ড. আশরাফ উদ্দিন আহমেদ | বৃহস্পতিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৩
২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে বাইডেনের বয়স নিয়ে আলোচনা তত একটি নিত্য বিষয় হয়ে দাঁডিয়েছে। কতদিন বাঁচবেন তিনি, শারীরিকভাবে দায়িত্ব পালনে কতট সমর্থ, তার মৃত্যু হলে প্রেসিডেন্ট হিসেবে বিভিন্ন মহলের কাছে ভাইস প্রেসিডেন্ট কামালা হ্যারিসের গ্রহণযোগ্যতা কেমন হবে, ইত্যাদি প্রশ্ন অহরহই উঠছে। সম্প্রতি প্রাক্তণ প্রেসিডেন্ট এবং রিপাবলিকান পার্টি থেকে সম্ভাব্য মূল প্রতিযোগী ডোনাল্ড ট্রাম্পকেও আলোচনা আনা হচ্ছে। মূল দুই প্রতিদন্ধী জো বাইডেন এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ দু’জনের বয়সের ব্যবধান মাত্র সাড়ে তিন বছর। তবে, বয়সের প্রশ্নে জো বাইডনকেই আলোচনায় বেশী আনা হচ্ছে। ডেমোক্রেট দলের অনেকেও সংশয় ব্যক্ত করছেন। বিকল্প প্রার্থী তেমন পছন্দের কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না যিনি ট্রাম্পকে পরাস্ত করতে সক্ষম হবেন। জো বাইডেন দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা তাঁকে প্রশাসন, পররাষ্ট্র ইত্যাদি অনেক বিষয়েই একজন কুশলী, পারঙ্গম নীতিবিশারদ ও প্রেসিডেন্ট হিসেবে পরিচিতি এনে দিয়েছে। কিন্তু তাঁর বয়সের কারণে তিনি অনেকের কাছে তেমন গ্রহণযোগ্য নন। তবে, রিপাবলিকানরা তেমন গুরুত্বের সাথে বিষয়টি সামনে আনছেন না। দলটির প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের বয়স ও ৭৭ বছর।
জো বাইডেন তার একাশিতম জন্মবার্ষিকী সম্প্রতি অনাড়ম্বর ভাবেই পালন করলেন। আমেরিকার প্রবীণতম প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাঁর অর্জন নিশ্চয় ইর্ষণীয়। কোভিড বিধ্বংস্ত অর্থনীতির বোঝা যে কারো পক্ষেই সামাল দিয়ে প্রাক-কোভিড পর্যায়ে আনা অসম্ভব রকমের চ্যালেঞ্জ ছিলো। এর মধ্যেও তিনি আফগানিস্তান থেকে আমেরিকার সেনাদের দেশে ফেরত আনতে সক্ষম হয়েছেন; ন্যাটোর নেতৃত্ব সক্ষমতার সাথে ধরে রেখেছেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন মোকাবেলা করে যাচ্ছেন, ইরান-সিরিয়া-ইয়ামেনের হোতি – এদের ও দাঁতভাঙা জবাব দিচ্ছেন এবং ইসরাইল- হামাস যুদ্ধে ও কার্যকর ভূমিকা রাখছেন। একাশি বছরে ও তিনি এতোসব কাজ, গুরুদায়িত্ব তিনি বিরতিহীনভাবে করে যাচ্ছেন। আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে যে তিনি পারঙ্গম তা অতি সাম্প্রতিক সময়ে চীনের প্রেসিডেন্টের সাথে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে সন্দেহাতীত ভাবে প্রমাণিত হয়েছে। বয়সের সাথে শারীরীক সমস্যা, যেমন দূর্বল মেরুদন্ড, গেটে বাত ইত্যাদি সমস্যায় আক্রান্ত হওয়া স্বাভাবিক ব্যাপার তবে জো বাইডেন এ বয়সে ও উদ্যমী ও প্রখর বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ তার প্রমাণ তিনি নিত্যই রেখে যাচ্ছেন ।
ORCD এর এক রিপোর্টে প্রকাশিত তথ্যে জানা যায় যে বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত জি-২০ ভূক্ত দেশগুলোর বয়স নিয়ে চিত্র হলো- ২০৫০ সালের মধ্যে এদের সম্মিলিত জনসংখ্যার ৮ শতাংশের বয়স ৮০ বছর বা তার বেশী হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিশ্বে বেশ কিছু দেশ এখন থেকেই এই ক্রমবর্ধমান বয়োবৃদ্ধদের সেবাযত্ন নেয়ার জন্য পরিকল্পিত ব্যবস্হা ও উদ্যোগ নেয়া শুরু করেছে। জাপান এহেন উদ্যোগের শীর্ষস্থানীয় একটি দেশ। সাউথ কোরিয়া, চীন এসব দেশও তেমন পিছিয়ে নেই। পৃথিবীর ওই অঞ্চলে বয়োবৃদ্ধদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন যেমন সংস্কৃতির অংশ তেমনি এদের চিত্তবিনোদন, স্বাস্থ্যসেবা, আরামদায়ক আবাসন ইত্যাদি বিষয়গুলো ও অত্যন্ত জরুরী বলে বিবেচিত হয় ।
প্রাচীন ভারতীয়, চৈনিক, মিশরীয় এবং পারস্যের সমাজ ও ইসলামসহ অনেক ধর্মীয় ব্যবস্থায় ও বয়স্কদের তাদের প্রজ্ঞা, অভিজ্ঞতা এবং সমঝোতা মনোভাবের জন্য সমাজ ও রাষ্ট্রীয় কর্মকান্ডে জড়িত রাখার উদাহরণ আছে। কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে বয়োবৃদ্ধদের রাজকার্যে উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেয়ার ব্যাপারে রাজাকে বিশেষ ভাবে নির্দেশ দেয়া আছে। জো বাইডেন তাঁর দীর্ঘ সময়ের অভিজ্ঞতা, সঞ্চিত প্রজ্ঞা, বিচার-বুদ্ধি ও সমঝোতার মাধ্যমে গনতান্ত্রিক কলাকৌশল ও পদ্ধতি ব্যবহার করে সমাজ, অর্থনীতি ও রাজনীতিতে সুসময় আনতে তাঁর বর্তমান বয়সে ও সক্ষম হবেন এ আশাবাদ অনেকের। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রাক-কোভিড সময়ে অভ্যন্তরীন অর্থনীতি পরিচালনায় দক্ষতা দেখিয়েছেন সত্যি কিন্তু তিনি কোভিক নিয়ন্ত্রণে চরম ব্যর্থতা প্রদর্শন করে দেশকে যে বিপর্যস্ত অবস্হায় নিপতিত করেছিলেন তার জের এখনো বিদ্যমান।
জো বাইডেনের বড়ো সমালোচনা এই বলে যে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে তেমন সফলতা দেখাতে পারেননি যে কারণে সাধারণ মানুষ নিত্যপ্রয়োজনীয়, বিশেষত খাদ্যসামগ্রী কোভিড-পূর্ব সময়ের মতো সুলভে পাচ্ছেন না। ঔষধ-পত্র মূল্য নিয়ন্ত্রণ ক্ষেত্রে সম্প্রতি সময়ে বাইডেন প্রশাসন প্রশংসনীয় ভাবে সফলকাম হয়েছে যা নিন্মমধ্যবর্তী ও মধ্যবর্তী শ্রেণীর জনসাধারণ ভোগ করছেন তা নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রী ক্রয়ের ক্ষেত্রে ও আশু কার্যক্রর হবে বলে ধারণা খুবই সংগত। অর্থনীতি এবং সাধারণ মানুষের জন্য বাজার ব্যবস্হার উন্নয়ন-এ দু’টো লক্ষ্য আকাংখিত অর্জন জো বাইডেনকে ২০২৪ নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট পদে পুনর্বার সমাসীন করবে এ আশাবাদ অনেকেরই ।
Posted ৩:১৯ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৩
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh