আশরাফ উদ্দিন আহমেদ | বৃহস্পতিবার, ১২ মে ২০২২
(পর্ব-২) : জো বাইডেনের আকাশছোঁয়া অভিজ্ঞতা। দুই দফা ভাইস প্রেসিডেন্ট থাকার সময় ফরেন রিলেসন্স কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে এন্তার অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ঝানু রাজনীতিবিদ। সিনেটের ভেতরকার আভ্যন্তরীণ কোন্দল মীমাংসা করার কুশলতা নিজের দলে যেমন তেমনি রিপাবলিকান দলে ও সমানভাবে সমাদৃত। কিন্তু আফগানিস্তান থেকে যে ভাবে চলে এসেছেন তা কিছুতেই তাঁর নিপুণতার সাক্ষ্য দেয়না। রাশিয়ার ব্যাপারে ইউক্রেনে যে বলিষ্ট অবস্থান নিয়েছেন মিত্রদের সাথে রেখে তা সুসংহত করে পুতিনকে জুতসই ভাবে মোকাবলা করতে পারলে আফগানিস্তান থেকে লেজ গুটানোর ক্ষেদ দেশবাসী এবং আন্তর্জাতিক মিত্ররা কিছুটা হলে ও ভুলতে পারবে হয়তো। এতে তাঁর জনপ্রিয়তার অধোগতি (২০২১ জানুয়ারি ৫৭% থেকে ২০২২ জানুয়ারি ২০ তারিখে ৪০% এ নেমে আসা) কিছুটা হলে ও পুনরুদ্ধার হতে পারে।
ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলে কোভিড-১৯ কেন দ্বিতীয় বারের মতো হানা দেবে আর এত ভ্যারিয়েন্টই বা কেন একটার পর একটা এভাবে আঘাত হানবে- এ জিজ্ঞাসা ও অনেকের। কোভিড কালে উদার ভাবে সাহায্য সহায়তা তো কম দেননি এতো জলজ্যান্ত সত্যে !
ইদানীং প্রশ্ন আসছে যে ক্যাথলিক জনগোষ্ঠী প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে বরাবরের মতো সমর্থন করবে কিনা! ২০২০ নির্বাচনে ক্যাথলিক সম্প্রদায়ের ভোটে মোট প্রদত্ত ভোটের এক-পঞ্চমাংশের মত ছিল। এর প্রায় অর্ধেক পেয়েছিলেন জো বাইডেন । এবার কি এ ধারা অব্যাহত থাকবে এ প্রশ্ন অনেকে করতে শুরু করেছেন। উল্লেখ্য যে আমেরিকার রাজনীতিতে জো বাইডেনের সময়ের মত এত বেশী সংখ্যক ক্যাথলিক রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ পদ ও দায়িত্বে অধিষ্ঠিত ছিলেন না। সুপ্রিম কোর্টের নয় জন বিচারকের মধ্যে ছয় জনই ক্যাথলিক।
স্পিকার, বেশ ক’জন কেবিনেট সেক্রেটারি এবং ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা ও ক্যাথলিক সম্প্রদায়ের। তার পর ও মিড-টার্ম নির্বাচনে এ সম্প্রদায়ের ধর্মীয় নেতারা জনমত ভিন্ন ভাবে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছেন। তবে, আশার কথা যে কনজারভেটিভ আমেরিকান বিশপদের রিপাবলিকান পার্টির পলিটিকাল এজেন্ডার সাথে যুক্ত করার প্রচেষ্টা তেমন ফলপ্রসূ না ও হতে পারে কারণ পোপ ফ্রানসিস বিগত প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনে যেমন বর্ণবাদ এবং ইমিগ্রেশন ইস্যু নিয়ে ডোনালড ট্র্যাম্পের নীতির কট্টর সমালোচনা করেছিলেন এবার ও প্রেসিডেন্ট বাইডেনের উদার ও সমজোতা মূলক মানসিকতাকে সম্মান করবেন বলেই অনুমান করা যায় ।
ইতোমধ্যেই পোপের এডভাইজর কার্ডিনাল লুইস লাডারিয়া যুক্তরাষ্ট্রের বিশপদের কাছে সম্প্রতি পাঠানো এক চিঠিতে পরিষ্কারভাবে বলেছেন যে কমুনিওন সংক্রান্ত রচিত শিক্ষাদান দলিলটি (teaching document on Communion) বিশ্বাসীদের মধ্যে অহেতুক বিভেদ সৃষ্টি করতে পারে । এমনটি কিছুতেই কাম্য নয় । চার্চে ঐক্য রক্ষা প্রত্যেক ধর্মযাজকের কর্তব্য ।
উল্লেখ্য যে গর্ভপাত এবং গে রাইটস (Abortion and Gay Rights) দুটি ইস্যুতেই প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সমর্থন রয়েছে । প্রচুর সংখ্যক কাথলিক ও তাঁর সাথে ঐক্যমত পোষণ করেন । গোঁট বছর জুনে মাসে কমুনিওন কারা পাবে যে নিয়ে যে দ্বন্দ্ব তা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত এবং রিপাবলিকানদের, বিশেষত প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ট্র্যাম্পের ষড়যন্ত্র মূলক অভিসন্ধি অনুযায়ী হচ্ছে বলে অনেক মহল মনে করে।
সাম্প্রতিক সময়ে যে বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রে তো বটেই, এমনকি সারা বিশ্বে যারা মানবতাবাদী, উদার এবং নারী স্বাধীনতা ও লিঙ্গ সাম্যে বিশ্বাসী ভীষণভাবে নাড়া দিয়েছে তা হল আমেরিকার সুপ্রিম কোর্টে গর্ভপাত বিষয়ক একটি খসড়া সিদ্ধান্ত। অনুষঙ্গ হিসেবে Rue v. Wade নীতিমালাটি যা বিগত ৫০ বছর যাবত দেশে গণতন্ত্রের পতাকা হিসেবে অধিষ্ঠিত হয়ে সমুন্নত আছে । রিপাবলিকানদের আপ্রাণ চেষ্টা ও এ স্তম্ভটিকে নড়াতে পারেনি ।
সুপ্রিম কোর্টে প্রণীত খসড়া দলিল প্রকাশ বা লিক হয়ে যাওয়ায় সবাই জানতে পেরেছে যে গর্ভপাত বিষয়ক সিদ্ধান্ত রিপাবলিকানদের দুষ্ট ও নষ্ট মন-মানসিকতার প্রতিফলন ঘটিয়ে গৃহীত হওয়ার পথে ছিল । চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ঘোষিত না হওয়া পর্যন্ত সঠিক ভাবে কিছু বলা না গেলে ও ২০২২ মধ্যবর্তীকালীন নির্বাচনে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে ঘটনাটি যে প্রভাব ফেলবে তা অনুমান করা যায় । এক্ষেত্রে ডেমোক্রেটরা যে সুবিধা জনক অবস্থানে আছে তাও সন্দেহাতীত ভাবে বলা যায় । ধারণা করা যায়, মহিলারা দলমত নির্বিশেষে (কট্টর রিপাবলিকান ও ধর্মান্ধ ব্যতিরেকে) গর্ভপাত এবং রো বনাম ওয়েড প্রশ্নে ডেমোক্রেটদের সমর্থন করবে যেমন করবে লিঙ্গ প্রশ্নে অসুবিধাগ্রস্থ সম্প্রদায়গুলো ।
মিডল ক্লাস, ছাত্র ঋণ, আবাসন সমস্যা, মুদ্রাস্ফীতি, জলবায়ু পরিবর্তন, ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন ইত্যাদি সমস্যাগুলো সমাধানে ডেমোক্রেটদের সদিচ্ছা ভোটারদের কাছে সঠিক ভাবে পৌঁছাতে পারলে তা ২০২২ সালের মিড-টার্ম ইলেকশনে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল বয়ে নিয়ে আসতে সহায়ক হবে। একই সাথে করোনা মোকাবেলায় আরো আক্রমণাত্মক ও বলিষ্ঠ ভূমিকা অনতিবিলম্বে শুরু করা ও প্রয়োজন । দলের মধ্যেকার আভ্যন্তরীণ ভুল বুঝাবুঝির অবসানে এ সময়ে কালবিলম্ব না করে উদ্যোগ নেয়া জরুরী। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের দক্ষতা ও কুশলের যে সুনাম তা সদ্ব্যবহারের প্রকৃষ্ট সময় এখনই ।
Posted ১০:১৪ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১২ মে ২০২২
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh