মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪ | ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

Weekly Bangladesh নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত
নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত

সামার শেষের গান

ড. মাহবুব হাসান   |   বৃহস্পতিবার, ০১ অক্টোবর ২০২০

সামার শেষের গান

এ-বছর সামারের মধ্য-দিকে আমরা নিয়মিত বেড়ানোর একটা পরিকল্পনা করেছিলাম। আমরা মানে, মূলত কাজী জহির ও মুক্তি জহির হলেন এর পরিকল্পক। আর তাদের সাথে যোগ দেন হিউম্যান রাইটস অ্যাক্টিভিস্ট কাজী ফৌজিয়া। মনজু ভাই, মনি ভাবী আর আমি হলাম তাদের চরনদার। মানে তাদের আয়োজনের সাথে স্পটে যাওয়া আর ভোগ ও উপভোগের সাথী। আমি সেই ছেলেবেলা থেকেই ভ্রমণে উৎসাহী। কিন্তু সেই উৎসাহের সাথী হয়নি আমার আয়-রোজগার। ফলে দেশেও যে তেমন একটা বেড়াতে গেছি বা পেরেছি তা নয়, এখানে তো সে সুযোগ মেলা ভার। কাজী জহির প্রতি সপ্তাহেই সপরিবারে বেড়ান, সেটা তিনি বলেনও। কিন্তু কখনোই বলিনি আমারও বেড়াবার খুব সখ। কিন্তু মনের কথা না জেনেও তিনি একদিন বললেন, আমাদের কাছেই একটি পার্কে রোববার বেড়াতে যাবো, যাবেন নাকি। বললাম যাবো। আর কে যাবেন? বললেন মনজু ভাই, ভাবী এবং আরো কেউ কেউ। সেবার রাজিয়া নাজমী ও ফেরদৌস নাজমী গেছিলেন আর ফজলুর রহমান ভাই ও ভাবী। পরের সপ্তাহে তারা আর গেলেন না। ফলে আমরাই অব্যাহতভাবে বেড়াতে যাচ্ছি। এবারকার বেড়ানোর পার্কের নাম ওয়াডিং রিভার পার্ক। বুঝলাম, নদীর পাড়ের কোনো পার্কে যাচ্ছি, বেশ মজাই হবে। কিন্তু গুগল জানালো ওয়াইল্ড স্টেট পার্কের কথা। কনফিউজড হলাম। কিন্তু জানালাম না কাউকে। আবার দেখলাম সেখানে দুটো নামই আছে। কনফিউশন সে কারণেই।

গত শনিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, সকালবেলায় ইলশেগুড়ি বৃষ্টি হলো। বা তার চেয়েও কম বা হালকা। প্রায় সাড়ে দশটা কি এগারোটা পরযন্ত সেই মিহি বৃষ্টি থামলো। জহির এলেন সপরিবারে আমাকে নিতে। তারপর মন্জু ভাই ও ভাবীকে নিয়ে কাজী ফৌজিয়াকে তুলে লং আইল্যান্ডের সেই কথিত নদীতীরের পার্কের উদ্দেশে রওনা হলাম। জহির বললেন ১:১০ মিনিট লাগবে। আমি হিসেব করে বুঝলাম আমার অফিস ব্রুকহেভেন ছাড়িয়ে আরো দূরের কোনো একজিট নেবো আমরা। এলআই হাইওয়ে ধরে আমরা যখন ৬৫/৬৬ একজিট পেরিয়ে যাচ্ছি, আমার চোখ আলগোছে ভেতরের দিকে ঘুরে গেলো। প্রায় আড়াই বছর ধরে এই পথে প্রায় প্রতিদিন, রোববার বাদে এসেছি। এখন আর যাই না কেরোনা ভাইরাসের কারণে।
কতো নম্বর এক্সিট ধরে ঢুকেছি, খেয়াল করিনি। যখন পার্কের গেটে ৮ ডলারে প্রবেশ টিকিট নিচ্ছে জহির তখন বুঝলাম আমরা এসে গেছি। এর আগেই পৌছে গেছিলেন ফজলুর রহমান ভাই ও ভাবী। আমরা গিয়ে একটি টেবিল বেছে নিলাম। খাদ্যদ্রব্য রাখার জন্য নিলাম আরেকটা টেবিল। নিউ ইয়র্কের সব পার্কেই বেড়াতে আসা মানুষদের জন্য কাঠের টেবিল ও সাথে লাগানো বেণ্চ আছে। আমরা যে পার্কেই গেছি, পেয়েছি এই ব্যবস্থা সুবিধা। আর রেস্টরুম। সব পার্কেই রেস্টরুমের সুব্যবস্থা।


সকালে, পানি ছাড়া আর কি খেয়েছি মনে নেই। চায়ের তেষ্টার চেয়েও পেটের চাহিদা অনুভব করলাম। আমি মুক্তি ভাবীকে বললাম চা খাওয়ান। তিনি চায়ের ফ্লাকটা আনার আগেই পেলাম ফজলু ভাবীর সামুচা। নিজের হাতে বানানো। চমৎকার স্বাদের সেই সামুচা সবার হাতে পৌছে গেলো। আমি এবং কয়েকজন দুটো করে খেলাম। সাথে চা। এর পর ফৌজিয়া সারপ্রাইজ ফুড ফুচকা এলো সাথে তেতুল-টক। নিয়ে বেশ আরামই পেলাম। মনি ভাবী না ফজলু ভাবী এখন মনে নেই দিলেন একটি তেলে ভাজা পিঠা। সেটাও মুচ মুচ শব্দে কামড়ে চায়ের সাথে খেলাম।
এ-পার্কের গাছগুলোকে শাল-গজারির মতো মনে হচ্ছে আমার। আসলে এগুলো ওকট্রি বলেই মনে হচ্ছে। তার হালকা ছায়া আর রোদের মিশেলে একটি হাওয়া ঘেরা আনন্দ আমাকে জড়িয়ে নিয়েছে। কাজী ফৌজিয়া আঙুল উঁচিয়ে জানালেন খুব কাছেই আছে সমুদ্র। আমি বললাম, নাম দেখলাম নদী, আর আপনি বলছেন সমুদ্র। বিয়ষটা কি? বললেন, চলেন যাই, দেখবেন সাগর না, নদী। তো সবার আগে আমি মনজু ভাই আর ফৌজিয়া হাঁটতে থাকলে বাকিরা আসলো পেছনে। রাস্তাটা ঢালু হয়ে নেমে গেছে। সেখানে আমরা ছবি তুললাম। নেমে গেলাম আরো নিচে। শেষে একটি কাঠের ডেক। সেখানেও ওয়াসরুমের ব্যবস্থা। পৌছেই বুঝলাম এটা নদী নয়, সাগর, উপসাগর, যাকে বলে বে। ডান দিকে পায়ে হেঁটে বীচে নামার ঢালু পথ। নামতে নামতেই দেখলাম অনেক শাদা মেয়ে-ছেলে সাগরে নেমে গোসল সারছে বা ভিজে আনন্দ নিচ্ছে। কোনো কোনো যুবতী বালিতে শুয়ে রোদ পেছাচ্ছে। আমার বেশ আনন্দই হচ্ছে। সাগরের পারে বেড়ানোর আনন্দ আলাদা। সি-বীচের খোলা হাওয়ার সাথে রোদের মাখামাখি বিশাল হৃদয় সমুদ্রের মতোই নিজেকে উদার ও বিশাল মনে হয়। মানুষ সমুদ্রে এলে পেছনের সংকীর্ণ দিনগুলোর আচরণকে ভুলে থাকতে মন চায়। নগর জীবনের কুৎসিত পরিসর, গ্রাম জীবনে তেমন নেই। আবার গ্রাম জীবনের স্বার্থপরতা ধুয়ে দিতে নদ-নদী আর সাগরের শ্বশ্রুষার কোনো তুলনা হয় না। অন্তত আমার কাছে।

সি-বীচে বালির বিছানা থাকে, সে আমার জানা। আমি কক্সবাজারে সেটা দেখেছি। কিন্তু পাথর তো দেখিনি সেখানে। এখানে কংকর-এর সাথে আরো বড় আকারের জলে-ধুয়া মসৃণ পাথর আমাকে মুগ্ধ করলো। দেখি মনি ভাবী পাথর কুড়িয়ে নিচ্ছেন একটি প্লাস্টিকের ব্যাগে। নভো তার ছোটো ব্যাকপ্যাকে, দেখা দেখি আমিও কিছু সুন্দর শাদা ফকফকে পাথর তুলে দিলাম মনি ভাবীকে। আবারো চোখ যায় কেবল সেই সুন্দরের দিকে। আমি নিজের পকেটে তুলে নিলাম কয়েকটি। এর মাঝে ছবি তোলা হচ্ছে। ফজলু ভাই একটু ক্লান্ত বোধ করায়, পেছনের রক-বোল্ডারে গিয়ে বসলেন। আমি জুতো-মুজা খুলে সাগরের হাওয়ার সাথে জলের সুবাস নিতে নামলাম। বেশ ঠান্ডা পানি। শুনেছি সাগরের পানি ঠান্ডা হয় সব সময়। বিশাল জলধি বলেই হয়তো এ-পানি ঠান্ডা থাকে, গরম হতে পারে না।


জহির বললো চলেন, দিনের হন্টন পর্ব শেষ করি। আমি, জহির হাঁটতে শুরু করলাম। সাথে এলেন মনজু ভাই, ভাবী, নভো আর সারাফ। মাইল দু/এক হাঁটলাম। সেখানে একটি বিশাল রক বোল্ডার। সেখানে সবাই ছবি তুললাম। ওপরের দিকে বিশাল উঁচু বন বলে মনে হয়। আসলে সি-বীচ থেকে ওপরের দিকে মনে হবে একশ ফিট উঁচু। সেখা হতেও পারে। কিন্তু গাছ তেমন বড় নয়। ছাড়া ছাড়া কিছু ছোটো গাছ, ঢালুতে। স্লোপে বালি আছে। দেখতে বেশ লাগে। সি-বীচের পাথর আর বালির রাস্তায়। রাস্তা না বলাই ভালো। পা দেবে যায় হাঁটতে গেলে। ফলে দ্রুত হাঁটা যায় না। ফিরতি পরে সবার আগে নভো, তারপর মনিভাবী, আমি আর পেছনে বাকিরা। চারটা কি সোয়া চারটা বেজে গেছে। সাগরের ওপারের দিকে আঙুল তুলে ফৌজিয়া বললেন ওপারে কানেকটিকাট। পার দেখা যায় না। তবে একটা আভাস আছে। আমিও শুনেছি যে এখানকার কোনো একটি জেটি থেকে নাকি ফেরি দিয়ে পারাপার করা হয় গাড়িসহ সব কিছু। কিন্তু সাগরের নামটা কি?

আমরা বৌখুদার সাথে ডিমভাজি আর ডিম-ভর্তা, আপেল আচার, টমেটো-ভর্তাসহ অনেক পদ দিয়ে ভোজনপর্ব শেষ করলাম। রোদও হেলে পড়েছে পশ্চিমে। ওমা, পশ্চিম খুঁজতে গিয়ে দেখি ওরা দক্ষিণের দিকে—সেটা আমার মনে হলো। আসলে আমি দিক ঠিক করতে পারি না। দিকভোলা আমি। এবার আমাদের গাত্রোত্থান পালা। বেলা ডুবে যাবে ৬:৪২-এ। এখন সাড়ে পাঁচটা বেজে গেছে। বোধ করি এই সামারে এটাই আমাদের শেষ বেড়ানো। কারণ শীত বা ঠান্ডা নেমে আসছে মন্দমন্থরে। তবে চুপিসারে বলি আমরা কিন্তু আরো দূরে বেড়ানোর জন্য একটি কটেজ ভাড়া করেছি। আগামি মাসের মাঝামাঝিতে সেখানে দুদিন কাটাবো। আশ্চরয এই সুন্দর পৃথিবীর নির্মাতার সৌন্দরয যে আরো কতো বিপুল তা জানার দেখার ইচ্ছা পূরণ হবে না আমার কোনোদিনই। সেই বেদনা আমাকে ক্ষমা করো।


advertisement

Posted ১০:৪১ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০১ অক্টোবর ২০২০

Weekly Bangladesh |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

গল্প : দুই বোন
গল্প : দুই বোন

(6306 বার পঠিত)

স্মরণে যাতনা
স্মরণে যাতনা

(1312 বার পঠিত)

মানব পাচার কেন
মানব পাচার কেন

(1154 বার পঠিত)

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

Dr. Mohammed Wazed A Khan, President & Editor
Anwar Hossain Manju, Advisor, Editorial Board
Corporate Office

85-59 168 Street, Jamaica, NY 11432

Tel: 718-523-6299 Fax: 718-206-2579

E-mail: [email protected]

Web: weeklybangladeshusa.com

Facebook: fb/weeklybangladeshusa.com

Mohammed Dinaj Khan,
Vice President
Florida Office

1610 NW 3rd Street
Deerfield Beach, FL 33442

Jackson Heights Office

37-55, 72 Street, Jackson Heights, NY 11372, Tel: 718-255-1158

Published by News Bangladesh Inc.