ড. আশরাফ উদ্দিন আহমেদ | বৃহস্পতিবার, ২১ মার্চ ২০২৪
(তৃতীয় অংশ)
জেরুজালেম এবং দক্ষিণ ক্যানন ইহুদিদের বসবাসের ইতিহাস যিশু খ্রিস্টের জন্মের বহু পূর্বেকার। বাইবেল থেকে জানা যায় যে ইসরায়েল নামক জনপদটি উত্তরে সামারিয়া এবং দক্ষিণে জুদাহ নামে পরিচিত ছিল। ইসরায়েল রাজ্যটির হাত বদল হয়েছে বহুবার। অ্যাসিরীয় এবং বাবিলিয়ন সাম্রাজ্য যথাক্রমে ৭২২ এবং ৫৮৬ খ্রিষ্ট পূর্ব সালে ইসরায়েল দখল করে। এ সময় ইহুদিরা বিতাড়িত হয় ইসরায়েল থেকে। সাইরাস দি গ্রেট এর সময় তারা জেরুজালেমে ফিরে আসতে সমর্থ হয়। তখনই দ্বিতীয় টেম্পল নির্মাণ করা হয়। ৩৩২ খ্রিষ্টপূর্ব সালে মেসোডোনিয়ার বীর অ্যালেক্সজান্ডার দি গ্রেট জুদিয়া সহ পুরো অঞ্চল দখল করে নিলে ইহুদি সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভক্তি শুরু হয়। আসল ইহুদি যারা তারা হেলেনিক ইহুদিদের গ্রহণ করতে অসম্মতি জানালে জেরুজালেমে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। রোমান সাম্রাজ্যের সাথে সনাতন ইহুদিদের দীর্ঘদিন ব্যাপ্তির (৬৬-১৩৬ খ্রিস্টাব্দ) যুদ্ধের পরিণতিতে জুদিয়া রোমানদের করায়ত্তে এসে যায়। পরবর্তীতে বাইজেনটাইনদের দখলে আসে। এই দুই শাসনামলে ইহুদিদের উপর অমানুষিক অত্যাচার নেমে আসে। ক্রীতদাস হিসেবে অনেককে রোমানরা ব্যবহার করে; জোরপূর্বক প্রচুর সংখ্যক ইহুদিকে বিতারন করা হয় । ধর্মান্তরিত হতে বাধ্য করা হয়েছে অনেককেই।
ইতিহাসের এ সময়টি ইহুদিদের জন্য অত্যন্ত দুর্ভোগের ছিল। গ্যালিলি ব্যতিরেকে জেরুজালেম এবং সংলগ্ন আরব ও আফ্রিকান ইহুদি অধ্যুষিত জনপদগুলোতে মুসা নবীর উম্মতরা দ্রুত সংখ্যালঘু হয়ে যায়। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, হিটলারের হাতে ইহুদিরা যেভাবে অত্যাচারিত হয়েছিল রোমান ও বাইজেনটাইন শাসকদের হাতে ও কম নিগৃহীত হয়নি। এ ধর্মের লোকজন যেখানেই বসত স্থাপন করেছে সেখানেই কোন না কোন সময়ে অত্যাচারিত হয়েছে,বিতাড়িত হয়েছে । বুদ্ধিমান, হিসেবী , কৃচ্ছতার অবলম্বন করে জীবনযাপন, সঞ্চয় এবং লাভজনক বিনিয়োগ এদের রক্তে আছে বলেই এরা বার বার মার খেয়ে, ধাক্কা খেয়ে ও আবার দাঁড়াতে পেরেছে। সহনশীলতা,বিপদ-আপদে এবং প্রয়োজনে নিজেদের মধ্যে সম্প্রীতি সংস্থাপনে সিদ্ধহস্ত এ ধর্মের লোকজন শত বাঁধা বিপত্তির মুখে ও টিকে থেকেছে। প্যালেস্টাইন মুসলিম দখলে আসে ৬৩৮ খ্রিস্টাব্দে। এ সময় খ্রিস্টানদের অত্যাচার সত্ত্বে ও ইহুদিরা সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল। ইতিহাস সাক্ষী দেয় যে ,ইহুদি জনগোষ্ঠী আরব জনপদগুলোতে মুসলমানদের সাহায্য সহায়তা পেয়েছে, বিশেষত খ্রিস্টানদের অত্যাচার অনাচারের মুখে। আমাদের নবী করিম মদিনায় হিজরত করেছিলেন মূলত এই বিবেচনায় যে সেখানকার সংখ্যা গরিষ্ঠ ইহুদিরা মুসলমানদের প্রতি সহনশীল হবে। ১০৫২ সালে ক্রুসেড শুরু হলে মুসলমান ও ইহুদিরা একসাথে ক্রিস্টিয়ানদের বিরুদ্ধে লড়েছে। এখনো আরব ইহুদিরা গাজা এবং প্যালেস্টাইন ইস্যুতে মুসলমানদের প্রতি সহমর্মিতা পোষণ করে। ১৯৪৮ এর ১৪ই মে ইসরায়েল বিশ্বে একমাত্র জুইশস ষ্টেট। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ইহুদিদের প্রতি হিটলারের নির্মমতা, কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে গ্যাস প্রয়োগে অগণিত ইহুদি নিধন এসবের পরিপ্রেক্ষিতে ইহুদিদের জন্য একটি আলাদা রাষ্ট্র করা হবে এমন প্রতিশ্রুতি ছিল আমেরিকা এবং ইউরোপের মিত্র শক্তির। ইহুদি ধনকুবেররা মিত্র শক্তিকে সম্পদ দিয়ে সাহায্য করে প্রতিশ্রুতি আদায় করেছিল এ মর্মে যে যুদ্ধশেষে ইহুদিদের জন্য আলাদা ভূখণ্ড সৃষ্টি করা হবে। ইহুদি ধনকুবের রথচাইল্ড এই একটি শর্তে উদার হস্তে টাকা-পয়সা মিত্র পক্ষকে দান করেন। ইংল্যান্ড এবং ফ্রান্স থেকে ইহুদি বিতারনেরঐতিহাসিক সত্য এবং হিটলারের দান্ডবীয় কর্মকাণ্ড ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পেছনে কাজ করেছে সন্দেহাতীত ভাবে। রাষ্ট্রটি প্রতিষ্ঠিত ইউরোপের ইহুদি জনগোষ্ঠী বা জিউস ইসরায়েলে বসতি স্থাপন করে। জেরুজালেম আবার ও ইহুদিদের চারণভূমিতে পরিণত হয়। প্রাক্তণ প্রেসিডেন্ট আমেরিকার দূতাবাস জেরুজালেমে সরিয়ে নিলে আর বেশ কয়েকটি দেশ ও তাই করে । বর্তমানে ইসরায়েল-হামাস দন্ধ ও যুদ্ধে আমেরিকা ও ইংল্যান্ড এবং তাদের কিছু মিত্র দেশের যে ভূমিকা তা প্রশ্নবিদ্ধ কারণ ইতোমধ্যেই প্রায় পঁয়ত্রিশ হাজার প্যালেস্তানিয়ান প্রাণ হারিয়েছে । ইসরায়েলি ও সংখ্যায় অনেক কম হলেও ইসরায়েলের লোকজন ও মারা যাচ্ছে । এ যুদ্ধ, বিভেদের সম্মানজনক এবং আশু সমাপ্তি হোক বিশ্বের শান্তিকামী মানুষ তাই কামনা করে । আমেরিকায় শুরুতে ইহুদিদের সামাজিক অবস্থান কৃষ্ণাঙ্গ ক্রীতদাসদের চেয়ে সামান্য পরিমাণে ভাল ছিল সত্য তবে অষ্টাদশ এবং উনবিংশ শতাব্দিতে এদের সামাজিক অবস্থান ভিন্ন ছিল এবং এতোই নীচুতে ছিল যে বেশীর ভাগ শ্বেতাঙ্গ পরিবার এদের সাথেএক টেবিলে বসে খাওয়া দাওয়া করতো না যদিও হিসাব রক্ষণে পরিপক্ব বিধায় এবং বিশ্বস্ততার জন্য বড় বড় এস্টেটের সুপারভাইজর এবং হিসাবরক্ষক নিয়োগে ইহুদিরাই অগ্রাধিকার পেত।
Posted ৯:৪৪ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২১ মার্চ ২০২৪
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh