ড. আশরাফ উদ্দিন আহমেদ | বৃহস্পতিবার, ১২ নভেম্বর ২০২০
বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী , ধনী এবং সম্পদশালী রাষ্ট্রটিতে নির্বাচন শেষ হয়ে ও হয়নি । জো বাইডেন ও কামালা হারিস জুটি জনপ্রিয় ভোটে বিপুল সংখ্যাধিক্যে জিতলেও, ইলেকটোরাল ভোটে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ভোটের অধিক পেয়ে এগিয়ে থাকলে ও প্রেসিডেন্ট ট্র্যাম্প এ ফলাফল মেনে নেননি । আইনী লড়াইয়ে নেমেছেন বিভিন্ন অজুহাতে। তেমন কোন প্রমাণাদি হাজির করতে না পারায় কয়েকটি রাজ্যে কোর্টে পরাজিত হয়ে ও দমেননি, একের পর এক কেস করেই যাচ্ছেন তাঁর আইনজীরা । সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গড়িয়েছে এই আইনী লড়াই। এদিকে, কয়েকটি রাজ্যে ভোট গণনা এখনো চলছে , আপত্তির কারণে পুনগণনা ও হচ্ছে । এ দেশে গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের এমনই মাজেজা যে ভোট প্রদান ও গণনায় অসঙ্গতি বা কারচুপি হয়েছে এমনতরো আপত্তি যে কেউ উত্তাপন করলে, সে ইলেকশন অফিসিয়াল বা কোর্টে, অর্থাৎ যে কোন আইনুনাগ প্রতিষ্ঠানের নিকটেই হোক না কেন, অভিযোগ নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সে কেন্দ্র / কেন্দ্রগুলোর ফলাফল চূড়ান্ত করা হবেনা । আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান দলমত নির্বিশেষে সকলের মধ্যেই লক্ষ্য করা যায় । ব্যতিক্রম যে নেই তা নয় তবে আইন ও আইন প্রতিষ্ঠান মেনে চলাই প্রতিষ্ঠিত সত্য । গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের এমন সুপ্রতিষ্ঠা বাংলাদেশে বড়ো প্রয়োজন ।
পেশীশক্তি প্রদর্শন করে ভোটারদের ভয়ভীতি দেখিয়ে ভোটে আদায়ের অপচেষ্টা এদেশে ও আছে । অবশ্য, বাংলাদেশের মতো ভোট কেন্দ্র দলের দখলে নিয়ে ইচ্ছেমতো সিলমারার অপসংস্কৃতি যুক্তরাষ্ট্রে দেখিনি বা শুনিনি । স্থানীয় পর্যায়ে আমলা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ক্ষমতাসীন দলের পক্ষে ইলেকশনে ব্যবহারের নজির এ দেশে লক্ষ্য করিনি তেমন একটা। রাজনৈতিক ভাবে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের কথা আলাদা। তাদের নিয়োগ দেয়া হয় দলের হয়ে নিতীমালা প্রণয়ন যা ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট ও তার দলের এজেন্ডা বাস্তবায়নে সহায়ক হবে তেমন কাজে সহায়তা করা । প্রেসিডেন্ট ট্র্যাম্প এক্ষেত্রে নির্লজ্জ ভাবে তাদের যথেচ্ছ ব্যবহার করে শত বছরের গড়ে ওঠা ঐতিহ্য এবং পরীক্ষিত প্রথা, রীতিনীতির বিরুদ্ধাচরন করে খারাপ নজিরের সৃষ্টি করে চলেছেন হরদম। তবে , শাসনতন্ত্র, আইনের শাসন , কংগ্রেস ও স্থানীয় সরকারের বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রণীত ও অনুমোদিত নিয়ম নীতির আলোকেই শেষতক সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে – বিষয়ে সবাই আশাবাদী ।
দায়বদ্ধতা ও দায়িত্ব শেয়ারিং ব্যবস্থা যুক্তরাষ্ট্রের গঠনতন্ত্রে এবং বিল অফ রাইটসে/ এমেন্ডমেনটগুলোতে স্পষ্টভাবে বিধৃত আছে । প্রয়োজনে এ সব বিধিমালার ব্যাখ্যা প্রদানে/ ইন্টারপ্রিটেশনে বিচার বিভাগ ও কোর্ট সিস্টেম যে নিরপেক্ষতা প্রদর্শনের নজির স্থাপন করেছে যুগে যুগে করে তা প্রশংসনীয় এবং অনুকরণীয়। প্রেসিডেন্ট ট্র্যাম্প দলীয়করণের চেষ্টা নিয়ে ও সুবিধা করতে পারবেন এমন মনে করতে ও সচেতন মানুষদের কষ্ট লাগে। তার পছন্দ করা বিচারকগণ (নয় জনের মধ্যে তিন জন) সুপ্রিম কোর্টে সমাসীন হয়ে দলীয় সুবিধা প্রদানের জন্য পক্ষপাতিত্ত্বমূলক রায় দিয়েছেন এমনটি এখনো লক্ষ্য করা যায়নি, অন্তত নির্বাচন ইস্যুতে । এ ক্ষেত্রে ও বাংলদেশের জন্য শিক্ষণীয় অনেক কিছু আছে।
তবে, এটর্নি জেনারেল বার প্রেসিডেন্ট ট্র্যাম্পের কাছ থেকে প্রচণ্ড চাপের মুখে আছেন । পক্ষপাতদুষ্ট সিদ্ধান্ত নিলে ও আইন , নিয়ম কানুন ও প্রাতিষ্ঠানিক যাচাই- বাছাইয়ে অগণতান্ত্রিক কোন সিদ্ধান্ত জনতার রায়ে টিকবে না । স্টেট লেজিসলেচার এবং পরবর্তীতে সেক্রেটারি অব স্টেট স্বীকৃত ক্যালেন্ডার ও রাজ্যে প্রাপ্ত জনপ্রিয় ভোটের সংখ্যার উপর নির্ভর করে যে সিদ্ধান্ত দেয়া তাই তাই ফলাফলকে চূড়ান্ত পরিণতিতে নিয়ে যাবে । নিরেপেক্ষ পর্যালোচনায় এমনটিই মনে হয়।
জো বাইডেন প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নিয়ে প্রথমতই করোনা ভাইরাস প্যান্ডেমিক নিয়ে কাজ করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন । অভিজ্ঞ এক্সপার্টদের সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী কমিটি ও ঘোষণা করেছেন। তবে, প্রেসিডেন্ট ট্র্যাম্প ইলেকশনের ফলাফল মেনে না নেওয়ায় যে অচলাবস্থা ও অস্থিরতা তার পরিসমাপ্তির পূর্বে এ ব্যাপারে কোন অগ্রগতি আশা করা যায়না। এমনটি জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে, এফোরডেবল কেয়ার বা ওবামাকেয়ার এর ক্ষেত্রে ও সত্য। শেষোক্ত বিষয়টি নিয়ে এ মুহূর্তে সুপ্রিম কোর্টে পর্যালোচনা চলছে। সারা দেশ ও বিশ্ব সুপ্রিম কোর্টের রায় শোনার অপেক্ষায়। তবে, এ ক্রান্তিলগ্নে শুনানি পেছানো হতে পারে এমন সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায়না । বিভক্ত দেশ, বিভক্ত আনুগত্য এ দেশকে যে পর্যায়ে নিয়ে গেছে এমন পরিস্হিতিতে আপামর জনসাধারণ এখন অন্যান্য ইস্যুর চেয়ে ইলেকশনের চূড়ান্ত ফলাফল দেখার জন্য উৎকণ্ঠার সাথে অধীর অপেক্ষায় বসে আছে ।
Posted ১০:৪৮ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১২ নভেম্বর ২০২০
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh