সেতারা কবির সেতু | বৃহস্পতিবার, ২২ এপ্রিল ২০২১
২৩ এপ্রিল বিশ্ব বই দিবস। জাতিসংঘের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইউনেস্কোর উদ্যোগে ১৯৯৫ সাল থেকে প্রতিবছর এই দিবসটি পালন করা হয়। বিশ্ব বই দিবসের মূল ধারণাটি আসে স্পেনের লেখক ভিসেন্ত ক্লাভেল আন্দ্রেসের কাছ থেকে। ১৬১৬ সালের ২৩ এপ্রিল মারা যান স্পেনের আরেক বিখ্যাত লেখক মিগেল দে থের্ভান্তেস। আন্দ্রেস ছিলেন তার ভাবশিষ্য। নিজের প্রিয় লেখককে স্মরণীয় করে রাখতেই ১৯২৩ সালের ২৩ এপ্রিল থেকে আন্দ্রেস স্পেনে পালন করা শুরু করেন বিশ্ব বই দিবস।
এরপর ১৯৯৫ সালে ইউনেস্কো দিনটিকে বিশ্ব বই দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয় এবং পালন করতে শুরু করে। সে থেকেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রতিবছর ২৩ এপ্রিল বিশ্ব বই দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। উল্লেখ্য, ২৩ এপ্রিল শুধু বিশ্ব বই দিবসই নয়, শেক্সপিয়র, সত্যজিৎ রায়, ইনকা গার্সিলাসো ডে লা ভেগাসহ প্রমুখ খ্যাতিমান সাহিত্যিকদের জন্ম ও প্রয়ান দিবসও। আর তাই ২৩ এপ্রিলকে বিশ্ব বই দিবস হিসেবে পালনের এটিও অন্যতম একটি কারণ বলে মনে করেন অনেকেই।
হুমায়ূন আহমেদ তাঁর “বলপয়েন্ট ” বইটিতে বলেছেন:
“পৃথিবীতে কিছু ব্যাধি আছে যার ঔষুধ নেই যেমন ক্যানসার, পাঠব্যাধি। পাঠব্যাধিতে আক্রান্তজনকে কিছু না কিছু পড়তেই হবে। পড়ার কিছু না থাকলে মনে হবে, মরে যাই। অতি অল্প বয়সে আমি এমন এক দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হলাম।প্রচণ্ড পড়ার ক্ষুধা।”
তথ্য জানা বা আনন্দ লাভ করা পাঠের উদ্দেশ্য তবে একমাত্র উদ্দেশ্য নয় বা শ্রেষ্ঠ উদ্দেশ্য নয়। নিজেকে জানা,স্বাধীন বিচার বুদ্ধির অধিকারী হওয়া এবং সে অনুযায়ী বিচার করা পাঠের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ উদ্দেশ্য। আমরা যখন নিজেকে জানার পাঠ গ্রহন করতে পারি এবং স্বাধীনভাবে নিজের বুদ্ধি বিবেচনা প্রয়োগ করতে পারি তখনই সত্যিকারের পাঠক হয়ে উঠি,স্বাধীন ও সবল পাঠক হয়ে উঠি।
প্রাথমিক স্তরে বা পাঠক হওয়ার শুরুতে কেতাবের বা অন্যের জ্ঞান ধার করতে হয়। কিন্তু সবল বা স্বাধীন পাঠক হলে এক সময় কোন কেতাবের সহায়তা ছাড়াই পৃথিবীর অর্থ অনুধাবন করা যায়,পৃথিবীর রহস্য উন্মোচিত হয়। এরকম স্বাধীন পাঠক হওয়া সাধনার ব্যাপার। এটা বলা দুষ্কর কখন এ ক্ষমতা অর্জিত হতে পারে। তা পঁচিশের কোঠাতেও আসতে পারে আবার পঁচাশিতেও ধরা না দিতে পারে।
এবার আমার বই পড়ার কথা বলিঃ “খাবার যেমন পেটের ক্ষুধা নিবারণ করে, বই তেমনি অন্তরের ক্ষুধা নিবারণ করে। অর্থাৎ অন্তরকে তৃপ্ত করে।” আমি যখন নীলক্ষেত এলাকায় ইউনিভার্সিটি কোয়ার্টারে সাবলেটে থাকতাম তখন একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি নিয়মিত বই পড়তাম। বিয়ের পর যখন বরের বাসায় আসলাম তখন দেখি বরের অনেক বই সংগ্রহে আছে। সুযোগ পেলেই সে বইমেলা, নীলক্ষেত, ও কাঁটাবন থেকে বই কিনে। কিন্তু তখন বই পড়ার প্রতি আমার খুব একটা আগ্রহ ছিল না। সারাদিন খুব ব্যস্ত থাকতাম। নিজের একাডেমিক পড়াশোনা, সংসার, ছেলেকে সময় দেওয়ার পর নিজের জন্য সময় বের করা ছিল কষ্টকর। মাঝে, মাঝে বর বলতো সেতু তুমি সময় পেলে বই পড়বে, দেখবে ভালো লাগছে। একথা শোনার পর রাগ হতো। কিছু বলতে পারতাম না। শুধু ভাবতাম এতো দায়িত্ব পালন করার পর নিজের জন্য সময় কোথায় আমার। ধীরে ধীরে শুরু করি বই পড়া। যতো বই পড়তে থাকি চিন্তাগুলো গভীর হতে থাকে। নিজেকে চিনতে থাকি নতুন রুপে।
এখন আমার ব্যস্ততা অনেক বেড়েছে। দুই ছেলে, সংসার, সামাজিক কিছু দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি প্রতিদিন কিছু সময় রাখি নিজের জন্য। এই সময়টা শুধুই আমার। বই পড়ি, টুকটাক লেখালেখি করি। খুব অবাক হই আগে এর চেয়েও কম ব্যস্ত থাকার পরও আমার নিজের জন্য সময় বের করা সম্ভব হয়নি বই পড়ার জন্য। আর এখন ঠিকই নিয়মিত বই পড়ি।
এখন আর আগের মতো টেলিভিশন দেখা হয় না। এই সময়টা বই পড়ি। এখন মন খারাপ হলে পছন্দের বইটি হাতে নিয়ে পড়তে থাকি। খুব অবাক করা বিষয়, বইয়ের চরিত্রগুলোর মধ্যে নিজেকে নিয়ে যায়। মনে হয় এই চরিত্রগুলো আমারই চারপাশে রয়েছে। সেই চরিত্রগুলোর সাথে কল্পনার জগতে গিয়ে আপন মনে গল্প করি। কিছুক্ষণ পর ভুলেই যায় কি কারনে আমার মন খারাপ হয়েছিল। চারপাশের সবকিছুই ভালো লাগে। অন্তর তৃপ্ত হতে থাকে। আমার বইগুলো একটি বুকশেল্ফে সাজিয়ে রেখেছি। আর একটি বুক শেল্ফ তৈরি করা হচ্ছে বস্তার বইগুলোর জায়গা হবে সেখানে। বইগুলোকে আমি খুব ভালোবাসি। তবে আগের বই পড়ে শেষ না হওয়া পর্যন্ত নতুন বই কিনতে মন খুব একটা সায় দেয় না। বই জমা হতে থাকে যতো আমার মন অস্থির হতে থাকে ততো এটা ভেবে কখন বইগুলো পড়ে শেষ করবো। সব মিলিয়ে প্রায় ৩০০ বই আছে আমার বাড়িতে এবং এই সংগ্রহ আরও সমৃদ্ধ করার ইচ্ছা রয়েছে।
আমার উপলব্ধি বই পড়ার মাধ্যমে নিজের একটি জগৎ তৈরি হয়। সেই জগতে নিজেকে নিয়ে ভাবা যায়, নিজের কাজগুলোর মূল্যায়ণ করা যায়। সর্বোপরি নিজেকে ভালো রাখা যায়। তাইতো সিডনি স্মিথের এই কথাটি আমার বার বার বলতে ইচ্ছে করে। ” গৃহের কোন আসবাবপত্র বইয়ের মতো এতো সুন্দর নয়।”
Posted ৯:৫০ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২২ এপ্রিল ২০২১
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh