আশরাফ উদ্দিন আহমেদ | বৃহস্পতিবার, ০৬ এপ্রিল ২০২৩
দশদিনের সংক্ষিপ্ত সফরে (মার্চ ৩ -১৩, ২০২৩) মনে হয়েছে প্রকৃতি যেন উত্তর আফ্রিকার দেশটিকে অকৃত্রিম সৌন্দর্য, সুষমা আর সমৃদ্ধি উজাড় করে দিয়েছে। বৈচিত্রময় দেশটির প্রার্চুয এবং তার উৎস যেমন সহজেই মন কাড়ে তেমনি এর বৈপরীত্য ও চোখে পড়ে সহজেই। ফ্রান্স এবং স্পেন যেমন আটলান্টিক মহাসাগর ও ভূমধ্যসাগরকে একসাথে তাদের বুকে স্থান দিয়েছে তেমনি মরক্কো ও এ দু’টো সমুদ্রকে একইভাবে ধারণ করে এর ভূ-প্রকৃতিকে বৈচিত্র দিয়েছে, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সাথে বাণিজ্যের পথ সুগম করেছে।
পশ্চিম সীমারেখায় ভূমধ্যসাগর আর উত্তরে আটলান্টিক দেশটিকে বিস্তীর্ণ উপকূলীয় অবস্থান দিয়েছে যার প্রভাবে কৃষি, মৎস্য আহরণ, সমুদ্র বন্দরের সুবিধা প্রাচীনকাল থেকেই নিশ্চিতভাবে প্রতিষ্ঠিত তেমনি আটলাস পর্বতমালা মরক্কোর মধ্য ও দক্ষিণ অঞ্চল এবং রিফ পর্বতমালা উত্তরাঞ্চল বেষ্টন করে দেশটিকে শত্রু আক্রমণ প্রতিহত করার প্রাকৃতিক ব্যুহ তৈরী করেছে।
মরক্কোর সম্পদ, বর্হিবানিজ্যের সুবিধা, বৃক্ষসম্পদ ইত্যাদি রোম, আন্দালুসিয়া, আরব, স্পেন, ফ্রান্স ইত্যাদি শক্তিগুলোকে প্রলুব্ধ করেছে যুগে যুগে। মরক্কোর সিডার ও ওক গাছের কদর আরব অঞ্চলে বহু পূর্ব থেকেই ছিল। ভূমধ্যসাগর ও আটলান্টিক মহাসাগর বাহিত উষ্ণ এবং সাহারা মরুভূমির শুষ্ক আবহায়ার প্রভাবে দেশটির পর্বতমালার যেমন শ্যামল উদ্ভিদ অঞ্চল তেমনি সুবিস্তৃত তৃণভূমি ও নজরে পড়ে। মরক্কোতে প্রচুর খেজুর, জলপাই এবং আঙ্গুর উৎপাদিত হয়। কাসাব্ল্যাংকা বিমান বন্দর থেকে মারাকেশ এবং সেখান থেকে মোটরযানে সুদীর্ঘ পথ (প্রায় ৮ ঘন্টা সময় লাগে) পাড়ি দিয়ে ফেজ যাওয়ার পথে উপত্যকা, সমতল ভূমি এবং শুষ্ক মরু অঞ্চল দেখতে পাওয়া সত্যিই আনন্দদায়ক ছিল। রাস্তার দু’পাশে পরিকল্পিত সেচ ব্যবস্থা দেখে বুঝা যায় পর্বতমালা উপত্যকা এবং নিম্নভূমির সমতল কিভাবে শস্য-শ্যামল এবং বৃক্ষসুশোভিত রূপ পরিগ্রহ করেছে।
এমনটি নাকি সারা বৎসরের বিরাজিত থাকে। পশ্চিম সাহারার বিতর্কিত মালিকানা বাদ দিলে ও মরক্কো বিশ্বে সাতান্নতম বৃহৎ দেশ। সাইত্রিশ মিলিয়ন অধিবাসীর খাদ্য যোগানের পরও দেশটির উৎপাদন আফ্রিকা ও আরব অঞ্চলের দেশগুলোর খাদ্য চাহিদা বহুলাংশে পূরণ করে থাকে। অর্থনৈতিক অবস্হানে সারা আফ্রিকায় মরক্কো পঞ্চম বৃহৎ। দেশটির জিডিপির আকার ইউএস ডলারে ১৪২.৮৭৪ (২০২২ সালের হিসেবে); মাথাপিছু আয় ৩,৮৯৬ ডলার।
উত্তর আফ্রিকা ও মাগরেব, এমনকি আরব অঞ্চলে ও সভ্যতা ও সংস্কৃতির ধারক ও বাহক হিসেবে আদিকাল থেকেই মরক্কো নেতৃত্ব দিয়েছে। বিশ্বের প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয় আল- কারাউইয়িন ফেজ নগরীতে প্রতিষ্ঠিত হয় ৮৫৭-৮৫৯ সালে। সে সময়ে ফাতিমাল আল-ফাহরি নামের এক বিদ্যুৎসাহী মহিলা এটি মসজিদ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। ইসলামী ঐতিহ্য অনুযায়ী এটি মাদ্রাসা হিসেবে ও কাজ করতো। আল-কারাউহিন মসজিদটিকে ইসলামের স্বর্ণ যুগে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করা হয়। ফেজের আল-মেদিনা অংশে (বর্তমানে পুরনো শহর) অবস্থিত এ স্থাপনার স্হাপত্য শৈলী দৃষ্টিনন্দন। মুসলিম দুনিয়ার, এমনকি ইউনেস্কোর মতে বিশ্বের সবচেয়ে পুরানো ও ঐতিহ্যবাহী উচ্চতর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির লাইব্রেরি ছিল ঈর্ষনীয় এবং সারা দুনিয়ার বিস্ময়।
দ্বাদশ ও ত্রয়োদশ এবং চতুর্দশ শতাব্দীতে এখানকার ফাকাল্টিতে ছিলেন মোহাম্মদ আল-ইদ্রিসি যিনি ইউরোপের নাবিকদের জন্য মানচিত্র তৈরী করার জন্য প্রসিদ্ধি লাভ করেছিলেন ইবনে খালদুন, আল-আরাবী, আল-সাবতি, আল- খতিবী, নূর আল-দীন আল বিতরুজ এবং আলী ইবনে হিরজিইম। ইবনে খালদুন ছাত্র হিসেবে অধ্যয়নের জন্য আসলে ও পরবর্তীতে শিক্ষক হিসেবে ও দায়িত্ব পালন করেছেন। তার রচিত আল ‘ইবার এবং মোকাদ্দিমার মূল (অরিজিন্যাল) গ্রন্থ দু’টি বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরীতে দান করেন। ফেজের অলি গলিময় অংশে আল-কারাউইন বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৬৩ সালে আধুনিক মাদ্রাসা এবং পরবর্তীতে স্টেট বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে এর কোর্স এবং ফ্যাকাল্টি নতুন করে ঢেলে সাজানো হয়। বলাবাহুল্য,
আধুনিক সময়ে আরব, বার্বার এবং ইউরোপিয়ান সংস্কৃতির মিশ্রণে দেশটিতে উন্নত মানের শিক্ষা ব্যবস্হা ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রম কার্যকর রয়েছে।
(চলবে)। ০৬ এপ্রিল ২০২৩
Posted ১:১৩ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৬ এপ্রিল ২০২৩
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh