ড. আশরাফ উদ্দিন আহমেদ | বৃহস্পতিবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২১
ব্যাপক বিধ্বংসী ক্ষমতা রাখে যে অতিমারি কোভিড -১৯ তাকে নিয়ে ঠাট্টা-মস্করা করতেন প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। সাধারণ সংক্রমণ ব্যাধি আখ্যায়িত করে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিতে চেষ্টার কম করেননি। ঘরবাড়ি পরিষ্কার করার ডিটারজেন্ট ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ সম্ভব এমন প্রলাপ ও বকেছেন টেলিভিশন ও অন্যান্য যোগাযোগ মাধ্যমে। তাঁর একগুঁয়ে, সবজান্তা মনোভাবের কারণে লাখে লাখে মানুষ মরেছে। যে করেই হোক ক্ষমতায় থাকতে হবে এ অদম্য আকাক্সক্ষা ও লোভের কারণে তিনি বিজ্ঞানকে খাটো করে দেখেছেন; পাত্তা দেননি বিজ্ঞানীদের। অপ-রাজনীতি, নষ্ট মানসিকতা এবং দুষ্ট লোকদের পরামর্শ তাঁকে সত্য থেকে বহুদূর সরিয়ে রেখেছিল।
২০২০ প্রেসিডেন্সিয়াল ইলেকশন এবং জেতার জন্য হাজারো দুরভসন্ধি নিয়েই তিনি দীর্ঘ সময় ক্ষেপণ করেন। হেরে ও নির্বাচনের ফলাফল মেনে নেননি অদ্যাবদি ; রেজাল্ট বৈধকরন প্রক্রিয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য ক্যাপিটাল হিলে কংগ্রেসের যৌথ সভা বানচালের জন্য দলের চরমপন্থি গুন্ডা পাণ্ডাদের দিয়ে ভাঙচুর, হত্যা ইত্যাদি কুকর্ম করতে সক্রিয় ভাবে প্ররোচনা দিয়েছেন। ২০২১ জানুয়ারী ৬ তারিখের এহেন অভূতপূর্ব চরম ন্যাক্কারজনক ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে ইতিপূর্বে ঘটেনি । অতিমারির সাথে ট্র্যাম্প ও তাঁর সমর্থকদের নষ্ট রাজনীতি যুক্ত হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে জনমানুষের মাঝে মানসিক বৈকল্যের সৃষ্টি করেছে।
২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে চীনের হুবেল প্রভিন্সের হুনান সি ফুডের একটি পাইকারি বাজার থেকে শুরু হলেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তাঁর অন্ধ অনুগতরা চীনের একটি ল্যাব থেকে সারা বিশ্বে ছড়িয়েছে এবং সাথে সাথে দেশটিকে অভিযুক্ত করে অনেক ধরনের কন্সপিরেসি তত্ত্ব দিতে থাকেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তাঁর এ দুরভিসন্ধিমুলক তত্ত্বের সাথে একমত না হওয়ায় এবং মার্চের ১২ তারিখে কোভিড-১৯ কে প্যান্ডেমিক ঘোষণা দিলে যুক্তরাষ্ট্র ২০২০ সালের এপ্রিল মাসের ১৩ তারিখে এ প্রতিষ্ঠানে তহবিল প্রদান বন্ধ করে দিবে বলে ঘোষণা দেন। এ দিকে বিজ্ঞানীদের মতামত উপেক্ষা করে কুইনাইন জাতীয় কিছু ড্রাগ (hydroxy chloroquine sulphate and chloroquine) ব্যবহারের সপক্ষে জোর দাবী জানান । ইউ এস ফুড অ্যান্ড ড্রাগ প্রশাসন মার্চ ২৮, ২০২০ তারিখে অনুমোদন দিলে একই দিনে সি ডি সি এ ড্রাগ ব্যবহার ঠিক নয় বলে সাবধান বাণী জারী করে ।
প্রেসিডেন্ট বনাম বিজ্ঞান সংস্থাগুলোর মধ্যে বাকবিতণ্ডা এবং স্নায়ু যুদ্ধ চলতে থাকে তবে মৃত্যু হার হু হু করে বারতেই থাকে। ২০২০ এর সেপ্টেম্বর ২২ মৃত্যু সংখ্যা ছিল ২০০,০০০ এর বেশী যা বেড়ে ৩০০,০০০ হয় ২০২০ ডিসেম্বর মাসের ২০ তারিখে। ২০২১ জানুয়ারী ২০ তারিখে ৪০০,০০০ থেখে ফেব্রুয়ারী ২০২১ এ মৃত্যু সংখ্যা ৫০০,০০০ ছাড়িয়ে যায়। বর্তমান সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে এ সংখ্যা সি ডি সি তথ্য অনুযায়ী ৮১৬,২৩৯ ।
বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের মতে এ সংখ্যা অনেক কম থাকতো যদি এ অতিমারির রাজনিতীকরন না করা হতো। তথ্য বিকৃতি বা ডিজইনফরমেশন ও অত্যন্ত নেতিবাচক ভাবে কাজ করেছে । মাস্ক ব্যবহার, ভ্যাকসিন নেয়া সহ অবশ্য পালনীয় অনেক উপদেশ ও নিষেধাবলী রেড ষ্টেটগুলোতে কট্টর রিপাবিকান সমর্থক শ্বেতাঙ্গ আমেরিকানরা অমান্য করার পরিণতি ভয়াবহ হয়েছে। সর্ব স্তরের জনসাধারণের মধ্যে মানসিক নানাবিদ সমস্যা পরিলক্ষিত হচ্ছে । মানুষের আচরণে শিষ্টাচারের অভাব আজকাল হরদম দেখা যাচ্ছে। বিভিন্ন পরিবেশে মানুষ ক্রুদ্ধ , রুঢ় আচরন করছে। টাইম ম্যাগাজিন THE RUDENESS EPIDEMIC শীর্ষক একটি মতামত নিবন্ধে বিষয়টি স্পষ্ট ভাবে বিধৃত করেছে এই বলে যে কি উকিলের অফিসে, রেস্টুরেন্টে কিংবা বিমানে এ ধরণের কর্কশ আচরণ এখন নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে । উদ্ধৃতি দিলে বিষয়টি পরিষ্কার হবে ।
লেখক বেলিন্দা লুস্কম্বে বলেন, “The pandemic may have had a lethal effect on American manners. Lawyers are reporting ruder clients. Restaurants are reporting ruder clients. Flight attendants, for whom rude clients are no novelty, are reporting mayhem; passenger fines have exceeded $1 million this year. Re-entry into society is proving to be a little bumpy.Ó (Time, Nov. 8/ Nov. 15, 20021; p. 29).
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, মনোবিজ্ঞানী এবং ডাক্তাররা যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষের মধ্যে মানসিক বৈকল্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে বলে মত প্রকাশ করেছেন । তারা এ সমস্যা মোকাবেলার জন্য ফেডারেল সরকার সহ সকল মহলের আশু হস্তক্ষেপ ও সহায়তার দাবী করছেন ।
Posted ৮:১৭ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২১
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh