ড. আশরাফ উদ্দিন আহমেদ | বৃহস্পতিবার, ০৪ মার্চ ২০২১
(তৃতীয় অংশ) ইতিহাসের শিক্ষা হল , আমেরিকায় ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্টের দল যদি হাউজ এবং সিনেটে সংখ্যাগরিষ্ট থাকে তবে মধ্যবর্তীকালীন নির্বাচন সাধারণত বিরোধী দলের পক্ষে যায় । হাউসে আসন জিতে নেওয়া প্রায় ক্ষেত্রেই সম্ভব হয় না। ব্যতিক্রম কালেভদ্রে হয়েছে বৈকি তবে টা হয়েছে সিনেটের ক্ষেত্রে। ১৯৬২ সালে জন এফ কেনেডি এবং ২০১৮ সালে ডোনালড ট্র্যাম্পের সময়ে। ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্টের বিগত দু’বছরের অর্জনের নিক্তিতে জনসাধারণ বিচার বিবেচনা করে তবেই সিদ্ধান্ত নেয়। অনেকটা রেফারেন্ডামের মত। এখানে প্রচারণা, সমালোচনা জোরালো ভূমিকা রাখে। তবে , নির্বাচনী ওয়াদা কি পরিমাণ অর্জিত হয়েছে তাই মুখ্য হয়ে দাঁড়ায় । প্রেসিডেন্টের কাজে সন্তুষ্টির জরিপ ও এ বিষয়ে উল্লেখযোগ্য মাপকাঠি । হাউসে গড়পড়তা ৩৭ টি আসন হারিয়েছেন যে সব প্রেসিডেন্ট (ট্রুম্যান ১৯৪৬ ও ১৯৫০ সালে, জনসন ১৯৬৬ তে, কার্টার ১৯৭৮ এ, রিগান ১৯৮২ সালে, ১৯৯৪ সালে ক্লিনটন , ২০১০ ও ২০১৪ সালে ওবামা , এবং ২০১৮ সালে ট্র্যাম্প) তাদের জনপ্রিয়তা গ্যলাপ পুলে ৫০ শতাংশের নীচে ছিল। সে তুলনায় জো বাইডেন ৫৩.২% নিয়ে এগিয়ে থাকলে ও এ হার নব্য নির্বাচিত একজন প্রেসিডেন্টের জন্য সন্তোষ জনক নয় যদিও তা ট্র্যাম্পের ক্ষমতায় থাকাকালীন যে কোন সময় থেকে বেশী। কভিড-১৯ প্যান্ডেমিক যে ভাবে এ সরকার ম্যানেজ করছে তা কিছুটা সুবিধা বয়ে আনলেও আসন্ন ভোট এলাকার পুনবিন্যাস (ৎবফরংঃৎরপঃরহম ধহফ ৎবধঢ়ঢ়ড়ৎঃরড়হসবহঃ) রিপাবলিকানদের পক্ষে যাবে মনে করার সংগত কারণ আছে। এ ব্যবস্থায় রিপাবলিকানরা হাউজে প্রয়োজনীয় ৬ টি আসনের সবক’টি পেয়ে যাবে বলে পার্টির নীতিনির্ধারকরা আশা করছেন । উল্লেখ করা যায় যে বিগত এক শতাব্দীতে ২৫ টি মধ্যবর্তীকালীন নির্বাচন হয়েছে যার বাইশটিতেই সেইসব সময়ের প্রেসিডেন্টের দল হাউজে আসন হারিয়েছে। ব্যাতিক্রম শুধু ১৯৩৪ এ নিউ ডিলের সূচনা পর্বে ; ১৯৯৮ এ যখন রিপাবলিকানরা প্রেসিডেন্ট ক্লিনটনকে ইম্পিস করার চেষ্টা করেছিল , এবং ৯/১১ এর পরবর্তী প্রথম নির্বাচনে । সিনেটে এ চিত্র ভিন্ন যদি ও ২৫ টির মধ্যে গদ্দানশীল প্রেসিডেন্টের পার্টি ২০টিতে হেরেছিল।
জো বাইডেন তাঁর পূর্বসূরির কাছ থেকে সমস্যা সঙ্কুল দেশ পেয়েছেন। স্মরণকালের একটি প্যান্ডেমিক ট্র্যাম্পের অবহেলার কারণে মারাত্মক অবস্থার সৃষ্টি করেছে যার জের টানতে হচ্ছে বাইডেন ও তাঁর প্রশাসন যন্ত্রকে। ৬ জানুয়ারী’র বিভীষিকাময় দিনটি ও তাঁর পরবর্তী ঘটনা সমূহ আইনসভা সহ অন্যান্য সংস্থাকে ব্যস্তসমস্ত রাখছে অদ্যাবদি। প্রেসিডেন্ট বাইডেন এখনো তাঁর কেবিনেটের সুপারিশকৃত সকল পদের জন্য অনুমোদন আইনসভা থেকে পাননি। ট্র্যাম্পের দ্বিতীয়বারের মত ইম্পিচমেন্ট থেকে রেহাই পেয়ে জোরেশোরে পার্টিকে ২০২২ নির্বাচনের জন্য সংগঠিত করছেন । ইম্পিচমেন্ট ইস্যুতে পার্টিতে ভাঙ্গন আসলে ও তা উগ্র কট্টরপন্থী রিপাবলিকানদের ট্র্যাম্পের সাথে সম্পর্ক আরও জোরদার করেছে। সিপ্যাক (ঈচঅঈ) ২০২১ যারা মনযোগ দিয়ে অনুসরণ করেছেন এ সত্যটি অনুধাবন না পারতে পারার কথা নয়। ২০২২ নির্বাচন ট্র্যাম্পের জন্য ও রেফারেন্ডাম। তাঁর কোর সাপোর্ট গ্রুপের বাইরে ভোট টানতে না পারলে জনপ্রিয়তার পরীক্ষায় ট্র্যাম্প এবং সমর্থকরা হেরে যাবে। ২০২৪ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্র্যাম্পের অংশ গ্রহণের প্রশ্নটি অনেকাংশে নির্ভর করবে মধ্যবর্তীকালীন নির্বাচনের ফলাফলের উপর । ট্র্যাম্পের জনপ্রিয়তাকে পুঁজি করে অনেকেই ২০২২ নির্বাচন বৈতরণী পার হতে চান । পার্টিকে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে ২০২২ নির্বাচনের ফলাফলের উপর।
প্রেসিডেন্ট বাইডেন তাঁর নির্বাচনী প্রতিজ্ঞা পূরণে কাজ করে জেতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ বলেই মনে হচ্ছে। ইতোমধ্যেই কভিড-১৯ মোকাবেলায় যে কার্যক্রম নিয়েছেন তা আশাতিরিক্ত সুফল নিয়ে আসছে প্রতিদিনই । শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিকল্পিত ভাবে খোলার প্রস্তুতি প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে । ট্র্যাম্পের স্বাক্ষর করা ১৯ টি এক্সিকিউটিভ অর্ডার বাতিল ঘোষণা করে প্রেসিডেন্ট বাইডেন ৩২ টি অর্ডার স্বাক্ষর করেছেন। স্বাস্থ্য সেবায় ওবামাকেয়ারকে প্রাধান্য দেয়া , প্রাইভেট প্রিজনের সংখ্যা সীমিত করা এবং মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা ইত্যাদি বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে । তাছাড়া , জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে ও প্রতিজ্ঞা মত অগ্রগতি হচ্ছে। আইনসভায় ১.৯ ট্রিলিয়ন কভিড রিলিফ ফান্ডের অনুমোদন ও হয়ে যাওয়ার পথে। সরকার বেস বিপাকে আছে মেক্সিকো সীমান্তে অপেক্ষমান অভিবাসন ইচ্ছুক ইমিগ্রেন্টদের নিয়ে। বিষয়টির বাস্তবসম্মত নিয়ন্ত্রণ ও সমাধান বিরোধীদলের সমালোচনা নস্যাৎ করতে বহুলাংশে সফলকাম হবে প্রেসিডেন্ট, তাঁর প্রশাসন এবং দল।
প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ট্র্যাম্প ও তাঁর সমর্থকরা যতই আস্ফালন করুক না কেন, রিপাবলিকানদের মধ্যে বিভাজন স্পষ্ট। পার্টির উপরের কাতারের বেশ ক’জন নেতা ও ওজনদার ব্যক্তিত্ব, যেমন মিট রমনী , লিজ চেনী এবং মিচ মেক্কনেল প্রমুখ অনেকেই ট্রাম্পকে ছাড় দিতে নারাজ । এদিকে, ৯/১১ কমিশন ধরণের রিপোর্ট যদি সাবেক প্রেসিডেন্টের ৬ জানুয়ারির ঘটনায় সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পায় তা’হলে তা হবে ট্রাম্পের জন্য মরণকামড় ।
Posted ১১:১৫ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৪ মার্চ ২০২১
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh