ড. আশরাফ উদ্দিন আহমেদ | বৃহস্পতিবার, ১৭ আগস্ট ২০২৩
(দ্বিতীয় অংশ) : আধুনিক সভ্যতার অগ্রযাত্রা ত্বরান্বিত হয় ইউরোপে, বিশেষত ইংল্যান্ডে যখন উপনিশেদবাদ এবং শিল্পায়ন একে অন্যের পরিপূরক হিসেবে সতীর্থ হয়ে যাত্রা শুরু করে। ষোল থেকে আঠার শতকের একটা বিস্তৃত সময়ে ক্রুসেডে ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় ইউরোপ রোমান চার্চের আধিপত্যে অসহনীয় সামাজিক ও ধর্মীয় বিরোধ এবং রাষ্ট্রসমূহের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে ভুগছিল। মহাদেশটির এহেন শোচনীয় অবস্থায় প্রটেস্টান্ট সংস্কার শুরু হয়। এর প্রভাবে যে সুদূরপ্রসারী সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তনের সূচনা হয় তার সাথে বাষ্পের আবিষ্কার, উপনিবেশ স্থাপনের প্রতিযোগিতা যুক্ত হয়ে আধুনিক সভ্যতার অগ্রযাত্রা শুরু হয়। ক্যালভিন এর দর্শন ও অর্থনৈতিক মন্ত্র ধনতন্ত্রের উন্মেষ ঘটায়।
কলোনী সংস্থাপনের প্রতিযোগিতা অচিরেই সাম্রাজ্যবাদ দৃশ্যপটে নিয়ে আসে। কলোনীর সাথে বাণিজ্য যা সকল অর্থেই শোষনের নামান্তর ছিল তা সব সময়ই শোষকদের নিজ নিজ দেশকেই লাভবান করত। শক্তিশালী কেন্দ্রীয় শাসন এবং নিয়ন্ত্রণ ছাড়া এ ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখা কঠিন ছিল। আমলাতন্ত্র, নগরায়ন স্বাভাবিকভাবেই এ সময়ের সঠিক ফসল। শিল্পকারখানা ও নগরভিত্তিক হওয়ায় শ্রমজীবী শ্রেণী গড়ে ওঠে। অভ্যন্তরীণ অভিগমন বা স্থানান্তর প্রক্রিয়া জোরদার হয়।
ইতালীয় বণিক গোষ্ঠীর প্রবর্তিত এবং পরবর্তীতে নাইট টেম্পলার সংগঠন চার্চের পরোক্ষ সম্মতিতে ক্রুসেড চলাকালে মধ্যপ্রাচ্যে যে ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিল তার জবরদস্ত আধুনিকায়ন অভিযাত্রা শুরু হলে মুদ্রাব্যবস্থার বিভিন্ন ধরনের উন্নয়ন ঘটে, বাজার ব্যবস্থা সুবিন্যস্ত হতে থাকে এবং অবাধ প্রতিযোগিতা শুরু হয় । মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে বিনিয়োগ, পুঁজি, উদ্ধৃত পন্য, সস্তা শ্রমবাজার, কলোনিগুলোতে বাজারজাতকরণের অবাধ সুবিধা, সমুদ্র পথে আমদানি-রপ্তানির সহনীয় পরিবহন ব্যয় সব মিলিয়ে পুঁজি ও লাভ উৎপাদন ও মূলধন ব্যবস্থার খুবই অনুকূল ছিল । ধনতন্ত্র অচিরেই সাম্রাজ্যবাদের দোসর হয়ে আবির্ভূত হয়। আদর্শ হিসেবে গণতন্ত্র ও জাঁকিয়ে আসন গাঁড়ে।
সাম্রাজ্যবাদের প্রতিভূ হিসেবে আমলাতন্ত্র ও সামরিক শক্তি সংহত করার জন্য মদদ দেয়। গাণিতিক নিয়মে যুগান্তর ও রূপান্তর সাইক্লিকাল প্রক্রিয়ায় এক সভ্যতার পতন ও ভিন্ন প্রযুক্তিগত কারণে অন্য এক সংস্কৃতি ও সভ্যতার উদয়ের পথ সুগম করে দিয়ছে। সাম্প্রতিক উদাহরণ হিসেবে ক্লাউস শোয়্যাব এর চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের কথা বলা যায় (দেখুন, মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন অনুদিত ‘চতুর্থ শিল্পবিপ্লব’ প্রথমা প্রকাশন, দ্বিতীয় মুদ্রণ এপ্রিল ২০২২)।
তবে, প্রযুক্তি জগতে এ অভাবনীয় পরিবর্তনের পূর্বেকার তিনটি শিল্প বিপ্লবের উল্লেখ্য করা যেতে পারে। প্রথম বিপ্লব নিয়ে আমরা ইতোমধ্যে আলোচনা করেছি। এনার্জি হিসেবে বাষ্পের আবিষ্কার ও রেলগাড়ি, জাহাজ, স্টিমার ও কল কারখানাতে বাষ্পের ব্যবহার সমাজ, অর্থনীতি তথা আধুনিক সভ্যতা আনয়ণে যুগান্তকারী ভূমিকা এনে দেয়। একশ’ বছরের কম সময় স্থিত ছিল এ বিপ্লব (আনুমানিক ১৭৬০ থেকে ১৮৪০)। মূলত ইংল্যান্ড এবং পরবর্তীতে ইউরোপেই শুরুতে ব্যপ্ত ছিল এর জোয়ার। বিদ্যুতের আবিষ্কার দ্বিতীয় শিল্পবিপ্লবকে সম্ভব করে তুলে। প্রায় একশ বছর।
Posted ৫:৩৮ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৭ আগস্ট ২০২৩
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh