বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪ | ৫ বৈশাখ ১৪৩১

Weekly Bangladesh নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত
নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত

আমেরিকান নির্বাচন ২০২০ : ঘৃণার উৎপাদককে না বলুন

ড. মাহবুব হাসান   |   বৃহস্পতিবার, ২২ অক্টোবর ২০২০

আমেরিকান নির্বাচন ২০২০ : ঘৃণার উৎপাদককে না বলুন

এখন জর্জিয়া রাজ্যে চলছে (১৬ অক্টোবর রাত ৮:৩৫ মিনিট) প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রচার অভিযান। তার কিছু অংশ দেখলাম এবিসি নিউজের ফেসবুক লাইভ ভিডিওতে। তিনি জোর গলায় ও কিছুটা ব্যঙ্গাত্মক ভঙ্গিতে সমালোচনা করছেন তার প্রতিপক্ষ ডেমোক্র্যাট দলীয় প্রার্থী জো বাইডেনকে। আরেকটি ভিডিওতে তাকে মঞ্চে নাচতেও দেখা গেলো। তিনি যে খুশিতে ভুগছেন , তা বোঝা যায়। কিন্তু কি কি কারণে তিনি এতো খুশি? কেন তার এমন ডগোমগো অবস্থা? আমরা ধারণা করতে পারছি না। নির্বাচনের আর বাকি ১৭দিন। যদিও ডাক বিভাগের মাধ্যমে ভোট দেয়া শুরু হয়েছে আগেই। ৯ মিলিয়নেরও বেশি ভোটার তাদের ভোট দিয়েছেন এবং তাদের অধিকাংশই ডেমোক্র্যাট দলীয় বা সমর্থক বলে দাবি করছেন অনেকে।

এতো বিপুল সংখ্যক মানুষ কেন ডাকবিভাগের মাধ্যমে তাদের ভোট দিয়েছে? তার কারণ তারা মনে করছেন যে ৩ নভেম্বর কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারবেন না।কারণ, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প হচ্ছেন প্রধান বাধা। তিনি বিতর্কের সময় বলে দিয়েছেন, তার কড়া সমর্থক গোষ্ঠী ৩ নভেম্বরে কেন্দ্রে কেন্দ্রে উপস্থিত থাকবে। তার মানে তার সমর্থক সশস্ত্র গোষ্ঠী, যারা ‘হোয়াইট সুপ্রেমেসি’ বা শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠ’ বলে নিজেদের মনে করে, তারা যে ডেমোক্র্যাটদের ওই দিন ভোট দানে বাঁধা দেবে, তা স্পষ্ট। এটা যদি হয় , তাহলে শাদা চামড়ার বাইরের রঙের লোকেদের ভোট দেয়া দুরুহ হয়ে পড়বে। শাদা পুলিশদের মধ্যেও এই ‘শাদাত্ববাদ’ জাগিয়ে তোলা হয়েছে। তাদের অধিকাংশই কট্টর ক্ষমতার প্রশ্নে। হোয়াইট সুপ্রেমেসি’ রোগটা শাদাদের মনে, অধিকাংশ কম শিক্ষিত, কৃষিতে জড়িত লোকদের উদ্দীপিত করেছে বিগত নির্বাচনের আগেই। সেই সুবাদেই হিলারি ক্লিনটন হেরেছিলেন। এবারও সেই অস্ত্র ট্রাম্প অন্যভাবে প্রয়োগ করছেন। ভোটাধিকার প্রয়োগে বাধা দেবার ভয়ে ডেমোক্র্যাট শিবিরে শঙ্কা আছে। বোধ করি সাধারণ ও নিরীহ গোছেন শাদারাও তাই মেইলে তাদের ভোট দিয়ে চলেছে। পরিস্থিতি বুঝে অনেক ভোটারই ৩ নভেম্বর কেন্দ্রে যাবে না।


এ-আশঙ্কা অমূলক নয়। কারণ ট্রাম্প চায় জিততে। আর জিততে হলে ভোটারদের থামাতে হবে তাদের ভোট প্রয়োগ থেকে।
ট্রাম্পের ভয় কোথায়? তা তার করোনা ভাইরাসের প্রকোপকে চরম অবহেলা করায়। লাখ লাখ মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে ট্রাম্প প্রশাসনের অবহেলা ও দুর্বল ব্যবস্থাপনার কারণে। তিনি করোনাকে ব্যঙ্গ করেছেন নানাভাবে। তিনি মাস্ক না পরে ভীত-সন্ত্রস্ত মানুষের অধিকারকে হরণ করেছেন। প্রণোদনা দেবার ব্যাপারে কিপ্টেমি, টালবাহানা, উল্টাপাল্টা টুইট করে নানা রকম কথার ফাঁদ পাতা, এবং সর্বশেষে দ্বিতীয় টিমুলাস বা প্রণোদনা না দেয়ায় দেশের গরিব ও স্বল্প আয়ের মানুষ ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা চরম হতাশ। তারা ভোট দেবে না ট্রাম্পকে। তিনি নির্বাচনী সমাবেশগুলোতে মাস্ক না পড়ে, নাচা-নাচি করে তার অমানবিকতাই দেখিয়ে চলেছেন। মানুষের প্রতি ভালোবাসা ও মানবিক আচরণের বিরুদ্ধেই তার অবস্থান। ইমিগ্রেশন বিরোধী তার অবস্থান সরাসরি আমেরিকার সাংবিধানিক চেতনার পরিপন্থি, দৃষ্টিভঙ্গি ও আইনের প্রতি অবজ্ঞা। সব মিলিয়ে তার রাজনৈতিক অবস্থা ভালো নয়। রিপাবলিক্যানরা তাকে ছাড় দিচ্ছে কেবলমাত্র নিজেদের রাজনৈতিক ক্ষমতার রশিটি নিজেদের হাতে রাখতে। সিনেটে, এবার যদি মাত্র চারটি অতিরিক্ত সিটে জেতে ডেমোক্রাটরা, তাহলে হাউজের পাশাপাশি সিনেটেও তারা সংখ্যাগরিষ্টতা পাবে। ডেমোক্যাটরা সেটাই চাইছে।

আজতক যতগুলো জনমত যাচাইয়ের প্রাক-পোল হয়েছে, তাতে বাইডেন-কামালা বেশ এগিয়ে থাকলেও শেষতক কট্টর হোয়াইটদের জোয়ারে সাধারণ খ্রিষ্টান পাবলিক তার দিকে ঝুঁকতে পারে। কারণ, তারা ডেমোক্র্যাটদের ‘গান কন্ট্রোল, এ্যাবশন রাইট ইস্যু নিয়ে এভান্জিলিকা খ্রিষ্টান সম্প্রদায় ক্ষিপ্ত হয়ে আছে । তাদের প্রভাবে সাধারণ হোয়াইটরা যদি ট্রাম্পের ওপর আস্থা রাখে, তাহলে ফল কোথায় গিয়ে ঠেকবে বলা মুশকিল।
আমি গত দুই দিন পেনসেভানিয়ার মাউন্ট পোকোনোতে ছিলাম। সেখানকার রাস্তাগুলোতে ‘ট্রাম্প-পেন্স’ ছাড়া আর কারো সাইনবোর্ড দেখলাম না। পেন-স্টেট হোয়াইটদের, এটা সবাই জানেন, তবে সেখানে ডেমোক্র্যাটদের কোনো অবস্থানই থাকবে না? একজন মানবাধিকার অ্যাক্টিভিস্ট কাজী ফৌজিয়া জানালেন পোকোনো কট্টর শাদাদের এলাকা। তারা কেবল ইমিগ্র্যান্ট বিরোধী না, মুসলিম বিদ্বেষীও।
ট্রাম্প যে ভোটকে তোয়াক্কা করছে না, তা তার রাজনৈতিক আচরণই প্রমাণ করে। তিনি ভোটারদের মনে ভয় ঢুকিয়ে দিয়ে তার তৈরি করা হোয়াইট সুপ্রেমেসি বাহিনী দিয়ে জাল ভোট করতে পারে বা করাবে বলে আশঙ্কা হচ্ছে। জাল ভোট হচ্ছে কি না, সেটা নাকি ওই বাহিনী উপস্থিত থেকে লক্ষ্য রাখবে। এ-ধরনের হুমকি যে আমেরিকার কোনো রাষ্ট্রপতি দিতে পারেন, তা অতীতে কোনো নজীর নেই। তিনি যে সন্ত্রাসী কায়দায় নির্বাচনে জিততে চাইছেন, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।


২. এ-মাসের প্রথম দিকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটদের সম্মিলিত বিল পাশের জন্য যে আলোপ-আলোচনা চলাচ্ছিল, তা বন্ধ করে দিয়েছিলেন এই বলে যে ইলেকশনের আগে আর কোভিড রিলিফের কোনো বিল তিনি পাশ করতে রাজি নন। তার এই নির্দেশে বাইপার্টিজেন আলোচনা বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু এখন তিনি চাইছেন বাইপার্টিসান বিল তারা তৈরি করে দিন। এর আগে হাউজ আর সিনেট মিলে ২.২ ট্রিলিয়ন ডলারের যে বিলটি পাশ করেছিলো, তাতে রাজি ছিলেন না ট্রাম্প। ট্রেজারি সেক্রেটারি মনুচেন প্রস্তাব করেছিলেন ১.৮৮ ট্রিলিয়নের, কিন্তু তাতে সায় দেননি হাউজ স্পিকার ন্যান্সি পলোসি। এ-রকম টানাপোড়েনেই মূলত এতাদিন চললো। ফলে জনগণ যে চরমভাবে হতাশ হয়েছে সেটা হয়তো টের পেয়েছেন ট্রাম্প। তাই তিনি আবারো যৌথ বিলের কথা বলেছেন। কিন্তু মিসেস পলোসি মনে করেন ৩ নভেম্বরের আগে গরিব ও স্বল্প আয়ের মানুষ ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের হাতে টাকা পৌছানো যাবে না। আবার এটাও হতো পারে, রিপাবলিকান একজন সদস্য বলেছেন যদি ক্ষমতায় ট্রাম না আসতে পারেন, তাহলে আগামি ফ্রেব্রুয়ারির আগে স্টিমুলাসের টাকা পৌছানো যাবে না। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সিদ্ধান্তহীনতা ও গোয়ার্তুমির কারণেই যে প্যান্ডামিকের ছোবলে থাকা মানুষগুলোর চরম আর্থিক সংকট, সেটা আর না বললেও, সবাই বুঝে গেছে। ফলেট্রাম্পের মনে এই ভয় ধরেছে যে তিনি অনেক মানুষের ভোট থেকে বঞ্চিত হতে যাচ্ছেন। আর সে তেকেই আবারো বাইপার্টিসান বিল দেবার আহ্বান জানিয়েছেন। আগামি মঙ্গলবার বাইপার্টিসান বিল নিয়ে দুই পক্ষ বসবে। সেখানে তারা সব গুছিয়ে বিল পাশ করলেও ৩০ অক্টোবর বা নভেম্বরের ১/২ তারিখে সবার হাতে অর্থ পৌছে দিতে পারবে বলে মনে হয় না। ধারণা করা যায় যে সেই প্রণোদনা পেতে পেতেনভেম্বরের ১০/১২ তারিখ হয়ে যেতে পারে।

আর যদি ডেমোক্র্যাট প্রার্থী বাইডেন-কামালা জেতে, তাহলে তারা নতুন করে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তারা ক্ষমতায় বসবে ২০ জানুয়ারি। তার পর একটি বড় আকারের প্রণোদনা বিল পাস করবে বলেই মনে করা যেতে পারে। তবে সে-ক্ষেত্রে সিনেটেও তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে হবে। তাহলে বিল পাস যেমন সহজ হবে, তেমনি রিপাবলিকানদের অমানসিক আচরণেরও জবাব তারা দিতে পারবেন। সাধারণ মানুষ চায়, দেশটি যেহেতু ইমিগ্র্যান্টদের (হোয়াইটসহ, তারা ইমিগ্র্যান্ট। স্বাধীনতার দলিল রচনাকারীরাও এটা সর্বান্তকরণে বুঝেছিলেন বলেই তারা ইমিগ্রেশনের পথ ওপেন রেখেছিলেন।) তাই সীমান্ত বন্ধ ও মুসলিমদের আসা বন্ধ করার কোনো অধিকারই নেই ট্রাম্পের। ট্রাম্পের নীতি সংবিধান পরিপন্থী, আইন অম্যা করাই তার রাজনৈতিক ও মানবিক স্বভাব। মানুষ বিরোধীকে হারাতে হবে। তবে দু:খের বিষয় হচ্ছে কিছু প্রজ্ঞাবান বাংলাদেশি নিজেদের ট্রাম্প সমর্থক বলে প্রচার করছে। যে রাষ্ট্রপতি নাগরিকের মনে ঘৃণা ছুঁড়ে মারছে, মুসলিম বিদ্বেষের রোগ ছড়াচ্ছে প্রকাশ্যে, সেই ব্যক্তির সমর্থক কি করে হয় বাংলাদেশি মুসলিমরা? আমার কোনো ধারণাই নেই তাদের চেতনায় কি কাজ করছে।


advertisement

Posted ১:১৮ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২২ অক্টোবর ২০২০

Weekly Bangladesh |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

গল্প : দুই বোন
গল্প : দুই বোন

(6237 বার পঠিত)

স্মরণে যাতনা
স্মরণে যাতনা

(1303 বার পঠিত)

মানব পাচার কেন
মানব পাচার কেন

(1147 বার পঠিত)

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০  
Dr. Mohammed Wazed A Khan, President & Editor
Anwar Hossain Manju, Advisor, Editorial Board
Corporate Office

85-59 168 Street, Jamaica, NY 11432

Tel: 718-523-6299 Fax: 718-206-2579

E-mail: [email protected]

Web: weeklybangladeshusa.com

Facebook: fb/weeklybangladeshusa.com

Mohammed Dinaj Khan,
Vice President
Florida Office

1610 NW 3rd Street
Deerfield Beach, FL 33442

Jackson Heights Office

37-55, 72 Street, Jackson Heights, NY 11372, Tel: 718-255-1158

Published by News Bangladesh Inc.