সাথে জিয়াউর রহমানের নাম জড়ানো কোন ভাবেই যৌক্তিক নয় ।শেখ মুজিবের হত্যাকাণ্ড পর আওয়ামী লীগ নেতা খন্দোকার মোশতাকের নেতৃত্বে মন্ত্রী সভা গঠিত হয়েছিল।আজকের প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম সেদিন মন্ত্রী সভার শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করে ছিলেন। সেই সময়ের সেনা প্রধান জেনারেল শফি উল্লাহ কিছু দিন আগেও আওয়ামীলীগ সংসদ সদস্য ছিলেন ।সেই সময়ের দায়িত্বশীল অনেকেই এখনো এই সরকারের আশে পাশে রয়েছেন।তাদেরকে দায়ী না করে শহীদ জিয়াউর রহমানকে এই হত্যাকাণ্ডে জড়ানো সরকারের সুদুর প্রসারী ষড়যন্ত্রের অংশ বলে রাজনৈনিক বিশ্লেষকরা মনে করেন।
বিএনপির জনপ্রিয়তায় ভিত হয়ে সরকার আজ জিয়াউর রহমানকে বিতর্কিত করার ষডযন্ত্র মেতেছে। কিন্তু দেশের মানুষ জানে জিয়াউর রহমানের রাজনীতি ছিল মানুষের মুখে হাঁসি ফুটানোর রাজনীতি। তিনি এই দেশকে তলাবিহিন দেশ থেকে স্বনির্ভর দেশে পরিণত করেছিলেন। জিয়াউর রহমানের সময়ে দেশ খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণতা অর্জন করেছিল। মিল কারখানায় ডাবোল শিফ্ট চালু করে দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী করেছিলেন। আন্তর্জাতিক ভাবে দেশের ভাবমুর্তি উজ্বলতর ছিল ।জিয়াউর রহমানের সেই রাজনৈতিক দর্শন আজও এদেশের মানুষ সমর্থন করে। তাই দেশে যখনই অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে সকল নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিএনপির নিকট পরাজিত হয়েছে। বিএনপিকে রাজনৈনিক ভাবে মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হয়ে সরকার আজ গায়ের জোরে ষডযন্ত্রের পথ বেছে নিয়েছে। খেতাব বাতিলের এই সিন্ধান্ত তাদের রাজনৈতিক প্রতিহিংসারই বহিঃপ্রকাশ।
এই সিন্ধান্তের সাথে এ দেশের মানুষের অনুভব ও অনুভূতির কোন সম্পর্ক নেই। আওয়ামী লীগ মুখে গনতন্ত্রের কথা বললে ও গনতন্ত্র চর্চায় বিশ্বাসী নয়। তাই ক্ষমতায় অধিষ্টিত হয়ে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথ রুদ্ধ করে করেছে । শহীদ জিয়া যুদ্ধ করে যে খেতাব অর্জন করেছেন আজ সেটা একটি রাজনৈতিক ঘোষনা দিয়ে বাতিল করা সম্ভব নয়। ১৯৭১ সালে মানুষ মহান স্বাধীণতা যুদ্ধে এদেশের মানুষ অংশ নিয়েছিলেন দেশ মাতৃ কার ঠানে ।কোন খেতাব কিংবা পদক প্রাপ্তির জন্য নয় । জিয়াউর রহমান এদেশের মানুষের হৃদয়ে খোদাই করা একটি নাম ।কোন ষডযন্ত্র চক্রান্ত কিংবা খেতাব বাতিলের ঘোষনা দিয়ে এই নামকে বিতর্কিত করা যাবে না। আমার বিশ্বাস সরকার নিজেও জানে তাদের সিন্ধান্তে বিএনপি কিংবা জিয়াউর রহমানের কিছু যায় আসে না। দেশে দ্বিধা বিভক্তি ও প্রতিহিংসার রাজনীতি যেভাবে এগিয়ে চলছে তাতে বিএনপি বর্তমান সরকারের নিকট থেকে এমন স্বীকৃতি প্রত্যাশা ও করে না। কিন্তু রাজনৈতিক সচেতন মহলের ধারণা আওয়ামী লীগ যেভাবে হিংসার বিষবৃক্ষ রোপন করে যাচ্ছে তাতে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের রাজনীতি খুব খারাপ হতে পারে । কারণ ক্ষমতা চিরস্থায়ী নয়। সাদ্দাম হোসেন কিংবা কর্ণেল গাদ্দাফি কখনো ভাবেনি ক্ষমতার মসনদ থেকে একদিন তাদের কে সরে যেতে হবে ।তাই সময় থাকতে ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেওয়া প্রয়োজন। শহীদ জিয়াউর রহমানের পদক বাতিলের সিন্ধান্তে এই সরকার যদি শেষ পর্যন্ত অটল থাকে তাহলে এটা একদিন তাদের জন্যই কাল হবে ।
লেখক : কলাম লেখক ও সংগঠক ,নিউইয়র্ক ।
Posted ১১:৫৮ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh