ড. আশরাফ উদ্দিন আহমেদ | বৃহস্পতিবার, ২৪ আগস্ট ২০২৩
(তৃতীয় পর্ব) : এনালগ থেকে ডিজিটাল ইলেকট্রনিক্স এ পদচারণকে তৃতীয় শিল্প বিপ্লবের সূচনা পর্ব বলা চলে। রিনিউয়েবল এনার্জি এমন পরিবর্তিত যোগাযোগ প্রযুক্তি নিয়ে আসে যা অর্থনৈতিক উন্নয়নে যুগান্তকারী ভূমিকা রাখতে সহায়ক হতে থাকে। শেয়ারিং অর্থনীতি ও লেন-দেন এবং বাজার ব্যবস্থা এ বিপ্লবের বিশেষ দিক ছিল। প্রযুক্তির এ ছিল এক উল্লেখযোগ্য উল্লফন। ১৯৬০ থেকে শুরু হয়ে ইন্টারনেট ব্যবস্থা কব্জায় আসা (১৯৯০) অব্দি এ স্তর কম্পিউটিং জগতে বিস্ফোরণ নিয়ে আসে। বলা বাহুল্য সেমিকন্ডাক্টর এ ক্ষেত্রে অব্যাহতভাবে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখে চলেছে ।
তৃতীয় শিল্প বিপ্লব চলমান থাকাকালেই চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের আবির্ভাব ঘটেছে। ওয়ার্ল্ড ইকনমিক ফোরামের জনক এবং এক্সিকিউটিভ চেয়ারম্যান ক্লাউস স্যাোয়াব ২০১৬ সালে প্রথম এ প্রত্যয়টিকে আলোচনায় নিয়ে আসেন। চতুর্থ শিল্প বিপ্লব সংক্ষেপে 4IR, Industry 4.0 নামে ও পরিচিত । মূলত, প্রযুক্তি,শিল্প, সামাজিক বিন্যাস এবং প্রক্রিয়া এ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে শিল্প বিপ্লবের আবহ ও প্রভাবে যে সব পরিবর্তন এসেছে বা চলমান আছে সেগুলো প্রত্যায়িত করতেই এ ধারনার প্রবর্তন। তিনি বর্তমান সময়ের প্রযুক্তি ও অর্থনৈতিক এবং সামাজিক পরিবর্তনকে শিল্পনির্ভর ধনতন্ত্র হিসেবে উপস্থাপন করেছেন।
প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের এ ধারা যে গতি ও বৈজ্ঞানিক কলাকৌশল উপজীব্য করে অতি দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে তা অব্যাহত থাকবে এবং এর বলয়ে বর্তমান সময়ের পুঁজিবাদী সংকট, ব্যক্তিবাদ, গণতন্ত্র, সাম্যবাদ বিলীন হয়ে বা এসবের প্রায়োগিকতা কমে নতুন এক বিশ্ব জন্ম নেবে। প্রযুক্তির অভাবিত উৎকর্ষে আর্টিফিসিয়াল বুদ্ধিমত্তা আসন গেড়ে নেবে। আমরা যে সমাজ, সংস্কৃতি ও সভ্যতায় বিচরণ করছি তাতে ধ্বস নামবে। ক্ষমতার উৎস হবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা।
১৯৫৬ সালে অধ্যয়নের বিষয় হিসেবে যাত্রা শুরু হলে ও ২০১২ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয় Deep Learning কৌশল প্রযুক্তি আয়ত্তে আসার জন্য। পরিপক্কতার চরম পর্যায়ে আসতে আরও সময় লাগবে। মানুষ বা প্রাণীর বুদ্ধিমত্তা নয়, ওয়েব চার্জ ইঞ্জিন, যেমন, গুগল চার্জ, ইউটিউব, অ্যামাজন, নেটফ্লিক্স, সিরি এবং আলেক্সা, চালকবিহীন কার, চ্যাট, আর্ট, কৌশল ভিত্তিক গেম যেমন দাবা,ইত্যাদি নিয়েই আমাদের বিনোদন এ নৈমিত্তিক কাজের সিংহ ভাগ সময় অতিবাহিত হয়। এর সবগুলোই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ফসল। যুক্তি উদ্ভাবন ও সমস্যা সমাধান, পরিকল্পনা প্রণয়ন ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ, শিক্ষা ও জ্ঞ্যান অর্জন,ন্যাচারাল ল্যঙ্গুয়েজ প্রসেসিং, অনুধাবন বা পারচেপ্সন, রবোটিক্স, সামাজিক বুদ্ধিমত্তা এবং সাধারন বুদ্ধিমত্তা সকল ক্ষেত্রে ফিল্ডে ছড়িয়ে গেছে ইতোমধ্যেই।
আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স বিবর্তনের কয়েটি ধাপ অতিক্রম করেছে সত্যি তবে প্রশ্ন থেকেই যায় বর্তমান সমাজ ও সভ্যতারর জন্য তা কতটা কার্যকর ও উপকারী। অনুন্নত ও উন্নয়নশীল বিশ্ব এ থেকে কি পাবে গুরুত্বপূর্ণ এ প্রশ্নটি থেকেই যায় শ্রম। বিক্রি করে যে আপামর জনতা খেয়ে বেঁচে থাকে তাদের ক্ষতি ছাড়া লাভ চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের প্রযুক্তিগত পরিবর্তন ও উন্নয়নে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। বাস্তব এবং কল্পনা এ দুইয়ের মধ্যে যে সীমারেখা আর্টিফিসিয়াল বুদ্ধিমত্তা তা গুলিয়ে দিতে পারে। চেতন ভোঁতা করে মানুষের বিবেক বুদ্ধিকে পঙ্গু করার মালমসলা এ প্রযুক্তিতে প্রচুর পরিমাণে বিদ্যমান। মানুষের সুকোমল মনোবৃত্তি, মূল্যবোধ এসব নস্যাৎ করে বিবেক বুদ্ধি নয়-
যন্ত্রনির্ভর যে প্রযুক্তি ও প্রগতি তা কি আধুনিক যে সভ্যতাকে আমরা জানি তা বিলুপ্ত করে দেবে -এহেন প্রশ্ন অবান্তর নয় ,অসঙ্গত তো নয়ই। ন্যানো পদার্থ সামরিক প্রযুক্তিতে ব্যবহার শুধু সময়ের ব্যাপার। বিশ্বের জন্য সাংঘাতিক রকমের চ্যলেঞ্জিং ও অকল্যাণকর এই ন্যানো প্রযুক্তি। আমাদের এই উপগ্রহকে ও ধ্বংস করে দিতে পারে। জলবায়ু পরিবর্তনের দুষ্ট প্রভাবের সাথে ন্যানোপদার্থ এবং আর্টিফিসিয়াল বুদ্ধিমত্তা সংপৃক্ত অন্যান্য প্রযুক্তি যুক্ত হয়ে বসবাসের অযোগ্য হয়ে যেতে পারে আমাদের এ সুন্দর পৃথিবী এমন অস্বস্তি অনেকের মনে, চিন্তায়।
Posted ১২:৫০ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৪ আগস্ট ২০২৩
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh