ড. আশরাফ উদ্দিন আহমেদ | বৃহস্পতিবার, ১৩ জুলাই ২০২৩
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের কুপ্রভাবের দুশ্চিন্তায় অভিবাবক মাত্রই আক্রান্ত। বিশেষত, যাদের ছেলে-মেয়ে, নাতি-নাতনি কিশোর এবং তরুণ সেইসব অভিভাবকদের ভাবনা অষ্টপ্রহর। দুর্ভাবনা এদের মন-মানিসকতাকে চরমভাবে বিষাদময় করে রাখছে অহর্নিশি। কিশোর-কিশোরী এবং তরুণ-তরুণীদের মধ্যে বিগত কয়েক বছর যাবত ডিপ্রেশন, দুশ্চিন্তা এবং আত্মহত্যা প্রবণতা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে গেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অপব্যবহারকে অনেকেই এজন্য দায়ী করেন । অবশ্য একথা ও ঠিক যে ইন্টারনেট, ফেইসবুক, ওয়েবসাইট, ইউটিউব এসবের পরিমিত এবং নিরাপদ ব্যবহারের উপকারিতা ও প্রচুর । সবকিছু ছাড়িয়ে সোশাল মিডিয়ার যথেচ্ছ ব্যবহারের কুফল নিয়েই আমাদের এ ছোট্ট অবয়বের নিবন্ধ ।
পরিবার, সমাজ এবং দেশের জন্য বিষয়টি যে চিন্তার বিষয় সে সম্পর্কে কম বেশি সবাই জানে তবে এ নিয়ে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে প্রথম সতর্ক বার্তা জনসমক্ষে তুলে ধরেছেন আমেরিকার সার্জন জেনারেল বিবেক মূর্তি (Vivek Murthi)। তাও প্রায় বছর দেড়েক হয়ে গেলো । সম্প্রতি তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম দেশে যুব সম্প্রদায়ের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার যে প্রধান বাহন সে সম্পর্কে সতর্কীকরণ বার্তা ও এডভারজরি উচ্চারণ করেছেন। জন স্বাস্থ্য সম্পর্কিত হুশিয়ারি সমেত এডভাইজরি ঘোষণা সার্জন জেনারেল তখনই করেন যখন তিনি নিশ্চিত হন যে কোন স্বাস্থ্য সমস্যা সচরাচর যে সব সমাধান প্রচলিত আছে সে সব ব্যাবহারে ঠেকানো বা দমিয়ে রাখা সম্ভব হয় না । জরুরী অবস্থা ঘোষণা করে মেডিক্যাল পেশাজীবী ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট পলিসি প্রণেতা ও বাস্তবায়নের সাথে জড়িত সবাইকে বিশেষ অবস্থার পরিপ্রেক্ষইতে নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার দায়িত্ব অর্পণ করা হয় ।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিনোদনমূলক প্রোগ্রামগুলো সাম্প্রতিক সময়ে অশুভ প্রতিযোগিতার কারণে অপ্রাপ্তবয়স্কদের কাছে আকর্ষণীয় করার বিশেষ ধরনের ছবি সহ তথ্য ও বার্তা উপস্থাপন করা হয় যা তাদের চুম্বকের মত টানে । এর ভয়াবহ প্রতিক্রিয়া মানসিক স্বাস্থ্যে বৈকল্য অবস্থার জন্ম দেয়। স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় জড়িত পেশাজীবী যারা, বিশেষত মানসিক স্বাস্থ্য সেবা যাদের প্রধান কাজ সেইসব বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে অবহিততকরণ সহ যথাযথ কার্যক্রম ও ব্যবস্থা জরুরী ভিত্তিতে বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করাই এডভাইজরি ঘোষণার মূল উদ্দেশ্য।
বলাবাহুল্য, সংশ্লিষ্ট সবাইকে সতর্ক এবং সমস্যাটির স্বরূপ জন সমক্ষে তুলে ধরা এডভাইজরি কতৃপক্ষের দায়িত্ব। প্রতিরোধ ও প্রতিকার নিয়ে পরামর্শ দেয়া ও অবশ্যই দায়িত্বের মধ্যে পরে। গত মে মাসে এডভাইজরি রিপোর্ট প্রকাশিত হলে জানা যায় যে আমেরিকার প্রায় প্রতিটি টিনএজার বলেছে যে তারা সামাজিক যোগাযোগ প্লাটফরম প্রতিদিনই ব্যবহার করে । প্রতি তিনজনে একজন একই প্লাটফরম সবসময় ব্যবহার করে । কমবয়সী ছেলে মেয়েরা অনলাইনে ও সক্রিয় । তের বছর না হওয়া পর্যন্ত বেশীর ভাগ সামাজিক মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করার ব্যাপারে বিধিনিষেধ থাকলেও ৮ থেকে ১২ বছর বয়সের প্রায় ৪০% জানিয়েছে যে তারা সোশ্যাল মিডিয়া নিয়মিত ব্যবহার করে থাকে । যৌনতা, মারদাঙ্গা, হেয় প্রতিপন্ন এবং নাজেহাল করার অপকৌশলসমূহ এসব যোগাযোগ মাধ্যমে প্রাধান্য পায়। নেশাগ্রস্ত হয়ে ছেলে মেয়েরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এত বেশী সময় ব্যয় করে যে এতে তাদের পড়াশুনা, নিদ্রা, বিশ্রাম, এমনকি পরিবারিক পরিবেশে বিনোদন, খাওয়াদাওয়া এসবেরও চরম ব্যাঘাত ঘটে । পরিণতি নিয়ে বিবেক মূর্তি বলেন, We are in the middle of a national youth mental health crisis, and I am concerned that social media is an important driver of hat crisis-one that we must urgently address.
সমাজে বিরাজমান সুন্দর এবং উচ্চাঙ্গের মুল্যবোধসমুহের উপর অবাঞ্ছিত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যে আঘাত হানছে প্রতিনিয়ত, তা থেকে পরিত্রাণ দারুণ চ্যালেঞ্জিং, অত্যন্ত কঠিন ব্যাপার। সোশাল মিডিয়া জগতে অশুভ দেশজ এবং আন্তঃদেশীয় প্রতিযোগিতা থেকে উত্তরণ প্রায় অসম্ভব। তবে, মেডিকেল প্রফেশনাল, বিশেষত পারিবারিক ডাক্তার, মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ এবং পিতামাতা, ভাই-বোন, অভিবাবক, শিক্ষক ও স্কুল কতৃপক্ষসহ সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এ ক্রাইসিসকে সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আশা সম্ভব। সমস্যাটি নিয়ে নিরন্তর গবেষণা কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া ও প্রয়োজন। সাথে সাথে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নিয়ে যারা ব্যবসা করেন তাদের নিয়ন্ত্রণ ও দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করা লক্ষ্যে আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক ব্যবস্থার প্রবর্তন জরুরী।
(লেখাটি সম্পপ্ন করতে Jennifer Abbasi, Surgeon General Sounds the Alarm on Social Media Use and Youth Mental Health Crisis, Journal of the American Medical Association, Vol. 330, Number 1, p.11-12 থেকে উদার সহায়তা নেয়া হয়েছে)।
Posted ১০:১৭ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৩ জুলাই ২০২৩
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh