ড. আশরাফ উদ্দিন আহমেদ | বৃহস্পতিবার, ২৬ জানুয়ারি ২০২৩
বিজ্ঞ দার্শনিকগণ যুগযুগ ধর হাজারো দৃষ্টকোণ থেকে মানুষের আচার-আচরণ তথা পার্থিব ও অপার্থিব অস্তিত্বকে গভীর দৃষ্টিতে অবলোকন করেছেন, ব্যাখ্যা করেছেন। মূল লক্ষ্য সর্বযুগেই ছিল সমাজে পরিবর্তন আনয়ন। সুকঠিন কাজ। যুদ্ধ জয়, ধন-সম্পদ তথা বৈভবের পাহাড় গড়ে তোলার মাধ্যমে সমাজে ইপ্সিত পরিবর্তন, অর্থাৎ যা কিছু মানবজাতি তথা সৃষ্টির জন্য কল্যানকর তা ঘটানো সবসময় সম্ভব নয়। অসীর চেয়ে মসী বড়- প্রবাদবাক্যটির সুগভীর ব্যঞ্জনা হলো একমাত্র সুশিক্ষাই কাঙ্খিত সমাজ পরিবর্তনে সত্যিকারের ভূমিকা রাখতে পারে। অন্যথায় প্রাচুয্যের মাঝে ও নানা অবয়বের দারিদ্র তথাকথিত ধনী, উন্নত, আধুনিক সমাজকে ও পীডিত করে রাখে । সুশিক্ষার বিস্তার ও প্রসার, জ্ঞান-বিজ্ঞানের অগ্রগতি ব্যতিরেকে মানব কল্যাণমূলক কাজে সাফল্য অর্জন সম্ভব নয় ; মানুষের মন ও মননে পরিবর্তন, ইতিবাচক বিবেক ও বোধ জাগ্রত সম্ভব নয়। যৌক্তিক চিন্তার বীজ বপন ও লালন করে সুশিক্ষা। শেকড় শক্ত করতে ভাল বীজ ও সার, পানি, পর্যাপ্ত সূর্য কিরণ যেমন প্রয়াজন তেমনি সমাজে উপকারে আসবে এমন পছন্দের সুশিক্ষার নিয়ত বিস্তার প্রয়োজন।
মুক্ত চিন্তার প্রসার, বিজ্ঞানমনস্কতা এবং গতিশীল সমাজ বিনির্মাণ শিক্ষা ব্যবস্হার মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত। কিন্তু বর্তমান সময়ে বৈশ্বিক রাজনীতি, সামাজিক অবক্ষয়, ধর্মীয় অনুশাসন এবং আইনের অপব্যবহার সমাজ, সংস্কৃতি ও সংহতিকে দারুণভাব বিপর্যস্ত করে ফেলেছে। অস্বীকার করার উপায় নেই যে বর্তমান বিশ্ব, পরিবেশ, সমাজ ও সুশাসন নেতাদের হাতে নিরাপদ নেই মোটে ও। বলয় বিভক্ত সমাজ ও রাষ্ট্র অসার আদর্শের ডামাডোলে, টানাপোড়েনে আজ অসহায়। এহেন অবস্থার জন্য দায়ী দূর্বল শিক্ষা ব্যবস্থা। মানবতার জয়গান, সেবা এসব এ শিক্ষাব্যবস্থা যোগান দিতে পারছেনা।
এ অবস্থার পরিবর্তন আশু প্রয়োজন। সুখের কথা আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম এ জাতীয় পরিবর্তনের সূচনা করার উদ্যোগে এগিয়ে আসছে। ওয়াশিংটন ডিসিতে জনৈক বাংলাদেশী ইঞ্জিনিয়ার আববকর হানিপ আমেরিকার শিক্ষাব্যস্থার আদলে একটি টেকনিকাল শিক্ষা ভিত্তিক প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় চালু করেছে আজ দুবছরের বেশী হলো । প্রায় দুহাজার ছাত্র-ছাত্রীর মধ্যে চার শতের মতো বাংলা ভাষাভাষী । নিউইয়র্ক নগরে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত যুগোপযোগী সিলেবাস অনুসরণে পরিচালিত একটি উচ্চতর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যা মুলত বাংলা ভাষাভাষী ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য উন্নত শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করতে সমর্থ হবে তা প্রতিষ্ঠা আশু প্রয়োজন । এমন সম্ভাবনা ও উদ্যোগ নিয়ে আলোচনার অবতারনা করতে আমাদের কিছু প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রী সম্মিলিত ভাবে এগিয়ে এসেছে । খুবই উৎসাহ ব্যান্জক এ উদ্যোগ । আলাপ- আলোচনা চলছে বিষয়টি অত্যন্ত আনন্দের ।
উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি ২০২২ নভেম্বর ১৯ তারিখে ঘোষিত উত্তর আমেরিকায় বাংলাদেশের যে সব বিশ্ববিদ্যালয় বা উচ্চতর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এ্যলুমনাই এসোসিয়েশন আছে তাদের সাথে সৌহার্দমূলক আলাপ আলোচনা ও যোগসাজশে সম্মিলিত উদ্যোগে নিউইয়র্ক শহরে একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্হাপনে যে সংকল্প ব্যক্ত করা হয়েছিল তার মাস পূর্তি হতে না হতেই আরও একটি মহল ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার ইচ্ছে নিয়ে মাঠে নামে । প্রথম দলটির বেশ ক’জনের নাম দ্বিতীয় উদ্যোগে ও (কিন্তু ভিন্ন) দেখা যায় । দস্তুরমতো বিভ্রান্তকর এক পরিস্তিতি ।
প্রথম উদ্যাক্তাদের দলনেতা, আমার ভুল নাহলে, ছিলেন আবু জাফর মাহমুদ । দ্বিতীয়টি বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক সংগঠক কবির কিরণ যুক্ত হওয়ায় ধারণা করছি উত্তর আমেরিকা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এল্যুমনাই এসোসিয়েশন মূল দলটির (অনুতাপের বিষয় আমার প্রিয় এ সংগঠনটি ও সম্প্রতি বিভক্ত হয়ে গেছে ) সাথে উত্তর আমেরিকা জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয় এ্যলুমনাই এসোসিয়েশন একসাথে মিলে নিউইয়র্কে একটি উচ্চতর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হবে যা বাংলাদেশের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য আশীর্বাদ হিসেবে আবির্ভূত হবে ।
এদেশে বাংগালীদের উচ্চশিক্ষার পথ সুগম করতে আগ্রহী সকলের মিলিত প্রচেষ্টা কার্যকরী হওয়ার সম্ভাবনা আশু সুফল বয়ে নিয়ে আসবে এ ধারণা পোষণ করি ।
(একই শিরোনামে নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক বাংলাদেশ পত্রিকার জানুয়ারি ২৫, ২০২২ তারিখের লেখাটির পরিমার্জিত রূপ) ।
Posted ১২:৫২ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৬ জানুয়ারি ২০২৩
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh