শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Weekly Bangladesh নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত
নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত

আমেরিকান মশা ও আমার কন্যার দেশপ্রেম

আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু :   |   বৃহস্পতিবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২২

আমেরিকান মশা ও আমার কন্যার দেশপ্রেম

মশার দংশনের মাঝেও যে দেশপ্রেম থাকতে পারে, আমার কন্যার মশার কামড় উপভোগ করার দৃশ্য না দেখলে তা বিশ্বাস হতো না। কিচেনে রান্না করার সময় একটি মশা ওর হাতে বসেছিল, সে মশাকে থাপ্পড় দিয়ে মেরে ফেলা অথবা হাত নেড়ে সরিয়ে না দিয়ে মশাকে ও ওর হাত থেকে মশাটি যে রক্ত শুষে নিচ্ছে সে দৃশ্য মনোযোগে অবলোকন করছিল। আমি ওকে বলি, ‘মশাটি মেরে ফেলো’।

সে উত্তর দেয়, ‘না, একটু রক্ত খাক। কতদিন মশার কামড় খাই না। দেশের কথা মনে পড়ছে।’ আমি আর কিছু বলি না। মশার কামড়ে দেশের কথা ভেবে শান্তি পেলে পাক। তখন ২০১০ সাল। ওই আমি ও আমার কন্যা দীয়া নিউইয়র্কের জ্যামাইকায় এক বাড়ির বেসমেন্টে বাস করতাম। প্রায়ান্ধকার বেসমেন্টে সারাক্ষণ আলো জ্বালিয়ে রাখতে হতো। বাড়ির চারপাশে কিছু ঝোপঝাড়সহ স্যাতস্যাতে পরিবেশ থাকায় জানালার নেট ভেদ করে সামারে বেসমেন্টে দু’চারটে মশা প্রবেশ করতো। তবে তেমন বিরক্তিকর ছিল না। আমেরিকায় মশার হাত থেকে বাঁচতে মশারি খাটাতে হয় না, কয়েল জ্বালাতে হয় না। এর চেয়ে স্বস্তি আর কি হতে পারে।


কিন্তু আমার পুত্রকে একথা বিশ্বাস করানো যায়নি। কয়েক বছর পর আমার ছেলে যখন আসে তখন সে সাথে নিয়ে আসে একটি মশারি ও কোলবালিশ। একটি ফ্যান রেডি করে রাখতে বলে। কিছু আজব অভ্যাসের দাস সে। বাংলাদেশ হোক, আমেরিকা হোক, রাতে ঘুমাতে ওর মশারি লাগবেই, সামারে এয়ার-কন্ডিশনার চলুক অথবা শীতকালে হিটার চলুক সে কম্বল জড়িয়ে ফুল স্পিড়ে ফ্যান চালিয়ে তবেই ঘুমাবে। এসবের ব্যতিক্রম হলে ওর ঘুম আসে না। ২০০৯ সালে ওকে কাঠমাণ্ডু বেড়াতে নিয়ে যাই। চারদিনের আবাস ছিল হোটেল হিমালয়া। কাঠমান্ডু সিটির বিখ্যাত দরবার স্কোয়ারের কাছেই ললিতপুরের চমৎকার পরিবেশে অবস্থিত একটি ফোর স্টার হোটেল। প্রথম রাতের পর সকালে পুত্রের কাছে জানতে চাই, ‘ঘুম হয়েছে?’ সে উত্তর দেয়, ‘ঘুমাতে পারিনি, ফ্যানের শব্দ নেই।’ ফোর স্টার, ফাইভ স্টার হোটেলে ফ্যান কোথায় পাই! বাকি তিন রাতও ওর ঘুম হবে না। এর চেয়ে থামেল বা বাগবাজারের সস্তা হোটেলে উঠাই ভালো ছিল।

প্রতিটি মানুষের এমন পৃথক পৃথক বৈশিষ্ট থাকে। কিন্তু মশার কামড়ের মাঝে আমার কন্যার ব্যতিক্রমী দেশপ্রেমের প্রকাশ আমি বিস্মৃত হই না। মশা কত ভয়ঙ্কর এক সৃষ্টি। মশার কামড়ে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, চিকনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, জিকাসহ আরো কিছু মারাত্মক ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে বিশ্বের অনেক বড় বড় সাম্রাজ্যের সেনাবাহিনীর পতন ঘটেছে। আমাদের নবী ইব্রাহিম, যিনি মুসলিম জাতির আদি পিতা এবং যার সূত্র ধরেই তিনটি প্রধান ধর্ম ইহুদি ধর্ম, খ্রিস্টধর্ম ও ইসলামকে বলা হয় ‘অ্যাব্রাহিমক রিলিজিয়ন,’ যাঁকে ওই সময়ের শাসক নমরুদ আগুনে নিক্ষেপ করেছিলেন, আল্লাহ সেই নমরুদের নাকে একটি মশককে প্রবিষ্ট করান, মশক তার মস্তিস্কে প্রবেশ করে এবং তার মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। রক্তপিপাসু ক্ষুদ্র একটি জীব, অথচ কি ভয়ঙ্কর! কত জীবাণু, ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসের বাহক! মশা সম্পর্কে ৩২০০ খ্রিস্ট পূর্বাব্দেও লেখা হয়েছে। বিজয়ী বীর হ্যানিবলের রোম দখলের পথে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল মশা।


অদম্য চেঙ্গিস খানের ভারত দখলের বিরুদ্ধেও মশা অপ্রতিরোধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছিল। আমেরিকান সিভিল ওয়ারেও মশা ভূমিকা রেখেছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে বিদ্রোহীদের সঙ্গে শান্তি চুক্তি সম্পাদিত হওয়ার আগে ১৯৯৭ সালের অক্টোবরে সেনাবাহিনীর আমন্ত্রণে এক প্রতিনিধিদলের সদস্য হিসেবে পার্বত্য চট্টগ্রামের বেশ কয়েকটি সেনা ক্যাম্প পরিদর্শন করি। সৈনিকদের কথা ছিল, বিদ্রোহীদের চেয়ে বড় শত্রু মশা। বেশ কিছু সৈনিক মশার কামড়ে সেরিব্রাল ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন।

কানাডীয় গবেষক টিমোথি সি, উইনেগার্ড মশা ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ডের বিস্তারিত ইতিহাস তুলে ধরেছেন “দ্য মসকুইটো: এ হিউম্যান হিস্টরি অফ আওয়ার ডেডলিয়েস্ট প্রেডেটর” গ্রন্থে। তিনি অসংখ্য ঐতিহাসিক বর্ণনা, জীবনী, চিকিৎসা বিষয়ক গ্রন্থ. কবিতা ও উপন্যাসের রেফারেন্স দিয়েছেন। কবি ও নাট্যকার শেক্সপিয়রের আটটি নাটকে পর্যন্ত ম্যালেরিয়ার প্রসঙ্গ আছে। “মসকুইটোস” নামে বিখ্যাত আমেরিকান লেখক উইলিয়াম ফকনারের একটি জনপ্রিয় ব্যঙ্গাত্মক উপন্যাস রয়েছে। টিমোথি দেখিয়েছেন যে, ডাইনোসরের বিলুপ্তির পেছনে মশার ভূমিকা রয়েছে এবং ১৯০ মিলিয়ন বছর ধরে পৃথিবীকে তটস্থ রেখেছে। তিনি অনুমান করেছেন যে শুধু মশার কারণে ৫২ বিলিয়ন মানুষের মৃত্যু ঘটেছে। ম্যালেরিয়াবাহী অ্যানোফেলিস মশাকে টিমোথি তার গ্রন্থে ‘জেনারেল অ্যানোফেলিস’ বলে উল্লেখ করে বলেছেন, “এই কীট বহু সেনাবাহিনীকে বিধ্বস্ত করেছে এবং অনেক যুদ্ধের গতি পাল্টে দিয়েছে।” অথচ বাংলাদেশ ছেড়ে আসার কষ্টে এই মশার কামড় আমার কন্যার কাছে দেশপ্রেমের অনুভূতিকে জাগ্রত করেছে।


বাংলাদেশের সাহিত্য-সংস্কৃতিতেও মশা বেশ স্থান দখল করে আছে। পুরোনো ঢাকায় প্রচলিত একটি গানের দুটি লাইন হচ্ছে; “মশা পুন পুন করে, রাজার বাড়ির মশা আইলো গরিবের ঘরে।” মুনীর চৌধুরীর ঐতিহাসিক নাটক ‘রক্তাক্ত প্রান্তর’ এ মশা নিয়ে কয়েকটি সংলাপের একটি হলো: “সারাক্ষণ শুনছি তোমার জান পানি করে দিচ্ছে হিন্দুস্থানের বাঘা মশা। ওদেরকে ডেকে জিজ্ঞেস করে দেখো, তোমার শরীর ফুটো করে ওরা কি পায়, খুন না পানি।” রংপুর অঞ্চলের একটি গানের কলি হচ্ছে: “দেশান্তরী করলো রে আমায় রংপুরইরা মশায়/কামড়ায় বেটা যেমন তেমন, ডাক্তারের পিলে চমকায় ÑÑ।” বলিউডের একটি সুপারহিট মুভি ‘যশোবন্ত,’ এ মশা নিয়ে কবি সুরুর লক্ষেèৗভি’র একটি বিখ্যাত কবিতা আবৃত্তি করেছেন নানা পাটেকর: “এক মচ্ছর, সালা আদমি কো হিজড়া বানা দেতা হ্যায়।”

advertisement

Posted ২:১০ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২২

Weekly Bangladesh |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

আমরা মরি কেন?
আমরা মরি কেন?

(641 বার পঠিত)

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০  
Dr. Mohammed Wazed A Khan, President & Editor
Anwar Hossain Manju, Advisor, Editorial Board
Corporate Office

85-59 168 Street, Jamaica, NY 11432

Tel: 718-523-6299 Fax: 718-206-2579

E-mail: [email protected]

Web: weeklybangladeshusa.com

Facebook: fb/weeklybangladeshusa.com

Mohammed Dinaj Khan,
Vice President
Florida Office

1610 NW 3rd Street
Deerfield Beach, FL 33442

Jackson Heights Office

37-55, 72 Street, Jackson Heights, NY 11372, Tel: 718-255-1158

Published by News Bangladesh Inc.