ড. আশরাফ উদ্দিন আহমেদ | বৃহস্পতিবার, ১৫ এপ্রিল ২০২১
১৯৬৫’র ভোটিং রাইটস অ্যাক্ট, ২৪ তম সংশোধনী এন্ড সংশ্লিষ্ট বেশ কিছু আইনের ফলশ্রুতিতে ইলেকশন সিস্টেমে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আসে। ১৯৭২ এ একটি কোর্ট চেরেস রায়ের প্রেক্ষিতে আদম শুমারি আনুসরন করে ষ্টেট আইনসভা প্রতি দশ বছর পর পর ভোটের আওতা পুনংনির্ধারণ বা রি-ডিসট্রিক্টং (redistricting) করবে। আশা করা গিয়েছিল যে এ ব্যবস্থায় সংখ্যালঘু ভোটার উপকৃত হবে কিন্তু বাস্তবে অনেক ক্ষেত্রেই এমনটি হয়নি। এ দায়িত্বে যে কমিশন গঠন করা হয় তা ষ্টেট আইনসভার মেজরিটি ভোটে নির্ধারণ করা হয়। এতে করে রি-ডিসট্রিক্টটিং নিরেপেক্ষ সিদ্ধান্ত প্রায়ই নেয়া হয়না। সংখ্যালঘু ভোটারদের অধিকারের অবদমন চলতেই থাকে । এ সমস্যা সমাধানে বিংশ শতাব্দীর শেষ পর্যায় থেকে সিংগল মেম্বার ডিসট্রিকটস বা বিকল্প হিসেবে সীমিত অথবা কিউমুলেটিভ (single-member districts (SMDs) or limited voting or cumulative voting) ইত্যাদি পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে । বলাইবাহুল্য, সমাধান তেমন সন্তোষজনক হয়নি । অদ্যাবদি, দি ডিসট্রিকট অব কলাম্বিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের পাঁচটি প্রধান টেরিটরিস থেকে একজন করে নন-ভোটিং মেম্বার হাউজ অব রেপ্রেসেন্টটেটিভে আছে কিন্তু সিনেটে কোন প্রতিনিধি নেই । ইউ এস টেরিটরির লোকজন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট দিতে পারেনা। গঠনতন্ত্রে ২৩তম সংশোধনী যোগ হওয়ায় দি ডিসট্রিক্ট অব কলম্বিয়ার ভোটাররা প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট দিতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের গঠনতন্ত্রে ভোটাধিকার এবং ভোটের পদ্ধতি নিয়ে তেমন নিয়মকানুনের উল্লেখ পরিষ্কার ভাবে বিধৃত না কারণে বিভিন্ন সময়ে মামলা মোকদ্দমা সহ নানাবিধ বিরোধ লেগেই ছিল । এখনো তা বিদ্যমান । গৃহযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে গঠনতন্ত্রে যে পনেরটি সংশোধনী আনা হয়েছে তার চারটিই ছিল দেশের নাগরিকদের মধ্যেকার বিভিন্ন গ্রুপকে ভোটাধিকার দেয়া সংক্রান্ত। ঐ সমস্ত সম্প্রসারণে (extensions) সুনির্দিষ্ট ভাবে বর্নিত নিন্মের বিষয়গুলোর উপর ভিত্তি করে ভোটাধিকার প্রদান থেকে বিরত থাকা যাবেনা (can not be denied or abridged) :
১৮৭০ সালে নেয়া ৫ম সংশোধনী যাতে গোত্র (Race), বর্ণ (color) অথবা পূর্বেকার কাজের শর্তের (previous condition of servitude) ভোটাধিকারে কোন বাধা হবে না বল্যে উল্লেখ আছে ১৯২০ সালের ১৯তম সংশোধনী (লিঙ্গ বা সেক্স) কোন অন্তরায় হবে না
১৯৬৪ সালে নেয়া ২৪ তম সংশোধনী যাতে বলা হয়েছে যে কোন নাগরিক পোল ট্যাক্স বা ফেডারেল সরকারের নির্ধারিত কোন নির্বাচনের জন্য প্রদেয় ট্যাক্স না দেয়ার কারণে ভোটাধিকারে কাউকে বঞ্চিত করা যাবেনা ১৯৭১ সালের ২৬ তম সংশোধনী যাতে বলা হয়েছে যে ১৮ বছর বা তদূর্ধ্ব কাউকে ফেডারেল অথবা ষ্টেটের নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগে বাধা দেয়া যাবেনা ।
সিভিল রাইটস মুভমেন্ট শেষ না হওয়া পর্যন্ত ভোট কারা দিতে পারবে সে ব্যাপারে যে কালাকানুন , যেমন জেমস ক্রু আইন সমুহ যথা, সাক্ষরতার টেস্ট , পোল টেক্সেস সহ দেশে বিভিন্ন অঞ্চলে প্রচলিত স্থানীয় আইন যার বলে ইমিগ্রান্ট, অশ্বেতাঙ্গ, নেটিভ আমেরিকান এবং আঞ্চলিক ভাবে গ্রহণযোগ্য নয় এমন আইনগুলো অবৈধ ঘোষণা করা হয়। এ সংশোধনীগুলো কেন্দ্রীয় সরকারের হাতকে অনেক শক্তিশালী করে এবং ভোটাধিকারকে জনগণের বিভিন্ন অংশের জন্য উন্মুক্ত করা সম্ভব হয়। তারপরও ষ্টেটের হাতে প্রচুর ক্ষমতা থেকে যায় যেগুলো প্রয়োগ করে বিভিন্ন জনগোস্টির বা গ্রুপের ভোটাধিকার প্রদান না করার প্রচুর ফাঁকফোকর থেকে যায়। এ সব প্রয়োগ করে খুনের দায়ে কারাদণ্ড ভোগ করা বা ফেলন (ভবষড়হং) জাতীয় অপরাধী মুক্তি পেলে ও ভোট দেয়ার অধিকার কেঁড়ে নেয়া হত। ভোটে গণনায় ও পুনংগণনায় নিয়ম-কানুন সুস্পষ্টভাবে বিধৃত না থাকায় প্রায়ই ঝামেলা, এমনকি মামলা-মোকদ্দমা হয় (উদাহরণ, বাস বনাম গোর, ২০২০ সালের ইলেকশনের ফলাফল নিয়ে ১৮-১৯ টি মামলা, ইত্যাদি)।
ভোটাধিকারের সাথে জড়িত অনেক বিষয়ে, যেমন কারা ভোটে দিতে পারবে বা পারবেনা, ভোট দানের পদ্ধতি, গণনা ও পুনঃগণনার নিয়মকানুন, ভোটের সীমানা (jurisdiction), ডিসট্রিক্টিং, রি-ডিসট্রিক্টিং এ জাতীয় অনেক প্রশ্নে ষ্টেটগুলোর মধ্যে ভিন্নতা আছে। গঠনতন্ত্রে সুনির্দিষ্ট কোন উল্লেখ না থাকায় ষ্টেটগুলোই এ সব প্রশ্নে সুবিধাজনক অবস্থানে। মামলা-মোকদ্দমা প্রসূত চূড়ান্ত রায়ের আলোকে গঠনতন্ত্রে অনেকগুলো সংশোধনী আনা হয়েছে সত্যি তবে তারপর ও অনেক জটিল সমস্যা ইলেকশনের সময়ে বা পরে মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। আশার কথা, ভোটাধিকারের ব্যাপারে বিজ্ঞজনেরা একমত যে গণতন্ত্রের রক্ষাকবজ হিসেবে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট ও কংগ্রেস প্রতিনিধি (হাউজ অব রিপ্রেসেনটটেটিভ এবং সিনেট) নির্বাচনের বিকল্প নেই। ষ্টেট পর্যায়ে ও এ বাস্তবতা সত্যি। ধীর গতিতে হলে ও ভোটধিকার ফলপ্রসূ ভাবে নির্ধারণ ও প্রয়োগের প্রশ্নে বিদ্যমান সমস্যাগুলোর সঠিক চিহ্নিতকরণ ও সমাধান সুস্থ গণতন্ত্রের জন্য অবশ্যই প্রয়োজন। ১৯৬৪ সালে একটি কেসে তদানীন্তন প্রধান বিচারক আরল ওয়ারেন (Earl Warren, in Reynolds v. Sims) কেসের রায়ে এ কথাই বলেছিলেন।
Posted ৯:০৩ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৫ এপ্রিল ২০২১
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh