ড. আশরাফ উদ্দিন আহমেদ | বৃহস্পতিবার, ০১ জুলাই ২০২১
১৭৭৬ এর জুলাই মাসের ৪ তারিখে কন্টিনেন্টাল কংগ্রেস স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়। ফলশ্রুতিতে ১৩টি আমেরিকান কলোনি যুক্তরাজ্যের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে। গ্রেট ব্রিটেনের সাথে ১৭৭৫ থেকে ১৭৮৩ পর্যন্ত যুদ্ধ চলে। জুলাই ২ তারিখে কন্টিনেন্টাল কংগ্রেস ভার্জিনিয়া মোশনে স্বীকৃতি দিলে ১৭৮৩ সালে প্যারিস চুক্তি মেনে নিলে যুক্তরাষ্ট্র স্বাধীন দেশ হিসেবে বিশ্ব মানচিত্রে সম্মানজনক স্থান করে নেয়। এ ভাবেই পরিসমাপ্তি ঘটে এ দেশে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী রাজত্বের (১৬০৭-১৭৮৩)। অনেকের ধারণা ছিল আমেরিকা ও যুক্তরাজ্যের পদাঙ্ক অনুষ্ণ করে বিদেশ নীতি পরিচালনা করবে এবং সম্পদশালী দেশ হওয়ার কারনে বিশ্বে কলোনি স্থাপন করে বেনিয়া জাত হিসেবে নিজেকে পরিচিত করবে।
কিন্তু সেকেন্ড কন্টিনেন্টাল কংগ্রেস ফিলাডেলয়া অধিবেশনে ১৭৭৬ সালের জুলাই মাসের ৪ তারিখে যে সিদান্ত নেয় তাতে স্বীকৃতি দেয়ার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের ডিক্লারেশন অফ ইন্ডিপেনডেন্স পাকাপোক্ত হয়। ১,৩২০টি শব্দ সম্বলিত এ ঘোষণাটির লেখক ছিলেন থমাস জেফারসন, বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন, জন অ্যাডামস, রজারস সেরমান এবং রবার্ট লিভিংস্টোন। পরবর্তীতে ১৭৮৭ সালের ১৭ই সেপ্টেম্বর কন্সটিটিউশন সই হয়। ১৭৮৮ সালের জুনের ২১ তারিখে ৯ টি ষ্টেট সম্মত হলে এটি সরকারিভাবে গৃহীত হয়। গভেনিওর মরিস মূলত দলিলটির খসড়া প্রস্তুত করেন সবচেয়ে বয়স্ক যিনি দলিলে স্বয় করেন তিনি হলেন ৮১ বছর বয়স্কবেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন এবং কনিষটতম ছিলেন নিউ জার্সির ২৬ বছর বয়স্ক জনাথন ডেইটন। প্রথম কন্সটিটিউশনাল কনভেনশনের সভাপতি ছিলেন জর্জ ওয়াশিংটন। তিনিই প্রথন স্বাক্ষর করেন। ১৭৯১ সালে ১০টি প্রথম সংশোধনী যোগ হয় জাকে বিল অফ রাইটস বলা হয়। পরবর্তীতে আরও সংশোধনী যোগ হয়ে সাংখ্যা এখন ২১টিতে দাঁড়িয়েছে।
স্বাধীন হওয়ার পর অনেক বছর বিংশ শতাব্দির প্রথম দশকের পূর্বে আমেরিকা ইউরোপের আভ্যন্তরীন রাজনীতি নিয়ে পারতপক্ষে মাথা ঘামাত না। প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের ঢাকঢোল বাজতে শুরু হলে আমেরিকা ইউরোপের রাজনীতিতে শুরুতে ধীরলয়ে এবং পরে মুখ্য ভূমিকায় নেমে পরে।
প্রজ্ঞাবান প্রেসিডেন্ট উড্রু উইলসন (১৮৫৬-১৯২৪)দীর্ঘ আট বছর (১৯১৩-১৯২১)আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ছিলেন। যুদ্ধের উত্তাল বছরগুলোতে তাঁর সুনিপুণ পরিচালনায় যুক্তরাষ্ট্র বহির্বিশ্বের রাজনীতিতে জড়িয়ে পরে এবং মিত্র শক্তির পক্ষে যুদ্ধে সাহসী কুশলী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। তাঁর পূর্বে সব প্রেসিডেন্টই যুক্তরাষ্ট্রের আভ্যন্তপ্রিন কোন্দল , উত্তর দক্ষিণের বাদ-বিসম্বাদ , গৃহযুদ্ধ ইত্যাদি নিইয়ে ব্যাস্ত ছিলেন।
উড্রো উইলসন প্রেসিডেন্ট হয়ে আমেরিকার প্রশাসন তথা শাসন নীতি ও পররাষ্ট্র সম্পর্ক বিষয়ক উদ্দেশ্য ও নীতিমালা সুশৃঙ্খল ভাবে সাজানোতে মনোনিবেশ করেন। ১৯১৩ সালে তাঁর লিখিত New Freedom Ges Fourteen Points গ্রন্থ দু’টোতে বিধৃত ধ্যান-ধারণা কে উপজীব্য করে ডোমেস্টিক এবং আন্তর্জাতিক ফ্রন্টে বিধিমালা ও আইন প্রণয়ন করেন। তাঁর দাদা ও পিতা দু’জনেই চার্চের সাথে কাজ করেছেন যে কারণে হয়তবা তাঁর মধ্যে ন্যায়-নীতি এবং মানবতাবোধ লক্ষ্য করা যায়। একটি ক্ষেত্রে অবশ্য এর ব্যাতিক্রম দেখা যায়।
তা’হলো দাসপ্রথা তিনি সমর্থন করেছেন। আভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে তাঁর কতিপয় উল্লেখযোগ্য অর্জন হলোঃ ১৭ত০ম সংশোধনী যোগ করার মাধ্যমে রাজ্য আইনসভার পরিবর্তে জনসাধারণের প্রত্যক্ষ ভোটে ইউ এস সিনেটরদের নির্বাচিত করা ; ১৯১৪ সালে মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ ও সরবরাহের নিমিত্তে ফেডারেল রিজার্ভ সিস্টেমের প্রবর্তন; ফেডারেল ফার্ম লোন অ্যাক্ট ,১৯১৬ চালু করে ১২ টি ফেডারেল লোন ব্যাংক স্থাপন করে সহজ শর্তে দীর্ঘমেয়াদি ফার্ম মর্টগেজ কৃষকদের দেয়া ; ব্যবসায়ী ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর একচেটিয়া আধিপত্য নিয়ন্ত্রণের মানসে ফেডারেল ট্রেড কমিশন গঠন এবং ট্রেড ইউনিয়নের হরতাল, বয়কট অ্যান্ড পিকেটিং এর অধিকার প্রদান; আট ঘণ্টার কর্ম দিবসের প্রবর্তন ও উড্রো উইলসন করেন; শুক্ল আইন করে তিনি আমদানীকৃত পণ্য সামগ্রীর উপর থেকে ট্যাক্সের হার কমিয়ে দেন; ১৯১৬ সালে শিশু শ্রম রহিত করার বিল উত্তাপন করলে ১৯১৮ সালে সুপ্রিম কোর্ট বিলটিতে সম্মতি না দিলে তা নাকয হয়ে যায়। তাঁর একটি বড়ো অর্জন ছিলো যুক্তরাষ্ট্রের গঠনতন্ত্রে ১৯ তম সংশোধনী যোগ করা যা ১৯১৯ সালে পাশ এবং ১৯২০ সালে গৃহীত হয়। (চলবে)
Posted ৬:২১ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০১ জুলাই ২০২১
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh