আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু : | বৃহস্পতিবার, ০৬ জুন ২০২৪
দীর্ঘদিন পর মার্ক টোয়েনের সঙ্গে দেখা হলো। আমার জানা ছিল না ক্যালিফোর্নিয়া ও নেভাদা সীমান্তে লেক তাহো’র তীরবর্তী ছোট্ট সিটিতে তিনি থাকবেন। উইলিয়াম ফকনার যাকে “আমেরিকান সাহিত্যের পিতা” বলতেন, সেই টোয়েনের সাথে কবে শেষ দেখা হয়েছিল? সঠিক মনে নেই। হয়তো ৫৫ বছর আগে, কলেজে পড়ার সময়।“ অবশ্য মাঝে একবার তাঁকে নিয়ে কথা হয়েছিল মালদহের তরুণ মনোজ ভট্টাচার্যের সঙ্গে। তাও অনেক আগে, ১৯৮৮ সালের সামারে।
মনোজ আমাকে ঘুরতে নিয়ে গেছিলেন স্যান ফ্রান্সিসকো বে’তে। শেষ সেপ্টেম্বরের কড়া রোদ সত্ত্বেও প্রবল বাতাসের কারণে ঠাণ্ডায় ফিশারম্যান হোয়ার্ফ রীতিমতো জড়োসড়ো। একটু দূরে কালো রঙের স্যুট পরা কয়েক যুবক হাঁটু পানিতে নেমে একজনকে মাথার ওপর তুলে ছুঁড়ে ফেলছে। আমাদের কৈশোর যৌবনে আমরাও এমন করেছি পুকুরে গোসল করতে নেমে। আমরা তো খালি গায়ে এসব করেছি। এরা ফরমাল ড্রেস পরে করছে।
মনোজ পেশায় কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার। হিউলেট পেকার্ডে কাজ করেন। ইঞ্জিনিয়ারিং করেছেন আমেরিকায়। স্ত্রী স্বাতী ও ছোট মেয়ে কল্পাকে নিয়ে কুপারটিনো থাকেন। আমার পালো আল্টোর আবাস থেকে খুব দূরে নয়। তিনি এদেশের কালচার জানেন। স্যুট পরিহিত তরুণদের জলকেলির দিকে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি জানান, যে ছেলেটিকে পানিতে ছুঁড়ে দেওয়া হচ্ছে, তার বিয়ে। অনেক সময় বরের বন্ধুরা বরকে নিয়ে এ ধরনের ফূর্তি করে।”
তাই বলে এই কনকনে ঠাণ্ডায়? মনোজ বললেন যে, স্যান ফ্রানিন্সকো বে এরিয়া সামারেও এমন। এ প্রসঙ্গে তিনি মার্ক টোয়েনের একটি মন্তব্য শোনালেন: “The coldest winter I ever saw was the summer I spent in San Francisco.” (“আমি শীতলতম শীতকাল দেখেছি সান ফ্রান্সিসকোতে আমার সামার কাটানোর সময়।) এর পর যখনই মার্ক টোয়েনকে মনে পড়েছে তখন স্যান ফ্রান্সিসকোর সামারে শীতকালীন অনুভূতি নিয়ে তাঁর সরস কথাটিও মনে উঁকি দিয়েছে।
লেক তাহো’র তীরবর্তী ছোট্ট সিটি স্টেটলাইন এর রেষ্টুরেন্ট এরিয়ায় পা দিয়ে একটি বেঞ্চে মার্ক টোয়েনকে বসে থাকতে দেখে রেষ্টুরেন্টে প্রবেশ না করে তাঁর পাশে গিয়ে বসি। আহা, কি সুখানুভূতি! আমার স্ত্রীকে বলি, “বলো তো, কে?” আমার এইসব উস্তাদের সঙ্গে আমার স্ত্রীর পরিচয় নেই। তবু বলি, ‘বলতে পারলে ১০ ডলার দেব।’
যাহোক, তিনি বলতে পারেন না। তিনি যদি অর্থের বিনিময়েও আমার সাহিত্য ও সঙ্গীত বিষয়ক সওয়ালের জওয়ার দিতে পারতেন, তাহলে আমি এতদিনে ফতুর হয়ে যেতাম। তবে এভাবে ফতুর হতে পারলেও বোধহয় আনন্দও বোধ করতাম। যেকোনো কবিতা, ছড়ার অন্তত ১০টি লাইন মুখস্থ বলতে পারলেও তাকে ১০ ডলার করে দিতে চেয়েছি বহুকাল আগে থেকে। তিনি যাতে কবিতা মুখস্থ-কলা আয়ত্ত করতে পারেন; এমনকি তা যদি তার প্রাইমারিতে পড়া “আয় ছেলেরা আয় মেয়েরা,” “ওই দেখা যায় তাল গাছ –” টাইপেরও কিছু হয়, সেক্ষেত্রে পুরস্কারের অর্থমূল্য ১০ ডলার থেকে বৃদ্ধি করতে করতে ২০, ৫০, ১০০ ডলারে উন্নীত করেছি। বর্তমানে তা ৫০০ ডলারে স্থির রয়েছে। এখনও আশা করছি তিনি কবিতা মুখস্থ করে এই পুরস্কার হাসিল করবেন।
জামাতা আসে। ওকেও বলি, “বলো, উনি কে?” মার্ক টোয়েনের হাতে একটি বই ছিল। সে বইয়ের দিকে উঁকি দিলে ওকে বই দেখার আগে ভদ্রলোকের চেহারা দেখে নাম বলতে বলি। সে মার্ক টোয়েনকে চেনে না। আমি নামটি বলে জানতে চাই টোয়েনের কোনো বই পড়েছে কিনা। না, পড়েনি। টোয়েনের ছবিও দেখেনি। দোষনীয় কিছু নয়। সে হ্যারি পটার পড়ে বেড়ে উঠা তরুণ।
আমার কন্যা আসে। ওর কাছেও একই প্রশ্ন। মার্ক টোয়েনের চেহারা দেখে চিনতে পারে না।
টোয়েনের সামনে বিব্রত বোধ করি। নাম বললে আমার কন্যা চিনতে পারে। স্বস্তি বোধ করি। আমার কন্যা মার্ক টোয়েনের ‘দ্য অ্যাডভেঞ্চারস অফ টম সয়্যার,’ ‘দ্য অ্যাডভেঞ্চারস অফ হাকলবেরি ফিন’ পড়েছে। “আঙ্কেল টম’স কেবিন’ পড়ার কথাও সে বলে। কিন্তু সেটি মার্ক টোয়েনের নয়। ওর এই ভুলে অবাক হই না। বহু বছর পর্যন্ত ওকে বইপত্র পড়তে দেখিনি। সেজন্য দু:খ বোধ করি। মার্ক টোয়েনের সাথে ছবি তুলে তাঁর কাছ থেকে বিদায় নেই।
Posted ২:১০ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৬ জুন ২০২৪
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh