ড. আশরাফ উদ্দিন আহমেদ | বৃহস্পতিবার, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩
মধ্যযুগে ক্রুসেডকে কেন্দ্র করে যে দুটো খ্রিষ্টীয় প্রতিষ্ঠানের জন্ম ও বিকাশ তার একটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল মানুষকে সেবা প্রদানের উদ্দেশ্যে। অন্যটি, নাইট টেম্পলার ছিল একটি নির্ভীক সন্ন্যাসী যোদ্ধা সংগঠন (Monk-Warriors), যার সুদৃঢ় শপথে বলীয়ান সদস্যগণ জেরুজালেম তীর্থযাত্রায় পথে পথে খ্রিস্টানদের রক্ষা করার জীবন-মরণ ব্রত নিয়েছিল। প্রথম ক্রুসেডের পর মাত্র নয় জন অত্যন্ত নিষ্ঠাবান ধর্মভীরু খ্রিস্টান সারাজীবন সংসার ধর্ম বিসর্জন দিয়ে, সকল প্রকার আনন্দ-বিনোদন পরিহার করে যিশুর ক্রসধারীদের রক্ষা করার দায়িত্ব স্বেচ্ছায় নিয়েছিল এ গুরু দায়িত্ব ।
ধর্ম যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে মধ্যপ্রাচ্যের মরুদেশে যাযাবর বেদুইন এবং এক শ্রেণীর বর্বর আরব জেরুজালেম ভ্রমণের পথে তীর্থযাত্রীদের সর্বস্ব লুটপাট করাকে সাধারণ এবং সহজ কাজ মনে করত। তীর্থ যাত্রীদের পাহারা দিয়ে জেরুজালেমে পৌঁছে দেয়াকে নাইট টেম্পলাররা পবিত্র দায়িত্ব মনে করত। তাদের এ কাজে পোপের জোরালো সমর্থন ছিল। এ কারণে কোন খ্রিস্টান তাদের বিরুদ্ধাচরণ করতে সাহসী হত না। এ অবস্থা বিরাজিত ছিল প্রায় দু’শো বছর। তবে, নোংরা রাজনীতি, অর্থ লিপ্সা এসব কারণে আত্মকলহে লিপ্ত ছোট বড় খ্রিস্টান শাসকরা প্রায় বিশ হাজার নাইট টেম্পলার বাহিনী বলতে গেলে রাতারাতি ধ্বংসের প্রান্তে নিয়ে যায়। ফ্রান্সের রাজা ফিলিপ দি ফেয়ারার এ ধ্বংস যজ্ঞের প্রধান হোতা ছিলেন। সে এক দীর্ঘ কাহিনী, যা পরে কোন এক সময় বিধৃত করার ইচ্ছে রইলো। নাইট হসপিটালার প্রসঙ্গে ফিরে যাই।
‘নাইট হসপিটালার’ বা ‘দি অর্ডার অব নাইটস অব দি হসপিটাল অব সেন্ট জন অব জেরুজালেম’ (The Order of Knights of the Hospital of Saint John of Jerusalem) দ্বাদশ শতাব্দীতে বেনেডিকটাইন সন্ন্যাসীদেরদের শাখা (Benedictine Monastic Order) হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। মতান্তরে, একাদশ শতাব্দীর শুরুর দিকে ইতালির এমালফি’র (Amalfi) বণিকরা জন দ্য ব্যাপ্টিস্ট এর উদ্দেশ্যে উৎসর্গকৃৎ একটি হাসপাতাল জেরুজালেম নগরীতে স্থাপন করে। এখানে দরিদ্র, অসুস্থ এবং আহত খ্রিস্টান তীর্থযাত্রীদের চিকিৎসা এবং সেবাযত্নসহ সাহায্য সহায়তা প্রদান করা হত। অনুসারীদের মধ্যে শুরুতেই বিভক্তি দেখা দেয়।
প্রথম ক্রুসেডে জয়লাভের অব্যবহিত পড়ে ১০৯৯ সালে জেরারড (Blessed Gerard) এর অনুসারী এবং এমালফিটান বণিকদের হাসপাতালকে ভিন্ন ভিন্ন প্রতিষ্ঠান হিসেবে অনেকের কাছে পরিচিতি পায়। সেবাধর্ম জিইয়ে রেখে রোমান ক্যাথলিক চার্চের অনুশাসনে হসপিটালার সংগঠনটি জেরুজালেম নগরী এবং পরবর্তীতে মধ্যপ্রাচ্যের খ্রিস্টান-মুসলিম শক্তির যুদ্ধে সরাসরি জড়িয়ে পড়ে।
খ্রিস্টান জনপদ এবং দুর্গগুলোর মধ্যেকার অন্তকলহ,লড়াই এ সবে জড়িয়ে পরে। ইতালির দুটো নগর রাষ্ট্র-ভেনিস এবং জেনোয়া’র মধ্যে আধিপত্য নিয়ে বাণিজ্য যুদ্ধে সরাসরি জড়িয়ে পরে। ১২৯১ পরবর্তী সময়ে ক্যাথলিক মিলিটারি অর্ডার হিসেবে পোপের সনদের ভিত্তিতে যে পরিচিতি এবং কার্যকলাপ মূলত সে কারণে দ্বিতীয় ক্রুসেডে মুসলমানরা জয়লাভ করলে সাইপ্রাস (১৩০২-১৩১০), রোডস আইল্যান্ড (১৩১০-১৫২২), মালটা (১৫৩০- ১৭৯৮) এবং সেন্ট পিটার্সবার্গ (Saint Petersburg– 1799-1801)।
ক্রুসেড সহ ‘দি রিলিজন’ (ঞযব জবষরমরড়হ) নামে ও পরিচিত এ ধর্ম, সেবা ও লড়াকু আবরণে পরিচিত দলটি আবার উপনিবেশ স্থাপনে ও কম আগুয়ান হয়নি । সতেরশ শতাব্দীর মধ্যভাগে ক্যরাবিয়ান আইল্যান্ডে চারটি জনপদ দখল করেছিল । ১৬৬০’র শেষের দিকে ফ্রান্সকে এগুলো হস্তান্তর করে ।
প্রটেস্টান্ট রিফরমের সময় নাইট হসপিঁটালার সংগঠনটি বড়ো ধরনের বিভক্তির সম্মুখীন হয়। জার্মানির উত্তরাঞ্চল এবং নেদারল্যান্ডসের আর্থিকভাবে স্বচ্ছল সদস্যগণ ক্যাথলিকদের মূল আদর্শ ছেড়ে প্রটেস্টান্টদের দল ভারী করে। ইংল্যান্ড, ডেনমার্ক এবং ইউরোপের উত্তরাঞ্চলে হসপিঁটালার-পন্থীদের জন্মের শুরু থেকেই অবদমিত রাখা হয়েছিল। নেপোলিয়ান ১৭৯৮ খ্রিস্টাব্দে মাল্টা পুনরুদ্ধার করলে এরা শেকড় থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ইউরোপে বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে। তবে একেবারে স্পন্দনহীন হয়ে যায়নি কখনো ।
সূত্র : en.m.wikipedia;John j. Robinson, Dungeon, Fire, and Sword- the knights templar in the crusades; Barnes & Nobles, New York, 199
Posted ১:৫৬ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh