আশরাফ উদ্দিন আহমেদ | বৃহস্পতিবার, ০৪ মে ২০২৩
প্রেসিডন্ট জো বাইডেন ২০২৪ নির্বাচনে ভাইস প্রেসিডেন্ট কামালা হ্যারিসকে সঙ্গে রাখছেন – এ ঘোষণায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়। রিপাবলিকান পার্টির নেতা-কর্মীরা খুশি। তারা কামালা হ্যারিসকে দুর্বল প্রার্থী হিসেবে মনে করেন; ধারণা করেন যে এ কারণে জো বাইডেন ২০২০ এর মতো এতো অধিক সংখ্যক ভোট পাবেন না। রিপাবলিকান দলের অনেক হোমড়া চোমড়া প্রকাশ্যেই এমনটি বলছেন, ভোটাররা নিশ্চিত ভাবেই মনে করবে যে অশীতিপর জো বাইডেন’কে ভোট দিয়ে প্রেসিডেন্ট পদে সমাসীন করা মানে ৫৮ বছর বয়সী ভাইস প্রেসিডেন্ট কামালা হারিস এর প্রেসিডেন্ট হওয়ার রাস্তা করে দেওয়া। তাদের ধারণা, প্রেসিডেন্ট হয়ে জো বাইডেন বেশী দিন বাঁচবেন না ।
তেমনি একজন প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী নিকি হ্যালি। সম্প্রতি ফক্স নিউজে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে স্পষ্ট করেই বলেছেন , “I think we can be all clear and say , with a matter of fact , that if you vote for Joe Biden , you are really counting on a President Harris “খোদার উপর খোদকারী করারমত সুরে নিকি হ্যালি আরও বলেন, জো বাইডেন ৮৬ বছরে পদার্পণের পূর্বেই লোকান্তরিত হবেন। তাঁর ভাষায়, Because the idea that he would make it until 86 years old is not something that I think is likely “আরেক শীর্ষ পর্য্যায়ের নেতা সিনেটর টেড ক্রুজ ও একই মত প্রকাশ করেছেন। জো বাইডেন অবশ্য ইতোমধ্যেই ঘোষণা করেছেন যে শত সমালোচনা সত্ত্বে ও তিনি ২০২৪ এ তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদে কামালা হ্যারিস’কেই ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে সাথে রাখবেন।
ভাইস প্রেসিডেন্ট কামালা হারিস এর সমালোচকরা তিনটি বিষয়ের উপর জোর দিচ্ছেন অহরহ । এগুলো হলো: প্রথমত, কামালা হ্যারিস আমেরিকার ইতিহাসে প্রথম মহিলা ভাইস প্রেসিডেন্ট দ্বিতীয়ত, তিনি কানিফোর্নিয়ার প্রগতিশীল ঐতিহ্যে লালিত-পালিত; এবং তৃতীয়ত, তাঁর সাংস্কৃতিক এবং বংশগত বা রেসিয়াল (racial) শেকড় কৃষ্ণাঙ্গ এবং ভারতীয়দের মধ্যে প্রোথিত । অনেক আমেরিকানদের কাছে , বিশেষত , প্রাক্তন প্রসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তাঁর ‘Make America Great Again (MEGA) অনুসারীদের কাছে কামালা হ্যারিস নিত্যই তিরস্কৃত, অবাঞ্ছিত এবং অগ্রহণযোগ্য ।
ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে কামালা হ্যারিস এর ব্যর্থতা অবশ্যই আছে। তবে, মনে রাখা প্রয়োজন যে এ পদ যারা অলঙ্কৃত করেন তারা প্রেসিডেন্টের ছায়াতলে তাঁর মর্জি মোতাবেক চলেন বা চলতে হয়। কামালা হ্যারিসকে মেক্সিকো সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ উন্মুখ হাজার হাজার অবৈধ অভিবাসীদের যুক্তরাষ্ট্রে ঢোকা ঠেকানোর দায়িত্ব দেওয়া হলে এতে তিনি তেমন সুবিধে করতে পারেননি। পূর্বেকার প্রশাসন ও মেক্সিকোকে হুমকি, দেয়াল নির্মাণের ঘোষণা ও এর আংশিক কাজ সম্পাদন সত্বে ও কাজের কাজ কিছুই করতে পারেনি। এ ইস্যুতে আইনানুগ কার্যকরণ ছাড়া ও মানবিক কিছু দিক আছে যা সমস্যাটিকে জটিলতর করে রেখেছে ।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান দুটো রাজনৈতিক দলের সদিচ্ছা, সমন্বিত উদ্যোগে প্রণীত নীতিমালা বাস্তবায়ন ব্যতিরেকে এ সমস্যার সমাধান হওয়ার নয়। সীমান্তবর্তী দেশগুলো, বিশেষত মেক্সিকো এবং দক্ষিণ আমেরিকার দারিদ্র প্রপীডিত দেশগুলো যেখান থেকে স্বচ্ছল জীবনের আশায় প্রাচুর্যের দেশ আমেরিকায় দলে দলে লোকজন আসে তাদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্হার উন্নয়নে মনোনিবেশ না করে এ সমস্যার সমাধান আশা করা যায় না।
কৃষিশ্রমিক সহ, অন্যান্য অপেশাদার শ্রমিকের চাহিদা মেটাতে এরা সস্তায় শ্রম দেয় বিধায় এক শ্রেণীর আমেরিকানদের কাছে এদের কদর সবসময়ই ছিল এবং থাকবে ও । ভাইস প্রেসিডেন্ট দায়িত্বে কামালা হ্যারিস এর উপরে বিধৃত ইস্যুত আন্তরিকতা ছিল না একথা বলা ঠিক হবে না। তাঁর সততা, পলিসি প্রণয়ন, সমন্বয়, সহযোগী মনোভাব এবং সহমর্মিতা প্রশ্নাতীত। নারী স্বাধীনতা ও অধিকার আদায়ে কিছু কিছু ক্ষেত্রে তিনি পারঙ্গমতা দেখিয়েছেন; গর্ভপাত বা ‘এবরশন’ রাইটস্ নিয়ে ও তিনি বলিষ্ট ভূমিকা রেখে চলেছেন ; পুলিশ রিফর্ম ; সিভিল রাইটস এবং ভোটাধিকার সমুন্নত রাখা ইত্যাদি ক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকা ও অবদান প্রশংসার দাবী রাখে। তাছাড়া, জলবায়ু পরিবর্তন এবং শিক্ষা সংস্কারের মত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তাঁর সজাগ দৃষ্টি ও অর্জনের জন্য তাঁর সুখ্যাতি রয়েছে ।কামালা হ্যারিস সোজা-সাপ্টা ভাবে মতামত ব্যক্ত করেন। সততা ও সারল্য তাঁর বড়ো গুণ। এতোসব কারণে ভাইস প্রেসিডেন্ট কামালা হ্যারিস ২০২৪ নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টি ও প্রেসিডেন্ট পদ প্রার্থী জো বাইডেন এর জন্য আপদ নয় আশির্বাদ হয়েই এসেছেন এবং থাকবেন – এমন ধারণা অনেকের ।
Posted ১২:৪৫ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৪ মে ২০২৩
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh