মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪ | ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

Weekly Bangladesh নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত
নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত

বাঙালি ঐতিহ্যে পহেলা বৈশাখ

ড. আশরাফ উদ্দিন আহমেদ   |   বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪

বাঙালি ঐতিহ্যে পহেলা বৈশাখ

সংস্কৃতি মূলত মানুষ ও প্রকৃতি -এ দু’য়ের যোগবন্ধন-প্রসুত। তবে, মিথ, ধর্ম, ভৌগলিক অবস্থান ও বৈচিত্র ও সংস্কৃতিকে প্রভাবিত করে। এসবের প্রভাব মানুষের বিশ্বাস, রীতি-নীতি, মূল্যবোধ, স্তব-স্তুতি ইত্যাদিতে অহরহ দেখা যায়। এতোসব ভিন্নতার মধ্যে ও উৎসব পালনের আচার-অনুষ্ঠানের মধ্যে সার্বজনীনতা লক্ষ্য করা যায় । ইন্দো-ইউরোপিয়ান এবং ইন্দো-ইরানিয়ান প্রভাব আমাদের সংস্কৃতিতে প্রবল ভাবে প্রোথিত রয়েছে বলে অনেক পন্ডিত মনে করেন।

প্যাগানীয়, আর্য, অনার্য বিশ্বাস এবং রিচুয়ালস্ বা আনুষ্ঠানিকতা ও শেকড় গেড়েছে ওতপ্রোত ভাবে। দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে, কিছুটা সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় ভিন্নতা আছে সত্যি, তাও বৈশাখী উৎসব উদযাপনের সর্বজনীনতা লক্ষ্যণীয়। ভারতে শিখ জনগোষ্ঠি জাঁকজমকের সাথে বৈশাখি ও বসন্ত উৎসব একসাথে পালন করে। উত্তর ভারতের প্রতিটি প্রদেশে নাচে গানে এ দিবসটি পালন করা হয়। রাজস্থান, হরিয়ানা, পাঞ্জাব, দিল্লী ইত্যাদি স্থানে বৈশাখী উৎসব দারুন মনমাতানো রূপে উদযাপিত হয়। আমাদের প্রতিবেশী বেশ কয়েকটি দেশে, ভারত, ভূটান, নেপাল, বার্মা, এমনকি ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া ও শ্রীলঙ্কায় ও নববর্ষ একই দিনে পালিত হয়। শস্য সংস্কৃতিতে মিল থাকার কারণেই বোধ করি এমনটি হয়েছে।


নববর্ষ আমাদের সংস্কৃতিতে বৈশাখি উৎসব আর তা পালনের মূল যোগসূত্র ফসল তোলার আনন্দের বলিষ্ঠ প্রতিসরণে। ১৫৮৪ সালে সম্ম্রাট আকবরের প্রবর্তিত এ উৎসবকে ফসলি উৎসব বলা হতো। রাজ জোতিষী আমির ফতেহউল্লাহ সিরাজীর অক্লান্ত পরিশ্রম ও মেধা এমন একটি অনবদ্য সৌর পঞ্জিকা নির্ভর পঞ্জিকা তৈরী সফল করে তোলে। সম্রাট আকবর একে ফসলি সন/পঞ্জিকা বলে অভিহিত করেন। বাংলাপিডিয়া এ ব্যাপারে উল্লেখ করেছে যে, ‘কৃষিকাজের সুবিধার্থেই মুগল সম্রাট আকবর বাংলা সন প্রবর্তন করেন ফসলি বা বৈশাখী পঞ্জিকা নামে পরিচিতি পায় এবং একে ঘিরে যে ফসলি উৎসব তাকে বৈশাখি উৎসব নামে অভিহিত করা হয় ।

চৈত্র সংক্রান্তি শেষে বসন্তের আমেজ তখনো বিদ্যমান এমন সময়ে বৈশাখি উৎসব। ফসল তোলার সাথে হালখাতা খোলার ঐতিহ্যের সমন্বয়, খাজনা প্রদান বিষয় এ দুটো ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বাদশাহ আকবর বুদ্ধিমত্তার সাথে ফসলি সন ধারণা এদেশে প্রচলন করেছেন যাতে ফসল তোলা, রাজস্ব আদায় উৎসবমুখর পরিবেশে সম্পন্ন হয়। জমিদাররা বৈশাখি উৎসব পালনে সহায়তা করতো একই মনস্তত্ত্ব থেকে। খাজনা আদায়ের এ এক দারুণ কৌশল ছিল। চৈত্র সংক্রান্তি উৎসবের পর পরই পহেলা বৈশাখ বরণ করে বৈশাখি উৎসব।


চৈত্র সংক্রান্তিতে দেহ পরিশুদ্ধির জন্য তিতা শাক, নিমপাতা শাক ইত্যাদি খাওয়া হতো। পরের দিন বৈশাখি উৎসব যা ছোটবেলায় আমাদের কাছে বৈশাখি মেলা বা বান্নির নামান্তর ছিল (বান্নি শব্দটি হবিগঞ্জ অঞ্চলে এখনো প্রচলিত)।

ফসল উঠেছে, হরেক রকমের পিঠা খাওয়ার ধুম, আবার বৈশাখি ঝড়ে আম কুড়ানোর আনন্দ এতসবের মধ্যে বৈশাখি মেলা মানে ছেলে-মেয়েদের নতুন কাপড়, খেলার জন্য পুতুল, হাঁড়ি-পাতিল, বিনোদনের জন্য চড়কিতে উঠা, হরেক রকম খেলা-ধুলা, কদমা, মিষ্টি-মন্ডা, মুডি-মুডকি, নাড়ু ইত্যাদি ছিল প্রধান আকর্ষণ। বট বা পাকুড় গাছের নীচে বসত বৈশাখি মেলা এমনটিই দেখেছি। পান্তা ভাত, ইলিশ ভাজা ইত্যাদি খাওয়ার বিষয়টি এ উৎসবে পরবর্তীতে যোগ হয়েছে। বৈশাখি উৎসব নিয়ে রাজনৈতিক এবং ধর্মীয় বিসম্বাদ আমাদের ছোট বেলায় দেখিনি। হিন্দু-মুসলমান একসাথে মেলায় যোগদান করত।


মেলার যে একটা অলিখিত পশ্চাদভূমি বা হিন্টারল্যান্ড ছিল সেখানকার কামার, কুমোর, সুত্রধর এরাই বিভিন্ন প্রয়োজনীয় কৃষি যন্ত্রপাতি তৈরী করে বিক্রি করত। কাঠ, বাঁশ ও বেতের তৈরী বিভিন্ন সরঞ্জামাদি যেমন মাছ ধরার পলো, জাল ইত্যাদি এবং ছেলে-মেয়েদের চিত্তবিনোদন সামগ্রী ও স্থানীয়ভাবে পেশার নিরিখে যারা কুটির শিল্পে নিয়োজিত ছিলো এদের দ্বারাই প্রস্তুত হতো।

রং বেরংয়ের চুড়ি, পুঁতির মালা, বাঁশী এসব ও ছোট ছেলে-মেয়েদের খুব আকর্ষণ করত। মনে আছে, মেলার আগের দিন রঘুনন্দন পাহাড় থেকে কাঁটাভর্তি বন বরই গাছ থেকে এ বিশেষ ফলটি সংগ্রহ করে আনতাম বৈশাখি বান্নি বা মেলায় বেঁচার জন্য। ছোট বোনদের সখের কাঠের পুতুল, মালা, হাতের চুড়ি এ সব কেনার জন্য। বোনরা খুব খুশী হতো। বড় ভাই বাডী থাকলে এক দুআনা পয়সা দিতেন তা দিয়ে পুতুল নাচ দেখা হয়ে যেত।

পহেলা বৈশাখ বা বাংলা নববর্ষ উদযাপনের যে ঐতিহ্য তা হঠাৎ করে আসেনি। মোগল আমলে প্রচলিত হওয়া শষ্য পঞ্জিকা কেন্দ্র করে ট্যাক্স আদায়ের সর্বতোকৃষ্ট সময় নির্দিষ্ট করার রেওয়াজকে বৈশাখি বা নবান্ন উৎসব বলা হতো। মুলত সম্রাট আকবর এর প্রবর্তন করেন সত্যি তবে সপ্তম শতাব্দীতে রাজা শশাঙ্ক বঙ্গাব্দ সন প্রচলন করলে শষ্য পঞ্জিকা আনুষ্ঠানিক রূপ নেয় বলে ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়। বৈশাখী উৎসবকে ধর্মীয় দৃষ্টকোণ থেকে দেখার তেমন কোন যৌক্তিকতা আছে বলে আমি মনে করিনা । যেটুকু সার্বজনীনতা আছে তা লোকজ বিশ্বাস ও কৃষ্টি-সংস্কৃতির বিবর্তন ও পরিবর্তনের প্রভাবে সময়ের যোগ-বিয়োগে বাঙ্গালীর প্রাণের উৎসব হয়ে গেছে ।

advertisement

Posted ৩:৪৭ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪

Weekly Bangladesh |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

গল্প : দুই বোন
গল্প : দুই বোন

(6316 বার পঠিত)

স্মরণে যাতনা
স্মরণে যাতনা

(1312 বার পঠিত)

মানব পাচার কেন
মানব পাচার কেন

(1154 বার পঠিত)

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১
১২১৩১৪১৫১৬১৭১৮
১৯২০২১২২২৩২৪২৫
২৬২৭২৮২৯৩০৩১  
Dr. Mohammed Wazed A Khan, President & Editor
Anwar Hossain Manju, Advisor, Editorial Board
Corporate Office

85-59 168 Street, Jamaica, NY 11432

Tel: 718-523-6299 Fax: 718-206-2579

E-mail: [email protected]

Web: weeklybangladeshusa.com

Facebook: fb/weeklybangladeshusa.com

Mohammed Dinaj Khan,
Vice President
Florida Office

1610 NW 3rd Street
Deerfield Beach, FL 33442

Jackson Heights Office

37-55, 72 Street, Jackson Heights, NY 11372, Tel: 718-255-1158

Published by News Bangladesh Inc.